Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » চির কুমারী বৃটিশ নাগরিক এম রোজ ৫৪ বছর ধরে সেবা দিচ্ছেন মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর হাসপাতালে




  চির  কুমারী

বৃটিশ নাগরিক এম রোজ  ৫৪ বছর ধরে সেবা দিচ্ছেন মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর হাসপাতালে


মানুষের প্রতি ভালোবাসা মানুষকে মহৎ করে। মানুষের কাছে পৌঁছা যায়। নিজের ভালবাসা অন্যের মাঝে বিলিয়ে যে আত্মতৃপ্তি তা ভোগবিলাসের মধ্যে মোটেই পাওয়া যায় না। মানুষকে ভালোবাসলে সৃষ্টিকর্তার কৃপা বা ভালোবাসা পাওয়া সহজ হয়। এমন উপলদ্ধি মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর মিশনারী হাসপাতালের চিকিৎসা সেবিকা বৃটিশ নাগরিক জিলিয়ান এম রোজের।

জিলিয়ান এম রোজ বলেন, ১৯৬৪ সালে কাজে বরিশাল এসেছিলাম। সে সময় বাংলাদেশের মানুষ মাটি প্রকৃতি কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাংলাদেশে অবস্থানকালীন কাজের ফাঁকে ইচ্ছেমত ঘুরেছিলাম এখান ওখানে। পরে নিজ দেশে মা মাটি ও স্বজনদের টানে ফিরে যাই। কিন্তু সেই ফেরা শেষ ফেরা হয়নি। এদেশের মাটি মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে ১৯৭৪ সালে আবার চলে আসি বাংলাদেশে। দেশে নার্স হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে যে সেবার ব্রত নিয়েছিলাম তা বাস্তবায়নে লেগে যাই প্রথমে খুলনাই পরে মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর হাসপাতালে। জীবনে বিয়ে করা হয়নি থেকে গেছেন চির কুমারী হয়ে। এভাবে কখন যে ৫৪টি বছর পার হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। ১৯৬৪ সাল ধরে ৫৪ বছর বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছেন তিনি। যত দিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এভাবে সেবা দিয়ে যাবেন বলে জানান রোজ।

এই মাটিতেই না ফেরার দেশের শেষ ঠিকানাও চান চির কুমারী এই মহানুভব মানুষটি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজ হাতে রোগীকে সেবা দিয়ে চলেছেন জিলিয়ান এম রোজ। দীর্ঘ দিন ধরে চলছে লাল সবুজের এই দেশের সঙ্গে তার হৃদয়ের মিতালী। তার হৃদয়জুড়ে এখন বাংলাদেশের প্রতি গভীর প্রেম।

অন্য দেশের নাগরিক হয়েও এ দেশের মানুষকে পরম মমতা ও যত্নে সেবা প্রদান করে মন কেঁড়েছেন তিনি। সবার কাছে প্রিয় মুখ এখন নিভৃতচারী জিলিয়ান এম রোজ। চলনে-বলনে এখন বাঙালিয়ানা জিলিয়ানের এখন একটি-ই চাওয়া বাংলার মাটিতে শেষ বিদায়। বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারায় বেশ খুশি জিলিয়ান। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এভাবে মানুষ কে সেবা দিয়ে যাবেন। এদিকে তিনি নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন বৃদ্ধাশ্রম। তার প্রত্যাশা বাংলাদেশ তাকে দ্বৈত নাগরিকত্ব দিবে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মানুষটি এ বছরের মাঝামাঝি ৮৮ বছরে পা রাখবেন।

গেল বছরের প্রথম দিকে দেশের স্বজনদের চাপাচাপিতে ফিরে যাবার জন্য মনস্থির করে বাংলাদেশের প্রকৃতি, মানুষ ও মাটির ভালোবাসায় আর যেতে মন চাইনি। তার পরিবার তাকে একাধিকবার দেশে ফিরে যাবার কথা জানালেও তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জিলিয়ান জানান, সরকার যদি তাকে দ্বৈত নাগরিকত দেয়, তাহলে তার সস্মান বাড়বে। তিনি যত দিন বেঁচে থাকবেন তত দিন এভাবে সেবা দিয়ে যাবেন। রোজের ভাষায় পৃথীবিতে এসেছি সেবা দিতে। বৃদ্ধাদের জন্য কেউ কিছু করে না। তাই আমি নিজে একটি বৃদ্ধাশ্রম খুলেছি। তারা যেন ভালোভাবে মৃত্যু বরণ করতে পারেন। আমি যখন ১৯৬৪ সালে এই দেশে আসি। তখন পূর্বপাকিস্তান ছিল। পরে আমি মালয়েশিয়ায় চলে যাই। সেখান থেকে আবারও দেশে ফিরে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের খুলনা জেলায় সেবা দেওয়ার জন্য চলে আসি। খুলনায় বেশ কয়েক বছর গ্রাম অঞ্চলে সেবা দিয়ে ১৯৮১ সালে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর মিশন হাসপাতালে যোগদান করি।

বল্লভপুর মিশন হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র নার্স নীলসুরি সরিন জানান, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা তিনি মানুষকে সেবা দিয়ে চলেছেন। নিজের জন্য কোন কিছু করেন না তিনি। নিজ উদ্যোগে এখানে একটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলেছেন। যেখানে বর্তমানে ১৫ জন বৃদ্ধা আছে। তিনি গ্রামে ঘুরে বাড়ি বাড়ি সেবা দিয়ে আসেন। রাত-দিন যে কোন সময় তাকে ডাকলে তিনি ছুটে যান সেবা দিতে। অনেক গরীব রোগী তার কাছ থেকে সেবা ও ওষুধ বিনামূল্য পেয়ে থাকেন।

বল্লভপুর গ্রামবাসীরা জানান, জিলিয়ান এম রোজ আমাদের কাছে দেবতার মতো। যে কোন সমস্যায় তার কাছে গেলে সমধান পাওয়া যায়। এলাকার মানুষ তাকে মা হিসেবে ডাকেন।

মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের মাঞ্জারুল ইসলাম বলেন, মা শিশুর চিকিৎসায় জিলিয়ানের সেবা এলাকায় ব্যাপক মানুষের উপকারে আসে। মুজিবনগর উপজেলা হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও বল্লভপুর হাসপাতালে রোগির ভিড় লেগেইে থাকে।

সদর উপজেলার শোলমারী গ্রামের মাহাবুব হোসেন বলেন, তার সন্তান জন্মের পর হার্টের সমস্যা জনিত কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য জিলিয়ানের স্বরণাপন্ন হন। জিলিয়ান তার সন্তানকে পরম মমতায় সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। তিনি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বাগুয়ান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন জানান, দীর্ঘ দিন ধরে জিলিয়ান এই অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে এ এলাকার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি সরকারের প্রতি জিলিয়ানকে দ্বৈত নাগরিকত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।

মুজিবনগর উপজেলার চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এলাকার যশোরের ফাতেমা হাসপাতাল ও মেহেরপুরের বল্লভপুর হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য মানুষের ভরসার স্থল ছিল। এখন জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় বল্লভপুর হাসপাতালের জৌলুস আগের মতো না থাকলেও জিলিয়ানের সেবার মান কমেনি এক বিন্দুও।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ জানান, বাংলাদেশকে যে মানুষটি এতো ভালোবেসেছেন নিশ্চয়ই বাংলাদেশও তাকে ভালোবাসবে। জিলিয়ান এম রোজ যদি আমাদের কাছে দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেন, তাহলে আমরা সরকারের কাছে তার আবেদনটি তুলে ধরবো। জিলিয়ানের কাজে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
 






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply