যা দেখেছি ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়’
চোখের সামনে যে ভয়াবহতা দেখেছেন তা আর বর্ণনায় গেলেন না
। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে শুক্রবার দুপুরের নৃশংসতায় ক্রিকেটাররা কতটা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন, রিয়াদ প্রায় নির্বাক থাকার পরও সেটি বুঝতে বিন্দুমাত্র কষ্ট হল না কারও। নিউজিল্যান্ড থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক বিধ্বস্ত কণ্ঠে কিছুটা শক্তিজুড়ে কেবল বললেন, যা দেখেছি তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়।
বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস আগেই সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান মাহমুদউল্লাহকে যেন পাল্টা প্রশ্ন করা না হয়। এ ক্রিকেটার পরে নিজের মতো করেই প্রকাশ করলেন অনুভূতি, ‘জানি না কীভাবে শুরু করবো। যা দেখেছি তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। আমরা যখন রুমের (টিম হোটেলে) মধ্যে ছিলাম, তখন একটা কথাই মনে হচ্ছিল যে আমরা কতোটা ভাগ্যবান।’
ভাগ্য নয় তো কী! জুম্মার নামাজ পড়তে হ্যাগলি ওভাল স্টেডিয়াম থেকে মসজিদের সামনে পৌঁছাতে কয়েকমিনিট দেরি না হলে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার জন্ম হতে পারত ক্রাইস্টচার্চে। ঝরে যেতে পারত বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রাণ। মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার সময়টাতে ভাগ্যক্রমে নিরাপদে সরে আসতে সক্ষম হন ক্রিকেটাররা। কিছুক্ষণ পরই জানা যায় রক্তে ভেসে গেছে পুরো মসজিদ। বন্দুকধারীর গুলিতে অর্ধশতাধিক নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছেন অনেকে।
ক্রাইস্টচার্চের টিম হোটেলে নির্ঘুম রাত কাটানোর পর ২২ ঘণ্টার বিমানভ্রমণ শেষে টেস্ট দলের ১৫ ক্রিকেটার ঢাকায় পৌঁছেছেন শনিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে। তার কিছুক্ষণ পর দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন মাহমুদউল্লাহ। দ্রুত তাদের দেশে ফিরিয়ে আনায় ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানালেন তিনি।
‘ঘটনার পর বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে যখন যোগাযোগ হল, ওনারা আমাদের উদ্ধার করলেন। বিসিবিকে ধন্যবাদ, পাপন (নাজমুল হাসান) ভাইকে ধন্যবাদ। ওনাদের সঙ্গে যখন কথা হল, বললেন আমাদের যতদ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনবেন। আর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকেও ধন্যবাদ, একইসাথে বিসিবিকেও। দেশবাসীর প্রতি বলব আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন আমরা এই মানসিক অবস্থা থেকে বের হতে পারি।’
পরে মাহমুদউল্লাহর পাশে বসেই নাজমুল হাসান বললেন, ‘তারা কঠিন একটি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এসেছে। যখন তাদের সাথে কথা বলেছি, ঘটনার পরপরই, আমরা সকলেই বুঝতে পারছিলাম ওদের মধ্যে দিয়ে কি যাচ্ছে মানসিকভাবে। তখন থেকেই তারা অপেক্ষায় ছিল কখন দেশে আসতে পারবে, কত তাড়াতাড়ি।’
‘একটু আগে রিয়াদ বলেছে তারা ঘুমাতে পারেনি সারারাত। ওদের জন্য এটা ২২ ঘণ্টার ভ্রমণ। এতো লম্বা ভ্রমণে তারা সবাই ক্লান্ত। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে অনেকেই। এখন ওদের সাথে কথা বলারও কিছু নেই। আমরা সবাই ওদেরকে বলেছি, যাও বাসায় যাও। সবকিছু বাদ দিয়ে, ঠাণ্ডা মাথায়, নিজেদের মতো করে যা ভালো লাগে সেভাবে কাটাও। সবকিছু ঠাণ্ডা হলে তারপর আমাদের সাথে যোগাযোগ করো। খেলাধুলা নিয়ে এই মূহুর্তে কোনো চিন্তা ভাবনা করবে না। পরিবারের সাথে সময় কাটাবে। আমরা আছি, যদি কোনো সহযোগিতা লাগে কারো আমরা আছিই। এটাই ওদের বলা হয়েছে।’
No comments: