নিউজিল্যান্ডের হামলাকারী ব্রেনটন ট্যারান্টের নামে ৬টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স
ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আরডার্ন।
ভয়াবহ এই হামলার পর দেশটির আগ্নেয়াস্ত্র আইনে পরিবর্তন আনারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে (বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল) ওয়েলিংটনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, ট্যারান্টের নামে ৫টি ছোট বন্দুক ও একটি বড় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। ‘লাইসেন্সটি ২০১৭ সালের নভেম্বরে নেয়া হয়েছিল বলে আমাকে জানানো হয়েছে।’
‘প্রধান হামলাকারী ৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল। এর মধ্যে ছিল দু’টি সেমি-অটোম্যাটিক অস্ত্র, দু’টি শটগান এবং একটি লিভার-অ্যাকশন বন্দুক,’ বলেন আরডার্ন।
তিনি জানান, দুই মসজিদের হামলায় মোট ৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ৫টিই লাইসেন্সের হিসেবে আইনত বৈধ। ২০১৭ সালে লাইসেন্স নেয়ার পর থেকেই প্রধান সন্দেহভাজন ব্রেনটন ট্যারান্ট অস্ত্র কিনতে শুরু করেন।
নিউজিল্যান্ডে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর। আর হামলাকারী যে ধরনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করেছে তার লাইসেন্স পেতে বয়স হতে হয় কমপক্ষে ১৮ বছর।
তবে বন্দুক রাখার জন্যে লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়লেও, প্রতিটি অস্ত্রের পৃথক রেজিস্ট্রেশনের বাধ্য-বাধকতা নেই। আর সে কারণে নিউজিল্যান্ডে ঠিক কতটি আগ্নেয়াস্ত্র আছে তার সঠিক হিসাব নেই পুলিশের কাছে।
‘লাইসেন্স পাওয়া থেকে শুরু করে এতগুলো অস্ত্র রাখা, এসব ঘটনা ও তার ধারাবাহিকতা নিয়ে কাজ চলছে। তবে এই মুহূর্তে আমি আপনাদের একটি কথা বলতে পারি, আমাদের অস্ত্র আইন পরিবর্তন করা হবে।’
নিউজিল্যান্ড-মসজিদে হামলা-লাইসেন্স
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আরডার্ন
সংবাদ সম্মেলন শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন।
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলা চালায় বন্দুকধারী। ওই হামলায় তিন বাংলাদেশিসহ নিহত হন ৪৯ জন। এছাড়া আহত হন আরো ৪৮ জন। তাদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা গুরুতর।
এর আগ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা ছিল ৩০ বছর আগের। ১৯৯০ সালের ১৩ নভেম্বর ডেভিড গ্রে নামের এক ব্যক্তি আরামোয়ানা এলাকায় প্রতিবেশীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডার পরিপ্রেক্ষিতে অতর্কিতে গুলি চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যা করেছিল।
Advertisement
শুক্রবার মসজিদে হামলাকারী ফেসবুক লাইভ চালু করে হামলা চালিয়েছিল। সেই লাইভ ভিডিও থেকে হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলেও একটু দেরিতে যাওয়ায় বেঁচে যান নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।
ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদ ও লিনউড মসজিদে এ হামলার ঘটনায় ট্যারান্ট ও একজন নারীসহ চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর একজনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। বাকি দু’জনের ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে ভয়াবহ এ হামলা চালানো ব্রেনটন ট্যারান্টকে ইতোমধ্যে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন দেশটির একটি আদালত।
স্থানীয় সময় শনিবার আটাশ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ার এ নাগরিককে জেলখানার সাদা পোশাক ও হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানেই আদালত তাকে জামিন অযোগ্য পুলিশি হেফাজতে রিমান্ডের আদেশ দেন।
৫ এপ্রিল ট্যারান্টকে আবারও আদালতে হাজিরার তারিখ দেয়া হয়েছে। ততদিন তিনি পুলিশের হেফাজতেই থাকবেন।
বন্দুক হামলায় দু’টি মসজিদের ৪৯ জনকে হত্যা করলেও প্রথমে হামলাকারীর বিরুদ্ধে একটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পর্যায়ক্রমে তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।নিউজিল্যান্ড-মসজিদে হামলা-লাইসেন্স
হামলার ঘটনায় শোক জানিয়ে পরবর্তী নির্দেশের আগ পর্যন্ত ক্রাইস্টচার্চের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ক্রাইস্টচার্চের মেয়র লিয়্যান ডালজিয়েল।
বিশ্বনেতাদের নিউজিল্যান্ডের পাশে থাকার ঘোষণা
হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে নিউজিল্যান্ডের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বনেতারা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে হামলাকারী নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘অভিবাসীবিরোধী কর্মকাণ্ড দ্বারা অনুপ্রাণিত’ বলে দাবি করেছেন। তবে ট্রাম্প নিজের বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানিয়ে নিউজিল্যান্ডের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
হামলায় নিহতদের প্রতি শোক জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। কঠিন এই সময়ে ব্রিটেন নিউজিল্যান্ডের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন রানি এলিজাবেথ।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে কোনো পদক্ষেপে পাশে থাকার কথা বলেছে ফ্রান্স ও জার্মানি। অন্যদিকে হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস।
No comments: