ভারত-পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধে ১০ কোটি মানুষ প্রাণ হারাবে!
২০২৫ সাল। ভারতের নয়াদিল্লিতে দেশটির পার্লামেন্ট ভবনে একদল সশস্ত্র গ্রুপ হামলা চালালো; যাতে অনেক সংসদ সদস্য নিহত হলেন। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ঢুকে পড়লো লাখ লাখ ভারতীয় সেনা। নিজেদের পরাজয় দেখার আগে পাকিস্তান তার পরমাণু বোমার সুইচ চেপে দিবে। সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী দেখবে সবচেয়ে ভয়াবহ ধ্বংসজজ্ঞ। এমনই একটি কাল্পনিক চিত্র তুলে ধরেছেন একদল গবেষক।
তাদের গবেষণাটি বুধবার (০২ অক্টোবর) প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হলে মুহূর্তেই প্রাণ হারাবে ১০ কোটি মানুষ।
গবেষণা প্রতিবেদনটি এমন সময় প্রকাশিত হলো যখন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গাল্ফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের কাছেই বর্তমানে প্রায় ১৫০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আছে। তবে যেভাবে দুই দেশই পরমাণু অস্ত্রের দিকে নজর দিচ্ছে তাতে ২০২৫ সাল নাগাদ তারা ২০০টি পরমাণু বোমার মালিক হবে।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ প্রকাশিত ওই গবেষণায় পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে যে, পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের ফলে তৈরি হওয়া ঘন মেঘ ফুঁড়ে সূর্যের আলো পৌঁছতে পারবে না বলে শস্যও উৎপাদন হবে না। এর ফলে, বিশ্বজুড়ে গণ-অনাহারে মৃত্যু হবে কোটি কোটি মানুষের।
আগস্টে ভাতর শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সম্বলিত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জাতিসংঘকে পরমাণু যুদ্ধের বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
সায়েন্স অ্যাডভান্সের অন্যতম গবেষক, নিউ ব্রান্সউইকের অ্যালান রোবক বলেছেন, ‘২০২৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতিটা শুধুই যে এলাকায় বোমা পড়বে; সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তার খেসারত দিতে হবে পুরো বিশ্বকেই।’
ওই গবেষণা আরো জানিয়েছে, দশকের পর দশক ধরে কাশ্মীর ইস্যুতে যতই যুদ্ধ করুক ভারত ও পাকিস্তান, দু’পক্ষের যতই গোলাবারুদ বিনিময় হোক না কেন, আজ থেকে বছর ছ’য়েক পর (২০২৫ সাল) দু’দেশের হাতে ৪০০/৫০০-র বেশি পরমাণু বোমা থাকবে না।
গবেষকরা হিসেব করে দেখাতে পেরেছেন, দুই পক্ষের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ হলে, বোমা বিস্ফোরণের ফলে কী পরিমাণ ঝুল আর কালিতে ঢেকে যাবে আকাশ। তারা বলছেন, পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের ফলে ১ কোটি ৬০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৬০ লাখ টন ওজনের ঝুল, কালিতে ঢেকে যাবে আকাশ। যা বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে পৌঁছতে সময় নেবে বড়জোর কয়েক সপ্তাহ। তার ফলে, গোটা বিশ্বের বিশাল একটি অংশে সূর্যের আলো পৌঁছবে না বিন্দুমাত্র। কারণ, ওই ঝুল, কালির পুরু স্তর সূর্যের আলোর পুরোটাই শুষে নেবে। তার ফলে, জমাট কালো মেঘের পরিমাণ বাড়বে দ্রুত।
গবেষণা জানিয়েছে, এ সবের ফলে সূর্যালোকের ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ আলো কম পৌঁছবে পৃথিবীতে। যার জেরে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমে যাবে ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে যাবে অন্তত ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ। আর এর প্রভাব পড়বে ফসল উৎপাদনের উপর।
গবেষণা জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ হলে জমির উপর যে ফসল ফলে, তার পরিমাণ কমে যাবে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ। আর মহাসাগরগুলিতে জন্মানো উদ্ভিদের উৎপাদন কমবে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ।
সেই যুদ্ধে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের ফলে বায়ুমণ্ডলে যে ঝুল ও কালির মেঘ জমবে, তা কেটে যেতে সময় লাগবে অন্তত ১০ বছর। সময়টা আরও বেশি লাগতে পারে, সেই মেঘ বায়ুমণ্ডলের আরও উপরের স্তরে উঠে যাবে বলে।
এদিকে কতটা শক্তির পরমাণু বোমা সেই যুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে, তারও একটা হিসাব দিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমায় আমেরিকার ফেলা পরমাণু বোমার শক্তি যতটা ছিল, সেই ১৫ কিলোটন ওজনের বোমা ফেলতে পারে দুই পক্ষই। আবার সেই পরমাণু বোমাগুলির ওজন হতে পারে কয়েক'শো কিলোটনও।
Tag: world
No comments: