গোষ্ঠ পাল, যতীন্দ্রনাথ রায়, রাজেন সেনগুপ্ত, অভিলাষ ঘোষ, পাখি সেন, শিবদাস ভাদুড়ি, শৈলেস বসুসহ, আরো কতশত নাম। যেন ফুটবল বিধাতা নিজ হাতে, ঐশ্বর্য ঢেলে দিয়েছিলেন পূর্ববঙ্গের ফুটবলে। যাদের এক-একজন গায়ে মেখেছেন কিংবদন্তির তকমা, গড়েছেন ইতিহাস। 'বাঙালি আর বাংলার' ফুটবলের শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাস তারায় তারায় খচিত। ঐতিহ্য আর বর্ণময়তায় প্রোজ্জ্বল।
একজন বাঙালি পায়ে যখন বিশ্ব শাসন। গোষ্ঠ পাল মানেই যেন ভিনদেশীদের বিরুদ্ধে এ দেশের লড়াই। গোষ্ঠ পাল মানেই বুটপরা ইউরোপিয়ারে বিরুদ্ধে খালি পায়ে প্রতিরোধ।
ভারতের সর্বকালের সর্বসেরা ফুটবলারের তকমা পাওয়া গোষ্ঠোর জন্ম, ১৮৯৬ সালে ফরিদপুরের ভোজেস্বর গ্রামে। পরাধীন ভারতের সাবেক কাপ্তানকে বলা হতো চীনের প্রাচীর। ২৩ বছর ধরে খেলেছেন মোহনবাগানে। প্রথম ফুটবলার হিসেবে পেয়েছেন পদ্মশ্রী খেতাব।
কেউ বলে যতীন্দ্রনাথ কেউবা জীতেন্দ্রনাথ। তবে মাঠের ফুটবলে সবাই তাকে চিনতো কানু রায় নামেই। ঢাকার অধিবাসী, প্রেসিডেন্সী কলেজের ছাত্র। লেফ্ট এবং রাইট। দুই পজিশনেই ছিলেন সমান ক্ষিপ্র। ওয়ারী ক্লাবের অধিনায়ক ছিলেন বহুদিন। ছিলেন ১৯১১ সালে মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়ের অন্যতম নায়ক। ১৯৬২তে মৃত্যুবরণের আগে ফুটবলে অবদানের জন্য পেয়েছিলেন রায়বাহাদুর খেতাব।
সেন্টার ফরোয়ার্ড অভিলাষ ঘোষকে বলা হতো 'কালো দৈত্য। জন্ম তার পাউলদিয়া-বিক্রমপুরে ১৮৯৪ সালে। তুখোড় ফিনিশিংয়ের জন্য বিখ্যাত ছিলেন অভিলাষ। শিল্ডের বিজয়সূচক গোলটিও আসে তার পা থেকে। মোহনবাগানের হয়ে ১৪ গোল করেছেন অভিলাষ। হাতে পরেছিলেন ক্লাবটির অধিনায়কত্বের অ্যার্মব্যার্ন্ড। বিক্রমপুরের আরেক ফুটবলার রাজেন সেনগুপ্ত, সেন্টার হাফ পজিশনে খেললেও দূর্দান্ত সাহস আর অফুরন্ত দমের কারণে সারা মাঠেই ছিল বিচরণ।
সে সময়ে পদ্মাপারের যে দুই ভাইয়ের নাম ছিলো সবার মুখে মুখে তারা শিবদাস আর বিজয়দাস ভাদুড়ী। শিবদাস লেফট আউট আর বিজয়দাস খেলতেন লেফট ইন পজিশনে। মাঠে ছিলেন ইংরেজদের ত্রাস।
কলকাতার ফুটবলে বিংশশতকের শুরুতে বাঘা সোমের নাম চাউর হয়েছিলো সর্বত্র। তাঁর প্রকৃত নাম তেজশচন্দ্র সোম। তিনি ডিফেন্সে খেলা শুরু করলেও পরে মিডফিল্ড পজিশনে খেলে প্রশংসা কুড়ান।
ডিফেন্ডার শৈলেস বসু না থাকলে হয়তো জন্মই হতো না ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের। শুধুমাত্র এপার বাঙলার বলেই তাকে সাইডলাইনে বসিয়ে রাখতো মোহনবাগান। পরে মোহনবাগান তো বটেই রক্ষণে প্রাচীর তুলে রাখতেন যে কোন ক্লাবের বিরুদ্ধে। পারফর্মেন্সের কারণে প্রস্তাব পেয়েছিলেন ইংলিশ ক্লাবে খেলারও।
একটা গোলই বাঙলার ফুটবলে অমর করে দিয়েছে জগন্নাথ কলেজের ছাত্র, কিশোরগঞ্জের সন্তান পাখি সেনকে। তার পায়ে দলিত হয়েছিলো ইংরেজ অহম। ৪ মহাদেশ আর ৯৯ ম্যাচে অজেয় কোরিন্থিয়ান্স পূর্ববঙ্গে এসে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিলো ঢাকা একাদশের কাছে। সে ম্যাচের রঞ্জিত বসু, জে সরকার, আর সেন, রাখাল মজুমদার, যোগজীবন দত্ত, এস মিত্র সবাই পরবর্তীতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন এই বাংলার হয়ে।
দেশভাগের পর কিছুটা ধাক্কা খায় পূর্ব পাকিস্তানের ফুটবল। তবে ঘুড়ে দাঁড়াতে সময় নেয়নি বেশিক্ষণ। যেখানে নগেন কালী, এবিএস রায়, সিদ্দিক দেওয়ান, সোনা মিয়া, সাহেব আলী, আলাউদ্দিন, রশিদ, আব্বাস মির্জা, মোনা দত্তের কাছে আমরা ঋণী; ঋণী বাঙলার ফুটবল।
No comments: