চীনা যুদ্ধবিমানের কাছে পাত্তাই পাবে না ভারতের রাফায়েল!
চীন এবং ভারত নিজেদের যুদ্ধবিমান নিয়ে তীব্র ‘যুদ্ধ’ শুরু করেছে। তবে তা আকাশে নয়। কথার মাঠে লড়ছে দু’দেশ। উভয়েরই দাবি, তাদের নতুন যুদ্ধবিমান প্রতিপক্ষের যুদ্ধবিমান থেকে অধিক শক্তিধর।
গেলো সপ্তাহে ভারতের সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান বি.এস ধানোয়া দাবি করেন, ফ্রান্সের তৈরি ভারতের নতুন রাফায়েল যুদ্ধবিমানের ধারেকাছেও আসতে পারবে না চীনা নতুন জে-২০ স্টিলথ ফাইটার।
ধানোয়া বলেন, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ, বিমান প্রতিরক্ষা, স্থল সমর্থন, দৃষ্টির ঊর্ধ্বে ভূমি থেকে আকাশে, আকাশ থেকে ভূমিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, তীব্রমাত্রায় প্রত্যাঘাতের মতো বহুমুখী সক্ষমতার কারণে রাফায়েল চীনের হুমকি ছাড়িয়ে গেছে। চীনের ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র, তাদের যুদ্ধবিমান এখন আর হুমকি নয়।
ধানোয়া বলেন, চীনের সামরিক প্রযুক্তি অত্যন্ত দুর্বল। এমনকি বেইজিংয়ের মিত্র পাকিস্তান যারা চীনের যুদ্ধবিমান এবং ট্যাংক ব্যবহার করে তাদেরও চীনা সামরিক প্রযুক্তির উপর ভরসা কম।
ধানোয়ার দাবি, ২০১৯ সালে ভারতের সঙ্গে আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান বিমান বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ এবং ফ্রান্সের তৈরি মিরাজের উপর ভরসা রেখেছিল। চীন-পাকিস্তানের যৌথভাবে তৈরি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান থাকার পরও পাকিস্তান তা খুব একটা ব্যবহার করেনি। জেএফ-১৭ সে সময় খুব বেশি ভূমিকাও রাখতে পারেনি।
তিনি প্রশ্ন করেন, বিতর্কিত ভারতের উত্তর সীমান্তে পাকিস্তান কেনো সুইডেনের তৈরি আকাশ সতর্কতা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে? চীনা জেএফ-১৭ থাকর পরও কেনো উপত্যকায় ইউরোপের রাডার এবং তুর্কি টার্গেটিং প্যাড ব্যবহার করছে? এসব প্রশ্নের উত্তরই চীনা সামরিক প্রযুক্তির দুর্বলতার নিরব উত্তর।
রাফায়েলের যুদ্ধবিমানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে একে গেম চেঞ্জার আখ্যা দেন ধানোয়া। বলেন, যুদ্ধের যে কোনো পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে রাফায়েল। ভারত ৫টি রাফায়েল মোতায়েন করেছে। যেগুলো গেলো সপ্তাহে ফ্রান্স থেকে এসেছে। হিমালয়ের লাদাখ অঞ্চলে রাফায়েলগুলো মোতায়েন করা হয়েছে। যেখানে চীন-ভারত গেলো জুন থেকে সংঘাতে জড়িত। ৩৬টি রাফায়েল ক্রয়ের চুক্তি করেছে ভারত। যেগুলো ফরাসী বিমান ও নৌবাহিনী তৈরি করছে। মিশর ও কাতার রাফায়েল ব্যবহার করছে।
সবচেয়ে আধুনকি উচ্চ প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধ জাহাজ তৈরিতে চীন বহু অর্থ ব্যয় করছে। ভারতের এমন তুচ্ছতাচ্ছিলের জবাব চীন না দিয়ে ছাড়বে না-এটা অনুমিতই ছিল।
চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেশটির সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাফায়েল থার্ড প্লাস জেনারেশনের যুদ্ধবিমান। চীনের তৈরি জে-২০ মতো ফোর্থ জেনারেশন যুদ্ধবিমান, স্টিলথ যুদ্ধবিমানের সামনে কোনোভাবেই বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারবে না রাফায়েল।
চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভারতের ব্যবহার করা রাশিয়ার তৈরি এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান থেকে কিছুটা এগিয়ে রাফায়েল। যুদ্ধের কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান থেকে বেশি সুবিধা নিতে পারে ফরাসী এ যুদ্ধবিমান। ভারতের বিমান বাহিনীর বিভিন্ন সেক্টরে এসইউ-৩০ ব্যবহার হয়ে আসছে। রাফায়েল এসইউ-৩০ থেকে একধাপ উন্নত। কিন্তু কোনোভাবেই ফোর্থ জেনারেশন যুদ্ধবিমানকে টপকাতে পারে না।
রাফায়েলে এইএসএ রাডার, আধুনিক অস্ত্র এবং সীমিত স্টিলথ ব্যবহারের কারণে এটিকে থার্ড প্লাস জেনারেশন যুদ্ধবিমানের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান অনেক দেশ ব্যবহার করে। তবে রাফায়েলের পক্ষে স্টিলথ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ফোর্থ জেনারেশন যুদ্ধবিমানকে মোকাবিলা খুবই মুশকিল। বলেন, চীনা বিশেষজ্ঞরা।
বাস্তবে রাফায়েলকে ৪ দশমিক ৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে অল্প পরিমাণে স্টিলথ প্রযুক্তির সক্ষমতা থাকায় রাডার ফাঁকি দেয়া এবং নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে হামলার নিপূণ দক্ষতা রয়েছে। অবশ্যই সে দক্ষতা মার্কিন এফ-৩৫ এর মতো পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান থেকে অনেক কম।
অন্যদিকে, রাফায়েল দ্রুত লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানতে পারে। দুই ইঞ্জিনের রাফায়েল পুরানো যুদ্ধবিমানের মতো অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ ছাড়াই সুপারসনিক গতিতে উড়তে পারে।
রাফালের সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র লক্ষবস্তু আক্রমণ। এটি র্যামজেট চালিত, রাডার-নির্দেশিত, ভিজ্যুয়াল রেঞ্জের বাইরে আকাশে থেকে ৫০ মাইলে দূরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম। এতে ব্যবহার হয়েছে এইএসএ রাডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রযুক্তি।
চীনের জে-২০ যুদ্ধবিমান সম্পর্কে খুব একটা জানা যায়নি। বেইজিংয়ের কাছে ৫০টি জে-২০ রয়েছে। প্রত্যেকটির ওজন ২১টন। যা রাফায়েল থেকে বড় এবং ভারী। রাফায়েল দেখতে কিছুটা লম্বা মার্কিন এফ-১৬ এর মতো। জে-২০ মার্কিন এফ-২২ এবং রুশ এসইউ-৫৭ স্টিলথ যুদ্ধবিমানের মতো বড় আকারের।
পশ্চিমে জে-২০টি নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। তাদের মতে জে-২০ দূরবর্তী লক্ষবস্তু হামলা এবং কঠোরভাবে প্রতিরোধের জন্য বানানো নাকি এটি সম্পূর্ণ ডগফাইটে সক্ষম। জানা গেছে জে-২০টির নতুন সংস্করণ তৈরির পরিকল্পনা চলছে। জে -২০-বি’তে থ্রাস্ট ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকবে। হামলার সক্ষমতা আরো বাড়ানোর জন্য ইঞ্জিনের অগ্রভাগ বিশেষভাবে তৈরি করা হবে।
জে-২০তে পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। রাডার গাইডেড জে-২০ দিয়ে ১২০ মাইল দূরের লক্ষবস্ত্যুতে হামলা চালানো যায়। রাশিয়া থেকে চীন বহু বিমানের ডিজাইন নকল করেছে বা স্বত্ত্ব ক্রয় করেছে। চীনের যুদ্ধবিমানের সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো তার ইঞ্জিন। যা পশ্চিমা যুদ্ধবিমান থেকে কম শক্তিশালী এবং কম নির্ভরযোগ্য। রুশ এএল-৩১ ইঞ্জিন দিয়ে জে-২০ তৈরি শুরু করে চীন। বর্তমানে তা স্থগিত। এখন চীনের তৈরি ডব্লিউএস-১৫ ইঞ্জিন দিয়ে জে-২০ বি বানাচ্ছে বেইজিং। ডব্লিউএস-১৫ ইঞ্জিন আগামী দু’এক বছরের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে। তারপরই জে-২- বি এর গণউৎপাদন শুরু করবে চীন। জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নি পোস্ট।
এখন রাফায়েল শক্তিশালী নাকি জে-২০? প্রথম কথা হলো দুটির একটিও যুদ্ধক্ষেত্রে পরীক্ষা করা হয়নি। জে-২০-এর ব্যবহার তো এখনো দেখাই যায়নি। তাই এর ক্ষমতা বিশেষ করে রাডার শনাক্তকরণ এড়াতে এটি সত্যিই সক্ষম কী না তা অদৃশ্য থেকে গেছে। রাফায়েলকে আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সেখানে দুর্বল লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে দেখা গেছে। জে-২০ বা রাফায়েল কাউকেই কঠিন প্রতিপক্ষ মোকাবিলা করতে দেখা যায়নি। তাই তাদের শক্তিমত্তা বা দুর্বলতা কিছুই স্পষ্ট নয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- যদি চীন-ভারতের মতো পরমাণু শক্তিশালী দেশের মধ্যে কোনো সংঘাত শুরু হয় তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং উত্তেজনা কমানোই তখন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আর রাফায়েলে এবং জে-২০ এর মধ্যে যুদ্ধ হলে বিমানের শক্তিমত্তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাইলটের দক্ষতা, গ্রাউন্স রাডারের উপস্থিতি, বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, সুসংহত কমান্ড নেটওয়ার্ক এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিমানঘাঁটি কার কতো কাছে দূরে তার উপর।
যেমন, লাদাখে চীনা বিমানঘাঁটির সক্ষমতা সীমিত। বড় এয়ারফিল্ড জিনজিয়ান এবং তিব্বতে। যা ৬শ’ মাইল দূরে। অন্যদিকে ভারতের আম্বালা যেখানে রাফায়েল মোতায়েন করা হয়েছে-বিতির্কিত অঞ্চল থেকে মাত্র ৩শ’ মাইল দূরে।
জে-২০ বা রাফায়েলের অপ্রকাশিত বিচ্ছিন্ন কিছু প্রযুক্তিগত ত্রুটি বাদ দিয়ে যদি বলা হয় হিমালয়ের আকাশের শাসক কে হবে? উত্তর নিশ্চয় রাফায়েল বা জে-২০ একা তা নির্ধারণ করতে পারবে না।
সূত্র: ফোর্বস ম্যাগাজিন
Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: