উদ্বাস্তু শিবির থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে
ছোট্ট জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি খেলতে নামছেন আলফোন্সো ডেভিস। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের বিপক্ষে বায়ার্ন মিউনিখের অন্যতম বড় অস্ত্র ১৯ বছর বয়সী এই ফুটবলার। পথটা কি এতোটা মসৃণ ছিল? ইউরোপ সেরার ফাইনালে পৌঁছানোর সংগ্রামের চেয়েও ডেভিসের জীবন সংগ্রামটা যে আরো কঠিন! লাইবেরিয়ান দম্পতির কোলে জন্ম। গৃহযুদ্ধ এড়াতে বাবা ডেবিয়াহ এবং মা ভিক্টোরিয়া পালিয়ে বেড়ান। আশ্রয় হয় আফ্রিকান দেশ ঘানার উদ্বাস্তু শিবিরে। সেখানেও টিকতে পারেননি বেশিদিন। জীবন বদলাতে পাড়ি জমান আটলান্টিক মহাসাগরের ওপারে। চলে যান উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডায়। সেই গল্পটায় শোনা যাক আজ। বাবা ডেবিয়াহ বলেন, সেসময় বাঁচতে হলে বন্দুক কাঁধে নিয়ে ঘুরতে হতো। আমরা সেটি করতে কোনভাবেই রাজি ছিলাম না। সেখানকার চিত্র ছিল রীতিমতো ভয়ঙ্কর। লাইবেরিয়া থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন ঘানায়। সেখানকার জীবন আরো দুর্বিষহ। মা ভিক্টোরিয়া বলেন, ওখানকার জীবন ছিল এমন, মনে হতো একটা জেলখানায় কেউ আপনাকে বন্দী করে চাবিটা নিয়ে চলে গেছে। ওখান থেকে বের হওয়ার কোন উপায় ছিল না। সে জীবন ছেড়ে ডেভিসের পরিবার পাড়ি জমায় কানাডার এডমন্টনে। মা তুলে ধরেন সেই গল্পও। বলেন, সৌভাগ্যক্রমে ডেবিয়াহ'র পরিবারের একটা সুযোগ ছিল কানাডায় চলে যাওয়ার। আমি ওই ব্যাপারে কিছুই জানতাম না কিংবা ওখানকার কাউকে চিনতামও না। তারপরও রাজি হয়ে গেলাম। কানাডায়ও জায়গা হয় উদ্বাস্তু শিবিরে। তবে ডেভিসের স্বপ্নের পথে চলা শুরু তখনই। ২০০৬ সালে এডমন্টনের একটি স্কুলে ভর্তি হন আলফোন্সো ডেভিস। সেখানেই শুরু করেন ফুটবল খেলা। বল নিয়ে কারিকুরি দেখানো শুরু। এরপর সেখানকার 'ফ্রি ফুটি' নামে একটি সংস্থায় যোগ দেন ডেভিস। ৪০০০ উদ্বাস্তু কিশোরের জন্য ফ্রিতে ফুটবল শেখার ব্যবস্থা করে দেয় সংস্থাটি। 'ফ্রি ফুটির' প্রধান নির্বাহী টিম এ্যাডামস বলেন, একটুখানি পথ দেখিয়ে দিতে পারলে যে কি হতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আলফোন্সো। তবে ছেলেটার বিশেষত্বও ছিল। ফুটবল নিয়ে তার দক্ষতা প্রশ্নাতীত। এ্যাডামস আলফোন্সো ডেভিসকে নিয়ে যান সেন্ট নিকোলাস ক্যাথলিক স্কুলের ফুটবল একাডেমির পরিচালক মার্কো বোসিও'র কাছে। বোসিও তাকে নিয়ে যান কানাডার শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাব ভ্যাঙ্কুয়েভার হোয়াইটক্যাপে। বোসিও বলেন, আমি হোয়াইটক্যাপকে ওর ফুটবলীয় দক্ষতার কথা বলি। তারা তাকে দেখতে চায় এবং আমি যেটি দেখি তারাও সেটি দেখে। সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়। তখনই আমরা ওর মেধার পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যাই। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১০০০ কিলোমিটার দূরের ভ্যাঙ্কুয়েভারে পাড়ি জমান ডেভিস। ওই বয়সে নিজের সন্তানকে দূরে সরাতে চায় কোন মা? ডেভিসের মা ভিক্টোরিয়া বলেন, আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিশোর বয়সীরা কি করে সে ব্যাপারে আমার ধারণা ছিল। আমি ভাবতাম সেও হয়তো বখে যাবে। আমি চাচ্ছিলাম তাকে আরো পরে ছাড়তে। অন্তত ১৬/১৭ বছর বয়স হলে তারপর তাকে যেতে দিবো, এমনটা ভাবছিলাম। কিন্তু ডেভিস আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করলো, সে বদলাবে না। সে আমাদের সবাইকে গর্বিত করবে এমন কথাও দিয়েছিল। হোয়াইটক্যাপসের হয়ে মাত্র ১৫ বছর ৮ মাস বয়সে মাঠে নামেন ডেভিস। বনে যান মেজর সকার লিগের ইতিহাসের সবচেয়ে কনিষ্ঠ ফুটবলার। ২০১৭ সালে কানাডার নাগরিকত্ব পান তিনি এবং এর সপ্তাহখানেক পরই ডাক পান দেশটির জাতীয় ফুটবল দলে। সে বছরই গোল্ড কাপে গায়ানার বিপক্ষে গোল করে ডেভিস বনে যান কানাডার ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। সেই কিশোর বয়সেই ইতিহাসের পাতা মাড়িয়ে চলা ডেভিস। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতেও হয়নি। ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে স্বপ্নটা চলে আসে হাতের তালুর কাছে। আলফোন্সো ডেভিস ডাক পান ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে। ১৮ বছর বয়স হওয়ার সাথে সাথেই দেশটিতে পাড়ি জমান ডেভিস। বায়ার্ন মিউনিখের স্পোর্টিং ডিরেক্টর হাসান সালিহামিজিচ বলেন, আমরা তার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করি কারণ আমাদের মনে হয়েছে তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা ফুটবলার হবে সে। গেল বছরের জানুয়ারিতে বায়ার্নের জার্সিতে অভিষেক হয় ডেভিসের। তবে নিজের জাত চিনিয়েছেন এই মৌসুমে। এমনই যে পুরো ইউরোপে হাঁকডাক পড়ে গেল। সবাই এখন এক নামেই চেনে তাকে। দলবদলের মৌসুম শুরুর আগেই ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো হাত বাড়িয়ে রেখেছে ডেভিসকে পেতে। মূলত উইঙ্গার হলেও, বায়ার্নে এসে ক্লাবের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে আমূল বদলে ফেললেন ডেভিস। বনে গেলেন লেফট ব্যাক। বলা হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা লেফট ব্যাকই হতে যাচ্ছেন ডেভিস। ক্লাব কোচ হ্যান্সি ফ্লিক বলেন, ওর উন্নতি রীতিমতো বিস্ময়কর! সতীর্থরাও মুগ্ধ ডেভিসের উন্নতিতে। ক্লাব তারকা থমাস মুলার বলেন, সে এসেছে উইঙ্গার হিসেবে কিন্তু ডিফেন্ডার হিসেবে সে দুর্দান্ত খেলছে। আমরা এর আগে এমন ফুটবলার পাইনি। আরেক তারকা জেরোমে বোয়েটাংও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেন, এমন প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলার আপনি সবসময় পাবেন না। এই বয়সেই আমরা তার কাছে অনেককিছু প্রত্যাশা করি কারণ আমরা জানি সে তা দিতে সক্ষম। ক্লাব চেয়ারম্যান কার্ল হেইঞ্জ রুমিনিগেও আচ্ছন্ন হয়ে আছেন ডেভিসে। তিনি বলেন, মাঠে তার ফুটবলীয় কলাকৌশল দিয়ে সে রীতিমতো জাদু করে রেখেছে আমাদের সমর্থকদেরকে। বুঝাই যাচ্ছে, সতীর্থদের কাছে কতোটা নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছেন এই ফুটবলার। উদ্বাস্তু শিবির আর বন্দুকের ঝনঝনানি মাড়িয়ে ডেভিস ছুটে চলেছেন স্বপ্নের পথে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল জিততে পারলে তো সাক্ষী হয়ে যাবেন ইতিহাসেরও। বয়স মাত্র ১৯। জীবনপথের বন্ধুর পথ মাড়ানো ডেভিসের সামনে কিংবদন্তির পথ খুঁজে নেয়ার দরজা উন্মুক্ত। তার আগে মা ভিক্টোরিয়া আরো একবার সতর্কবার্তা দিলেন। 'তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার হতে পারো, তবে তুমি যদি অন্যকে সম্মান করতে না শিখো, কেউ তোমাকে পছন্দ করবে না'। মায়ের দেয়া এই বাণীটা আঁকড়ে ধরে নিশ্চয়ই নামবেন আলফোন্সো ডেভিস। প্রতিপক্ষ পিএসজির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই ছুটবেন স্বপ্নের শিরোপার পথে।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: