ইউরোপের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের মার্কিন দাবি প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলো অভ্যন্তরীণ আলোচনায় মার্কিন উদ্বেগের বিষয়ে একমত হলেও জনসম্মুখে একাত্মতা প্রকাশ থেকে বিরত থাকছে। এর আগে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করতে জাতিসংঘের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের দাবি, ২০১৫ সালে সই হওয়া পরমাণু চুক্তির ভয়াবহভাবে লঙ্ঘন করেছে তেহরান। ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল উদ্যোগ চুক্তিতে থাকা বাকি অংশীদারদের অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট বরাবর পাঠানো চিঠিতে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের দাবি জানান। পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জাতিসংঘের ২২৩১ প্রস্তাবনা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের অধিকার ওয়াশিংটনের ছিল। ওই প্রস্তাবনার শর্তানুযায়ী ইরানের সঙ্গে ৬ বিশ্বশক্তির পরমাণু চুক্তি সই হয়। ২০১৮ সালে সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যায়। ‘এটি সত্যি সোজা একটি বিষয় এবং খুবই সহজ। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে। তখন যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রয়োগ করবে। বলেন, পম্পেও। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্যরা নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জাতিসংঘে ইরানি রাষ্ট্রদূত মাজিদ তাখত রাভাঞ্চি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি সম্পূর্ণ অগ্রণযোগ্য। বলেন, ওয়াশিংটনের কোনো বৈধ অধিকার নেই। এ বিষয়ে বির্তর্কের কোনো সুযোগও নেই তাদের। রাভাঞ্চি বলেন, ২২৩১ প্রস্তবনার অধীনে বিতর্কিত প্রস্তাব বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে ওয়াশিংটন। নিরাপত্তা পরিষদে তেহরানের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল ট্রাম্প প্রশসান। পর্যাপ্ত সমর্থন না পাওয়া ভেস্তে যায় তাদের সে উদ্যোগ। হোয়াইট হাউসের বিতর্কিত প্রস্তাব দায়িত্বশীলতার সঙ্গে রুখে দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। ব্যর্থতার পর্যবসিত হয়েছে তার উদ্যোগ। আমরা বিশ্বাস করি আগামী ৩০ দিনে কিছুই হবে না। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের কোনো ফলও আসবে না। বলেন রাভাঞ্চি। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা মার্কিন উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘ রুশ উপরাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পোলেনস্কি টুইট বার্তায় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়েছেন। ‘ধরেন পৃথিবীতে দুটি গ্রহ আছে। কাল্পনিক একটিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যেখানে কুকুর কুকুর খায়। যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে সে যা ইচ্ছে করতে পারে। কারো সাথে সমঝোতা ছাড়াই সে চুক্তি ত্যাগ করতে পারে। আবার তা থেকে ফায়দাও নিচ্ছে। অন্যগ্রহটিতে বাকি মানুষেরা বাস করে। যেখানে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কূটনীতি রাজত্ব চলে। টুইটে বলেন, রুশ উপরাষ্ট্রদূত। আলাদাভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিনটি দেশ ইতোমধ্যে মার্কিন উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। পরমাণু চুক্তির পক্ষে তাদের অবস্থান জোরালোভাবে পুনর্ব্যক্ত করেছে। জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ২০১৮ সালে ৮মে বেরিয়ে যাওয়ার পর এখন যুক্তরাষ্ট্র আর চুক্তির কেউ না। আমরা অবস্থান চুক্তি রক্ষার পক্ষে। সুতরাং ওয়াশিংটনের উদ্যোগে সমর্থন দেয়া আমাদের বর্তমান অবস্থানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। ইউরোপীয়দের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন পম্পেও। অভিযোগ করেন, ইউরোপীয়রা অভ্যন্তরীণ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেও জনসম্মুখে তা প্রকাশের সাহস পায় না। ইউরোপের দেশগুলো আয়াতুল্লাহ খামেনির পক্ষে থাকতে চায় বলেও জানান তিনি। পম্পেও বলেন, ইউরোপীয়দের কর্মকাণ্ড ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়ার সাধারণ মানুষের পাশপাশি তাদের নিজেদের জনগণকেও বিপদে ফেলেছে। ‘ইরান পরমাণু চুক্তি মেনে চলছে না’ নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন জাতিসংঘে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিয়ান ট্রিয়ানশিয়াহ দেজানি। তার বরাবর চিঠিটি পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্যালি ক্রাফ চিঠির বিষয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছে, ইরান পরমাণু চুক্তির শর্ত মেনে চলছে না। এ কারণে ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা এক প্রতিবেদেন জানিয়েছে, ইরানের কয়েকজন নাগরিক চুক্তি লঙ্ঘন করছে। কিন্তু ইরান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে যাওয়া এবং তেহরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে এমনটা ঘটছে। ক্রাফট বলেন, ইউরোপীয় অংশদীররা ইরানকে পরমাণু চুক্তির শর্তে ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ব্যাপক প্রচেষ্টা এবং নিরঙ্কুশ কূটনীতি সত্ত্বেও ইরান উল্লেখযোগ্যভাবে শর্ত লঙ্ঘন করছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে দাড়িয়েছে। একইসঙ্গে ইরান যে পরমাণু চুক্তির শর্ত মানছে না বিষয়টি নিসরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। বলেন ক্রাফট। চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া ছয় পৃষ্ঠার একটি চিঠিতে ক্রাফট ব্যাখ্যা করেছেন, সরে গিয়েও কোনো যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিতে থাকা অংশীদারদের মতো নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের দাবি জানাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলোও চুক্তির গোড়ার দিকের অংশীদার হিসেবে তার অধিকার বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী হিসেবেও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারে। বলেন ক্রাফট। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এ যুক্তি ইতোমধ্যে পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মধ্যে মার্কিন মিত্র যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে চীন এবং রাশিয়া। বৃহস্পতিবার পম্পেওর আবেদনের আগে রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলে নেবেনজিয়া বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কোনো আইনি অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের নেই। আমরা তাদের এ ধরনের আহ্বান গ্রহণ করবো না। অবশ্যই আমরা ওয়াশিংটনের এমন প্রস্তাবকে চ্যালেঞ্জ করবো। চীন জানিয়েছে, রাশিয়ার অবস্থানের সঙ্গে তারা পুরোপুরি একমত। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এদিন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজকে ফোনালাপে জানিয়েছেন, মার্কিন দাবি প্রতিরোধ করবে নিরাপত্তা পরিষদ। জারিফ বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে, আন্তর্জাতিক আইনের ব্যবহার মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পদক্ষেপের ফলাফলে ইরানের কিছুই হবে না। কিন্তু ভেঙ্গে পড়বে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ। যা নিরাপত্তা পরিষদের জন্যও ব্যর্থতা বলে গণ্য হবে। প্রস্তবনার শর্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩০ দিনের ক্ষণ গণণা শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের প্রস্তাব পাস না হলেও ২০১৫ সালে চুক্তির আগে ইরানের ওপর আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে। এছাড়া, ইরানের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে পরিষদে কোনো প্রস্তাব উত্থাপন হলে নিশ্চিতভাবে তার বিরুদ্ধে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করবে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হতে পারে দাবির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের আইনি অধিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য তা প্রত্যাখ্যান করবে। তারপরও যদি নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হয় তাহলে নিরাপত্তা পরিষদের আইন প্রয়োগের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের বিষয়ে কোনো রাখঢাক রাখেননি মার্কিন প্রসিডেন্ট এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সম্প্রতি তেহরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করে, একটি মাত্র দেশকে নিজেদের পক্ষে পায় ওয়াশিংটন। অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হবে অক্টোবরে। চীন, রাশিয়া মার্কিন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বাকি ১১ সদস্য ভোটদানে বিরত থাকে। যাকে যুক্তরাষ্ট্রের করুণ হার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মার্কিন মিত্র ব্রিটেন এবং ফ্রান্স ইরানের পরমাণু চুক্তির পক্ষে। নভেম্বরে নির্বাচনে জয়ী হলে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন চুক্তি রক্ষার পক্ষে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করে, নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হলে ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাবে। পুরোদমে শুরু করবে পরমাণু কার্যক্রম। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চুক্তির পর নিষেধাজ্ঞা শিথিলের কারণে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে ইরান। সে অর্থ দিয়ে তারা পরমাণু কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সঠিক কাজ করছে।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: