বাইডেনের সঙ্গী কামালা কট্টর ইসরাইল সমর্থক মার্কিন নির্বাচনে রানিংমেট হিসেবে ইসরাইলের কট্টর সমর্থক, সৌদি আরবের কড়া সমালোচক এবং এক সময়ের প্রতিপক্ষ কামালা হ্যারিসকে বেছে নিলেন ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। জয়ী হলে প্রেসিডেন্ট হবেন বাইডেন। কামালা হবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। মার্কিন সংবিধানে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ খুব একটা ক্ষমতাশালী নয়। সিনেটে ভোটাভুটিতে টাই ব্রেক করা এবং প্রেসিডেন্টের অবর্তমানে তার দায়িত্ব সামাল দেয়াই ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রধান কাজ। তবে ক্ষমতার মূল কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টও। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ট্রাম্প প্রশাসনের করোনা টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বারাক ওবামার শাসনামলে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার পরিকল্পনা পর্যবেক্ষণ করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়কালে হোয়াইট হাউস সামলেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি। নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ৭৭ বছর বয়সী জো বাইডেন দায়িত্ব নিলে, তিনিই হবেন মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। বয়সের ভারে তিনি হয়তো সব দায়িত্ব সমানভাবে চালাতে নাও পারেন। সেক্ষেত্রে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস সরকার পরিচালনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেন। এবারের মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের জন্য ডেমোক্রেট পার্টি থেকে মননোয়ন চেয়েছিলেন কামালা হ্যারিস। ডিসেম্বরে মননোয়নের দৌঁড় থেকে ছিটকে গিয়ে মার্চে জো বাইডেনকে সমর্থন জানান তিনি। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াতে কামালাকে নিশ্চিতভাবে সহায়তা করবে। নির্বাচিত হলে বাইডেন প্রশাসন সম্ভবত মধ্যাপ্রাচ্য এবং মার্কিন বিদেশনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেয়া কিছু নীতিতে বড়সড় পরিবর্তন আনবে। যার দায়িত্ব পড়তে পারে কামালা হ্যারিসের উপর। কে কামালা হ্যারিস? জ্যামাইকা এবং ভারতীয় অভিবাসীর ঘরে জন্ম নেন হ্যারিস। ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে বেড়ে উঠা হ্যারিস আইন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। লোকাল প্রসিকিউটর হিসেবে শুরু করেন আইনি পেশা। ২০০৩ সালে সফলভাবে সান ফ্রান্সিকো ডিস্ট্রিকের অ্যাটর্নির দায়িত্ব পালন করেন হ্যারিস। ৭ বছর পর ক্যালিফোর্নিয়ার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৬ সালে সিনেটর নির্বাচিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রাজনীতির দৃশ্যপটে হাজির হন কামালা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোরবিরোধী হিসেবে। ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর ব্ল্যাক লাইভসের ম্যাটারসের শীর্ষ স্থানীয় প্রতিনিধি। যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা এবং সমতা নিশ্চিতের লড়াইয়ে তার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জ্যামাইকান-ভারতীয় বংশোদ্ভূত কামালা আন্তঃধর্মীয় এক অনুষ্ঠানে বিয়ে করেন এক ইহুদিকে। কামালার স্বামী ডগলাস এমহোফ। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন ৫৫ বছর বয়সী কামালা। দৌঁড়ের প্রথম দিকেই ছিটকে যান। মার্চে বাইডেনের প্রচারণায় সমর্থন জানান। যখন অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট বাইডেনের পরিবর্তে বামপন্থী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের উপর ভরসা রাখছিল। মননোয়নের দৌঁড়ে স্যান্ডার্স শুরুর তিনটি প্রাইমারিতে জয়ী হয়েছিলেন। হ্যারিস নিজেকে প্রগতিশীল বলে পরিচয় দিলেও প্রসিকিউটর থাকাকালীন তার কিছু কর্মকাণ্ড এবং ইসরাইলের প্রতি অন্ধ সমর্থনের জন্য সমালোচিত। মধ্যেপ্রাচ্য ইস্যুতে কামালা হ্যারিস: ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যু: বরাবরই ইসরাইলের কট্টর সমর্থন হ্যারিস। ২০১৭ সালে সিনেট সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার কয়েক মাস পর দি আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (এআইপিএসি) আয়োজিত সম্মেলনে দেয়া ভাষণে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ককে ‘অবিচ্ছেদ্য ’ বলে আখ্যা দেন হ্যারিস। ‘ইসরাইল কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্ন ইস্যু হওয়া উচিৎ নয়। আমি যতোদিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর থাকবো, ইসরাইলের নিরাপত্তা এবং ইসরাইলিদের আত্মরক্ষা নিশ্চিতে দ্বিপক্ষীয় ও বৃহৎ সমর্থন আদায়ে ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবো।’ বলেন হ্যারিস। সিনেটর হিসেবে তার প্রথম আইনি পদক্ষেপ ছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবে ভেটো দেয়া। পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবে দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি নির্মাণের নিন্দা জানানো হয়। প্রস্তাবে সমর্থন ছিল সাবেক ওমাবা-বাইডেন প্রশাসনের। কিন্তু যৌথভাবে বিরোধিতা করেন কামালা হ্যারিস। গেলো বছর মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস কামালার কাছে জানতে চায়, ইসরাইল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলছে কী না? জবাবে তিনি বলেন, ‘সর্বোপরি মেনে চলছে।’ ২০১৯ সালের শুরুতে ইসরাইলেকে বয়কটে রাজ্যগুলোকে উৎসাহী করতে সিনেটে উত্থাপিত বিলের বিপক্ষে যে ২৩ জন ডেমোক্র্যাট সিনেটর ভোট দেন তাদের একজন কামালা হ্যারিস। তবে অধিকাংশ ডেমোক্র্যাটের মতো পশ্চিম তীরের অংশ বিশেষে ইসরাইলি সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন তিনি। বলেন, তেল আবিবের একতরফা সিদ্ধান্ত ইসরাইলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। জুনে ট্রাম্পকে পাঠানো একটি চিঠিতে তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষায় পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ১০ বছরে দেশটিকে ৩ হাজার ৪শ’ কোটি মার্কিন ডলার দেয়ার জন্য সই হওয়া সমঝোতার পক্ষে তিনি অটল। ’ পশ্চিমতীরসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অংশে ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তেল আবিবের সাবেক অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন। তাদের ধারণা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার কারণে ভয়াবহ সংঘাত তৈরি হতে পারে। ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে পরবর্তী নিরাপত্তা সহযোগিতা ভেঙ্গে পড়বে। প্রতিবেশী জর্ডান এবং মিশরের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কের অবনতি হবে। ট্রাম্পকে দেয়া চিঠিতে এ সতর্কায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন কামালা হ্যারিস। সৌদি আরব ইস্যু: হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পর থেকেই ট্রাম্প-সৌদি আররে মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ডেমোক্র্যাটরা রিয়াদের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ সম্পর্কের তীব্র সমালোচক। বিভিন্ন ইস্যুতে তারা সৌদি আরবকে জবাবহিদিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। কামালাও তাদের বাইরে নয়। ২০১৮ সালে সৌদি সরকারের এজেন্টদের হাতে সাংবাদিক জামাল খাশোগি নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন যে ডেমোক্র্যাটরা তাদের মধ্যে ছিলেন কামালা। নিন্দার পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে জবাব চান তারা। ‘জামাল খাশোগি হত্যা জঘন্য একটি ঘটনা। যা সারাবিশ্বের সাংবাদিকদের উপর প্রতীকী হামলা।’ হত্যাকাণ্ড অনুসন্ধান করে গোয়েন্দাদের পাওয়া তথ্য প্রতিবেদন আকারে প্রকাশের দাবিতে সিনেটে যৌথভাবে একটি প্রস্তাব উত্থাপনের পর গেলো বছর কামালা এ মন্তব্য করেন। ২০১৯ সালে ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি সমর্থিত জোটকে দেয়া সহায়তা বন্ধের পক্ষে ভোট দেন তিনি। যাতে রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জানানো হয়। তবে কংগ্রেসে পাস হওয়া দুটি পদক্ষেপই আটকে দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘ইয়েমেনে যা হচ্ছে খুবই ভয়াবহ। গেলো বছর প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১শ’ জন মানুষ নিহত হয়েছে। লাখ লাখ শিশু দুর্ভিক্ষের কারণে প্রাণ হারিয়েছে। কংগ্রেসকে অবশ্যেই এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।’ ওই সময় কামালা এ মন্তব্য করেন। প্রেসিডেন্ট পদে মননোয়নের জন্য লড়াইয়ের সময় মার্কিন ফরেন রিলেশনস কাউন্সিলকে তিনি বলেন, ‘ইয়েমেন সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বন্ধ করতে হবে।’ ‘সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে যৌথস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। যেখানে রিয়াদ আমাদের শক্তিশালী অংশীদার। এ বিষয় আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখা উচিৎ। তারপরও মার্কিনদের মূল্যবোধ এবং স্বার্থের ভিত্তিতে আমাদের উচিৎ সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুর্নমূল্যায়ন করা ‘ বলেন কামালা। ইরান ইস্যু: ২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে করা আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ান ট্রাম্প। তেহরানের উপর পুনর্বহাল করেন চুক্তির শর্তে প্রত্যাহার করা আর্থিক নিষেধাজ্ঞা। কামালা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচক। অবস্থান ব্যক্ত করেন পরমাণু চুক্তির পক্ষে। ‘ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়া আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থবিরোধী। এ সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রকে তার ঘনিষ্ঠমিত্রদের থেকে আলাদা করা হয়েছে। ’চুক্তি থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার পর কামালা এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন। ২০২০ সালে মার্কিন হামলায় ইরানি শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি নিহতের পর যৌথভাবে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন কামলা। প্রস্তাবে তেহরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধতে পারে-এমন কর্মকাণ্ডে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরকে অর্থ দেয়া বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। ‘কোনো ভুল করা চলবে না। সোলাইমানি যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু। কিন্তু ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড উত্তেজনা উস্কে দিয়েছে এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা আরো বাড়িয়েছে। কংগ্রেসের উচিৎ সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে উত্তেজনা নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া।’ বলেন কামালা।
Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: