মার্কিন নির্বাচন ঘিরে ঝুঁকিতে বিশ্ব
বিখ্যাত ফরাসি উপন্যাসিক জুল ভার্ন-এর ‘আশি দিনে বিশ্ব ভ্রমণ’ উপন্যাসটি পড়েছেন হয়তো। উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র ফিলিয়াস ফগ বাস করতেন লন্ডনে। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার সময় পত্রিকার একটা প্রতিবেদন নিয়ে তর্কে জড়ান ফগ। তর্কের বিষয় সবচেয়ে কম কতদিনে বিশ্ব ভ্রমণ করা সম্ভব। ফগ বলে বসলেন মাত্র আশি দিনে তিনি পারবেন। বন্ধুরাও সুযোগে ২ হাজার ডলারের বাজি ধরে বসলেন। প্রচণ্ড আত্মমর্যাদাশীল মানুষটি কথা থেকে পিছপা হতে পারলেন না। বাজিতে রাজি হয়ে গেলেন। সে সময় ইঞ্জিন ছিল না, পাল তোলা নৌকা। দুর্গম, অজানা, অচেনা পথে পথে বাধা। তাও পরদিন সকালে চাকরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। অন্তত ৩ মাস অর্থাৎ ৯০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। দেশটির জনগণ আগামী ৪ বছরের জন্য ৫৯তম প্রেসিডেন্টকে বেছে নেবে। কাজটি অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় খুব চ্যালেঞ্জের। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে শক্তি শালি। নিজেদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বি চীন ও রাশিয়ার চেয়েও শক্তি ধর। তাই দেশটির নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে চায় প্রতিদ্বন্দ্বি দেশ দুটি। ফলে এর প্রভাব রয়েছে বিশ্বরাজনীতিতে। তাই দেশটির নির্বাচন সব সময় বিশ্বব্যাপী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আবারও নির্বাচিত হন তবে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তো বটেই বিশ্বের জন্যও বড় হুমকি তৈরি করবে। অন্যদিকে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা ধনকুবের ট্রাম্পও নির্বাচনের ফল নিজের পক্ষে টানার সব চেষ্টাই করবেন। তাই আগামী নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রকে দীর্ঘ সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকটের দিকে নিয়ে যাবে। একই সঙ্গে নাগরিকদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের সৃষ্টি করবে। আরও পড়ুন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়ার জানার বিষয় সবারই জানা কথা যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২০০০ সালে আল গোর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে বুশের কাছে পরাজিত হন। একইভাবে মার্কিন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ২০১৬ সালে হিলারির কাছে জনগণের ভোটে হারেন। ওই নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন মোট ভোট পেয়েছিলেন ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৫টি। ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০৬ ভোট। অর্থাৎ ট্রাম্প হিলারির চেয়ে ২ লাখ ৬ হাজার ৪৫৯ ভোট কম পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। সেখানে দেখা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছিলেন ২৭৯টি, আর হিলারির পক্ষে ২২৮টি। অর্থাৎ হিলারির চেয়ে ৫১ ভোট বেশি পেয়েছিলেন ট্রাম্প। ফলে বেশি ভোট পাওয়ার পরও হিলারি ক্লিনটন নির্বাচিত হতে পারেননি। পক্ষান্তরে কম ভোট পেয়েও ইলেক্টরাল ভোটে এগিয়ে থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারের নির্বাচনেরও যদি একই ঘটনা ঘটে আর জো. বাইডেন জনগণের ভোট বেশি পান আর ইলেক্টোরাল কলেজ ট্রাম্পকে বিজয়ী করে তবে আবারো ভোটের ফল আদালতে গড়াবে। আর সেটি যদি হয় আর গোরের মতো ভোট বেশি পাওয়া বাইডেন বা হিলারির মতো হয় পরিণতি, যদি জনগণের ভোট কম পেয়েও ট্রাম্প নির্বাচিত হন তবে, জনগণ এবার সেটি সহজে মেনে নেবে না। কারণ এরই মধ্যে কয়েক দফায় বাইডেন ও ট্রাম্প সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারের সময় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। তাই নির্বাচন পরবর্তী সংঘাত দীর্ঘায়িত হবে এবং এটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন কিছু ঘটলে ট্রাম্প নিশ্চিতভাবেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করবেন। যেটি তিনি এরই মধ্যে পোর্টল্যান্ড এবং অন্য শহরগুলোতে করেছেন। তখন সংঘর্ষ আরো তীব্র হয়ে উঠবে। এরই মধ্যে দেশটিতে ভোটার জরিপে জো. বাইডেন বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প নানা কায়দায় দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার পথ খুঁজছেন। ট্রাম্প এরই মধ্যে কয়েকবার বলেছেনও কোভিড-১৯ এর কারণে নির্বাচন পেছানো জন্য। তবে তিনি কোনো না কোনো পথ খুঁজবেন নির্বাচনে দুর্নীতির আশ্রয় নিতে। অন্যদিকে ট্রাম্প আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে ‘ডাক ভোট’ (ডাক যোগে পাঠানো ভোট) হ্রাস করার জন্য প্রস্তাব তুলেছেন। ওই পদ্ধতি নিয়ে তিনি নানা ঠুনকো অজুহাত তুলেছেন। মনে করা হচ্ছে, পোটল্যান্ড এবং সিকাগোতে সম্প্রতি বর্ণবাদ এবং সহিংসতা উস্কে দিয়ে পরিস্থিতি নিজের পক্ষে আনতে চাইছেন ট্রাম্প। কারণ ওই এলাকাগুলোতে সাদা চামড়ার লোক বেশি। কালোরা সংখ্যালঘু। তাই সাদাদের একটি বার্তা দেয়া যে তোমাদের একজন সাদা চামড়ার প্রেসিডেন্ট রয়েছেন। এ জন্য সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার নামে বেশি সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের (পুলিশ) কে ব্যবহার করে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখানো হচ্ছে সেতাঙ্গদের শান্ত করতে। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা দিনে দিনে পররাষ্ট্রনীতির ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। এই সময়ে বিশ্বে করোনা দুর্যোগ, পারমাণবিক অস্ত্র, বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে থাকায় নানা হুমকি তৈরি হচ্ছে। নির্বাচনে জণগণের ভোট বা ইলেক্টোরালে যারই জয় হোক না কেন, একটি ফল আসবে এটা আপাতত নিশ্চিত। তবে চূড়ান্ত ফল আসতে এবার বেশ সময় লাগবে। কারণ দেশটিতে করোনা ভাইরাসের কারণে ডাক যোগে ভোটের হার কয়েকগুণ বাড়তে পারে। এটি অন্তত ৪০ শতাংশও হতে পারে। গত নির্বাচনে (২০১৬ সাল) ২১ শতাংশ ভোটার নির্বাচন কেন্দ্রে না এসে ডাক যোগে ভোট দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভোট গ্রহণ হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। অনেকেই ডাকযোগে ভোটের ব্যবস্থা বৃদ্ধির কথা বলেছেন। তবে এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মনে করেন এর মাধ্যমে জাল ভোটের আধিক্য দেখা দিতে পারে। তবে তার এই বক্তব্যকে যুক্তিহীন বলে দাবি করেছেন সমালোচকরা। পক্ষান্তরে ট্রাম্পও কোনো তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তার বক্তব্যের পক্ষে। তবে ডাক যোগে আসা ভোট যেহেতু ফল নির্ধারণ করবে তাই এই সময়টার মধ্যে নির্বাচন শেষ হওয়ার দিন এবং ডাকযোগে আসা ভোটের ফল প্রকাশের মধ্যকার সময়ের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এটাতে ট্রাম্প ইন্দোন দিতে পারেন। কারণ তিনি চাইবেন ডাক যোগে আসা ভোট বাদ দিয়ে ফল ঘোষণা হোক। এবং ফল ঘোষণার আগেই নিজেকে বিজয়ী দাবি করতেও পারেন। তবে এমনটি হলে দেশটিতে বড় ধরণের অভ্যন্তরীণ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। ট্রাম্প যদি নির্বাচনে হেরে যান তবে তিনি ওভাল অফিস (প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) ছেড়ে যাবেন না। এটি তিনি এরই মধ্যে কয়েকবার গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন। এটি যদি সত্যিই হয় তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটিতে সাংবিধানিক সংকটি দেখা দেবে। তখন সেনাবাহিনী সেখানে হস্তক্ষেপ করবেই। যেটি দেশটিকে ভয়াবহ কোনো পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো গণতন্ত্র এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা ভুল করছে। যার ফলে বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমেছে। তবে সুনাম ও ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প এখন নেই পশ্চিমা দেশগুলোর হাতে। যদি তারা গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারে তবে বাকি বিশ্বেও গণতন্ত্র ভেঙে পড়বে। একই সাথে পশ্চিমা বিশ্ব নিজেদের সুনামের সঙ্গে আধিপত্যও হারাবে। তখন চীন ও রাশিয়ার এক নায়কতন্ত্র টিকে থাকার রসদ পাবে। যার ফলে মার্কিন সম্রাজ্যবাদ বিশ্বব্যাপী ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দেশে থাকা সেনা ঘাটিতে শুরু হবে আক্রমণ। দেশে দেশে বাজবে যুদ্ধের দামামা। তাই ফরাসি উপন্যাসিক জুল ভার্ন-এর ‘আশি দিনে বিশ্ব ভ্রমণ’ উপন্যাসের চরিত্র ফিলিয়াস ফগের মতো যদি যুক্তরাষ্ট্রকে করতে হয়, তবে আগে নিজেদের ভেতরের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। পাল তোলা নৌকায় ভর করে চলতে চাইলে সেটি সম্ভব নাও হতে পারে। তাই প্রয়োজন তাদের সরকার ব্যবস্থা বা গণতন্ত্র ও সংবিধানের নির্দেশনা ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। তবেই তারা বিশ্বে আবারো আধিপত্য ফিরে পেতে পারে। অর্থাৎ নির্বাচনের বাকি থাকা ৯০ দিনের মধ্যেই তাদের বিশ্ব ভ্রমণ করতে হবে। লেখক: সিগমার গ্যাব্রিয়েল, সাবেক জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: