Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » ৪৯ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের স্মৃতিস্তম্ভ




যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শা। উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার উত্তরে সীমান্ত ঘেষা গ্রামের নাম কাশিপুর। ওপারে ভারতের চব্বিশ পরগনার বয়রা। বাংলাদেশ সীমান্তের গোবিনাথপুর আর কাশিপুর মৌজার সীমানার কাশিপুর পুকুর পাড়ে চিরতরে ঘুমিয়ে আছে বীরশ্রেষ্ট নূর মোহাম্মদসহ ৭ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ স্মৃতিস্তম্ভ। তারা দেশের জন্য প্রাণ হারিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করে চিরদিনের মত ঘুমিয়ে আছে এখানে। শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখসহ অপর ৬ জনের মধ্যে রয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আহাদ, শহীদ সুবেদার মনিরুজ্জামান (প্রাক্তন ই,পি,আর), শহীদ সৈয়দ আতর আলী (তদানিন্তন গণ পরিষদ সদস্য), শহীদ বাহাদুর আলী, শহীদ সিপাহী আ: ছাত্তার বীরবিক্রম (প্রাক্তন ই,পি,আর) ও শহীদ সিপাহী এনামুল হক বীর প্রতীক (প্রাক্তন ই,পি,আর)। আজ ৫ সেপ্টেম্বর। স্বাধীনতার সূর্য সন্তান বীর শ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ ৪৯তম শাহাদৎ বার্ষিকী। সৈনিক জীবনের কঠিন কর্তব্য দায়িত্ববোধ থেকে বিচ্যুত না হয়ে জীবনের শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে গেছেন নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে। তার সে চেষ্টা সার্থক হয়েছিল। নিরাপদে ফিরতে পেরেছিল সহযোদ্ধারা। শুধু ফিরে আসেননি নূর মোহাম্মদ। শত্রুপক্ষের একটি মর্টারের গোলা শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছিল তার জীবন প্রদীপ। পরে জঙ্গলের মধ্যে পাওয়া যায় এই বীরশ্রেষ্ঠর নিস্তেজ দেহটি। পাকিস্তানি হায়েনারা উপড়ে ফেলেছিল তার দুটি চোখ। দেহকে ছিন্নভিন্ন করেছিল বেয়নার খোচায়। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের মহেশখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম জেন্নাতুননেছা। বাবা আমানত শেখ। নূর মোহাম্মদ ছিলেন বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে তার অগ্রগতি হয়নি। ছোট বেলায় তিনি তার বাবা-মাকে হারান। ১৯৬৯ সালে নূর মোহাম্মাদ ভর্তী হন ইপি আর বাহিনীতে (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি)। তখন তার বয়স ২৩ বছর। ট্রেনিংয়ের পর তার পোস্টিং হয় দিনাজপুর। সেখানে ছিলেন ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। তার পর আসেন যশোর হেড কোয়ার্টারে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে সিপাহী নূর মোহাম্মদ সৈনিক মনে নাড়া দেয় স্বাধীনতা আর স্বদেশ প্রেম। তার সচেতন বিবেক বোধ তাকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্ধুদ্ধ করে। যশোরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ৮নং সেক্টরের অধীনে। নূর মোহাম্মদকে প্রতিষ্ঠানিক সামরিক প্রশিক্ষণ থাকায় একটি কোম্পানির প্রধান নিযুক্ত করে যশোরের সীমান্তবর্তী গোয়ালহাটি টহলের দায়িত্ব দেয়া হয়। ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৭১। মুক্তিবাহিনী বিকালে বাধা দেয় পাক বাহিনীকে। নূর মোহাম্মদ সঙ্গে ছিলেন দু’জন সহযোদ্ধা গোয়ালহাটির দক্ষিণে ছুটিপুরে অবস্থান করছিল পাক বাহিনী। তাদের উপরে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেয়া হয় এই পাক বাহিনীর অবস্থানের ওপর। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের কথা বুঝে ফেলে পাক বাহিনী। তারা তিন জন পাক বাহিনীর নজরে পড়ে যান। চার পাশে অবস্থান নেয় শত্রুসেনা। শুরু হয় অবিরাম গুলি বর্ষণ। নূর মোহাম্মদ বুঝতে পারেননি তিনি তার জীবনের শেষ মুখোমুখি। নূর মোহাম্মদ সহযোদ্ধা সিপাহী নান্নু মিয়া ও সিপাহী মোস্তফা। নান্নুর হাতে হালকা মেশিনগান আর এটাই ছিল তাদের হাতে প্রধান অস্ত্র। গুলি ছুড়তে ছুড়তে ফিরতে থাকে তারা তিন জন। এমন সময় হঠাৎ একটি বুলেট এসে সিপাহী নান্নুর বুকে বিধে বেরিয়ে যায়। মাটিতে পড়ে যান নান্নু মিয়া। এলএমজি হাতে তুলে নেন নূর মোহাম্মদ। এক হাতে নান্নু মিয়াকে নিয়ে আর অন্য হাতে নূর মোহাম্মদের মেশিন গান দিয়ে বের হচ্ছে অবিরাম গুলি। কারণ তিনি দলীয় অধিনায়ক। তার দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচানো। সঙ্গীদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরা। তাছাড়া তিনি ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করেছিলেন। যেন শত্রু সৈন্যরা বুঝতে না পারেন কোন দিক থেকে কত জন মুক্তিযোদ্ধা তাদের সঙ্গে লড়ছে। ঠিক এই সময় মটারের একটি গোলা এসে লাগে নূর মোহাম্মদ এর ডান পায়ে। পাঁ গুড়িয়ে যায়। শেষ পরিণতির কথা জেনে গেছেন নূর মোহাম্মদ। কিন্তু দমলে চলবে না। সহযোদ্ধাদের বাঁচানোর জন্য শেষ চেষ্টা করে যেতে হবে তাকে। সহযোদ্ধা মোস্তফার এক হাতে ছিল এক এলএমজি। আদেশ দিলেন অবস্থান পাল্টে শত্রুর দিকে গুলি ছুড়তে। সেই সঙ্গে পেছনে ফিরতে। আহত নান্নুকে সঙ্গে নিলেন তিনি। তারপর এলএমজি আবার নিলেন নূর মোহাম্মদ নিজ হাতে। শক্রদের ঠেকাতে থাকে সে যাতে মোস্তফা নান্নুকে সঙ্গে করে স্থল ঘাটিতে যেতে পারে। কিন্তু সহযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে ফেরাতে পারলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে নূর মোহাম্মদ নিস্তেজ হয়ে পড়েন। সেদিন তার আত্মত্যাগ হয়ে ছিল। শ’ শ’ সহযোদ্ধার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে ছিল সেদিন। পরবর্তীতে নিকটবর্তী একটি ঝোপের পাশে এই বীরের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পরে কাশিপুর সীমান্তের মুক্ত এলাকায় তাকে সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাদের সাত স্মৃতিস্মম্ভগুলো প্রতিবছর ১ থেকে ২ বার ধুয়ে মুছে জাতীয় দিবসগুলো পালন করেই যেন দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। কিন্ত স্মৃতিস্মম্ভ গুলো সরকারি ভাবে রক্ষণাবেক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই। ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ স্মৃতিস্তম্ভসহ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভ গুলো আজও পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। সরকারি ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সীমান্ত ঘেষা অজপাড়া গায়ের এসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভশালা আজ বনে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম স্থাপন করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। সরকারি ভাবে তদারকির জন্য এলাকাবাসী এখানে একজন কেয়ার টেকার রাখার দাবি করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি ৪৯ বছরেও। প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে ও তার মৃত্যু দিবসে ওই এলাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এসে তার স্মৃতি সৌধে ফুল দিয়ে যান। ফুল দেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। উপজেলা প্রশাসন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও এসব দিবসে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। গ্রামবাসি মিলাদ দেন প্রতি বছর। তারা গর্ববোধ করেন একজন বীর শ্রেষ্ঠর স্মৃতিসৌধ তাদের গ্রামে থাকার জন্য। নূর মোহাম্মদ সহযোদ্ধারা একদিন দেশ স্বাধীন করল। কিন্তু নূর মোহাম্মাদ তা দেখে যেতে পারলেন না। তার আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। নূর মোহাম্মাদ স্মৃতি আজও তার সহযোদ্ধার বুকে গভীর নিশিথের করুণ আর্তনাদের মতো বাজে বাঙালির ইতিহাস চেতনায় তিনি সমুজ্জ্বল। এ উপলক্ষে শনিবার কাশিপুর নূর মোহাম্মদ স্মৃতি সৌধে বিজিবি, উপজেলা প্রশাসন, সরকারী বীরশ্রেষ্ট নূর মোহাম্মাদ কলেজ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, বীরের সম্মানে গার্ড অব অনার, স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা। এলাকাবাসী ও শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এর পরিবারের সদস্যরা জানান, শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভ সারাবছর ধরে খুব কঠিন অবস্থার মধ্যে থাকে। সেখানে কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। বাইরের থেকে কেউ আসলে বসার রুম বা রেষ্ট রুমের কোন ব্যবস্থা আজও করা হয়নি। ইতোমধ্যে উপজেলা থেকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সচিবের নিকট। প্রধান মন্ত্রীর নিকট দাবি জায়গাটাকে সুন্দর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, স্থানীয় জনগণের দাবির বিষয়টি আমি শুনেছি। আমরা এই জেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সম্বলিত যে সমস্ত স্থাপনা রয়েছে বা যে সমস্ত বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো সব আমরা সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা ইতিমধ্যে কিছু কিছু জায়গায় কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদের যে স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে, সেটা যথাযোগ্য মর্যাদায় আমরা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিব এবং এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা অবহিত করব। মিউজিয়ামের বিষয়টিতো আপনারা জানেন এটা সময় সাপেক্ষ এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমি জানাব। সীমান্তের অজপাড়া গা এ কাশিপুর গ্রামে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মাজারশালা গুলি সরকারি ভাবে সংরক্ষণ করে এখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম স্থাপন করা হলে আগামী প্রজন্মের সন্তানেরা জানতে পারবে দেশ স্বাধীনের ইতিহাস, এমনটিই আশা করছেন এলাকাবাসী।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply