বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার কি অর্থ? রিজার্ভ বাড়ার সুবিধা বা অসুবিধাই বা কি?
বিবিসি বাংলা, ঢাকা
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড হয়েছে
ছবির ক্যাপশান,
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড হয়েছে
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে।
করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বের নানা দেশ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে এর মধ্যেই বাংলাদেশে গত জুন, জুলাই মাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স আসে। সেই সঙ্গে আমদানি কমে যাওয়াও এই রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
কিন্তু একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার কি অর্থ? রিজার্ভ বাড়ার সুবিধা বা অসুবিধাই বা কি?
রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
কোন দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের আমানত হিসাবে নেয়া মোট অর্থের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে (বাংলাদেশ ব্যাংক) জমা রাখতে হয়। এই অর্থ তারা ঋণ বা অন্য কোন কাজে খরচ করতে পারে না।
আর রপ্তানি, রেমিট্যান্স, ঋণ বা অন্যান্য উৎস থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রা থেকে আমদানি, ঋণ ও সুদ পরিশোধ, বিদেশে শিক্ষা ইত্যাদি নানা খাতে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা বাদ দেয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চিত থাকে, সেটাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকলে কি হয়?
অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলছেন, যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থাকা মানে একটা অর্থনৈতিক শক্তি। কারণ বিশ্বায়নের কারণে অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের নানান লেনদেন করতে হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকলে আমরা একটা স্বস্তিতে থাকে। তখন আমদানি ব্যয় মেটানো, বৈদেশিক ঋণের সুদ প্রদান ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়।
সেটার যোগান না থাকলে একটা দেশ সংকটে পড়ে যায়, তিনি বলছেন।
কতদিনের রিজার্ভ সঞ্চিত থাকতে হয়?
অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার মানে হলো, আমাদের আমদানি সক্ষমতা আছে। অর্থনীতির তত্ত্বে বলা হয়, একটা দেশের তিনমাসের আমদানির খরচের সমমানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অবশ্যই থাকতে হবে।
তবে এখন যে ৩৯ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ বাংলাদেশের রয়েছে, তাতে গত বছরের আমদানির সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, ছয়মাসের বেশি আমদানি খরচের সক্ষমতা রয়েছে।
কেন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড?
বাংলাদেশে এই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রেকর্ড রিজার্ভের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করছেন অর্থনীতিবিদরা।
রেমিট্যান্স বেশি এসেছে অর্থাৎ বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা এই সময়ে বাড়িতে টাকা বেশি পাঠাচ্ছেন। অনেকে বিদেশে আয় করে সঞ্চিত অর্থ নিয়ে দেশে চলে এসেছেন।
রেমিট্যান্স আয়ে সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা বহাল থাকায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স আয় বাড়ছে।
করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে থাকায় আমদানি পণ্যের ব্যবহার ও চাহিদা কমেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানি অব্যাহত থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে গত কয়েকমাস শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কমে যাওয়ায় কাঁচামাল আমদানি হয়নি বা কমে গেছে।
বড় ধরণের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড স্থগিত হয়ে থাকায় ব্যাংকে জমা থাকা বৈদেশিক মুদ্রার খরচ হয়নি।
কয়েকমাস বিশ্ব থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকায় বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার কম হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে গত কয়েকমাসে নতুন শিল্পকারখানা তৈরি হয়নি। ফলে ডলার আয় হয়েছে, কিন্তু ব্যয় হয়নি।
এখন যে ৩৯ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ বাংলাদেশের রয়েছে, তাতে গত বছরের আমদানির সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, ছয়মাসের বেশি আমদানি খরচের সক্ষমতা রয়েছে।ছবির উৎস,GETTY IMAGES
ছবির ক্যাপশান,
এখন যে ৩৯ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ বাংলাদেশের রয়েছে, তাতে গত বছরের আমদানির সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, ছয়মাসের বেশি আমদানি খরচের সক্ষমতা রয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ব্যবহার কীভাবে হয়?
নাজনীন আহমেদ বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার যথেষ্ট সঞ্চয় যদি থাকে,তখন বৈদেশিক ঋণ নেয়ার সময় কম চিন্তা করতে হয়। পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ীও বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। সেটাও বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করতে হয়।
যেসব আমদানি করা হয়, সেই আমদানির মূল্য বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হয়। সেটার জন্য যেকোনো দেশের যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় থাকা দরকার। ফলে আমদানি নিয়েও চিন্তা করতে হয় না। বাংলাদেশের মতো দেশে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হয়। ফলে এক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেশি থাকা দরকার।
রিজার্ভ বাড়লে ক্ষতির কোন দিক আছে?
অধ্যাপক নাজনীন আহমেদ বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার বৃদ্ধির খবরটি ইতিবাচক হলেও দীর্ঘদিন রিজার্ভ বাড়লে বা জমে থাকলে তার কিছু ক্ষতিকর দিক আছে।
''রেমিট্যান্স বাড়লে মানে হলো দেশের অর্থনীতিতে নতুন টাকা ঢুকেছে। সেটার জন্য অনেক সময় মূল্যস্ফীতি হয়। কারণ যাদের কাছে নতুন টাকা এসেছে, তারা সেই টাকার খরচ করেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়।''
তবে তিনি বলছেন, এই বছর সেই দুশ্চিন্তা কম, কারণ করোনার কারণে এমনিতেই মানুষ অর্থনীতির দিক থেকে বিপদে আছে। নানান দিকে তাদের আয় কমেছে। ফলে রেমিট্যান্স ঢুকলেও মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা কম।
তবে দীর্ঘমেয়াদে রিজার্ভ থেকে গেলে, অন্যান্য কাজে লাগানো না গেলে, তখন বুঝতে হবে আমদানি কমে গেছে, অর্থাৎ মানুষের ভোগের পরিমাণ কমে গেছে। তার মানে আমদানির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না।
''বিশেষ করে মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামালের আমদানি কমে গেছে কিনা, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ সেটা হলে অর্থনীতির ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়,'' তিনি বলছেন।
তিনি বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জমে থাকা মানে আমদা
Tag: Advertisement Featured
No comments: