সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী আর নেই
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী আবুল বাশার। তিনি জানান, আবু ওসমান চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। স্মৃতিশক্তিও ক্রমে লোপ পাচ্ছিল তার। গত ৩০ আগস্ট তাকে সিএমএইচে ভর্তির পর তার করোনা পজেটিভ আসে। এর তিন দিন পর আবার পরীক্ষা করা হলে করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এর মধ্যে তার ব্রেন টিউমারও ধরা পড়ে।
আবু ওসমান চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
শনিবার বাদ আসর সেনানিবাসে সেনাকুঞ্জের পাশে সেন্ট্রাল মসজিদে আবু ওসমান চৌধুরীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাকে বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
আবু ওসমান চৌধুরী ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পান তিনি। ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসে পদোন্নতি পেয়ে মেজর হন।
১৯৬০ সালে তিনি কুমিল্লার মৌলভী পাড়ার মনসুর আহম্মেদের বড় মেয়ে নাজিয়া খানমকে বিয়ে করেন। তার দুই মেয়ে নাসিমা ওসমান ও ফাওজিয়া ওসমান।
একাত্তরের মার্চে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের চতুর্থ উইংয়ের কমান্ডার হিসেবে চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বে ছিলেন আবু ওসমান। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের খবর পেয়ে ২৬ মার্চ সকালে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করে একদল সৈনিককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাকে মুক্তিযুদ্ধে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবু ওসমান চৌধুরীকে লেফটেনেন্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরে বঙ্গবন্ধু তাকে আর্মি সার্ভিস কোরের (এএসসি) পরিচালকের দায়িত্ব দেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সেনা অভ্যুত্থানের সময় একদল সেনসদস্য আবু ওসমান চৌধুরীকে হত্যার জন্য তার গুলশানের বাড়িতে হামলা করে। বাড়িতে না থাকায় সেদিন তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন তার স্ত্রী নাজিয়া খানম।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবু ওসমান চৌধুরীকে বিজেএমসির চেয়ারম্যান করা হয়। পরে তাকে চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আবু ওসমান চৌধুরী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
Tag: Advertisement politics
No comments: