Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » সবচেয়ে ভালোবাসার, সবচেয়ে ঘৃণার




সবচেয়ে ভালোবাসার, সবচেয়ে ঘৃণার

ম্যারাডোনা মানেই অন্তহীন বিতর্ক। বন্দুক হাতে সংবাদিকদের ধাওয়া। নিষিদ্ধ ড্রাগ নিয়ে ফুটবল থেকে নির্বাসন। কোকেনের নেশায় বুঁদ হয়ে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসা। ফুটবলের সম্রাট পেলেকে নিয়েও যা-তা মন্তব্য। এমনকি মেয়ের দিব্যি দিয়ে মিথ্যা বলতে তার বুক কাঁপে না। সেই ডিয়েগো ম্যারাডোনা মানেই আবার অন্তহীন ফুটবল প্রেমও। যিনি প্রায় একাই ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়নের স্বাদ পাইয়েছিলেন। ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোলের বিতর্ক সত্ত্বেও তার ফুটবল-প্রেমে পাগল হয়েছিল অনুসারীরা। ইতালির নাপোলিকে আঁস্তাকুড় থেকে তুলে সিরি-আ চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। নব্বইয়ের বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। জেতাতে পারেননি। রুডি ফোলারের বিতর্কিত ফাউলে পেনাল্টি পেয়ে ১-০ গোলে জিতেছিল পশ্চিম জার্মানি। খেলেছিলেন ’৯৪ বিশ্বকাপেও। কিন্তু সেই টুর্নামেন্টে এসে এলোমেলো হয়ে যান ম্যারাডোনা। দুটি ম্যাচ খেলার পর ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে বলেছিলেন, ‘ওরা আমার পা কেটে নিয়েছে।’ ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার মাঠে ফিরেছিলেন। কিন্তু আগের ম্যারাডোনাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ছোটবেলার ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে কিছুদিন খেলে বুটজোড়া তুলে রাখেন। তারপর কোকেনের নেশায় ডুবে থাকতেন। এমন অবস্থা হয়েছিল যে শেষ পর্যন্ত রিহ্যাবে যেতে হয়। বন্ধু ফিদেল কাস্ত্রোর কিউবাতে গিয়ে নেশামুক্ত হন। পরে এক সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনা বলেন, ‘আমি যখন মাদক নিতাম, তখন পিছিয়ে থাকতাম। অথচ ফুটবলার হিসেবে আমার এক পা এগিয়ে থাকার কথা ছিল। অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন। কিন্তু আমি ১৫ বছর আগের ওই অসুস্থ নেশার জীবন কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। তাই এখন কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে মাদক ছেড়ে ডোপিং নিয়ে কথা বলেন। আমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। কিন্তু একটা কথা আমি বলতে চাই। আর্জেন্টিনায় অনেকে আছেন, যারা মুখোশ পরে চলেন। সেখানে বড়লোকরাও কোকেনে ডুবে থাকেন।’ ম্যারাডোনা নেশার খপ্পরে পড়েছিলেন ছোটবেলায়। বুয়েন্স আয়ার্সের বস্তিতে তার জন্ম। জায়গাটার নাম ভিলা ফিয়োরিতো। অপরাধের জন্য কুখ্যাত। দারিদ্র্যের জন্যও। ম্যারাডোনার বাবা খুব গরিব ছিলেন। চার মেয়ের পর ডিয়েগো দুনিয়াতে আসেন। পরে আরও দুটি ভাই তার সঙ্গী হয়। সংখ্যার সঙ্গে পারিবারিক দারিদ্র্যও সেই পরিমাণেই বেড়েছিল। ঠিক মতো খেতে পেতেন না। টিনের কৌটা নিয়ে সারা দিন রাস্তায় খেলতেন। তারপর আবর্জনার স্তূপের পাশেই ঘুমিয়ে পড়তেন। রাতে কাজ থেকে ফিরে বাবা ডাকতেন, ‘ডিয়েগো কোথায় আছিস, মাথাটা তোল।’ বুয়েন্স আয়ার্সের বস্তি থেকে আক্ষরিক অর্থেই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ফুটবল তাকে সেই সাহস দিয়েছিল। মাত্র ৮ বছর বয়সে তাকে আবিষ্কার করেন ফ্রান্সিসকো কর্নেজো। জুনিয়র দলের কোচ হিসেবে তিনি তখন সারা দেশ ঘুরে প্রতিভা খুঁজছেন। খুদে ম্যারাডোনাকে প্রথম দেখার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে পরে বলেছিলেন, ‘আর্জেন্টিনা জুনিয়র দলের জন্য ট্রায়াল দিতে এসেছিল ম্যারাডোনা। দক্ষতা দেখে মনে হয়নি এ ছেলের বয়স মাত্র ৮। আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিচয়পত্র দেখতে চাইলাম। সে কিছু দেখাতে পারেনি। তার ছোট্ট গড়ন দেখে অবশ্য মনে হয়েছিল মিথ্যা বলছে না। যদিও সে খেলছিল প্রাপ্তবয়স্কদের মতো। যা দেখে আমরা ওর ভক্ত হয়ে গেলাম।’ সেটা ১৯৬৮ সাল। ৮ বছর পর আর্জেন্টিনা জুনিয়র দলে অভিষেক ম্যারাডোনার। ১৯৭৭-এ জাতীয় দলে পা রাখেন। নিজেদের দেশে ১৯৭৮-র বিশ্বকাপ দলে তাকে নেওয়া নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ড্যানিয়েলে প্যাসারেলা ও কোচ সেজার মেনোত্তি বয়স কম বলে ম্যারাডোনাকে দলে নেননি। ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ অভিষেক ’৮২-তে। ইতালি ও ব্রাজিলের কাছে হেরে বাদ পড়ে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই। ম্যারাডোনা কিছু করতে পারেননি। সব জমিয়ে রেখেছিলেন মেক্সিকোর জন্য। ছিয়াশির বিশ্বকাপেই তিনি ম্যারাডোনা হয়ে ওঠেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোল দিয়ে। এরপর করেন শতাব্দী সেরা গোল। ইংল্যান্ড ছিটকে গিয়েছিল। তার আগে ম্যারাডোনার পায়ের জাদুতে সর্বনাশ হয়েছিল বেলজিয়ামের। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির সর্বনাশের মূলেও ছিল তার দুটি পা। আত্মজীবনীতে ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ জয়ের বর্ণনায় লিখেছিলেন, ‘অতিরিক্ত সময়ে জার্মানির অবসন্ন পাগুলো দেখে ভরসা পেয়ে সেন্টার স্পটে বল বসিয়ে সবাইকে চিৎকার করে বলেছিলাম, জিতব আমরাই। জিততেই হবে, ওরা আর পারছে না, শেষ চেষ্টা আর একবার, অতিরিক্ত সময়ের আগেই শেষ করব। নিজেদের অর্ধেই ছিলাম। মাথা তুলে দেখতে পাই বুরুচাগার সামনে সেই রাস্তা যেখান দিয়ে চলতে চলতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হব। নিরাশ করেনি বুরু। ৬ মিনিট বাকি তখনো। বিলার্দো চেঁচাচ্ছে, ডিয়েগো, ভালদানো, নেমে এসো, মার্ক করো। কোথায় কী। নামছিলাম ঠিকই, কিন্তু জানতাম, আর হবে না। রোমুয়ালদো আরপি ফিলোর বাঁশি, আর্জেন্টিনীয়দের উল্লাস আর আমার কেঁদে ফেলা সব একসঙ্গে।’ গৌরবের সেই কান্না থেকে আর্জেন্টিনার ফুটবল ঈশ্বর হয়ে ওঠেন ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা, যার জন্য দিনরাত এক করে ফেলেন দেশটির মানুষ। সেই ফুটবলা ঈশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনা বুধবার (২৫ নভেম্বর) পুরো ফুটবল বিশ্বকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ৬০ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি তিগ্রে-তে নিজ বাসায় মারা যান ম্যারাডোনা।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply