আদিবাসীরা চাইছেন তাদের পৃথক ধর্মীয় পরিচয় - তারা বলছেন তাদের মধ্যে ধর্মাচরণের রীতিতে কিছু কিছু ফারাক থাকলেও মূলত তারা প্রকৃতি পূজারী ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের আদিবাসী সমাজের জন্য একটি পৃথক ধর্মের স্বীকৃতি চেয়ে বিধানসভায় সম্প্রতি একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে। ওই
। যদিও ভারতের বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মাচরণের রীতিতে কিছু কিছু ফারাক আছে, তবে মূলত তারা প্রকৃতি পূজারী। আদিবাসী সমাজ বলছে, আগে জনগণনার সময়ে তারা নিজেদের ধর্ম উল্লেখ করার সুযোগ পেতেন, কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে শুধুই হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ ইত্যাদি প্রধান ধর্মগুলির মধ্যেই একটাকে বেছে নিতে বাধ্য হন তারা। এই প্রথা বদলের দাবি ঝাড়খন্ড রাজ্যে দীর্ঘদিন থেকেই উঠেছে। ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের আনা ওই প্রস্তাবটি যদি কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নেয়, তাহলে আগামী বছরের জনগণনা ফর্মে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি প্রধান ধর্মের সঙ্গেই সার্না ধর্মের নামও উল্লেখ করা থাকবে। অন্যদিকে আদিবাসী সমাজ আসলে সনাতন হিন্দু ধর্মেরই অনুসারী বলে মনে করে হিন্দু পুনরুত্থানবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস। আদিবাসী সমাজের অনেকেই খ্রিস্টান হয়ে গেছেন বা তারা হয়তো কিছু কিছু হিন্দু রীতি রেওয়াজও পালন করেন, কিন্তু আদিবাসীদের ধর্মগুরু বন্ধন টিগ্গা বলছিলেন যে হাজার হাজার বছর ধরে তারা যে ধর্ম পালন করেন, তা আসলে প্রকৃতির আরাধনা। মি. টিগ্গার কথায়, "ভারতে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন আর বৌদ্ধ - এই ছয়টি ধর্ম দিয়েই জনগণনার সময়ে নাগরিকদের পরিচিতি নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু এর বাইরেও আমরা তপশীলভুক্ত জনজাতি, অর্থাৎ আদিবাসীরাও ভারতের বাসিন্দা। কিন্তু আমাদের কোনও ধর্মীয় পরিচিতি লেখা থাকে না। আমরা প্রকৃতির পূজারী - যে ধর্মের নাম সার্না।" তিনি বলেন, আগামী বছরের জনগণনায় যাতে পৃথক সার্না ধর্ম উল্লেখ করার সুযোগ থাকে, সেটাই চাইছে আদিবাসী সমাজ। ''ভগবান ধর্মেশ, সিংবোঙ্গা, হিল্লা মারাংবুরুর উপাসনা যারা করে, তারাই সার্না ধর্মাবলম্বী। সার্নার আরেক নাম হল সৃষ্টি। জল, বায়ু, অগ্নি, ভূমি এবং আকাশ - এই পাঁচটি মূল উপাদানের মাধ্যমে যে সৃষ্টি, তারই উপাসক আমরা," ব্যাখ্যা করছিলেন বন্ধন টিগ্গা। তিনি আরও জানাচ্ছিলেন যে সার্না শব্দটি ওঁরাও জনজাতির মানুষ ব্যবহার করেন। উপাসনাস্থল বোঝাতে কিন্তু সাঁওতাল, হো, মুন্ডারি ইত্যাদি জনজাতির ভাষায় উপাসনাস্থলের আলাদা নাম আছে বলে তিনি জানান। যে উপাসনাস্থলে প্রকৃতিরূপী ভগবানকে আদিবাসী মানুষ অনুভব করেন, সেটাই সার্না - বলছিলেন মি. টিগ্গা। হিন্দুত্ববাদীরা অবশ্য মনে করেন না যে আদিবাসীদের পৃথক কোনও ধর্ম আছে। তারাও সনাতন হিন্দু ধর্মেরই অংশ বলেই মনে করে আরএসএস। সঙ্ঘের শাখা সংগঠন বনবাসী কল্যাণ আশ্রম দীর্ঘদিন ধরেই আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে কাজ করে। এছাড়াও জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চও রয়েছে আদিবাসীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করার জন্য। জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চের জাতীয় সহ-কোঅর্ডিনেটর রাজকিশোর হাঁসদার গবেষণার বিষয় ছিল সাঁওতালি এবং হিন্দু সংস্কৃতির তুলনা। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: ত্রিপুরায় খ্রিস্টানদের হিন্দু 'বানানোর' অভিযোগ দুর্গাপূজার সময়ে যেভাবে শোক পালন করেন 'মহিষাসুরের বংশধরেরা' ঝাড়খন্ডের একটি কুর্মী পরিবার ঘরের আঙিনায় আঁকা আলপনার ওপর গরুকে ঘোরাচ্ছেন। (ফাইল ছবি) এই সম্প্রদায় গুরুকে পূজা করে। ছবির উৎস,SOPA IMAGES/GETTY IMAGES ছবির ক্যাপশান, আরএসএস-এর জন্য আদিবাসীদের প্রভাবিত করতে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন আদিবাসীরাও সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী তিনি বলেন, সার্না ধর্ম বলে আলাদা কিছু হয় না। এটা আদিবাসীদের একটা অংশের পূজার জায়গা। অনাদিবাসী মানুষরাও, যেমন কুর্মী, কৈরী, এরাও সার্নাস্থলকে মান্য করেন। "আসলে আদিবাসীরাও সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীই। আমার পিএইচডি গবেষণার সময়ে বহু উদাহরণ পেয়েছি আমি।" তাদের ধর্মাচরণকে কোনওভাবেই হিন্দু ধর্মের থেকে পৃথক করা যায় না বলে মি. হাঁসদা মনে করেন। তিনি বলেন, সাঁওতালি সমাজ নিয়ে গবেষণা করার সময়ে তিনি জানতে পেরেছেন যে তারা প্রায় ৯৫ শতাংশই হিন্দু রীতি নীতি মেনে চলে। "তাদের নামকরণেও রাম, শিব, লক্ষণ, সীতা - এসব নাম পাওয়া যায়। সাঁওতালিদের বিয়ের আসরে লোমতা আর বাওবরে দেখা যায় - এই দুটো হচ্ছে রামায়ণে বর্ণিত ব্রাহ্মণ এবং বিশ্বামিত্র মুনির প্রতীক। মহাভারতে ভীষ্ম যেমন শরশয্যায় শুয়েছিলেন, সে রকমই একটা রীতি আছে শোহরাই পরবে। যারা বলছে যে আদিবাসীরা শুধুই প্রকৃতি পুজারী - সনাতন হিন্দু ধর্মের আধারও তো প্রকৃতিই,'' ব্যাখ্যা করছিলেন রাজকুমার হাঁসদা। তার অভিযোগ, সার্না ধর্মের নামে রাজনীতি তো হচ্ছেই - এছাড়াও এটা একটা বড় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, যার মধ্যে খ্রিস্টান মিশনারি এবং বামপন্থীরা জড়িত। আদিবাসী ধর্মগুরু বন্ধন টিগ্গার কাছে যখন আরএসএস এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর এই ব্যাখ্যার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলাম, তিনি প্রথমেই একটা গান গেয়ে এর উত্তর ব্যাখ্যা করতে চাইলেন। "সিন্ধু ঘাটিরে বাবা রে রিয়াএ লা, মহনজুদরো হরপা ঘাটিরে বাবা রে রিয়এ লা... " "এই গানের অর্থ হল কোথা থেকে আর্তচিৎকার আর কান্নার শব্দ আসছে -- সিন্ধু উপত্যকা, মহেনজোদারো, হরপ্পা উপত্যকা থেকে আসছে ওই কান্নার রোল। হাজার হাজার বছর ধরে আদিবাসী সমাজ সিন্ধু উপত্যকার কান্না নিয়ে প্রচলিত গানটি গেয়ে থাকে। অনার্য সিন্ধু সভ্যতার ওপরে আর্যদের আক্রমণ এবং যুদ্ধের কথাই বলা হয়েছে ওই গানে," বললেন মি. টিগ্গা। তাই মি. টিগ্গার প্রশ্ন, "আদিবাসীরা যদি সনাতনী হিন্দুই হবে, তাহলে কেন মধ্য এশিয়া থেকে আগত আর্যদের সঙ্গে অনার্যদের যুদ্ধ হয়েছিল সিন্ধু উপত্যকায়? এছাড়াও জন্ম-বিবাহ-মৃত্যু জীবনের প্রতিটা মুহূর্তেই হিন্দুদের সঙ্গে আদিবাসীদের অমিল রয়েছে। যেমন হিন্দুদের মৃত্যু হলে দাহ করা হয়, কিন্তু আদিবাসীদের দাফন করা হয়। ''তবে কেউ যদি মৃত্যুর পরে দাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন, তাকে অবশ্য দাহই করা হয়। জীবনের কোনও ক্ষেত্রেই আমাদের ধর্মাচরণের সঙ্গে হিন্দু ধর্মের মিল নেই।" সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর এক ব্যক্তির হাতে পাতার ঠোঙার ভেতর পিঁপড়া যা খাবার হিসাবে তাদের জন্য ডেলিকেসি ছবির উৎস,FRANCK METOIS ছবির ক্যাপশান, আদিবাসীরা বলছেন তাদের জীবন ও ধর্মাচরণের সাথে হিন্দুদের ধর্মাচরণের অনেক তফাৎ রয়েছে আদিবাসীদের পৃথক ধর্ম বলে কিছু হয় না বলে যখন মনে করছে আরএসএস এবং তার শাখা সংগঠনগুলি, তখন ঝাড়খন্ডের সাহিত্যকার ভন্দনা টেটে বলছিলেন যে আদিবাসীরা চিরকালই প্রকৃতির আরাধনা করে এসেছে। তবে আরএসএস-ই আদিবাসী সমাজের মধ্যে ধীরে ধীরে হিন্দু ধর্মের রীতি-নীতি, আচার-আচরণের প্রবেশ করিয়েছে। "দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী সমাজের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের কাজ করছে আরএসএস। হিন্দু ধর্মের প্রেক্ষিতে ভাল-মন্দের ভাবনাটা আদিবাসীদের মাথায় (তারাই) ঢুকিয়েছে," বলছিলেন মিসেস টেটে। "যেমন আমরা গরুর মাংস খাই। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরাই এটা বোঝাতে থাকে যে গরুকে তো মা হিসাবে মানা হয়, তাহলে কী করে গরুর মাংস খাওয়া যেতে পারে? এছাড়াও অনেক জায়গাতেই দারোম, অর্থাৎ রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী গরু, মহিষ শূকর, মুরগী এসব উৎসর্গ করা হয়। আরএসএস-ই আদিবাসীদের একটা অংশকে ব্রেনওয়াশ করে বোঝায় যে এটা অনুচিত। "এক দিকে হিন্দুরা বলে আমরাও নাকি তাদের ধর্মেরই, অথচ এখনও আদিবাসীদের অসুর-রাক্ষস-বর্বর ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। আদিবাসীদের হীন দেখানো হয় হিন্দু ধর্মে," বলছিলেন ভন্দনা টেটে। প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলেও আদিবাসীদের এই ধর্মের যে নাম দেওয়া হয়েছে - সার্না - তা নিয়ে আদিবাসী সমাজের মধ্যেই মতান্তর রয়েছে বলে জানাচ্ছিলেন সমাজকর্মী অলোকা কুজুর। "সার্না শব্দের অর্থ হল শাল গাছ। এটা ওঁরাও জনজাতির ভাষা কুরুক শব্দ। সব আদিবাসী কিন্তু সার্না শব্দটাকে মেনে নেয় না। ঝাড়খন্ডেই সার্না নিয়ে তিনটে ভাগ রয়েছে আদিবাসীদের মধ্যে। যদি এটাকে আদিবাসী ধর্ম বলে অভিহিত করা হত, তাহলে হয়তো যথার্থ হত। ''কিন্তু শুধু ওঁরাও জনজাতির উপাসনাস্থলকে সব আদিবাসীর ধর্ম বলাটা ঠিক হয়নি। প্রত্যেকটা জনজাতির পৃথক নামে উপাসনাস্থল রয়েছে। তারা কি সার্না ধর্ম মেনে নেবে?" প্রশ্ন অলোকা কুজুরের।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
world
» সার্না ধর্ম: ভারতের আদিবাসীদের নতুন এই ধর্মকে স্বীকৃতি দিতে সরকারের ওপর চাপ
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: