Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » বাবার ছেলেবেলার গল্প শেখ রেহানার মুখে




বাবার ছেলেবেলার গল্প শেখ রেহানার মুখে (ভিডিও) আজ ১৭ মার্চ-২০২১। বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম শুভ জন্মদিন উদযাপন করেছে। বুধবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর একটি স্কুলে জাতির পিতার জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদরের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর অমূল্য কিছু স্মৃতি শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন। টুঙ্গিপাড়ার শ্যামল পরিবেশে শেখ মুজিবের জীবন কাটে দুরন্তপনা করে। মধুমতির ঘোলাজলে গ্রামের ছেলেদের সাথে সাঁতার কাটা, দল বেঁধে হা-ডু-ডু, ফুটবল, ভলিবল খেলায় তিনি ছিলেন দস্যি বালকদের নেতা। তখন কে জানত এই দস্যি বালকদের নেতাই একদিন বিশ্বনেতা, বাঙালি জাতির পিতা হবেন। শৈশব থেকেই খোকা ছিল অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। গ্রামের মাটি ও মানুষ তাকে যেমনটা আকর্ষণ করত, তেমনি তিনিও গ্রামের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসেছিলেন পরম মমতায়। পক্ষান্তরে তাকেও সবাই আপন সন্তানের মতো বিশ্বাস করত ও ভালোবাসতো। দশ বছর বয়সেই তিনি নিজের গায়ের জামা খুলে অন্যকে দান করে কিশোর শেখ মুজিব, এ যেন মানবতার অনন্য উদাহরণ। শিশুকাল থেকেই শেখ মুজিব ছিলেন পরোপকারী ও অন্যায়ের প্রতিবাদী। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখলেই তিনি যেমন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন, তেমনি কোনো অন্যায় অবিচার দেখলেই প্রতিবাদ করতেন। একবার তার গ্রামের চাষিদের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষকদের অনেক বাড়িতেই দু’বেলা ভাত রান্না বন্ধ হয়ে যায়। সারা গ্রামেই প্রায়-দুর্ভিক্ষাবস্থা। কিশোর মুজিব এ রকম পরিস্থিতিতে কিছু করার জন্য ছটফট করছিলেন। পরে নিজের পিতাকে তিনি তাদের গোলা থেকে বিপন্ন কৃষকদের মধ্যে ধান বিতরণের জন্য অনুরোধ জানালেন। নিজেদের ধানের মজুদ কেমন, এই অনুরোধ বাবা রাখতে পারবেন কিনা, সেসব তিনি ভাবেননি। কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখার চিন্তাটিই ছিল তখন তার কাছে মুখ্য। ঠিক এরকমই ছিলেন আমাদের জাতির পিতা, তাঁর বেড়ে ওঠা নিয়ে আরও অনেক আজানা কথা জানতে দেখুন শেখ রেহানার পুরো বক্তব্যটি। ভিডিওটির শেষে আপনাদের জন্য একটি সুন্দর চমক রয়েছে। বাবার স্মৃতি তুলে ধরে শেখ রেহানা বলেন, আমার বাবার জন্মে আনন্দে মেতে উঠে টঙ্গীপাড়া গ্রাম। নাম রাখা হয় শেখ মুজিবুর রহমান। বাবার জন্মের পর সারা গ্রামে মিষ্টি, খোরমা বিলানো, গরীব দুঃখীদের মাঝে কাপড় বিলানো, মিলাদ পরানোসহ নানা আয়োজনে উৎসবে পরিণত হলো গ্রামটি। ছোট মুজিব ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলেন। আমার দাদা-দাদী তাকে আদর করে খোকা বলে ডাকতেন। তিনি সবার চোখের মনি ছিলেন। বড় দুই বোন তো কোল থেকেই নামাতে চাইতেন না। আর একটু বড় হলে খোকা খেলাধুলা হইচই করে দিন কাটাতেন। দাদার কাছে আমার বাবার পড়ালেখার হাতেখড়ি। আমাদের বাড়ির সামনে একটা বড় কাচারি ঘর ছিল। বাড়ির সব ছোট বাচ্চারা ওইখানে পড়তে বসতেন। তখন কিন্তু খাতা পেন্সিল ছিল না বাচ্চাদের জন্য। সিলেট-চক দিয়েই লিখতে হত। সব ছেলে মেয়ের মধ্যে মুজিব একটু অন্যরকম ছিল। বাড়ির মুরুব্বি, শিক্ষক, কৃষক সবাই এক বাক্যে স্বীকার করতেন এই বাচ্চাটা সবার থেকে আলাদা। এই বাচ্চাটার মন অনেক বড়, অনেক উদার এবং পরোপকারী। কারো দুঃখ কষ্ট দেখলে এগিয়ে যাওয়া,গরীব মানুষকে নিজের জামা-কাপড় দিয়ে দেয়া, খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়া মুগ্ধ নয়নে সবাই তাকিয়ে থাকত। আমার দাদা এবং আমার আব্বা মুজিব ছিলেন ঠিক বন্ধুর মত। তিনি দাদাকে যেমন শ্রদ্ধা, সমীহ করে চলতেন আবার সবকিছু দাদার সাথে নিঃসংকোচে আলোচনা করতেন। দাদা কোনোদিনও খোকাকে কোনো কাজে বাঁধা দিতেন না। একবার এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এলাকায় গরীব মানুষদের মাঝে নিজের ঘরের ঘর থেকে ধান-চাল বিলানো শুরু করলেন। দাদা-দাদী বাঁধা দেননি বরং সহযোগিতা করেন। একবার আমার দাদা কলকাতা থেকে সুন্দর একটা আলোয়ান (শাল অথবা গরম চাদর) কিনে আনলেন। মুজিব সেই আলোয়ান গায়ে দিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হলেন। বাড়ি ফেরার পথে দেখতে পেলেন গাছের নিচে একজন বৃদ্ধ মানুষ শীতে কাঁপছেন। তা দেখে আমার আব্বা ওই বয়স্ক মানুষের শরীরে আলোয়ানটা জড়িয়ে দিলেন। নিজে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফিরলেন। মুজিব খুব খেলাধুলা করতেও ভালবাসতেন। ফুটবল, হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, সাঁতার, নৌকা চালানো ছোট বেলাতেই বেশ রপ্ত করে ফেললেন। শরীরের গঠন ছিল ছিপছিপে। ফুটবলে কিক মেরে গোলটা ঠিকই দিতেন কিন্তু নিজেই এদিকে চিৎপটাং। কে গোল দিলো তাকে কিন্তু দেখা যেত না। কিন্তু মাটিতে একজন শুয়ে আছে। এভাবেই কাটতে থাকলো মুজিবের জীবন। এরই মধ্যে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লেন দাদা-দাদীর আদরের খোকা। সবাই খুব দুঃচিন্তায় পড়ে গেলেন। দোয়া, সাদকা, মানত, ডাক্তার, কবিরাজ, এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি কোনো কিছুই বাদ নেই। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এর মধ্যে চোখেরও খুব সমস্যা শুরু হলো। দাদা-দাদীকে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে কলকাতা নিয়ে গেলেন তাদের প্রিয় খোকাকে। বড় বড় ডাক্তার দেখানো হলো। সব ধরণের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করানো হলো। যেদিন রিপোর্ট দেবেন সেদিন বাবা আর ছেলে গেলেন মাকে আর সাথে নেননি। ডাক্তার সাহেব বললেন, বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত। প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে। আর ফলমূল খেতে হবে। ডাক্তার পরামর্শ দিলো যত তাড়াতাড়ি অপারেশন করা যায়। দাদার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কিন্তু উপায় নেই করতে হবে। তা না হলে অন্ধ হয়ে যাবে দুটি চোখ। দাদীকে বুঝানোই ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। আদরের খোকাকে বুকে নিয়ে আমার দাদা বুঝালেন, সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আর এক মুহূর্তও দেরি করলেন না। অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হলো। দাদা অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বসে দোয়া-কালাম পড়তে থাকলেন আর এদিকে ওদিকে সব ধরণের প্রস্তুতি চলছে। ডাক্তার সাহেব মুজিবের সাথে গল্প করছেন, এটা ওটা জিজ্ঞেস করছেন। যাতে মনোযোগটা অন্য দিকে থাকে। কিন্তু নার্সের হাতে ইনজেকশন দেখে মুজিব সাহেব অন্য মতলব করছেন কিভাবে এখান থেকে পালানো যায়। ডাক্তার সাহেব একটু অন্যদিকে মনোযোগ দিয়েছেন অমনি আমাদের বীর পুরুষ এক লাফ দিয়ে জানালার কাছে গিয়ে পালানোর পাঁয়তারা করতে থাকেন। তখন ডাক্তার সাহেব বললেন, করছো কী বাবা? তুমি খুব সাহসী ও বাহাদুর ছেলে। নার্স দৌঁড়ে গিয়ে দাদাকে ওটিতে নিয়ে আসলেন। দাদাকে দেখে তার আদরে খোকা কিছু আশ্বস্ত ও শান্ত হলো। এরপর ভালোভাবেই অপারেশন হয়ে গেল। কয়েকদিনের বিশ্রামে ডাক্তার সাহেব বললেন, ছয় মাস পরপর এসে চোখ দেখাতে হবে। কিন্তু মুজিবের জন্য একটা দুঃসংবাদ ছিল। বেশ কিছুদিন বই পড়া ও খেলাধূলা বন্ধ রাখতে হবে। মুজিবের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কলকাতা থেকে টুঙ্গিপাড়া ফিরে মুজিবের মধ্যে অনেক পরিবর্তন। মুখের হাসিটা ফুরিয়ে গেল। বই পড়তে পারবে, খেলতে পারবে না, মধুমতি নদীতে খেলতে পারবে, সাঁতার কাটতে পারবে না। বন্ধুরা দলবেঁধে স্কুলে যায়, মসজিদে যায়। এগুলো দেখে নিজের দীর্ঘ নিঃশ্বাস চেপে রাখেন। ছয় মাস পার হয়ে গেল আবার কলকাতায় ফলোআপ চেকআপের জন্য যেতে হল। মানুষের জীবনের দিনগুলি কিছুতেই থেমে থাকে না। খোদা এক ভাবে না এক ভাবে চালিয়ে নেন। দাদা প্রচুর বই কিনে আনতেন আর খোকাকে পড়ে শুনাতেন। বড় বড় মনীষীদের জীবনী পড়ে শোনাতেন। আরও শোনাতেন ব্রিটিশদের অত্যাচারের কথা। তিনি নিজেও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। আর আমার দাদী লক্ষ্য রাখতেন ঠিকমতো খাওয়া হচ্ছে কিনা। ভিটামিন পাচ্ছে কিনা। আর পড়াতেন কোরআন শরীফ ও মুখস্ত করাতেন বিভিন্ন সূরা। এভাবে ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন খোকা। দাদী বিকেলে বাড়ির উঠানে কলের গান গাইতেন। একদিন বিকেলে খোকার সব বন্ধুদের আসতে বলে দিয়েছে দাদা-দাদী। তাদের সন্তান যেন একাকীত্ব অনুভব না করে। মুজিবের একটি পোষা বানর ছিল। ওর নাম ছিলো মধু। মধু এদিক-সেদিক লাফালাফি করতেন। বন্ধুরা সবাই গল্প করতেন, আজকে কী কী হলো? স্কুলের সব ঘটনা। কোন পাখির বাসায় ডিম-ছানা। আর মুজিব খবর নিতেন কার কেমন ধান হচ্ছে। হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল সবকিছুর খবর নিতেন। এলাকার সকলের খবর নিতেন। বন্ধুরা কখনো খালি হাতে আসতো না। সবাই কিছু না কিছু নিয়ে আসতো। আর দাদী রাখতেন পেয়ারা, ডাব, দানাদার, মিষ্টি। সবাই উঠানে বসে ভাগাভাগি করে খেতেন। এভাবে প্রায় কেটে গেল চারটি বছর। এরইমধ্যে আবার কলকাতা যাওয়ার প্রস্তুতি, এবার চূড়ান্ত রিপোর্ট। কলকাতায় ডাক্তারখানায় গেলেন। অনেকক্ষণ ধরে পরীক্ষা-নীরিক্ষা চললো। যাকে বলে ফাইনাল চেকআপ। দাদা চাইলেন তার খোকা সব তার নিজের কানে শুনুক। ডাক্তার সাহেব পরীক্ষা-নীরিক্ষার সময় আব্বাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কীভাবে এতোগুলো বছর এতো সুন্দর করে পার করলে? মুজিব এক এক করে সবকিছু বর্ণনা করলেন। ডাক্তার সাহেব তার সব প্রশ্নের জবাবে আব্বার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। ডাক্তার সাহেব দাদাকে বললেন, মুজিবের চশমা পরতে হবে সারা জীবন। নিয়ম-কানুন মেনে ঠিক মত খাওয়া-দাওয়া করলে আর কোনো সমস্যা হবে না। দাদা চশমার কথা শুনে একটু থমকে গিয়েছিলেন। ডাক্তার সাহেব দাদাকে বলেন, ‘লুৎফর রহমান সাহেব আমি অনেক রোগী দেখি, অনেক ছাত্র পড়ায় কিন্তু একটা কথা আর না বলে পারছি না। আপনি নিঃসন্দেহে একজন গর্বিত পিতা। আপনার ছেলে তো সাধারণ ছেলের মতো না, একটা রত্ন। দেখবেন এই ছেলে পৃথিবীজুড়ে অনেক নাম করবেন।’ কলকাতা থেকে ফেরার সময় ছোট্ট মুজিব ডাক্তারকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে বের হতে যাবেন এমন সময় ডাক্তার সাহেব বড় একটি প্যাকেট দিয়ে বললেন, এটা তোমার জন্য সামান্য একটা উপহার। মুজিবকে অনেকগুলো বই উপহার দেয়া হলো। মুজিব বইগুলো পেয়ে অনেক খুশি হয়ে গেলেন। এরপর বাড়িতে এসে মুজিবের চশমা পরা শুরু হয়ে গেল। এরমধ্যে মুজিবের চশমা নিয়ে সবার নানা রকমের মন্তব্য শুরু হয়ে গেল। এরপর স্বাভাবি জীবনে ফিরতে শুরু করলেন ছোট মুজিব। একবার কেউ বাবার সান্নিধ্যে আসলে সে বাবার খুব ভক্ত হয়ে যেত। সেসময় বাবা আর ছেলের খুব ভালো সময় কাটে। বাবা তিনটা খবরের কাগজ রাখতেন এবং সকালে দু'জন একসাথে খবরের কাগজ পড়তেন। এর মধ্যে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হলো। খাবারের অভাবে চারদিকে হাহাকার। কিশোর মুজিব মনে প্রচন্ড দুঃখ-বেদনা, কীভাবে কী করবে? তখন সবার সাথে পরামর্শ করে সমাজের বিত্তবানদের ঘর থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করে যারা অনাহারী তাদের ঘরে পৌঁছে দিলেন। যারা বাচ্চাদের স্কুলের বেতন দিতে পারত না, বই খাতা বা কলম কিনতে পারত না তাদের সাহায্য করা হতো ওই চাল থেকে কিছু চাল বিক্রি করে। কিশোর মুজিবের নাম তখন গোপালগঞ্জে অনেক জনপ্রিয়। তাই সময়ের সাথে তিনি অনেকেরই হিংসার পাত্র হতে শুরু করলেন। আজে বাজে অভিযোগ দিয়ে দাদার কান ভারি করা হতো। কিন্তু দাদার ছিল তার সন্তানের প্রতি অগাধ বিশ্বাস। একটু দুষ্টামি করলেও খোকা কোনো অন্যায় করতে পারে না। তাই বঙ্গবন্ধুর কাছে কিছু জানতে চাইলে তিনি দোষ স্বীকার করে দাদার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতেন। ব্রতচারী নামে একটি সংগঠন ছিল। সেখানে নাচ, গান বা ঢোল বাজিয়ে মানুষের দুঃখের কথা তুলে ধরা হতো। এই দলেও যোগ দিলেন শেখ মুজিব। একবার এক ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। সেখানে বড় বড় সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা অংশ নেয়। খেলা হবে ছাত্রদের সাথে সরকারী কর্মকর্তাদের। ছাত্রদের দল নেতা শেখ মুজিব। আর সরকারী দলের নেতা হলেন শেখ লুৎফর রহমান। বাবা বনাম ছেলের খেলা। সেসময় শেখ লুৎফর রহমানের দলে বাইরে থেকে নামকরা খেলোয়াড়দের আনা হলো। তাদের সবকিছুই ছিল রাজকীয়। অন্যদিকে ছাত্র মুজিবের সব কিশোর তরুণ খেলোয়াড়। খেলার দিন এলাকায় দারুণ উত্তেজনা। অনেক মানুষ ভিড় জমালো খেলা দেখতে। খেলার ফলাফল ছিল বাবা শেখ লুৎফর রহমানের দলের জয়। হেরে গিয়ে মন খারাপ ছিল মুজিবের। তবে বাবার জয়েই আনন্দিত ছিলেন তিনি। আস্তে আস্তে তরুণ মুজিব মুসলমানদের নিয়ে মুসলিম সোসাইটি গঠন করেন। তখনকার দিনে অনেককেই বৈষম্যের শিকার হতে হতো। হামিদ স্যার অনেক কিছুই শোনাতেন। যেমন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র, গান্ধীজী উনাদের মত বিপ্লবী নেতাদের কথা। ১৯৩৮ সালের কথা। দুজন মন্ত্রী গোপালগঞ্জ পরিদর্শনে আসবেন। চারিদিকে ঈদের মত আয়োজন। অভ্যর্থনা কমিটি করা হলো। সে কমিটির এক নম্বরে ছিল শেখ মুজিবের নাম। কারণ এমন বুদ্ধিমান ও চটপটে মহল্লায় আর ছিল না। সেই মহেন্দ্রক্ষণ আসল। একজন হলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও অন্যজন হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। শেখ মুজিবসহ আরো আট-দশজন সালাম দিয়ে তাদের স্বাগত জানালেন। তারা ফিরে যাওয়ার সময় হঠাৎ শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেখ মুজিবের মাথায় হাত রেখে তার নাম, বাবার নাম, পড়ালেখাসহ সব বিস্তারিত জেনে নিলেন। এসব দেখে অনেকেই তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। ভাবলেন, কোথাও কোনো গোলমাল হয়ে গেল নাকি। সোহরাওয়ার্দী তখন মুজিবকে তার বাসার ঠিকানাও দিয়ে গেলেন। সেসময় উপস্থিত বুদ্ধিতে ছাত্রদের কষ্টের কথা শেরে বাংলা ও শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে বলে বসলেন মুজিব। বললেন, স্কুল ও হোস্টেলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, আমাদের থাকায় সমস্যা হচ্ছে, বই ভিজে যায়। দয়া করে ছাদটা সংস্কার করে দিন। আমরা সবাই গরিব। আমাদের অনেক উপকার হবে। মুজিবের এমন কাণ্ড দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেলেন। ভাবলেন, সর্বনাশ কী জানি হয়ে যায় এখন। কিন্তু পরে দেখা গেল অতিদ্রুত ছাদ সংস্কারের টাকা বরাদ্দ হলো ও কাজও শুরু হয়ে গেল। তখন গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরের দিকে শুরু হয়ে গেল মুজিবের জয়গান। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের পরামর্শেই মুজিব সেখানে মুসলিম পরিষদ খুলেন। সেখান থেকেই শেখ মুজিবের হাতেখড়ি। সেটাও সোহরাওয়ার্দীর কাছ থেকে। তখন শেখ মুজিব তার বাবার সম্মতি নিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। শেখ মুজিবের মা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ভীষণ ভক্ত ছিলেন। শেখ মুজিবের জীবনে তার বাবা ছিল সবচেয়ে শ্রদ্ধার পাত্র। আর মুজিবের মা ছিলেন তার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। মুজিবের স্ত্রী রেনু ছিলেন মুজিবের বেস্ট ফ্রেন্ড। সবকিছুই তারা নিজেদের মধ্যে শেয়ার করতেন। পরামর্শ করে নিতেন। একটা সময় মুজিব সোহরাওয়ার্দীকেও নিজের বাবার মত শ্রদ্ধা করতে শুরু করলেন। তার পরামর্শেই নিজেকে গড়তে শুরু করলেন। এটাই ছিল মুজিবের বেড়ে উঠার গল্প। আগামীতে যদি সুযোগ পাই, তাহলে তোমাদের আরো অনেক গল্প শোনাবো। তোমরা ভালো থাকো। আল্লাহ যেন আমার বাবাকে বেহেশত নসীব করুক






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply