অবশেষে থমকে যাওয়া মুন্নীর স্বপ্নপূরণ
পাবনার মেয়ে মোছা. জান্নাতুম মৌমিতা মুন্নী ভেবেছিলো তার স্বপ্নটা বোধ হয় অধরাই থেকে যাবে। গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে, গায়ে সাদা অ্যাপ্রন চাপিয়ে রোগীকে সুস্থ করা হয়তো আর হয়ে উঠবে না। কে জানতো তার জন্য লেখা হচ্ছে অন্য গল্প।
সংবাদমাধ্যমে মুন্নীর সেই না বলা ভাবনাটাই হয়তো উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম।
জানতে পেরেছিলেন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৩১১০তম হয়ে মুন্নী চান্স পেয়েছে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারই বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত সংসদ সদস্যর নামে এই মেডিক্যালের নামকরণ করেছেন। সেই জায়গা থেকেও খানিকটা দায়িত্ববোধ কাজ করেছেই তার মধ্যে।
এখন আর মুন্নীর মেডিক্যালে পড়ার স্বপ্ন অলীক নয়। কারণ তার পড়াশোনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছেন ইকবালুর রহিম নিজে।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, আমি সংসদের যে ভাতা পাই সেই অর্থ দিয়ে প্রতি বছরই মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে থাকি। ইতোমধ্যে ১৪ জন এমবিএস পাস করেছে। ৩০ জন পড়াশোনা করছে। আমার ২ বোন ডাক্তার। এভাবে আরেক জনকে ডাক্তার হতে সাহায্য করাটাই ভালো লাগার বিষয়।
মুন্নীর বাবা ভ্যানচালক। দিনে আয় আর কতই বা! তা দিয়ে সংসার চালানোই দায় সেখানে মেডিক্যালের পড়াশোনার এত এত খরচ চালানো কি সম্ভব! বাকী বিল্লাহ বলেন, এখন তো চিন্তামুক্ত হয়েছি। তাও বুকের মধ্যে ধুক ধুক করে, কখন কি হয়ে যায়।
ছোট থেকেই মুন্নীরও ইচ্ছে ছিলো মেডিক্যালে পড়ারই। সেও জানায়, এত সব বাধা পেরিয়ে সেখানে পড়ার সুযোগ পাবো ভেবেই অনেক ভালো লাগছে। এতটা খুশির সময় আমার জীবনে আর দ্বিতীয়বার আসেনি। আমি খুশি, বাড়ির সবাই খুশি, গ্রামের সবাই খুশি।
ইকবালৃুর রহিমের এমন পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতা অনেক আগে থেকেই। তবে আগে সেসব তেমন প্রকাশ করতেন না। কারণ যারা সাহায্য পাচ্ছে তারা হীনমন্যতায় ভুগতে পারে। তবে এখন তার প্রত্যাশা দেশের অন্যান্য বিত্তশালীরা উৎসাহী হলে কেউ বঞ্চিত হবে না শিক্ষার সুযোগ থেকে।
মুন্নীর মতো যারা থমকে যাওয়ার শঙ্কায় আছে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইচ্ছা আর মনোবল থাকলে অর্থ পড়াশোনার জন্য বড় সমস্যা না।অনেককেই এসময় পাশে পাওয়া যাবে।
মুন্নী পোড়াডাঙ্গা হাজী এজেম আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে।মেডিক্যালে পড়াশোনা শেষ করে এলাকার মানুষ তো বটেই, পুরো দেশের মানুষের সেবা করার স্বপ্ন আঁকে মুন্নী। সেই স্বপ্ন পূরণের দিকেই একধাপ এগোলো সে।
No comments: