Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » দেশি সারস (বৈজ্ঞানিক নাম: Grus antigone) Gruidae[102]




মহসিন আলী আঙ্গুর//দেশি সারস Grus antigone Luc viatour.jpg দক্ষিণ এশীয় উপপ্রজাতি Grus antigone antigone সংরক্ষণ অবস্থা সংকটাপন্ন (আইইউসিএন ৩.১)[১] বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ: Animalia

পর্ব: কর্ডাটা শ্রেণী: পক্ষী বর্গ: Gruiformes পরিবার: Gruidae গণ: Grus প্রজাতি: G. antigone দ্বিপদী নাম Grus antigone (Linnaeus, 1758) উপপ্রজাতি G. a. antigone (Linnaeus, 1758) (ভারতীয় সারস) G. a. sharpii (=sharpei) Blanford, 1895[২] (ইন্দোচীনা সারস, বার্মা সারস, শার্পের সারস, লালমাথা সারস) G. a. gilliae (=gillae) Schodde, 1988 (অস্ট্রেলীয় সারস) G. a. luzonica Hachisuka, 1941 (লুজন সারস, বিলুপ্ত) SarusMap.svg আনুমানিক বৈশ্বিক বিস্তৃত প্রতিশব্দ Ardea antigone protonym দেশি সারস (বৈজ্ঞানিক নাম: Grus antigone) Gruidae (গ্রুইডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Grus (গ্রুস) গণের অন্তর্গত বড় আকারের অপরিযায়ী সারস।[৩][৪] সহজে দৃষ্টিগ্রাহ্য ও দর্শনীয়[৫] এই পাখিটি উড়তে সক্ষম এমন পাখিদের মধ্যে দীর্ঘতম, প্রায় ১.৮ মিটার (৫.৯ ফুট)।[৬] পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। ধূসর শরীর আর গাঢ় লাল মাথা দেখে খুব সহজে এদের এ অঞ্চলের অন্যসব সারস থেকে আলাদা করা যায়। অগভীর জলাশয় আর জলাভূমিতে এরা তৃণমূল, শল্ক, পোকামাকড়, চিংড়ি, ছোট স্তন্যপায়ী ও মাছ খুঁজে বেড়ায়। সম্ভবত সারা জীবনের জন্য জোড় বাঁধে এবং বিশেষ কোন দুর্ঘটনা না ঘটলে একই জোড়া দীর্ঘদিন বাচ্চা তুলে যায়। জোড়ার একটি মারা গেলে অন্যটি না খেয়ে মারা গেছে এমন রেকর্ডও রয়েছে। ভারতে দেশি সারস বৈবাহিক স্থায়ীত্বের প্রতীক। এরা অসম্ভব এলাকাকাতর প্রাণী। প্রতিটি জোড়া নিজেদের জন্য একটি বিশেষ এলাকার সৃষ্টি করে এবং সেই এলাকায় অনুপ্রবেশকারীকে বরদাশত করে না। বর্ষাকাল এদের প্রজনন মৌসুম এবং এ সময়ে অগভীর পানিতে নলখাগড়া, জলজ উদ্ভিদ, ঘাস ইত্যাদি দিয়ে এরা প্রায় দুই মিটার ব্যাসবিশিষ্ট দ্বীপের মত বাসা তৈরি করে। দেশি সারসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ আন্তিগোনের সারস (লাতিন: grus = সারস, antigone = ট্রয়ের আন্তিগোনে, গ্রিক পুরাণ অনুসারে দেবী হেরা আন্তিগোনেকে সারসে রূপান্তরিত করেছিলেন)।[৪] সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ১৮ লক্ষ ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস।[৭] বিগত শতকের তুলনায় এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছে। ১৮৫০ সালের তুলনায় এদের বর্তমান সংখ্যা ১০% থেকে ২.৫% পর্যন্ত কমে গিয়েছেন। এ কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে সংকটাপন্ন বলে ঘোষণা করেছে।[১] বর্তমানে কেবল ভারতেই এরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় টিকে রয়েছে। বহু দেশে এদের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক এবং বাংলাদেশে এদের অনিয়মিতভাবে দেখা যায়। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।[৪] বিবরণ উড়ন্ত অবস্থায় সারসের কালো প্রাথমিক পালকগুলো স্পষ্ট দেখা যায় পূর্ণবয়স্ক দেশি সারসের পিঠ ও ডানা ধূসর বর্ণের। গলা ও মাথা পালকহীন ও গাঢ় লাল বর্ণের। চাঁদি সবুজাভ-ধূসর। লম্বা শক্ত ঠোঁট সবজে-ধূসর রঙের ও চোখা। ওড়ার সময় দেশি সারস বকের মত গলা গুটিয়ে রাখে না, টানটান করে রাখে। এ সময় তার ডানার কালো প্রাথমিক পালকগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। মাথায় দুটি ধূসর কান-ঢাকনি থাকে। আইরিস লালচে-কমলা। পা ও পায়ের পাতা লাল থেকে মাংসল লাল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঠোঁটের গোড়া হলদে এবং মাথা ও গলা বাদামি-ধূসর খাটো পালকে ঢাকা।[৮] মাথায় ধূসর চাঁদি থাকে না। প্রজনন মৌসুমে এর মাথা ও গলার পালকহীন অংশ টকটকে লাল রঙ ধারণ করে। এ অংশটি খসখসে আর হালকা রোম দিয়ে পরিপূর্ণ। মাথার পেছনে কিছু পালকহীন অংশ ব্রিসল পালক দিয়ে ঢাকা থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ সারসে কোন যৌন দ্বিরূপতা দেখা যায় না। তবে পুরুষ সারস স্ত্রী সারসের তুলনায় দৈর্ঘ্যে খানিকটা বড়। ভারতীয় উপপ্রজাতির পুরুষ সদস্যের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১.৮ মিটার (৫.৯ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে। পৃথিবীতে উড়তে পারে এমন পাখিগুলোর মধ্যে দেশি সারসই দীর্ঘতম। মনোনিত উপপ্রজাতির ওজন ৬.৮-৭.৮ কেজি (১৬ পাউন্ড) পর্যন্ত হতে পারে। এক গবেষণায় পাঁচটি sharpii উপপ্রজাতির গড় ওজন এসেছিল ৮.৪ কেজি (১৮.৫ পাউন্ড)। অবস্থানভেদে ও উপপ্রজাতিভেদে দেশি সারসের ওজন ৫ থেকে ১২ কেজি, উচ্চতা ১১৫ থেকে ১৬৭ সেমি, ডানার বিস্তার ২২০ থেকে ২৫০ সেমি,[৯][note ১] পা ৩২ সেমি, ঠোঁট ১৭.৫ সেমি ও লেজ ৯.৮ সেমি।[৪] উত্তরাঞ্চলের সদস্যদের উচ্চতা দক্ষিণাঞ্চলের অস্ট্রেলীয় সদস্যদের তুলনায় একটু বেশি।[১০] অস্ট্রেলিয়ায় দেশি সারসকে প্রায়ই ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ব্রল্গা বলে ভুল হয়। ব্রল্গার মাথা লাল তবে এ লাল অংশ গলা পর্যন্ত গড়ায় না।[৯] সারস পরিবার বিস্তৃতি ও আবাস একসময় দেশি সারস গাঙ্গেয় সমভূমিসহ সমগ্র ভারতের নিম্নভূমি জুড়ে বিস্তৃত ছিল। দক্ষিণে গোদাবরী নদী, পশ্চিমে গুজরাটের উপকূল ও পাকিস্তান[১১] এবং পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম পর্যন্ত এরা বিস্তৃত ছিল। প্রজাতিটি একসময় পাঞ্জাবে প্রজনন করলেও এখন করে না, তবে শীতকালে প্রায়ই দেখা যায়।[১২] বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে দেশি সারস খুব কম দেখা যায়[১৩] আর বিহারে একদমই দেখা যায় না। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশি সারসের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন: লোমশ ধূসর চাঁদি ধীরে ধীরে লোপ পেয়ে সাদাটে হয়, গলা বাদামি থেকে টকটকে লালে রূপ নেয় এবং ঠোঁটের আগা গোড়া পর্যন্ত গাঢ় বর্ণ ধারণ করে পৃথিবীতে মোট দেশি সারস রয়েছে আনুমানিক ১৫,০০০-২০,০০০টি।[১৪] প্রজাতিটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে এবং বর্তমানে এর সবচেয়ে বড় আবাস ভারতে। দেশটির জলাভূমি আর নিম্নভূমি আশঙ্কাজনক হারে দখল হয়ে যাওয়ায় এটি ধানক্ষেতের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বর্তমানে কেবল নিম্ন সমভূমিতে এদের দেখা গেলেও একসময় কাশ্মীরের পাহাড়ি জলাভূমিতে এরা নিরাপদে ঘুরে বেড়াত।[১৫] তবে বর্তমানে হিমাচল প্রদেশের উঁচু অঞ্চলের জলাভূমি ও নিম্নভূমিতে এদের প্রজনন করতে দেখা গেছে। সম্ভবত এসব অঞ্চলে ধান চাষের আধিক্যের কারণে এ অঞ্চলে প্রজাতিটির আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে।[১৬][১৭] উত্তর প্রদেশের ধানক্ষেতবহুল জেলাগুলোতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দেশি সারসের আবাস। প্রায় ছয় হাজারের মত দেশি সারস এসব জেলায় বসবাস করে।[১৮] প্রদেশের পশ্চিমের জেলাগুলোয় এরা সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি, মধ্যের জেলায় তারচেয়ে কম আর পূর্বের জেলাগুলোয় একেবারে কম। দেশি সারসের বিস্তৃতি জলাভূমি আর ধানক্ষেতের সাথে পরিপূরকভাবে যুক্ত।[১৯] নেপালে দেশি সারস দেখা যায় কেবলমাত্র দেশের পশ্চিমাঞ্চলে। কপিলাবস্তু, নওয়ালপড়শি ও রূপান্দেই জেলায় নেপালের অধিকাংশ সারসের আবাস।[১৬][১৭] ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে মোট ৮,০০০-১০,০০০টি দেশি সারসের বাস।[১৪] উনিশ শতকে প্রজাতিটি বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগে দেখা গেলেও বর্তমানে অনিয়মিত। ১৯৯৩ সালে টেকনাফ ও ঠাকুরগাঁওয়ে দুটি নমুনা দেখা গেছে।[২০] দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সদস্যরা দুইটি পৃথক অঞ্চলে বিভক্ত: উত্তরাঞ্চলের সদস্যদের আবাস চীন ও মায়ানমারে এবং দক্ষিণাঞ্চলের সদস্যদের কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামে।[১৪] কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামে আনুমানিক ৮০০-১০০০টি সারস রয়েছে।[২১] মিয়ানমারে রয়েছে ৫০০-৮০০টি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেশি সারসের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময় থাইল্যান্ড ও আরও পূর্বে ফিলিপাইন পর্যন্ত এরা বিস্তৃত থাকলেও বর্তমানে সেখানে এরা বিলুপ্ত। ২০১১ সালে বন্দী অবস্থায় প্রজননকৃত সারস থাইল্যান্ডে অবমুক্ত করা হয়।[২২] অস্ট্রেলিয়ার কেবলমাত্র পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে দেশি সারস দেখা যায়। তবে অনেকসময় দেশটির বিভিন্ন অংশে এরা আংশিক পরিযায়ী হয়ে আসে।[২৩] ভারতে দেশি সারস জলাভূমি[২৪] কিংবা ক্ষেতের আইলে বাসা বানায়। স্বভাবে এরা এলাকাকাতর এবং প্রাকৃতিক জলাভূমি, নিম্নভূমি ও নিমজ্জিত ধানক্ষেতে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়।[১৬][১৭][২৫] শ্রেণীবিন্যাস ও উপপ্রজাতি জোড়া, সুলতানপুর জাতীয় উদ্যান, হরিয়ানা, ভারত ১৭৫৮ সালে শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস সর্বপ্রথম দেশি সারসের দ্বিপদ নামকরণ করেন। তিনি প্রজাতিটিকে বড় বকের গণ আর্ডি-তে (''Ardea'') স্থান দেন।[২৬] ১৮৮১ সালে অ্যাডওয়ার্ড ব্লাইদ প্রজাতিটির উপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন এবং তিনি ভারতের দেশি সারসকে দুইটি প্রজাতিতে বিভক্ত করেন; Grus collaris ও Grus antigone।[২৭] আধুনিককালে অধিকাংশ পক্ষীবিদ প্রজাতিটির মোট চারটি উপপ্রজাতির স্বীকৃতি দিয়েছেন যার মধ্যে একটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত। বিলুপ্ত উপপ্রজাতিটির নাম G. a. luzonica এবং এর আদি অবস্থান ছিল ফিলিপাইনে। মনোনিত উপপ্রজাতির আবাস ভারতে এবং আকারে এটাই দীর্ঘতম। মাথার পালকহীন অঞ্চলের নিচে সাদা বন্ধনী আর ডানার সাদা বর্ণের তৃতীয় পালক দেখে অন্য উপপ্রজাতি থেকে এদের খুব সহজে আলাদা করা যায়। উপপ্রজাতি sharpii-এর অবস্থান মায়ানমার ও তৎসংলগ্ন দ্বীপসমূহে। অনেকের মতে antigone ও sharpii একই উপপ্রজাতির দুইটি ভিন্ন রূপ।[১০] পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার উপপ্রজাতিটিকে sharpii-এর (অনেকসময় sharpei বানানে লেখা হলেও লাতিন ব্যাকরণ অনুযায়ী sharpii সঠিক[৮]) অন্তর্ভুক্ত মনে করা হলেও বর্তমানে একে পৃথক উপপ্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হয়। এ উপপ্রজাতিটির নাম G. a. gilliae (আনেকসময় gillae বা gilli লেখা হয়)। মাত্র ১৯৮৮ সালে এ উপপ্রজাতিটি সনাক্ত করা হয় এবং এটি প্রথম দেখা যায় ১৯৬৯ সালে। তখন দেশি সারসকে অস্ট্রেলিয়ায় সাম্প্রতিক পরিযায়ী বলে মনে করা হত। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা অবশ্য বহু আগে থেই সারস আর ব্রল্গার মধ্যে পার্থক্য দেখতে পেয়েছিল। তারা একে ডাকত "রক্তে-মাথা-রাঙানো সারস" বলে। এ উপপ্রজাতিটি অন্যসব উপপ্রজাতির তুলনায় বেশ গাঢ় এবং এর কান-ঢাকনি আকারে অনেক বড়।[note ২] মূল প্রজাতি থেকে মাত্র তিন হাজার জেনারেশন পার করে এরা নতুন উপপ্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।[৬] ফিলিপাইনে একসময়ে প্রাপ্ত luzonica উপপ্রজাতিটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় নি। এর সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় নি। সম্ভবত এরা gilliae বা sharpii-এর একটি প্রতিরূপ।[২৮] উড্ডয়নরত সারস, (হোদাল, ভারত) সামান্য কিছু নমুনার মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, এশীয় উপপ্রজাতিসমূহের মধ্যে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত জিন ফ্লো ছিল। বাসস্থান সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় এরা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ায় প্রজাতিটির আবির্ভাব প্রায় ৩৫,০০০ বছর আগে অর্থাৎ প্লাইস্টোসিন যুগের শেষ পর্যায়ে।[৬] চারগুণ বেশি নমুনা সংগ্রহ করে পরিচালিত আরেকটি গবেষণা এ ফলকে সমর্থন করে।[১০] নতুন এ গবেষণাটি আরও বলে যে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন বলে অস্ট্রেলীয় উপপ্রজাতির সদস্যরা পুরোপুরি নিজেদের মধ্যে প্রজনন করতে সক্ষম হয়েছিল। যেহেতু ব্রল্গার সাথে এর জিনগত বৈপরীত্য রয়েছে, সেহেতু এদের মধ্যে কোন সংকরায়ন ঘটতে পারে না অর্থাৎ এ উপপ্রজাতিটি একটি সম্পূর্ণ পৃথক প্রজাতি হতে পারে।[১০] নামকরণ দেশি সারসের ইংরেজি নাম সেরাস ক্রেন সম্ভবত হিন্দি সারস থেকে এসেছে। বাংলা সারস এসেছে সংস্কৃত শরহংস থেকে। কলোনিয়াল শাসনের সময়ে ব্রিটিশ সেনারা এ পাখি নির্বিচারে শিকার করত। তারা একে সিরিয়াস[২৯] ও সাইরাস নামে ডাকত।[৩০] এর বৈজ্ঞানিক নামটি এসেছে গ্রিক পুরাণে ট্রয়ের রাজা ইদিপাসের কন্যা আন্তিগোনের নামানুসারে। আন্তিগোনে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে ধারণা করা হয় সারসের গলায় নগ্ন চামড়া থেকে antigone শব্দটি এসেছে।[৯][note ৩] আবার আরেক মতে হেরা আন্তিগোনিকে সারসে রূপান্তরিত করেছিলেন বলে এর নাম Grus antigone।[৪] স্বভাব A flock of Sarus Cranes in a field in Gujarat সাধারণত জোড় বেঁধে চলাফেরা করলেও সারস দলবদ্ধভাবেও বিচরণ করে, আহমেদাবাদ, গুজরাট বেশিরভাগ সারস দীর্ঘপথের পরিযায়ী হলেও দেশি সারস স্বভাবে পুরোপুরি পরিযায়ী নয়। অবশ্য অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির কারণে এদের এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় পরিভ্রমণ করতে দেখা গেছে। কেবল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সদস্যরা পূর্ণাঙ্গ পরিযান করে।[১৪] প্রজনন মৌসুমে একজোড়া সারস তাদের নিজস্ব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। উচ্চস্বরে বারবার ডেকে ও ডানা ঝাপটিয়ে এরা এ এলাকা থেকে অন্য সারসদের দূরে রাখে। অপ্রজননকালীন সময়ে এরা একাকী বা দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়। এদের দল ছোট থেকে বিশাল আকারের হয়, একবার একদলে ৪৩০টি পাখি দেখা গিয়েছিল।[১৭][৩১][৩২] যেসব অঞ্চল অর্ধশুষ্ক, সেসব অঞ্চলের সারসরা নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে দলের সাথে মিশে ঘুরে বেড়ায়। যেসব অঞ্চলে সারাবছর পানির অবাধ সরবরাহ রয়েছে (যেমন উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল) সেসব অঞ্চলে এরা সবসময় নিজ এলাকা বজায় রাখে ও জোড়ায় জোড়ায় থাকে। এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে বড় দলটিকে দেখা গেছে কেওলাদেও জাতীয় উদ্যানে। প্রায় ৪৩০টি দেশি সারস ২৯ কিলোমিটার২[৩৩] এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এছাড়া উত্তর প্রদেশের দুইটি জেলায় একসাথে ২৪৫-৪১২টি সারস দেখা গেছে। গুজরাট ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রায়ই একশ বা তারও বেশি সদস্যবিশিষ্ট দল দেখা যায়।[৩৪] অনেকসময় প্রজনন মৌসুমে প্রজননকারী জোড়া অপ্রজননকারী পাখিদের বিভিন্ন জলাশয় থেকে তাড়িয়ে দেয়। ফলে স্থানীয়ভাবে কোন কোন জায়গায় এদের সংখ্যা অসম্ভব কমে যায়। কেওলাদেও জাতীয় উদ্যানে যেখানে গ্রীষ্মকালে ৪০০ সারস বসবাস করে, সেখানে বর্ষাকালে মাত্র ২০টি সারস বিচরণ করে।[৩৩] ভূচর শিকারীদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেশি সারস অগভীর পানিতে বিশ্রাম নেয়।[৯] পূর্ণবয়স্ক সারস প্রতিবছর পালক বদলায় না। দুই থেকে তিন বছরে একবার এরা পালক বদলায়।[৩৫] খাদ্যাভ্যাস খাদ্যের সন্ধানে (ভরতপুর) দেশি সারস অগভীর পানিতে (সাধারণত ৩০ সেমি এর কম) অথবা মেঠো জমিতে লম্বা ঠোঁট দিয়ে খাদ্যের সন্ধানে কাদামাটি ঘেঁটে যায়। এরা সর্বভূক। পোকামাকড় (প্রধানত ঘাসফড়িং), জলজ উদ্ভিদ, মাছ (সম্ভবত শুধুমাত্র বন্দী অবস্থায়[৩৬]), ব্যাঙাচি, ব্যাঙ, চিংড়ি ও কাকড়া এবং শস্যবীজ। প্রায়ই এশীয় ধোড়া সাপ (Xenochrophis piscator),[৯] ও কচ্ছপের[৩৭] মত বড় সরীসৃপও এরা খায়। দেশি সারস বিপদে পড়লে অন্য পাখির ডিম খায়।[৩৮] উদ্ভিদাংশের মধ্যে প্রবৃদ্ধ মূল, কচি পাতা, কচি তৃণ, বীজ ইত্যাদি খায়। চাষ করা শস্যের মধ্যে গম, ধান, চীনাবাদাম ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।[৯] প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি সারসের প্যাঁচানো ট্রাকিয়া এর শিঙার মত আওয়াজ হওয়ার অন্যতম কারণ দেশি সারস উচ্চস্বরে শিঙার মত আওয়াজ করে। অন্যসব সারসের মত এরও প্রবৃদ্ধ ট্রাকিয়া থাকে এবং এ ট্রাকিয়া কাঁধের দিকে প্যাঁচানো থাকে। সেজন্য প্রজাতিটি এমন অদ্ভুত উচ্চস্বরে ডাকতে পারে।[৩৯] জোড়া সারস যুগ্ম অঙ্গভঙ্গী করে সঙ্গীর মনোরঞ্জনের চেষ্টা করে। মোহনীয় ভঙ্গীতে "নেচে" নানাভাবে এরা সঙ্গীর মন জয় করার চেষ্টা করে। আবার জোড়ার একটি অপরটিকে কেন্দ্র করে ছোট ছোট লাফ দিয়ে কিংবা অনবরত মাথা ঝুঁকিয়ে নেচে যায়। প্রজননকালীন ও অপ্রজননকালীন দুই সময়েই এরা এধরনের নাচানাচি করে বেড়ায়।[৪০] আবার বাসা বা ছানা রক্ষা করার জন্যও এরা এ ধরনের নাচ প্রদর্শন করে। সে নাচ প্রকৃতিগত দিক থেকে আত্মরক্ষামূলক।[৯] ভারতে দেশি সারসের প্রজনন মৌসুম বর্ষাকাল (জুলাই থেকে অক্টোবর; এক মৌসুমে দুইবার বাচ্চা তুলতে পারে),[৩৩] অস্ট্রেলিয়ায় সারা বছর ও বর্ষার প্রাক্কালে প্রজনন করার রেকর্ড রয়েছে।[১৭] এরা বড় বাসসা তৈরি করে। অগভীর জলাশয়ে বা ধানক্ষেতে শর বা জলজ উদ্ভিদ দিয়ে বাসার ভিত্তি তৈরি করে।[৪১] বাসায় খড়, ঘাস, লতা-পাতা তাদের মূল ও কাদাসহ জমা করে রাখা হয়। ফলে বাসাটিকে পানির ওপর ছোটখাটো একটা দ্বীপের মত মনে হয়। বাসাটি অরক্ষিত ও খোলা থাকে এবং বহু দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়।[৪২] বাসার ব্যাস প্রায় দুই মিটার (ছয় ফুটের বেশি) এবং উচ্চতা এক মিটারের (তিন ফুট) মত হতে পারে।[৪৩] কোন কোন ক্ষেত্রে বাসা স্থায়ী রূপ লাভ করে, এক জোড়া সারস পরপর পাঁচটি প্রজনন মৌসুমে টানা একই বাসা ব্যবহার করে যায়।[৪৪] বাসা বানানো শেষ হলে স্ত্রী সারস এক থেকে দুইটি কিংবা সর্বোচ্চ চারটি[৪৫] ডিম পাড়ে। তিনটি ডিম পাড়ার ঘটনা বিরল।[৪৬] ডিমের রঙ ধবধবে সাদা ও ওজনে ২৪০ গ্রাম।[৯] বিপদ দেখলে এরা প্রায়ই বাসার উপকরণ দিয়ে ডিম ঢাকার চেষ্টা করে।[৪৭] বাবা-মা দু'জনেই ডিমে তা দেয়।[৪৫] ২৬-৩৫ দিন পরে ডিম ফুটে ছানা বের হয়, গড়ে ডিম ফোটার সময় ৩১ দিন।[২৪][৪৮] ডিম ফুটে ছানা বের হওয়ার পর বাবা-মা হয় খোলস খেয়ে ফেলে নয়তো ঠোঁটে করে বাইরে ফেলে দেয়।[৪৯] বছরে একজোড়া সারসের সন্তান জন্মদান ও সফলভাবে সন্তান প্রতিপালন করার হার ৩০ শতাংশ। সাধারণত এক থেকে দুইটি সন্তান প্রতিপালন করার সুযোগ পায়; তিনটি ছানা প্রতিপালনের ঘটনা অত্যন্ত বিরল।[৫০][৫১] ডিম জীবনকাল দাঁড়কাক (Corvus macrorhynchos) আর পাতিকাকের (C. splendens) উৎপাতে প্রায়ই এদের ডিম নষ্ট হয়ে যায়।[৪৯] এছাড়া শঙ্খচিলের (Haliastur indus) কারণে বহু ডিম নষ্ট হয়েছে বলে জানা যায়। অস্ট্রেলিয়ায় ডিঙ্গো (Canis dingo) আর লাল খ্যাঁকশিয়াল (Vulpes vulpes) অল্পবয়সী সারসের প্রধান শত্রু।[৯] এছাড়া ফসলের ক্ষেতে বাসা পেলে কৃষক ও শিশুকিশোররা ডিম সরিয়ে নিয়ে যায়।[২৪] প্রবাসী শ্রমিক[৫২] আর ভবঘুরেরা খাবার হিসেবে এদের ডিম সংগ্রহ করে।[৫৩] এসব কারণে স্থানভেদে ৩১ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বাসায় ডিম ফুটে ছানা বের হতে পারে না। শিকার ও বাসা থেকে সংগ্রহ করার কারণে ৮% ছানার মৃত্যু হয়। আর ৩০% ছানা অজানা কারণে মৃত্যুবরণ করে।[৫৩][৫৪][৫৫] গুজরাটে প্রায় ২০%[৫৬] ও উত্তর প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫১-৫৮% বাসায় সফলভাবে ছানার জন্ম হয়।[২৪] প্লাবিত ও জলাভূমি অঞ্চলের বাসায় বা যেসব স্থানে কৃষকরা বিরক্ত করে না সেসব স্থানে সফলতার হার প্রায় একই রকম। প্রজনন মৌসুমের শেষ দিকে বাসা বানালে তা থেকে সফল সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা কম থাকে। তবে জলাভূমির বিস্তৃতি বেশি হলে শেষ সময়ে এ ধরনের কোন প্রভাব পড়ে না।[২৪] ২০০৯-২০১১ সালে স্থানীয়দের সহায়তায় "সংরক্ষণের বিনিময়ে অর্থ" নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল; তাতে মোট ৯৬টি বাসা থেকে সফল বংশবৃদ্ধির হার ছিল ৮৯%।[৫৩] দেশি সারসের পরজীবী সংক্রমণ ও রোগবালাই সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় নি। প্রাকৃতিক পরিবেশে এর রোগবালাই অন্য প্রজাতির পাখিদের উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে তাও অজানা। রোম চিড়িয়াখানায় পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দেশি সারসের উপর সাধারণ প্রাণীজ জীবাণু অ্যানথ্রাক্সের কোন প্রভাব নেই।[৫৭] অন্তঃপরজীবীদের মধ্যে ট্রেমাটোডা শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত একটি প্রজাতি Opisthorhis dendriticus অন্যতম। লন্ডন চিড়িয়াখানার একটি সারসের যকৃতে এই পরজীবীটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।[৫৮] এছাড়া অস্ট্রেলীয় একটি নমুনার দেহে এক প্রজাতির সাইক্লোসিলিড (Allopyge antigones) পাওয়া গেছে।[৫৯] অন্যান্য পাখিদের মত এই প্রজাতিটিও উকুন দ্বারা আক্রান্ত; বেশ কিছু প্রজাতির উকুনের মধ্যে দুইটি প্রজাতি এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা গেছে: Heleonomus laveryi এবং Esthiopterum indicum।[৬০] বন্দী অবস্থায় দেশি সারস ৪২ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।[note ৪][৬১][৬২] মূলত মানুষের বিভিন্ন বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের কারণেই এদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর হার অনেক বেশি। বিভিন্ন বিষাক্ত কীটনাশক, যেমন- মনোক্রোটফস, ক্লোরপাইরিফস, ডায়ালড্রিন প্রভৃতি ব্যবহারের ফলে শস্যবীজ ও অঙ্কুরিত উদ্ভিদ বিষাক্ত হয়ে যায় এবং সেগুলো খাদ্য হিসেবে গ্রহণের ফলে বহু সারসের মৃত্যু হয়েছে।[৬৩][৬৪][৬৫] এছাড়া বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে বহুু পূর্ণবয়স্কক সারসের মৃত্যু হয়। ভারতের উত্তর প্রদেশে স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃৃত্যুবরণকারী সারসের সংখ্যা সেই অঞ্চলের মোট সারসের এক শতাংশ।[৬৬] বর্তমান অবস্থা ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রাকৃতিক পরিবেশে আনুমানিক পনের থেকে বিশ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক দেশি সারস টিকে রয়েছে।[১] ভারতে টিকে থাকা সারসের সংখ্যা দশ হাজারেরও কম, তবে সংখ্যাটি অপর তিনটি উপপ্রজাতির তুলনায় অনেক বেশি। দেশটিতে ঐতিহ্যগতভাবে পাখিটিকে পবিত্র গণ্য করা হয়, ফলে মানুষের হাত থেকে এরা অনেকক্ষেত্রেই বেঁচে যায়।[৫২] কোন কোন এলাকায় এরা মানুষকে ভয় পায় না। পূর্বে বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে এদেরকে পাকিস্তানে দেখা যেত। কিন্তু বিগত শতাব্দীর আশির দশকের শেষভাগে এদের সর্বশেষ দেশটিতে রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতেও এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।[১] অনুমান করা হয়, ১৮৫০ সালে সারা পৃথিবীতে যে পরিমাণ দেশি সারস ছিল, ২০০০ সালে তার মাত্র ২.৫ শতাংশ (খুব জোরে গেলে ১০ শতাংশ) টিকে রয়েছে।[৬৭] ভারতের বহু কৃষকের ধারণা দেশি সারস ফসলের ক্ষতি সাধন করে,[১৬] বিশেষত ধানের (Oryza sativa)। অথচ সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সরাসরি ক্ষেত থেকে খাদ্যগ্রহণের ফলে যে পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয় তা মোট ফলনের এক শতাংশেরও কম। এছাড়া শস্যক্ষেত্রে বিচরণের সময় প্রায় ০.৪–১৫ কিলোগ্রাম (০.৮৮–৩৩.০৭ পা) ফসল ঝরে যেতে পারে।[৬৮] এতকিছুর পরও প্রজাতিটির প্রতি অধিকাংশ কৃষকের মনোভাব ইতিবাচক, ফলে আবাদী এলাকায় প্রজাতিটি বিচরণ ও সংরক্ষণ সম্ভব হয়েছে। অধিক হারে জলাভূমি ও অনাবাদি ভূমি দখলের ফলে ধানক্ষেতগুলো এদের খাবারের অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে।[২৪] কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।[৫৪] এছাড়া চাষাবাদের নামে জলাভূমি দখল ও কৃষিভূমি দখল করে শহুরে স্থাপনা সম্প্রসারণের ফলে এদের বিচরণস্থলের যথেষ্ট পরিমাণে কমে গেছে এবং এর ফলস্বরূপ এদের অস্তিত্ব বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদী হুমকির সম্মুখীন।[৫১] অস্ট্রেলিয়ায় মোটমাট পাঁচ হাজারের বেশি দেশি সারস রয়েছে এবং এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।[১০] তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপপ্রজাতির সদস্যরা আবাসস্থল ধ্বংস (যেমন: কৃষিকাজের উদ্দেশ্যে অতিমাত্রায় ভূমি সংস্কার, জলাভূমির পানি অপসারণ ইত্যাদি) ও বেশ কয়েকটি যুদ্ধের কারণে আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছে। একসময় দক্ষিণ চীনের যে বিশাল অঞ্চলে এরা সদর্পে ঘুরে বেড়াত, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সেই অঞ্চল থেকে এরা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ১,৫০০–২,০০০টি পাখি এখনও টিকে থাকতে পারে। কম্বোডিয়ার উত্তরাঞ্চলে এদের বাসা পাহারা দেওয়ার জন্য স্থানীয়দের অর্থসাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বভাবতই এ প্রক্রিয়ায় ফল পাওয়া গেছে। তদারকি করা বাসার তুলনায় অরক্ষিত বাসার সাফল্যের হার অনেক কম।[৫৩] তবে অর্থসাহায্যকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে হিংসাত্মক মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। তার ফলস্বরূপ ইচ্ছাকৃতভাবে বাসা ও ডিম ভেঙে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে সমস্যা নতুন মোড় নিয়েছে এবং সংরক্ষণের-বিনিময়ে-অর্থ প্রকল্পটি লাভের বদলে ক্ষতি করেছে বেশি। প্রকল্প থেকে পরিষ্কার বোঝা গিয়েছে যে এ ধরনের প্রকল্প অল্প সময়ের জন্য সুবিধাজনক হলেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আবাসস্থল সংরক্ষণ ও স্থানীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা ছাড়া কোন বিকল্প পথ খোলা নেই।[৫৩] ১৯৬০-এর দশকের শেষ ভাগে ফিলিপাইনের উপপ্রজাতিটি চিরতরে হারিয়ে যাওয়ায় এর সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় নি।[১] সাহিত্য-সংস্কৃতিতে দেশি সারস কাগুজে সারস দেশি সারস ভারতে পরম পূজনীয়। কিংবদন্তী রয়েছে, মহামুনি বাল্মীকি এক শিকারীকে সারস হত্যার দায়ে অভিশাপ দেন এবং এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে রামায়ণ রচনা করতে উদ্বুদ্ধ হন।[৬৯][৭০] পঞ্চদেবতার পূজারি হিসেবে পরিচিত গণ্ডদের কাছে দেশি সারস খুব পবিত্র।[৭১] আদি হিন্দু রচনাবলীতে সারসের মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।[৭২] সারসেরা সম্ভবত সারা জীবনের জন্য জোড় বাঁধে এবং জোড়ের একটির মৃত্যু মানে আরেকটিরও মৃত্যু।[৭৩] ফলে এরা বৈবাহিক স্থায়িত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত এবং গুজরাটের কোথাও কোথাও নববিবাহিত দম্পতিদের একত্রে জোড়া সারস দেখতে যাওয়া প্রথা।[১৭] সারসের ডিম ভারতের কোথাও কোথাও স্থানীয় পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[১৭][৭৪] ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রশাসনিক প্রতীক সারস।[৭৫] ১৬০৭ সালের কাছাকাছি মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরের লেখায় দেশি সারসের উল্লেখ দেখা যায়। তিনি লিখেছিলেন, পাখিটি ৪৮ ঘণ্টা অন্তরে দুটো ডিম পাড়ে আর ৩৪ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।[৯] তিনি সাফল্যের সাথে বন্দী সারসের প্রজননও ঘটান।[৭৬] বাংলা সাহিত্যে কম হলেও দেশি সারস স্থান করে নিয়েছে। জীবনানন্দ দাশ লিখে গিয়েছেন সিন্ধুসারস।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply