হ্যাটট্রিক বাংলা ফের মমতাময়
দেবাঞ্জন দাস কলকাতা: ২০১১, ২০১৬, আর এবার ২০২১! হ্যাটট্রিক মমতার! একুশের মহাসংগ্রামে বাংলার মানুষের উজাড় করা ভালোবাসা আর সমর্থন তৃতীয়বারের জন্য গঙ্গাপাড়ের নীলবাড়ি ‘নবান্নে’র ১৪তলায় পৌঁছে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দলবদলু-গদ্দারদের তুমুল চিৎকারেও ৭০:৩০ অনুপাতে ভাগ হয়নি অসাম্প্রদায়িক পশ্চিমবঙ্গ। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে ‘ঘরের মেয়ে’র হাতেই তুলে দিয়েছে বাংলার মসনদ। এবারের ভোটার তালিকার প্রায় অর্ধেক নারীশক্তি। কন্যাশ্রীর রূপকারকে ইভিএমে বোতাম টিপে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে তারাই।
মমতাকে হারাতে বাংলায় কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ‘রাষ্ট্রশক্তি’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, হিন্দুত্বের ‘পোস্টার বয়’ যোগী আদিত্যনাথ থেকে শুরু করে গণ্ডায় গণ্ডায় ভিন রাজ্যের বহিরাগত, কে ছিলেন না! বাংলা দখলে বিপুল অর্থব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গেই দোসর ছিল নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসনিক ব্যবস্থা, সিবিআই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্সের মতো এজেন্সির আগ্রাসন। নির্বাচন কমিশন এবং কমিশন নির্ধারিত লোকজন বারবার তৃণমূল সুপ্রিমোকে একটাই বার্তা দিয়েছে—‘ইউ আর আন্ডার ওয়াচ’। চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার ফন্দি। মাঝে ভাঙা পা নিয়ে একা মমতা! কিন্তু তিনি যে স্ট্রিট ফাইটার, ফাইটার দিদি। কেন্দ্র সরকার আর তার শাসনযন্ত্র যতই কোণঠাসা করার চেষ্টা চালিয়েছে, ততই মানুষের কাছাকাছি পৌঁছেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। বিচারের ভার ছেড়ে দিয়েছেন বাংলার মানুষের উপরই। সেই বাংলার রায়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন ৩০ বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের টালিচালার বাসিন্দা।
‘ত্রিমুখী’ সেই শক্তির বিরুদ্ধে ৩৬ দিনের নির্বাচনী লড়াই শেষে বাংলার রং রইল সবুজই। প্রতিষ্ঠিত হল—‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগান। উচ্ছ্বসিত মমতা বলেছেন, ‘আমার মতো খুশি, সুখী আজ কেউ নেই! ওরা (বিজেপি) বলেছিল ডবল ইঞ্জিনের সরকার, আর আমি বলেছিলাম ডবল সেঞ্চুরির সরকার! মানুষ আমাদের বিশ্বাস করেছে, ভরসা রেখেছে। মাথা নত করি বাংলার মানুষের চরণে। বাংলা বাঁচানোর এই লড়াইয়ে যাঁরা পক্ষে এবং বিপক্ষে ছিলেন, এহেন বড় জয়ের জন্য তাঁদের সবাইকে জানাই কৃতজ্ঞতা। বাংলা বুঝিয়ে দিয়েছে এখানে বিভেদ, হানাহানি আর মেরুকরণের ঠাঁই নেই।’
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাঁর কাজের অগ্রাধিকার তালিকাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, ‘কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করাটাই এখন অগ্রাধিকার। সেই কাজ শুরু করে দিয়েছি। আধিকারিকরাও সে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বাংলার সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে যেমন জিতেছি, তেমনই সবার সাহায্য নিয়ে করোনা বিরোধী যুদ্ধেও আমরাই জিতব। সবুজ ঝড়ের তোড়ে থামিয়ে দেব কোভিড ঝড়কে।’ বিপক্ষ শিবিরকে ধসিয়ে দেওয়া এই জয়ের পরেও কোভিডের কারণে ছোট করে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সারতে চান মমতা। বলেছেন, ‘কোভিড মিটলে ব্রিগেডে হবে বিজয় জমায়েত।’ কর্মী-সমর্থকদের কাছে তাঁর আবেদন—‘করোনা পর্বে কেউ বিজয় মিছিল করবেন না।’
তবে ঐতিহাসিক এই জয়ের পর্বে একমাত্র কাঁটা হয়ে রইল নন্দীগ্রাম। অভিযোগ, বিজয়ী ঘোষিত হওয়ার পরেও গেরুয়া বাহিনীর ‘আব্দারে’ ফের গণনা শেষে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোকে। গণনা কেন্দ্রে এহেন পটপরিবর্তনকে ‘কারচুপি’ হিসেবে ধরে তৃণমূল আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে। ফের ভোট গণনার দাবি প্রথমে স্থানীয়ভাবে জানায় তৃণমূল। এরই পাশাপাশি এদিন সন্ধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ফিরহাদ হাকিম ববি, ডেরেক ও’ব্রায়েন, অতীন ঘোষ এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাবের সঙ্গে দেখা করে নন্দীগ্রাম আসনে পুনর্গণনার দাবি জানান। গণনা পর্বে কীভাবে কারচুপি হয়েছে, এরকম সাতটি উদাহরণ লিখিতভাবে তুলে ধরা হয়। যদিও, সেই দাবি মানেনি কমিশন।
Tag: English News lid news world
No comments: