কেমন ছিল রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশ যাত্রা?
মহাকাশ ভ্রমণে সফল হয়েছেন এই উদ্যোক্তা। নিজের প্রতিষ্ঠানের নির্মিত মহাকাশযানে করেই মহাকাশে গেছেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী রিচার্ড ব্র্যানসন। ১৭ বছরের গবেষণার পর এই সুপারসনিক মহাকাশ বিমানটি তৈরি করেছে তারই কোম্পানি ভার্জিন গ্যালাক্টিক। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো থেকে সকালে ব্র্যানসনসহ তিনজন ক্রু আর দুজন বৈমানিক নিয়ে মহাকাশের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয় ভিএসএস ইউনিটি। ‘হোয়াইট কিং টু' নামের বিশাল দুই পাখার দুটি লাগোয়া বিমানের মাঝে বসানো হয় ভিএসএস ইউনিটিকে।
কেমন ছিল রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশ যাত্রা?
স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮ টায় আকাশে উড়ে যায় দুটি বিমান, সাথে উড়ে ভিএসএস ইউনিটি। উঠে যায় ৫০ হাজার ফিট উঁচুতে। এরপর স্থানীয় সময় ঠিক সকাল সোয়া ৯ টায় মাদারশিপ আলাদা করে দেয় ভিএসএস ইউনিটিকে। ইঞ্জিন বিকল হওয়ার আগেই ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসে ‘হোয়াইট কিং টু'।
এদিকে, মহাকাশের দিকে যেতেই থাকে ভিএসএস ইউনিটি। বিমানটি পৃথিবী থেকে ২ লাখ ৮২ হাজার ফিট ওপরে ওঠে। মহাকাশযানের ভেতর চাপ অনুভব করে যাত্রীরা। দেখতে থাকে পৃথিবীর নিল আকাশ কিভাবে ম্লান হচ্ছে, কিভাবে তারা আচ্ছাদিত মহাকাশ ভিএসএস ইউনিটিকে স্বাগত জানাচ্ছে। কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায় রকেটের ইঞ্জিন। ৫৩ মাইল ওপরে মহাকাশযানের যাত্রীরা কয়েক মিনিটের জন্য নিজেদের ভরশূন্য অনুভব করেছেন। মহাকাশযানের জানালা দিয়ে যাত্রীরা দেখেছেন পৃথিবী আর মহাকাশের প্যানারোমিক ভিউ।
এরপর আবারো চালু হয় ইঞ্জিন। মহাকাশযানটির ফেদারিং সিস্টেমও চালু করে দেয়া হয়, যেন বিমানের পাখাগুলো ওপরের দিকে থাকে। এই ফেদারিং সিস্টেম মহাকাশযানটির পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশের গতিপথ ঠিক করে। এরপর ভিএসএস ইউনিটি রানওয়েতে সফলভাবে ল্যান্ড করে। ১ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয় পুরো সফর। মহাকাশের উদ্দেশ্যে এ মহাকাশযানের চতুর্থ ফ্লাইট এটি।
এরমধ্য দিয়ে মহাকাশে বাণিজ্যিক যাত্রার দ্বার উন্মোচন করলেন ব্র্যানসন। আগামিতে সাব অরবিটাল স্পেস ট্যুরিজম ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলবে বলে মনে করেন রিচার্ড ব্র্যানসন। হাজার হাজার মানুষ মহাকাশ থেকে দেখবে মানুষের আবাস এই পৃথিবীকে। মহাকাশে মানুষের ভ্রমণ নিশ্চিত করতে কঠোর প্রতিযোগিতা করছে রিচার্ড ব্র্যানসন আর অনলাইন জায়ান্ট অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজস। সুপারসনিক রকেট আর মহাকাশযানে করে মহাকাশে নিয়ে যেতে কোটিপতি অনেকের কাছে টিকিটও বিক্রি করেছে রিচার্ড ব্র্যানসনের ভার্জিন গ্যালাক্টিক আর জেফ বেজসের ব্লু অরিজিন।
ভার্জিন গ্যালাক্টিকের স্পেস ট্যুরিজমের জন্য টিকিট কিনেছেন ৬শ' কোটিপতি। টিকিট রিজার্ভের জন্য খরচ পড়েছে ২ থেকে আড়াই লাখ ডলার। তবে মহাকাশের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক ফ্লাইট কোন কোম্পানি আগে চালু করবে, এ নিয়ে প্রতিযোগিতা কঠিন।
নিজের কোম্পানি ব্লু অরিজিনের নিউ শেফার্ড রকেটে বেজস মহাকাশে যাচ্ছেন আগামী ২০ জুলাই। তবে নিউ শেফার্ডের বাণিজ্যিক ফ্লাইটের টিকিটের দাম অনেক বেশি। এই দাম নিয়ে সমালোচনা করে রিচার্ড ব্র্যানসন বলেন, সাধারণ মানুষ অন্তত মার্কিন নাগরিকদের জন্য মহাকাশযাত্রার খরচ সাধ্যের মধ্যে রাখা উচিত।
মহাকাশ সফর থেকে ফিরে এসে তিনি জানান, ভার্জিন গ্যালাক্টিক মহাকাশে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করলে বিনামূল্যে দেবেন দুটো টিকিট। প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বাছাই করা হবে সেই দুই সৌভাগ্যবান যাত্রী, যাদের ব্র্যানসন সব সুবিধা দেয়াসহ নিয়ে যাবেন মহাকাশে।
সুইসভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএস বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ মহাকাশে পর্যটন বাণিজ্য ৩শ' কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
No comments: