দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম একেবারে বদলে যাচ্ছে। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বদলাবে পরীক্ষা পদ্ধতিও। বর্তমানের 'পরীক্ষানির্ভর' মূল্যায়ন পদ্ধতি থেকে শিক্ষাকে বের করে আনতে চাচ্ছে সরকার। পরীক্ষার পরিবর্তে শ্রেণিকক্ষে 'দক্ষতাভিত্তিক ধারাবাহিক মূল্যায়ন' চালু হতে যাচ্ছে। প্রতি বিষয়ে পূর্ণমান ১০০ নম্বর থাকলেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় বিষয় ও শ্রেণিভেদে ৪০ থেকে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। বাকি নম্বরের শিখনকালীন মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা। নতুুন এ পদ্ধতি চালুর জন্য খোলনলচে বদলে ফেলা হচ্ছে বিদ্যমান শিক্ষাক্রম। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা হবে নতুন পাঠ্যবই। আর এর সবকিছুই হবে ২০২৩ সাল থেকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম অনুসারে, শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান নাকি অন্য কোনো শাখায় পড়বে, তা নির্ধারণ করা হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। দশম শ্রেণির আগে আর কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। শুধু দশম শ্রেণির কারিকুলামের ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। ২০২৪ সাল থেকে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং পঞ্চম শ্রেণির প্রাইমারি এডুকেশন সার্টিফিকেট (পিইসি) পরীক্ষা আর কেন্দ্রীয়ভাবে নেওয়া হবে না। বিদ্যালয়েই বার্ষিক পরীক্ষার মতো এসব শ্রেণির মূল্যায়ন করা হবে। তবে এসব শ্রেণিতে জেএসসি, জেডিসি ও পিইসি সনদ দেওয়া হবে। আর প্রাথমিক স্তরে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষায়ই থাকবে না। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে। আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে, অর্থাৎ প্রতি বছর শেষে হবে পাবলিক পরীক্ষা। আর এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের পথরেখা অনুসারে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের কাজটি আগামী বছর পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। ২০২৩ সাল থেকে তা সবার জন্য বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৫ সালে গিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি কার্যকর হবে। গতকাল সোমবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রণয়ন করা জাতীয় শিক্ষাক্রমের খসড়া রূপরেখার অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। মূল্যায়ন যেভাবে :প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়েই ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। আর ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে ক্লাস শেষে পরীক্ষার মাধ্যমে যেটি সামষ্টিক মূল্যায়ন বলা হচ্ছে। ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। নবম ও দশম শ্রেণিতে কয়েকটি বিষয়ে শিখনকালে অর্ধেক মূল্যায়ন হবে এবং বাকি অর্ধেক সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩০ ভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ৭০ ভাগ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম পর্যন্ত অভিন্ন বিষয় :ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। এরপর একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শাখা পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হবে। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কিছু অভিন্ন বই পড়তে হয় এবং নবম শ্রেণিতে গিয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা- এসব শাখায় ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যে ১০টি বই পড়ানো হবে সেগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। বর্তমানে এসব শ্রেণিতে ১২ থেকে ১৪টি বই পড়ানো হয়। যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা উপস্থাপন করা হলে তিনি তা অনুমোদন করেন। ২০২৫ সাল থেকে এই শিক্ষাক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়নে আগামী বছর থেকে কাজ শুরু হবে। আগামী বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। দীপু মনি বলেন, আগামী বছর থেকে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা থাকছে কিনা- জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অষ্টম ও প্রাথমিকে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলিনি, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না এবং প্রতিটিতে সমাপনী পরীক্ষা হবে। সনদ দেওয়ার জন্য পাবলিক পরীক্ষার দরকার নেই। পিইসি এখনও ক্লাস সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি পাবলিক পরীক্ষা, বছর শেষে প্রতি ক্লাসে মূল্যায়ন হবে। দশম, একাদশ ও দ্বাদশে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেছি, এইচএসসির পরীক্ষার রেজাল্ট হবে একাদশ ও দ্বাদশ মিলিয়ে। প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই রূপরেখা করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর আগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক আলাদা আলাদা ছিল। একজন শিক্ষার্থী প্রাথমিকে ঢুকে মাধ্যমিকে যাচ্ছে। এ জন্য এক স্তর থেকে আরেক স্তরে যাওয়া যেন খুব মসৃণ হয়, মাঝে যেন ছেদ না পড়ে, অন্য স্তরে গিয়ে যেন খাপ খাওয়াতে কোনো সমস্যা না হয়, সেটি আমরা দেখার চেষ্টা করেছি। নতুন শিক্ষাক্রমের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে দীপু মনি বলেন, আনন্দময় পড়াশোনা হবে। বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমানো হবে। গভীর শিখনে গুরুত্ব দেওয়া হবে। মুখস্থ-নির্ভরতার বিষয়টি যেন না থাকে, এর বদলে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শেখাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা ও অন্যান্য কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এরপর শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারে। পড়াশোনার বাইরে খেলাধুলা বা অন্যান্য বিষয়ের সুযোগ কমে গেছে, এটা যেন না হয়। জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এ সময় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানসহ সংশ্নিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা যা বলেন :শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
বলেন, দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা নেই এটি খুব ভালো কথা। পঞ্চম শ্রেণির শিশুদের ওপর পাবলিক পরীক্ষা চাপিয়ে না দেওয়ার বিষয়টি আগেও নানাভাবে বলা হয়েছে। তবে এটি আরও স্পষ্ট করা উচিত সরকারের পক্ষ থেকে। কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় শিক্ষানীতি (২০১০) প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, কারিকুলাম হলো শিক্ষার পথরেখা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য উপযুক্ত হয়ে গড়ে ওঠার পথরেখা অনুসরণ খুবই জরুরি। পরীক্ষার চাপমুক্ত পড়াশোনা ও জ্ঞানার্জনটা আসলে খুব দরকার। এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান ে বলেন, আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের জন্য পৃথক সময়ে কারিকুলাম পরিবর্তন হওয়ার কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কারিকুলামে কোনো সমন্বয় থাকত না। এবারই একসঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের কারিকুলাম পরিমার্জন করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হবে না। তিনি বলেন, প্রাথমিক স্তরের কারিকুলামের ক্ষেত্রে সময়ের চাহিদাগুলো বিবেচনায় আনা হচ্ছে। বইয়ে কাগজের নৌকার ছবি থাকলে শিক্ষার্থীদের তা শ্রেণিকক্ষেই বানিয়ে দেখাতে হবে। এতে শিশুশিক্ষার্থীর কাজের দক্ষতা বাড়বে। নতুন কারিকুলামে পঞ্চম শ্রেণি শেষে পিইসি ও অষ্টম শ্রেণি শেষে জেএসসি পরীক্ষা রাখা হয়নি। এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতেও এ দুটি পরীক্ষার কথা বলা নেই।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: