Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » মাটির কি ও মাটির প্রকারভেদ




  মাটির সংগা

মাটির সংজ্ঞাঃ মৃৎবিজ্ঞানীগণ মাটির নানারূপ সংজ্ঞা দিয়েছেন, যেমনঃ

(১) ভূ-পৃষ্ঠের নরম আবরনের নাম মৃত্তিকা

(২) উদ্ভিদ জন্মানোর উপযোগী খনিজ, জীব ও জৈব সমন্বয়ে গতিশীল প্রাকৃতিক বস্তুকে মৃত্তিকা বলে

(৩) সময়ের ব্যবধানে জলবায়ূ ও জৈব পদার্থের সমন্বিত প্রভাবে রূপান্তরিত উৎস শিলা সৃষ্ট গাছ জন্মানোর উপযোগী ভূ-পৃষ্ঠের প্রাকৃতিক বস্তর সমষ্টিকে মৃত্তিকা বলে

(৪) পৃথিবীর উপরিভাগের যে নরম স্তরে গাছপালা মূল স্থাপন করে রস শোষণ করে জন্মায় ও বৃদ্ধি পায় তাকে মাটি বলে

(৫) মাটি হচ্ছে কঠিন পদার্থের ছোট ছোট টুকরা, পানি ও বায়ুর সমন্বয়ে গঠিত যৌগিক পদার্থ

(৬) পৃথিবীর শক্ত আবণের সবচেয়ে উপরের স্তরকে মাটি বলে। মাটির ভৌত গুনাবলী ও ধর্ম

মাটির ভৌত গুনাবলী ও ধর্ম

মাটির ভৌত গুনাবলী ও ধর্ম

মৃত্তিকার ভৌত গঠন

মাটি একটি প্রাকৃতিক বস্তু। ক্ষয়ীভুত শিলা ও খনিজের সাথে জৈব পদার্থ ও পানি মিশ্রিত হয়ে দিনে দিনে মৃত্তিকা উৎপন্ন হয়। কোন মৃত্তিকা নমুনা বিশ্লেষণ করলে কঠিন, তরল এবং বায়বীয় আকারে নিম্নরুপ দ্রব্য পাওয়া যায়-

ক) খনিজ দ্রব্য

            ১. নুড়ি বা প্রস্তর

            ২. বালি কণা

 ৩. পলি কণা

 ৪. কর্দম কণা

এদের প্রকার ভিত্তিক পরিমান মৃত্তিকা ভেদে ভিন্ন।

খ) জৈব পদার্থ

            ১. বিয়োজনশীল জৈব পদার্থ প্রয়োগকৃত জৈব সার, ফসলের অবশিষ্টাংশ, মৃত।

            ২. অবিয়োজিত উদ্ভিদাংশ স্থূল শিকড় ও শাখ-প্রশাখা, অন্যান্য উদ্ভিদাংশ।

            ৩. হিউমাস-জৈব পদার্থ বিয়োজিত হওয়ার পর সৃষ্ট কালচে পদার্থ।

            ৪. অণুজীব ও প্রাণী, ব্যকটেরিয়া, শ্যাওলা, ছত্রাক এক্টিনোমাইসেটিস, কোঁচো ও পোকা-মাকড়।

গ) পানি

            সেচ ও বৃষ্টির পানি এবং নদী উৎস থেকে প্রাপ্ত পানি।

ঘ) বায়ু

          মৃত্তিকা কণার ফাঁকে অবস্থানরত বায়ুমন্ডলীয় বায়ু। এছাড়া মাটিতে কঠিন পদার্থেও মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, ফেরাস অক্সাইড, সিলিকণ ডাই-অক্সাইড।




মৃত্তিকা গঠন দ্রব্যের (Components) পরিমান

মাটিতে গঠন দ্রব্যের পরিমান প্রধানত দু’ভাবে উল্লেখ করা হয় যথা -

    আয়তন ভিত্তিক
    এবং ওজন ভিত্তিক-

যে কোন দুইটি নমুনায় মৃত্তিকা দ্রব্যের প্রকার ও পরিমানগত সাদৃশ্য হওয়ার সম্ভবনা কম। অর্থাৎ বলা যায়  মৃত্তিকা উপকরণের প্রকার ও পরিমানগত বিবেচনায় মাটি অত্যন্ত অবিমিশ্র। তালিকায় সাধারন কৃষি মৃত্তিকায় গঠন দ্রব্যের পরিমান দেখানো হলোঃ-

উপকরণ


পরিমান

আয়তনভিত্তিক


ওজনভিত্তিক

মাত্রা


গড়


মাত্রা


গড়

খনিজ


৪০-৫০


৪৫


৬০-৯০


৭৫

জৈব


৪-৬





<২


<১

বায়ু


১-৫০


২৫


<১


<১

পানি


১-৫০


২৫


১৫-৩৩


২৪



মৃত্তিকা উপকরণ দ্রব্যের পরিমান নির্ণয় করে তা কৃষি কাজ এবং গবেষণা কাজে ব্যবহার করা যায়। মাটির উপকরণের পরিমানগত হিসাব নানাভাবে ব্যবহার করা যায়। নিচে মৃত্তিকা দ্রব্যের আয়তন ও ওজনভিত্তিক হিসাবের প্রধান প্রধান ব্যবহার উল্লেখ করা হলো।



আয়তনভিত্তিক ব্যবহার


ওজনভিত্তিক ব্যবহার

১। পানি সেচ


১। মৃত্তিকা গবেষণা ফলাফল

২। মাটির ভৌত গুণাবলী


২। মালির মৌলিক গুণাবলী

৩। মাটির রন্ধ্রতা ও চলাচল


৩। মাটির রাসায়নিক বৈশিষ্ট

মাটির ভৌত ধর্ম

মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মের মধ্যে মাটির ভৌত ধর্মকে প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়। মাটির ভৌত ধর্ম প্রত্যক্ষভাবে ফসল উৎপাদন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রন করে।

মাটির ভৌত ধর্ম  উৎপন্নের জন্য এতে বিদ্যমান স্থূল প্রস্তও থেকে অতি সুক্ষ্ম কর্দম কণা পর্যন্ত সকল প্রকার খনিজের অবদান রয়েছে। তবে সাধারণ কৃষি জমিতে স্থূল প্রস্তর ও নুড়ি আকারের দ্রব্য থাকেনা বলে প্রধানত বালি, পলি ও কর্দম কণাই বেশি উল্লেখযোগ্য। মৃত্তিকা খনিজের মধ্যে বালি, পলি ও কর্দম কণাকে মাটি কণা (Soil particle) বা মৃত্তিকা একক কণা বলে। সংজ্ঞা হিসাবে বলা যায় - দুই মিলিমিটারের কম ব্যস বিশিষ্ট নিদিষ্ট আকার মাত্রায় অন্তর্ভুক্ত খনিজ কণাকে একক কণা বলে। মাটির কণা ৩ প্রকার যথা- বালিকণা, পলি কণা ও কর্দম কণা। আকার অনুসারে বালি কণা ১-৫প্রকার এবং পলি কণা ও কর্দম কণা ২-৩ পকার হতে পারে।

 মাটির বৈশিষ্ট্য
Home > মাটির প্রকৃতি>মাটির বৈশিষ্ট্য
মাটির বৈশিষ্ট্য

মাটির বৈশিষ্ট্য

মাটির বৈশিষ্ট (Soil properties)

মাটিতে বিদ্যমান কঠিন, তরল বা বায়বীয় পদার্থ যৌথভাবে একটি বিশেষ প্রকৃতি উৎপন্ন করে।  মাটির এই প্রকৃতি প্রকাশের জন্য মাটির সকল বৈশিষ্ট্যকে নিম্নরূপ ৩টি শ্রেণীতে বর্ণনা করা হয়। যেমন-

             ক) মাটির ভৌত বৈশিষ্ট্য

            খ) মাটির রাসানিক বৈশিষ্ট্য

            গ) মাটির জৈবিক বৈশিষ্ট্য

জমি চাষাবাদ, ফসল উৎপাদন ও মৃত্তিকা উর্বরতা ব্যবস্থাপনায় মাটির ভৌত রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মের প্রভাব খুব তাৎপর্যপূর্ণ। মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্য প্রভাবিত কতগুলো কৃষিতাত্তিক প্রক্রিয়া নিচে উল্লেখ করা হলো।

            ১। বীজের অঙ্কুরোদ্গম

            ২। তাপমাত্রা ও বায়ুচলাচল

            ৩। পানি চলাচল ও ভুমি ক্ষয়

            ৪। উদ্ভিদ শিকড়ের বিসতৃতি ও প্রতিষ্ঠা

            ৫। অণুজৈবিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ

            ৬। উদ্ভিদ ধারণ ও পুষ্টি সরবরাহ



মৃত্তিকা কণা

মৃত্তিকা কণা

বিভিন্ন আকার ও গুণসম্পন্ন মৃত্তিকা কণার সম্বনয়ে মাটির মূল কাঠামো তৈরি হয়। এসব কণার আকার সম্পর্কে গবেষকগণের মধ্যে দেশে দেশে পার্থক্য থাকতে পারে। বর্তমানে মৃত্তিকা কণার  আকার পরিমাপের জন্য আর্ন্তজাতিক পদ্ধতি এবং যুক্তরাষ্ট্র পদ্ধতি চালু রয়েছে। এখানে এই দুইটি পদ্ধতিতে নির্ধারিত মৃত্তিকা কণার পরিমাপ উল্লেখ করা হলো।

যুক্তরাষ্ট্র পদ্ধতিতে মৃত্তিকা কণা ৭ প্রকার। এর মধ্যে ৫ ধরনের বালি কণা, ১ ধরনের পলি কণা এবং ১ ধরনের কর্দম কণা অপরদিকে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে মৃত্তিকা কণা ৪ প্রকার। এর মধ্যে ২ ধরনের বালি কণা, ১ ধরনের পলি কণা এবং ১ ধরনের কর্দম কণা রয়েছে।



(১) বালি কণা

আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে বালি কণাকে মোট ২ ভাগ করা হয়েছে। যেমন স্থূল বালি কণা ও সূক্ষ্ম বালি কণা। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে সূক্ষ্ম বালির চেয়ে স্থূল বালি সর্বাধিক প্রায় ১০০ গুণ বড়। যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বিভাগ কর্তৃক প্রণীত পদ্ধতি অনুসােও ০.০২ থেকে ২.০০ মিলিমিটার ব্যাসের একক কণাকে ৫ ভাগ করা হয়েছে, যেমন- খুব স্থূল, পলি, স্থূল বালি, মধ্যম বালি, সূক্ষ্ম বালি ও খুব  সূক্ষ্ম বালি। যুক্তরাষ্ট্র পদ্ধতিতে খুব সূক্ষ্ম বালির চেয়ে খুব স্থূল বালি কণা সর্বাধিক।



মৃত্তিকা কণার নাম ও আকার

মৃত্তিকা কণার নাম


ব্যাস (মিলিমিটার

আন্তর্জাতিক পদ্ধতি


যুক্তরাষ্ট্র পদ্ধতি (USDA)

খুব স্থূল বালি কণা


২.০০-০.২০


২.০০-১.০০

স্থূল বালি কণা


০.২০-০.০২


১.০০-০.৫০

মধ্যম বালি কণা


-


০.৫০-০.২৫

সূক্ষ্ম বালি কণা


০.২০-০.০২


০.২৫-০.১০

খুব সূক্ষ্ম বালি কণা


-


০.১০-০.০৫

পলি কণা


০.০২-০.০০২


০.০৫-০.০০২

কর্দম কণা


<০.০০২


<০.০০২



মাটির উর্বরতা ও অন্যান্য গুণাবলীতে বালি কণার প্রভাব

1.   উদ্ভিদকে শারিরীকভাবে ধারণ করতে সহায়তা করে।

2.  মাটির মূল কাঠামো তৈরি করে।

3.  বালিকণা মাটির বায়ূ চরাচল বাড়ায়।

4.   মাটির তাপ নিয়ন্ত্রন করে।

5.   ভূমি কর্ষণ সহজতা নির্ধারণ করে।

6.   বেলে মাটিতে ভূমি ক্ষয় কম হয়।

7.   মাটিতে ডেলা তৈরি হয়না, দৃঢ়তা কম থাকে।

8.   বালি কণা পানির অনুপ্রবেশ ও অনুস্রবণ হার বাড়ায়।

9.   মাটির বহন ক্ষমতা বাড়ায়।

বালি কণা স্বণ্পভাবে ক্ষয়ীভূত হয় এবং রাসায়নিকভাবে অপরিবর্তিত থকে। তাই উদ্ভিদের খাদ্যেপাদান সরবরাহে বালি কণার তেমন প্রত্যক্ষ নাই।



(২) পলি কণা

মৃত্তিকা কণার মধ্যে পলির আকার বালি কণা ও কর্দম কণার মাঝামাঝি। যুক্তরাষ্ট্র পদ্ধতির পরিমাপ অনুসারে পলি কণার ব্যাস ০.০০২-০.০৫ মি.মি, কিন্তু আন্তর্জাতিক পদ্ধতির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র পদ্ধতিতে পলির পরিমান বেশি এবং বালির পরিমান কম হবে। মাটির উর্ববরতা পলি কণার প্রভাব বালি কণা ও কর্দম কণার মাঝামাঝি। পলি কণা পলি মাটির কাঠামো তৈরি থেকে শুরু করে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ কাজে অংশ গ্রহন করে। অন্যান্য রাসায়নিক গুণাবলীতেও পলির ভমিকা বালি ও কর্দম কণার তুলনায় মধ্যম। বিশ্বের যে কোন মাটিতে বিভিন্ন পরিমানে সকল আকারের কণাই উপস্থিত থাকে। এর যে কোন এক প্রকার কণার ঘাটতি থাকলে উক্ত স্থানে উত্তম কৃষি জমি উৎপাদিত হয়না। অবশ্য বালি কণার পরিমানের উপর মাটির ভৌত গুণাবলী ও উর্বরতা অনেকাংশে নির্ভর করে।



(৩) কর্দম কণা

আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ও যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বিভাগ অনুসারে ০.০০২ মি.মি. কম ব্যাস বিশিষ্ট মৃত্তিকা কণা কর্দম কণা হিসাবে বিবেচিত হয়। কোন একটি কর্দম কণার আকার অবয়ব দেখার জন্য ইলেকট্রোন মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। আকারে অতি সূক্ষ্ম হলেও ভূমির উর্বরতায় কর্দম কণার গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন-

1.   পুষ্টি উপাদান সরবরাহঃ   উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদান সরবরাহে সরাসরি অংশ গ্রহণ করে। সহজে বিয়োজনযোগ্য

      মাইটজাত কর্দম কণা উদ্ভিদে প্রচুর পটাশিয়াম সরবরাহ করে।

2.   উপাদান শোষণঃ   ধনাত্নক আয়ন উপশোষনকারী হিসেবে উপাদান পরিশোষনে সহায়তা করে।

3.   মাটির গুণাবলীঃ   মাটির সকল রাসায়নিক গুণাবলীতে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

4.   বাফার ক্ষমতাঃ   মাটির বাফার ক্ষমতা বাড়ায়।

5.   আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়াঃ   মাটির আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করে।

6.   পানি ধারণক্ষমতাঃ   মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়।

7.   মৃত্তিকা - শিকড় সম্পর্কঃ   মাটির কণা ও শিকড়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়।

8.   পুষ্টি সংরক্ষণঃ  উদ্ভিদ খাদ্যোপাদানের সংরক্ষক হিসেবে কাজ করে।

9.   মাটির কমনীয়তাঃ   মাটির কমনীয়তা ও সমপ্রসারনশীলতা বৃদ্ধি করে।

10.        মাটির কণার উপরায়তনঃ   মাটির কণার মোট উপরায়তন (Surface area) বাড়ায়।

11.        ভৌত-রাসয়নিক গুণাবলীঃ   মাটির ভৌত-রাসয়নিক গুণাবলীতে সক্রিয় প্রভাব বিস্তার করে।

12.        কর্দমের সংযোজনঃ   কর্দম সংযোজনের মাধ্যমে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান অপচয় কমায়।

13.        মাটির উন্নয়নঃ মাটির উন্নয়নে সহায়তা করে।

14.        কলোয়েড গুণাবলীঃ   মাটির কলোয়েড গুনাবলী উন্নত করে।

মাটির বালি কণা ও পলি কণার মধ্যে গুণগত পার্থক্যের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে কর্দম কণার প্রকারগত পার্থক্য খুবই বেশি। মাটিতে শতাধিক প্রকারের ভিন্ন ভিন্ন গুণ সম্পন্ন কর্দম কণা রয়েছে।



মৃত্তিকা কণার আকার বিশ্লেষণ (Particle size analysis)



কোন মৃত্তিকা নমুনায় বা খনিজ অংশে কোন আকারের মৃত্তিকা কণা কি পরিমানে রয়েছে তা নির্ধারণ করার প্রক্রিয়াকে কণার আকার বিশ্লেষণ বা কারিগরী বিশ্লেষণ বলে। সাধারনত হাইড্রোমিটার পদ্ধতি এবং পিপেট পদ্ধতিতে বালি কণা, পলি কণা ও কর্দম কণার পরিমান নির্ধারন করে ওজনভিত্তিতে  শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়।
মাটির বুনট

মৃত্তিকার বুনট (Soil texture)

কোন মৃত্তিকায় বিভিন্ন আকারের একক কণার পারষ্পরিক অনুপাত দ্বারা সৃষ্ট স্থূলতা বা সুক্ষ্মতাকে মাটির বুনট বলে। বিভিন্ন আকারের বালি, পলি এবং কর্দম কণা বিভিন্ন অনুপাতে মিশে একটি বিশেষ বুনট শ্রেণীর মৃত্তিকা সৃষ্টি করে। বুনট মৃত্তিকার একটি মৌলিক ও স্থায়ী ধরনের ধর্ম। মৃত্তিকার ভৌত গুণাবলী বুনটের উপর নির্ভর করে।

বিভিন্ন বুনটের মৃত্তিকার ধর্ম বা বৈশিষ্ট বিভিন্ন। এই সমস্ত বৈশিষ্টগত কারনের জন্য এক এক শ্রেণীর মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা এক এক রকম এবং এক এক ফসলের জন্য বিশেষ উপযোগী।

আন্তর্জাতিক পদ্ধতির আওতায় মৃত্তিকাকে ১২টি বুনট শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। মৃত্তিকার এই শ্রেণীবিভাগ বিভিন্ন ব্যাসের মৃত্তিকা কণার অনুপাতের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।



মৃত্তিকার বুনট শ্রেণী(অন্তর্জাতিক)

বুনট শ্রেণী


বালি%


পলি%


কর্দম%

বেলে মাটি


৮৮-১০০


০৩-০৭


০০-০৮

বেলে দোআঁশ


৭০-৯২


০০-১২


০৮-২৯

দোআঁশ বালি


৬৩-৮৮


০৩-২৫


০০-১২

দোআঁশ


৫০-৭৬


১০-২৫


১২-২৬

পলি


০০-৫০


৫০-১০০


০০-২৬

পলি দোআঁশ


২৫-৭৪


২৫-৫০


০০-২৬

এটেল


০০-৬৩


০০-২৫


৩১-১০০

পলি এটেল


০০-৩৪


২৫-৬০


৪০-৭৫

বেলে এটেল


৪৫-৬৫


০০-২০


৩৪-৪০

পলি এটেল দোআঁশ


০০-২০


৪০-৭৩


২৭-৪০

এটেল দোআঁশ


২০-৪৫


১৫-৫৩


২৭-৪০

বেলে এটেল দোআঁশ


৬৩-৮৩


০০-১০


১৭-৩০
মৃত্তিকা সংযুক্তিমাটি বা মৃত্তিকা হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম ও দানাদার আবরণ। পাথর গুঁড়ো হয়ে সৃষ্ট দানাদার কণা এবং জৈব পদার্থ মিশ্রিত হয়ে মাটি গঠিত হয় ়। জৈব পদার্থের উপস্থিতিতে ভূমিক্ষয় আবহবিকার, বিচূর্নিভবন ইত্যাদি প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পাথর থেকে মাটির উদ্ভব হয়েছে। সেই কারণে অতি প্রাচীন কালের মাটি পৃথিবীতে পাওয়া যায়না । ভূ-ত্বক, জলস্তর, বায়ুস্তর এবং জৈবস্তরের মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে পাথর থেকে মাটি তৈরি হয়। [১] শুকনো গুঁড়ো মাটিকে সাধারনভাবে ধুলো বলা হয় ।

মাটিতে খনিজ এবং জৈব পদার্থের মিশ্রণ রয়েছে। এর উপাদানগুলো কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থায় মাটিতে বিদ্যমান ।[২][৩] মাটির কণাগুলো আলগা ভাবে যুক্ত, ফলে এর মধ্যে বাতাস ও জল চলাচলের যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।[৪] এজন্য মাটিকে বিজ্ঞানীরা ত্রি-দশা পদার্থ (Three state system) বলে অভিহিত করেন।[৫] অধিকাংশ এলাকার মাটির ঘণত্ব ১ থেকে ২ গ্রাম/ঘন সেমি। [৬] পৃথিবীর উপরিভাগের অধিকাংশ মাটিই Tertiary যুগের পরে গঠিত হয়েছে, আর কোনস্থানেই Pleistocene যুগের পুরানো মাটি নেই।[৭]
Darkened topsoil and reddish subsoil layers are typical in some regions.
মাটির গুণাগুণ

পৃথিবী পৃষ্ঠের যে অংশ থেকে উদ্ভিদ খাদ্য সংগ্রহ করে তাই মাটি। পুকুরের পানি সংলগ্ন ১৫-২০ সেমি. মাটি পানির সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নিয়ে থাকে। মাটি ও পানির গুণাগুণের ওপরই মাছের উৎপাদন প্রাথমিকভাবে নির্ভর করে। কোন জলাশয়ের পানি ধারণের আধার হলো মাটি। ভাল মাটিতে যেমন ভাল ফসল হয় ঠিক তেমনি ভাল মাটির পুকুরেও মাছের ভাল উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। জলাশয়ের উৎপাদন ক্ষমতা প্রাথমিকভাবে মাটির ধরনের ওপর নির্ভর করে। উর্বর মাটিতে খনন করা পুকুরে সাধারণভাবে মাছের উৎপাদনও ভাল হয়। উর্বর মাটির পুকুর মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির জন্য অধিক পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়। সুতরাং মাছ চাষে মাটির গুণাগুণের গুরুত্ব অপরিসীম।

মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাটি ও পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে। মাছ তার জীবন ধারণের সব কাজ পুকুর-জলাশয়ের পানির মধ্যেই সম্পন্ন করে থাকে। এসব কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পুকুরের বা জলজ পরিবেশের বিভিন্ন গুণাবলী যথাযথ মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা করা প্রয়োজন।

কোন জলাশয়ের পানি ধারণের আধার হলো মাটি। মাটিতে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ কোন জলাশয়ের উৎপাদন ক্ষমতা প্রাথমিকভাবে ঐ জলাশয়ের মাটির ধরনের ওপর নির্ভর করে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লাভজনকভাবে মাছ চাষের জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর জলজ পরিবেশ এবং পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমিত প্রাচুর্যতা। পানির প্রাথমিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রধানত মাটির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ তথা মাটির উর্বরতার ওপর নির্ভর করে।

পুকুরের মাটির গুণাগুণ যথাযথ মাত্রার না হলে নিম্নরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারেঃ:

   মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদিত হবে না;
   বাহির থেকে দেয়া সম্পূরক খাদ্যের অপচয় হবে;
   মাছের বৃদ্ধি আশানুরূপ হবে না;
   মাছ রোগ বালাই-এ আক্রান্ত হবে ও মারা যেতে পারে;
   মাছের উৎপাদন কম হবে।

মাটি হলো ভূপৃষ্ঠের উপরিতলের নরম খনিজ এবং জৈব উপাদানের মিশ্রণ যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মাটি প্রধানতঃ ৪ টি প্রধান উপাদান সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো নিচে উল্লিখিত হলোঃ

   খনিজ পদার্থ - ৪৫%;
   জৈব পদার্থ - ৫%;
   বায়ু - ২৫ %;
   পানি - ২৫%;

সুতরাং মাটি কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় এই তিন ধরণের পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। নিচে মাটির বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলোঃ

খনিজ পদার্থ ভূ-ত্বক প্রথমে শিলা দ্বারা গঠিত ছিল। পরে তা শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে ছোট খন্ডে বা এককে রূপান্তরিত হয়। মাটির এই অংশ বালি, পলি ও কর্দম কণা দ্বারা গঠিত। শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়ার ফলে উপরোক্ত কণা ও অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদান যেমন- নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান মাটিতে মুক্ত হয়। মাটিতে খনিজের পরিমাণ হলো ৪৫%।

জৈব পদার্থ মাটিতে ১-২% জৈব পদার্থ থাকে তবে হিম অঞ্চলের মাটি ২-৫% জৈব পদার্থ ধারণ করে। এই সব জৈব পদার্থ উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ ও মলমূত্র হতে মাটিতে আসে। জৈব পদার্থ মাটির আবদ্ধকরণ পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব কম হলেও এটি ব্যাপকভাবে মাটির গুণাবলী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

জৈব পদার্থ নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে-

   সমস্ত পুষ্টি উপাদানের গুদাম ঘর হিসেবে কাজ করে;
   মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব গুণাবলী উন্নত করে;
   ভূমি ক্ষয় রোধ করে;
   অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় এসব মাছ বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে; ফলে জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়;
   পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;
   অণুজীবের প্রধান শক্তি হলো এই জৈব পদার্থ এবং
   মাটিতে নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস এ জৈব পদার্থ।

বায়ু ও পানি প্রবল বর্ষার সময় বা সেচ দিলে মাটির অধিকাংশ রন্ধ্রই পানি দ্বারা পূর্ণ হয়। কিন্তু শুকনা বা খরার সময় ঐ রন্ধ্রগুলো বায়ু দ্বারা পূর্ণ হয়। বায়ুমন্ডলের বায়ু অপেক্ষা মাটির বায়ুতে বেশি পরিমাণ কার্বন ডাই-আক্সাইড ও জলীয়বাষ্প থাকে কিন্তু অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। বায়ুর প্রধান কাজ হলো শ্বসন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা। বায়ু ও পানির গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো-

   মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক কার্য নিয়ন্ত্রণ করা;
   শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা;
   সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করা এবং
   দ্রাবক ও পুষ্টি উপাদানের বাহক হিসেবে কাজ করা।

মাটির প্রকারভেদ

বালি, পলি ও কাদা- এই তিনটি স্বতন্ত্র মাটি কণার তুলনামূলক অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে মাটির বুনটসমূহের নামকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মাটি বিভিন্ন অনুপাতে বালি, পলি ও কাদা কণা ধারণ করে থাকে। কোন মাটিতে বালি কণার পরিমাণ বেশি, আবার কোনটাতে কাদা কণার পরিমাণ বেশি। এই পরিবর্তনের নির্দিষ্ট সীমারেখায় রেখে মাটিকে ১২ টি গ্রুপ বা দলে বিভক্ত করা হয়। এই দলগুলোই বুনটভিত্তিক শ্রেণী বলে পরিচিত। এই শ্রেণীগুলোর একটির হতে অন্যটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যে মাটিতে অধিক পরিমাণ কাদা কণা থাকে তাকে কাদা মাটি, যে মাটি অধিক পরিমাণ পলি কণা ধারণ করে তাকে পলি মাটি, আর যে মাটিতে বালি কণার পরিমাণ বেশি থাকে তাকে বালি মাটি বলে। যদি কোন মাটি এই তিনটি শ্রেণীর একটিরও প্রভাব বিস্তারকারী ভৌতিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন না করে (যেমন-৪০% বালি কণা, ২০% কাদা কণা ও ৪০% পলিকণা যুক্ত মাটি) তবে তাকে দোআঁশ মাটি বলে। দোয়াঁশ মাটিতে বালি, পলি ও কাদা কণার শতকরা পরিমাণ সমান থাকেনা। কিন্তু এ বালি, পলি ও কাদা কণাসমূহের কাছাকাছি প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম প্রদর্শন করে।

মাটির গুণাগুণ

সুষ্ঠুভাবে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় পুকুর তৈরির জন্য দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটি সবচেয়ে ভাল। এ ধরনের মাটি সহজে পানি ধারণ করে রাখতে পারে। মাটির পিএইচ (PH)-এর মাত্রা ৫.০ এর উপরে থাকা সমীচীন। মাটিতে বিদ্যমান পুষ্টি পদার্থ ও পিএইচ-এর ওপর ভিত্তি করে মাটিকে সাধারণতঃ ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- উচ্চ উৎপাদনশীল, মধ্যম উৎপাদনশীল ও নিম্ন উৎপাদনশীল (সারণি-১)।

সারণি-১: মাটির পুষ্টিমান ও পিএইচ অনুযায়ী পুকুর-জলাশয়ের শ্রেণিবিন্যাস উৎপাদনশীলতার শ্রেণী পিএইচ মাত্রা পুষ্টি উপাদানের মাত্রা (মিগ্রা/কিলো) নাইট্রোজেন ফসফরাস কার্বন উচ্চ ৭.৫-৬.৫ >৫০ ৬-১২ >১.৫ মধ্যম ৬.৫-৫.৫ ২৫-৪৯ ৩-৫ >০.৫-১.৪ নিম্ন <৫.৫ <২৫ <৩ <০.৫

প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা কম হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে লাভজনক মাছ চাষের জন্য পুকুরকে উপযোগি করে তোলা যায়। এক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি পড়ে।

মাটির গঠন, বর্ণ, পিএইচ-র ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মাটিকে সাধারণভাবে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। এ ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটির শ্রেণিবিন্যাস ও প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা নিচের সারণিতে দেয়া হলো (সারণি-২)।

সারণি-২: অঞ্চলভেদে মাটির গুণাগুণ

ক্র.নং অঞ্চল মাটির প্রকার PH-র ভিত্তিতে মাটির ধরণ মাটির বর্ণ উৎপাদনশীলতা ১ বরেন্দ্র, মধুপুর গড়, সাভার, গাজীপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর অংশ বিশেষ এটেল, কাদা ও বালিযুক্ত কাদা বেশি অম্লীয় লাল ও বাদামী প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা কম ২ যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশালের কিয়দংশ পলিযুক্ত এটেল ক্ষারীয় হালকা ও বাদামী গাঢ় ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা বেশি ৩ ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ঢাকা, রংপুর, বগুড়া, পাবনা ও ফরিদপুরের কিয়দংশ পলিযুক্ত দো-আঁশ নিরপেক্ষ থেকে ক্ষারীয় ধূসর ও গাঢ় ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক বেশি ৪ রংপুর-দিনাজপুরের কিয়দংশ, মানিকগঞ্জ, গাইবান্ধা, ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলের কিয়দংশ বালি ও বালিযুক্ত পলি কিছুটা অম্লীয় ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক কম ৫ নদী সন্নিকটস্থ অঞ্চল বালিযুক্ত পলি অম্লীয়/ক্ষারীয়/নিরপেক্ষ ধূসর থেকে কালচে ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক কম ৬ উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ পলি ও কাদার ভাগ বেশি অম্লীয় কালো বা ছাই রং প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা কম

মাটির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ

যে অঞ্চলের মাটি উর্বর সে স্থানে খনন করা পুকুরও সাধারণভাবে উর্বর হয়ে থাকে এবং সে অঞ্চলের পুকুরে মাছের উৎপাদনও ভাল হয়। উর্বর মাটি পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগান দেয় এবং পানি দূষণ রোধে ভূমিকা রাখে। সাধারণভাবে মাটি ৪ প্রকারের হয়ে থাকে ক) এটেল মাটি, ২) বেলে মাটি, গ) লাল মাটি এবং ঘ) দোআঁশ মাটি। দোআঁশ মাটির পুকুর মাছ চাষের জন্য সর্বাধিক উপযোগি। বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা খুবই কম এবং লাল মাটির পুকুরে পানি প্রায় সবসময় ঘোলা থাকে। এজন্য বেলে মাটি ও লাল মাটিতে খনন করা পুকুর মাছ চালের জন্য ততটা উপযোগি হয় না। বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি ধরে রাখা ও আদান প্রদানে দোআঁশ মাটি উত্তম।

   দোআঁশ মাটি মাছ চাষের জন্য উত্তম;
   এটেল মাটি মাছ চাষের জন্য কম উপযোগি;
   বেলে মাটি চাষ চাষের উপযোগি নয়;
   লাল মাটিতে মাছচাষ ব্যয়বহুল।

মাছ চাষের জন্য বদ্ধ জলাশয়ের পানির উপযোগিতা মাটির কয়েকটি উপাদানের মানের ওপর র্নিভর করে। যথা- পি,এইচ, ফসফরাস, নাইট্রোজন, কার্বন-ড্রাই অক্সাইড, জৈব পদার্থ ইত্যাদি। নিচে এসব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ

পিএইচ

মাটির পিএইচ (PH) ৬.৫-৮.০ এর মধ্যে হলে তা মাছ চাষের জন্য উত্তম। অনুকূল পিএইচ মাত্রায় ফসফরাসের যোগান বৃদ্ধি পায় এবং অ্যামোনিয়া ও নাইট্রোজেনঘটিত অণুজীব অধিক কর্মক্ষম হয়। পি এইচ ৬.০-এর নিচে হলে মাটি অধিক অম্লীয় হয় এবং পানিতে ক্ষতিকর মৌলিক পদার্থের উপস্থিতি দেখা দেয়। আবার পিএইচ-এর মাত্রা ৯.০ এর বেশি হলে অণুজীবগোষ্ঠী নিস্ক্রিয় হয় ও ফসফরাসের সরবরাহ হ্রাস পায়। এতে উদ্ভিদ প্ল্যাংটনের উৎপাদন খুব কমে যায়।

ফসফরাস ফসফরাস মাটিতে ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও এ্যালুমিনিয়ামের ফসফেট হিসেবে অবস্থান করে। মাটিতে পরিমিত জৈব পদার্থের উপস্থিতিই সহজপ্রাপ্য ফসফরাসের সরবরাহ অব্যাহত রাখে। ফসফরাসের প্রাচুর্যতা পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। ফসফরাস সবুজ শেওলার বংশ বৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ফলে অধিক পরিমাণে উদ্ভিদ-প্ল্যাংঙ্কটন উৎপন্ন হয়। মাছ চাষের জন্য প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে ১০-১৫ মিলিগ্রাম হারে সহজপ্রাপ্য ফসফেট থাকা উচিত।

নাইট্রোজেন বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেনই মাটির নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে ৮-১০ মিলিগ্রাম হারে সহজপ্রাপ্য নাইট্রোজেন থাকা দরকার। নাইট্রোজেন উদ্ভিদকে ঘন সবুজ রাখে। পরিমিত নাইট্রোজেন উপস্থিতিতে উদ্ভিদ-প্ল্যাংটনের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। ফলে অধিক পরিমাণে উদ্ভিদ-প্ল্যাঙ্কটন উৎপন্ন হয় ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

জৈব পদার্থ মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ যে কোন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় একটি অপরিহার্য উপাদান। জৈব পদার্থ পুকুরের তলায় মাটিকে সজীব ও সক্রিয় রাখে এবং পানি চুয়ানো বন্ধ করে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জৈব পদার্থ ফরফরাস ও নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস। জলজ পরিবেশে জৈব পদার্থ আবহাওয়া থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন ধারণ করে।

অতিরিক্ত মাত্রায় জৈব পদার্থ পানির পিএইচ কমিয়ে দিয়ে পানি দূষিত করে। আবার কখনও দূষণ দূর করতে জৈব পদার্থ প্রয়োগ করা হয়। ডুবন্ত কণার কারণে পানি ঘোলা হলে জৈব পদার্থ প্রয়োগে তা দূর করা যায়। পুকুর বা জলাশয়ের মাটিতে সাধারণভাবে শতকরা ১.০-২.০ ভাগ জৈব কার্বন থাকলে পানির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

নিচের ছকে পুকুরের মাটির বিভিন্ন গুণাগুণের অনুকূল মাত্রা দেয়া হলো- মাটির গুণাগুণের নাম অনুকূল মাত্রা পিএইচ ৬.৫-৯.০ জৈব কার্বন ১.৫-২০% জৈব পদার্থ ২.৫-৪.৩ (মি.গ্রা./১০০গ্রা.) নাইট্রোজেন ৮-১০ মি.গ্রা./১০০গ্রা. ফসফরাস ১০-১৫ মি. গ্রা./১০০গ্রা.

পুকুরের উৎপাদনশীলতায় তলার কাদার প্রভাব পানির গুণগতমান বিশেষ করে রাসায়নিক গুণাগুণ অনেকাংশে পুকুরের তলদেশের মাটির গুণাগুণের দ্বারা প্রভাবিত হয়। পুকুরের তলদেশের মাটি যদি অম্লীয় হয় তাহলে ঐ পুকুরের পানিও অম্লীয় হবে। আবার যদি কোন পুকুরের তলদেশের মাটিতে পুষ্টিকারক পদার্থ কম থাকে তাহলে ঐসব পুকুরের পানিতেও পুষ্টিকারক পদার্থের পরিমাণ কম পরিলক্ষিত হবে। যদিও পানির গুণগতমান অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাটির গুণগতমানের ওপর নির্ভরশীল তবুও পুকুরের অবস্থানগত কারণেও জৈবিক উৎপাদনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

পুকুরে উৎপাদনশীলতার অধিকাংশই নির্ভর করে তলদেশের মাটির ওপর। যদি অনুবর্বর কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা হয় এবং বাহির থেকে কোন প্রকার পুষ্টিকারক উপাদান সরবরাহ করা না হয় তবে সেই পুকুর হবে অনুৎপাদনশীল এবং খননকৃত পুকুরটির মাটি যদি উর্বর হয় তবে সেই পুকুর হবে উৎপাদনশীল। সর্বোত্তম পুকুরের তলদেশের মাটি হচ্ছে সেই মাটি যে মাটিতে জৈব পদার্থসমূহের পচন তাড়াতাড়ি হয় এবং মাটি ও পানির আন্তঃক্রিয়া সার্বক্ষণিক চলে এবং তলদেশের মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকারক পদার্থসমূহ সহজেই পানিতে মুক্ত হয়। দোঁআশ মাটিতে সার প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি কার্যকর। কাদা মাটি মাছ চাষের জন্য কম উপযোগি কারণ কাদা মাটি খুব বেশি কমপ্যাক্ট এবং পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি। তলদেশে কাদাযুক্ত পুকুর খুব বেশি উৎপাদনশীল। সার প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুরের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টিকারক পদার্থ সমূহের সরবরাহের মাধ্যমে পুকুরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং এতে করে মাছের অধিক উৎপাদনও নিশ্চিত হবে।এক গবেষণায় দেখা গেছে (হেরিক এবং তার সহকর্মী, ১৯৮৪) পুকুরের তলদেশীয় মাটির রাসায়নিক ধর্মাবলী অনেকাংশে পার্শ্ববর্তী জমির মাটির সাথে পারম্পরিকভাবে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত এবং পাশ্ববর্তী জমি থেকে আসা পুষ্টিকারকের কারণে ঐ পুকুরের তলদেশের মাটিতে পুষ্টিকারক পদার্থের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।

পুকুরের তলানী থেকে পুষ্টিকারক পদার্থসমূহের অবমুক্তি কিংবা ধারণ ক্ষমতা নির্ভর করে পানির বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ধর্ম এবং তলদেশের কাদা ও পুকুরে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার কর্মকান্ড দ্বারা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভৌত-রাসায়নিক প্রভাবসমূহ যা তলদেশীয় মাটি ও পানির সাথে আন্তঃক্রিয়া করে থাকে তা মূলতঃ নির্ভর করে তলদেশীয় মাটির ধরণ, তাপমাত্রা, গভীরতা, পানির ঘনত্ব, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ এবং মোট ক্ষারকত্বের ওপর। তাছাড়া আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক আছে, সে গুলো হলো- আবহাওয়া, ঋতু, ওয়াটার শেড, পানি চুয়ানো ইত্যাদি।

সারণি-: বিভিন্ন মাটির বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা

মাটির প্রকার বিস্তৃতি বৈশিষ্ট্য প্রভাব ক্ষতির প্রভাব নিয়ন্ত্রণের সম্ভাব্য ব্যবস্থা গড় বা লাল মাটি অঞ্চল ঢাকা জেলার উত্তরাংশ, টাংঙ্গাইল জেলার পূর্বাংশ, ময়মনসিংহ জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ, নোয়াখালী-কুমিল্লা ও চট্রগ্রাম জেলার এলাকা বিশেষ। অতি ক্ষুদ্র বা সুক্ষ্ম কণার সমন্বয়ে গঠিত, বর্ণ লালচে, লোহার পরিমাণ বেশি, জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, চুন প্রভৃতি কম, পিএইচ মান ৫.৫-৬.০ পানি ঘোলাটে হতে পারে। মাছের ফুলকা ও চেখে ঘা হতে পারে। প্রাকৃতিক খাদ্যকণা তৈরি বাধাগ্রস্থ হয়। কাতলা, সিলভার কার্প, রুই, নাইলোটিকা, রাজপুঁটি চাষের উপযোগি। ঘোলাত্ব দূর করতে প্রতি শতকে চুন ১.৫-২.০ কেজি জিপসাম ১.০-২.০ কেজি অথবা ফিটকিরি ০.৫-০.৬ কেজি প্রয়োগ করা যেতে পারে। তলদেশে বিচরণকারী মাছ কম সংখ্যক মজুদ করা উচিত। পোল্ট্রি খামারের বর্জ্য ব্যবহার করে প্রাকৃতিক উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো যায়। গড় বা লাল মাটি অঞ্চল ঢাকা জেলার উত্তরাংশ, টাংঙ্গাইল জেলার পূর্বাংশ, ময়মনসিংহ জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ, নোয়াখালী-কুমিল্লা ও চট্রগ্রাম জেলার এলাকা বিশেষ। অতি ক্ষুদ্র বা সুক্ষ্ম কণার সমন্বয়ে গঠিত, বর্ণ লালচে, লোহার পরিমাণ বেশি, জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, চুন প্রভৃতি কম, পিএইচ মান ৫.৫-৬.০ পানি ঘোলাটে হতে পারে। মাছের ফুলকা ও চেখে ঘা হতে পারে। প্রাকৃতিক খাদ্যকণা তৈরি বাধাগ্রস্থ হয়। কাতলা, সিলভার কার্প, রুই, নাইলোটিকা, রাজপুঁটি চাষের উপযোগী। ঘোলাত্ব দূর করতে প্রতি শতকে চুন ১.৫-২.০ কেজি জিপসাম ১.০-২.০ কেজি অথবা ফিটকিরি ০.৫-০.৬ কেজি প্রয়োগ করা যেতে পারে। তলদেশে বিচরণকারী মাছ কম সংখ্যক মজুদ করা উচিত। পোল্ট্রি খামারের বর্জ্য ব্যবহার করে প্রাকৃতিক উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো যায়। বরেন্দ্র দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাংশ, বগুড়া জেলার পশ্চিমাংশ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এটেল প্রকৃতির, হলুদ রং, লোহা ও এ্যালুমিনিয়ামের ভাগ বেশি নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের অভাব আছে। পিএইচ মান ৬.০-৬.৫ দীর্ঘ খরায় পুকুর শুকিয়ে অথবা অত্যধিক শীতে পানি শীতল হয়ে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয়। মৌসুমী বর্ষণে পানি ঘোলা হয়। ব্যবস্থাপনা সাপেক্ষে যে কোন মাছ চাষ করা যায় পুকুরে কিছু ভাসমান আগাছা রেখে তাপ থেকে মাছ রক্ষা করা যায। বিকল্প উৎসে পানি মজুদ করে খরার প্রতিক্রিয়া রোধ করা য়ায়। তীব্র শীতে সার ও খাদ্য প্রয়োগ সীমিত বা বন্ধ রাখতে হবে। ব্রক্ষ্মপুত্রের পাললিক অঞ্চল বৃহত্তর ময়মনসিংহ (গড়াঞ্চল ব্যতীত), জামালপুর, শেরপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলার সমতল এলাকা। পলিযুক্ত, ধূসর থেকে গাঢ় ধূসর রং, এটেল বা দো-আঁশ প্রকৃতির উর্বর মাটি চুন বা ক্যালসিয়ামের ভাগ কম। পিএইচ মান ৫.৫-৬.৮ আবহাওয়া সারা বছর মাছের অনুকূলে থাকে। কোথাও কোথাও ডুবন্ত জলজ আগাছায় চাষ ক্ষতিগস্ত হয়, যে কোন প্রজাতির মাছ চাষ করার উপযোগি। ২-৩ বছরে একবার পুকুর শুকিয়ে তৈরি করা উচিত। নিয়মিত চুন ব্যবহার করতে হবে। তিস্তার পলিমাটি অঞ্চল দিনাজপুর জেলার উত্তরাংশ, ঠাকুরগাঁও রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, বগুড়া জেলার পূর্বাঞ্চল, সিরাজগঞ্জ জেলার অধিকাংশ অঞ্চল বেলে দো-আঁশ বা বালিময় পলিতে গঠিত জৈব পদার্থ ও চুনের ভাগ কম। পিএইচ মান ৬.০-৬.৫ পানি ধারণক্ষমতা সীমিত। পরিবেশ যে কোন মাছ চাষের উপযোগি। হ্যাচারি বা নার্সারি এবং চিংড়ি চাষও লাভজনক। চুন ও জৈব সার নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। পুকুর শুকিয়ে যেতে পারে এমন অঞ্চলে স্বল্প চাষ মেয়াদী মাছ চাষ করা উচিত। গঙ্গার পলিমাটি অঞ্চল মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর গোপালগঞ্জ, যশোর মাগুড়া, নড়াইল, চুড়াডাংঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, খুলনা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নবাবগঞ্জ, নাটোর ও পাবনা জেলা। এঁটেল, দো-আঁশ থেকে বেলে দো-আঁশ প্রকৃতির উর্বর মাটি; চুন বা ক্যালসিয়াম ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ। পিএইচ মান ৭.০-৭.৫ পানি ধারণক্ষমতা বেশি। পরিবেশ যে কোন মাছ চাষের উপযোগি। হ্যাচারি বা নার্সারি ও চিংড়ি চাষ লাভজনক। পুকুর শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পুকুর গভীর করা উচিত নয়। পুকুরের তলদেশের বালির উপর পলিযুক্ত এটেল মাটি বিছিয়ে ভালভাবে পিটিয়ে শক্ত করে দিয়ে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো যায়। প্রয়োজনে রাজপুঁটি, নাইলোটিকা প্রভৃতি মাছ চাষ করা যায়। লবণাক্ত মাটি অঞ্চল খুলনা ও বরিশাল জেলার অংশবিশেষ, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুণা এবং ভোলার সমুদ্রবর্তী ও চরাঞ্চল। এলাকা বিশেষে দো-আঁশ প্রকৃতির ও লবণাক্ত; পটাশ, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সমৃদ্ধ। পিএইচ মান ৭.০-৮.৫ লবণাক্ততা বেড়ে গেলে মাটির বাঁধন ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। চিংড়ি চাষ লাভজনক। নাইলোটিকাও চাষ করা যেতে পারে। রুইজাতীয় মাছচাষের সুযোগ সীমিত। পুকুরের পাড়ের মাটির বাঁধন দৃঢ় করার জন্য পাড়ে লতা-গুল্ম জন্মানো উচিত। জীব কণার ভারসাম্য রক্ষায় জৈব সার ব্যবহার করা যায়। পুকুরের সদ্ব্যবহার করতে প্রয়োজনে পাঙ্গাস, ভেটকি, মাগুর প্রভৃতি মাছ চাষ করা যায়। পাহাড়িয়া অঞ্চল চট্রগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, নেত্রকোণা জেলার পাহাড়ী এলাকা, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার অঞ্চল বিশেষ। নূড়ি, নূড়ি পাথর, বালি ও পাথুরে কণার সংমিশ্রণে লালচে এটেল প্রকৃতির মাটি: জৈব পদার্থের পরিমাণ কম। পিএইচ মান ৭-৮.৫ পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যকণা কম জন্মে। পানি ঘোলাটে হতে পারে। মাছের ফুলকা বা চোখে সৃষ্টি হতে পারে। জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। পাড়ে ঘাস লাগিয়ে ঘোলাত্ব কমানো যায়। প্রয়োজনে তলদেশে বিচরণ করে এমন মাছ কম সংখ্যক মজুদ করতে হবে। এসিড সালফেট অঞ্চল লবণাক্ত অঞ্চলেরই এলাকাবিশেষ, খুলনা ও সাতক্ষিরা জেলার সমুদ্রবর্তী অঞ্চলের কিছু কিছু এলাকা। লোহা ও হাইড্রোজেন সালফাইট সমৃদ্ধ হলুদ রংয়ের মাটি। পিএইচ মান ৫ এর নিচে। প্রাকৃতিক খাদ্যকণা উৎপাদনের পরিবেশ বজায় থাকে না। মাছের ফুলকা, চামড়া বা চোখে ক্ষত হতে পারে। মাছ চাষে অনুপযোগী। মাটি শোধন করে মাছ চাষ করতে হবে। মাটি নিরপেক্ষ করার জন্য জৈব পদার্থ ও চুন ব্যবহার করতে হবে। বড় আকারের পোনা মজুদ করতে হবে।

সংজ্ঞাঃ মৃত্তিকা কণা যেমন বালি কণা, পলি কণা ও কর্দম কণা পারস্পরিকভাবে সন্নিবিষ্ট হয়ে মাটিতে যে সুনির্দিষ্ট বিন্যাস তৈরি হয় তাকে মৃত্তিকা সংযুক্তি বলে। প্রধানত জৈব পদার্থ এবং অন্যান্য আয়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্র্রনকারী দ্রব্য মাটিতে আকর্ষী বা আঠালো  দ্রব্যের ন্যায় কাজ কেও মৃত্তিকা সংযুক্তি উৎপন্ন করে।

কৃষি জমি বা ফসল উৎপাদনের জন্য জমির উপযোগীতার প্রধান শর্ত হচ্ছে যে, এতে সংযুক্তি উৎপন্ন হতে হবে। নির্মান বা অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমির এমন কোন পূর্বশর্ত নাই বা কোন কোন ক্ষেত্রে সংযুক্তি না থাকলেই ভাল হয়।

মাটির কৃষি ব্যবহারে সংযুক্তি বা দানা বন্ধন মাটির একটি তাৎপর্যপূর্ণ গুণ। মাটির বুনট পরিবর্তনে তেমন সফলকাম হতে না পারলেও উপযুক্ত কৃষি পরিচর্যা দ্বারা মাটির সংযুক্তির উন্নয়ন সম্ভব। এতে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

1 comments:

  1. এটেল মাটি কি লবনাক্ত মাটি হয় বা সমুদ্রবর্তী এলাকার লবনাক্ত মাটি কি এটেল মাটি?

    ReplyDelete