Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » স্লিপ ওয়াকিং বা ঘুমিয়ে হাঁটা।। ম্যাস হিস্টিরিয়া বা গণমনস্তাত্বিক অসুস্থতা







স্লিপ ওয়াকিং বা ঘুমিয়ে হাঁটা।।

ম্যাস হিস্টিরিয়া বা গণমনস্তাত্বিক অসুস্থতা




শবনমকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তার রুমমেটরা। ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে এখনো ঘুমের ঘোরে রুমের বাইরে চলে যায়, নিজের মনে কথা বলে, কাঁদে, আবার ঘুমিয়ে পড়ে আপনাতেই।

এইদিকে ছোট্ট মেয়ে হৃদির বাবা মায়েরও হয়েছে এমন দুশ্চিন্তা, সে ঘুমের মাঝে হেটে বাড়ির বাইরে চলে যায়, ঘুমিয়ে পড়ে যেখানে সেখানে। আবার ঘুম থেকে উঠে তার কিছুই মনে থাকে না, কি করেছে, কোথায় গিয়েছে কিছুই সে মনে করতে পারে না। কি বিপদ এখন বাড়ির সবার!

শবনম বা হৃদির যে সমস্যার জন্য তাদের বাবা-মা উদ্বিগ্ন তার একটি সুন্দর নাম দিয়েছেন মনোবিদেরাঃ সমনাবুলিজম(Somnambulism) বা ঘুমিয়ে হাঁটা, ইংলিশে স্লিপ ওয়াকিং। আমরা অনেকেই এই শব্দটির সাথে পরিচিত, হয়তো হরহামেশাই ব্যবহার করে ফেলছি শব্দটি কিন্তু জানা হচ্ছে না স্লিপ ওয়াকিং এর মূল বিষয় সম্পর্কে।

যদিও মনোবিদ্যায় স্লিপ ওয়াকিং এর একটি গাল ভরা নাম সমনাবুলিজম(Somnambulism) দেয়া হয়েছে,  তবে আমরা একে স্লিপ ওয়াকিং বলেই আলোচনা করবো আজ। সাধারনত ছোটদের মাঝে দেখা গেলেও বড়রাও আক্রান্ত হয় এটা দ্বারা।

ঘুমের মাঝে হাঁটা যেহেতু তাই আগে ঘুম নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। আমাদের ঘুমের প্রধান দুটি ধাপ রয়েছে। র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট(REM) এবং নন র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট(Non REM)
ঘুমের প্রথমে আসে নন রেম ঘুম। এটা ৪টি পর্যায়ে বিভক্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে আসে রেম ঘুম যার দুটি উপ-পর্যায় রয়েছে।
রেম ঘুমে চোখের পেশীর সংকোচন বাড়ে, চোখ নাড়াচাড়া করতে থাকে এসময়, নন রেম ঘুমে চোখের পেশীর নাড়াচাড়া কমে আসে। মানুষ স্বপ্ন দেখে রেম ঘুমের সময়, যখন দেখবেন কারো ঘুমের মাঝে তার চোখ নড়ছে, চোখের পাতা কাঁপছে বুঝে নেবেন সে স্বপ্ন দেখছে ওই সময়ে।
আমাদের আলোচ্য স্লিপ ওয়াকিং ঘটে ঘুমের নন রেম পর্যায়ের ৩য় ও ৪র্থ ধাপে।
যারা স্লিপ ওয়াকিং করে থাকেন তারা আর সকলের মতোই ঘুমোতে যান বিছানায়, ঘুমিয়ে পড়েন ঠিক মতোই। কয়েক ঘন্টার মাঝেই শুরু হয় আসল খেলা!! তারা কথা বলা শুরু করেন আপন মনে, হয়তো কাঁদেন বা চিৎকার করেন, উঠে পড়েন ঘুম থেকে। চোখ খুলে তাকান, কিন্তু চেহারা থাকে ভাবলেশহীন, অভিব্যক্তিহীন। কারণ তারা তো আসলে জেগে নেই, চোখ খুলেছেন ঠিকই কিন্তু তার মস্তিস্ক রয়ে গেছে ঘুমের রাজ্যে। তিনি কি করছে, কি বলছেন, কোথায় যাচ্ছেন সব করছেন  নিজের অজান্তে।
হয়তো ঘরের মাঝে হাঁটছে সে, দরজা খুলে যাইরে চলে যাচ্ছে, যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ছে নিজের অগোচরে, কাপড় পরছে বা খুলছে, প্রাত্যহিক অন্যান্য কাজ ও করছে; সবই সেই নন রেম ঘুমের মাঝেই।
এমন সময় তাদেরকে সজাগ করতে গেলে হয়তো অনেকে প্রচণ্ড বিক্ষিপ্ত আচরন করেন, চিৎকার করেন, ধাতস্থ হতে সময় লাগে তাদের।
সকলের মাঝে একটা বিষয়ে মিল থাকে যে তারা ঘুম ভেঙ্গে আর মনে করতে পারেন না ঘুমের মাঝে কি কি করেছেন বা বলেছেন।
কেন হয় এমন আজব ব্যাপার? ঘুমের মাঝে হাটা? আমাদের তো হচ্ছে না, তবে কিছু মানুষের কেন হবে?
এ ব্যাপারে কিছু কারণের কথা বলা হয়েছেঃ



    খুব ক্লান্ত দেহে বিছানায় গেলে, সারাদিন অধিক খাটখাটুনি হলে,
    উত্তেজনা, ভয়, মানসিক অস্থিরতা থাকলে,
    প্রতিদিনের ঘুম যদি হয় অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত,
    স্লিপ এপনিয়া বা ঘুমের মাঝে বিশেষ ধরনের শ্বাস বদ্ধতা থাকলে,
    কিছু ঔষধের কারণেও ঘটতে পারে এমন ব্যাপার।



আবার পরিবারে কারো থেকে থাকলে অর্থাৎ বাবা বা মার থেকে থাকলে সন্তানদেরও স্লিপ ওয়াকিং করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

চোখের সামনে কাউকে স্লিপ ওয়াকিং করতে দেখলে অথবা পরিচিত কারো এমন সমস্যা হলে তার থেকে নিষ্ক্রান্ত হওয়ার উপায় জানতে চায় না মন? ধরুন বাড়িতেই কারো ধরা পড়লো এমন ব্যাপার, তাহলে? জেনে রাখা ভালোঃ
প্রথমেই হতে হবে সতর্ক,  একা থাকতে দেয়া ঠিক হবে না এদেরকে। অনেকে দরজা খুলে বাইরে চলে যায়, রেলিং টপকে পরে যায় নীচে অথবা রাস্তায় নেমে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এদের জন্য ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করার সাথে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন যেন বাইরে যেতে না পারে।
হাঁটতে দেখলে তাদেরকে বিছানায় নিয়ে যান, আবার শুইয়ে দিন মমতা মিশিয়ে। প্রয়োজনে ডেকে দিতে পারেন, ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিতে পারেন, এতে বারণ নেই ডাক্তারের।
অনেকের প্রয়োজন হতে পারে কিছু ওষুধের তার ঘুমকে নিয়ন্ত্রনের জন্য, কিছু ওষুধ খেলে স্লিপ ওয়াকিং হতে পারে, এসব ড্রাগ ব্যবহার বন্ধ করে দেখা যায়।
স্লিপ এপনিয়া একটা শ্বাসবদ্ধতার সমস্যা যা ঘুমের মাঝে হয়। স্লিপ এপনিয়ার চিকিৎসা করলে অনেকের স্লিপ ওয়াকিং সমস্যার সমাধান হয় বলে গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে।
জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তন এ ব্যাপারে কাজে আসতে পারে বলে জানা যায়।

ঘরে রাখা যাবে না কোন ধরনের ধারালো বস্তু, ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি। অনেক বাসায় বাচ্চারা বাঙ্ক বিছানায় ঘুমায়, এসব ক্ষেত্রে বাঙ্কে দেয়া যাবে না, শুতে হবে সাধারণ খাটে। বাঙ্কে দিলে উপরে থেকে পড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বিছানায় যেতে হবে বেশ আগেই। ঘুম কম হলে অনেকের  এমন সমস্যা হতে পারে, তাই শান্তির ঘুমের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঘুমের জন্য রাখতে হবে পর্যাপ্ত সময়। প্রতিদিন একই সময়ে বিছানায় যাবার অভ্যাস করতে হবে।
বাচ্চাদের বাবা মায়েরা একটা ডাইরি করতে পারেন, প্রতিদিন বাচ্চা কখন ঘুমোতে যাচ্ছে এবং কখন তার সমস্যার শুরু হচ্ছে সেটা লিপিবদ্ধ শুরু করুন। কিছু দিন গেলে দেখা যাবে একটা প্যাটার্ন মানছে আপনার বাচ্চা। সেই প্যাটার্ন অনুযায়ী স্লিপ ওয়াকিং শুরু হওয়ার ১০-১৫ আগে তাকে উঠিয়ে দিন, ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিন। ৫ মিনিট জাগিয়ে রেখে আবার ঘুম পড়িয়ে দিন। এভাবে অভ্যাস পরিবর্তনের ফলে কাজ হতে পারে।

এত কিছু লেখা দেখে মোটেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। স্লিপ ওয়াকিং খুব কম মানুষেরই হয় এবং এটা মোটেও মারাত্নক কিছু নয়। শুধুমাত্র সচেতনতা এবং যত্নবান হলেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। একসময় নিজে থেকেই ভালো হয়ে যাবে আমাদের শবনম, হৃদির মতো আরো অনেক স্লিপ ওয়াকার। তারাও উপভোগ করবে শান্তির ঘুম, মধুর ঘুম। নিদ্রাদেবীর আশীর্বাদে তাদের কপালেও চাঁদ মামা দিয়ে যাবে টিপ।




ম্যাস হিস্টিরিয়া বা গণমনস্তাত্বিক অসুস্থতা


ম্যাস হিস্টিরিয়া নামটি সংবাদপত্রের কল্যাণে এখন আমাদের অনেক পরিচিত একটি নাম। প্রায়শই আমরা বিভিন্ন খবরের কাগজে দেখতে পাই দেশের বিভিন্ন স্কুলের একদল ছেলেমেয়ে বিশেষ করে মেয়েরা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যায় ক্লাসে বা মাঠে। শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘুরানো,অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে হসপিটালে নেবার পরে এরা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠে বাড়ি ফিরে যায়। আপাতদৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর মনে হওয়া এটা প্রকৃত পক্ষে একধরনের মানসিক রোগ যার থেকে মুক্তি আছে আমাদেরই হাতের মুঠোয়।


ম্যাস হিস্টিরিয়া কি জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে হিস্টিরিয়া কি।



তবে চলুন জেনে নেই হিস্টিরিয়া কাকে বলেঃ

গ্রিক শব্দ ‘হিস্টেরা’ বা জরায়ু থেকে উৎপত্তি হয়েছে ‘হিস্টিরিয়া’ শব্দের। একসময় মনে করা হতো নারীর জরায়ুর কোন অস্বাভাবিক অবস্থার কারনেই হিসটিরিয়ার সৃষ্টি। পরবর্তীতে একে মানব মনের একধরণের সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে একে কনভার্সন ডিসঅর্ডার বলা হয়। মানুষের মনের অবদমিত দ্বন্দ্ব থেকেই হিস্টিরিয়ার জন্ম। আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের মানসিক ঝক্কি ঝামেলা, সামাজিক ধকলের মাঝ দিয়ে যাই। এসবের সাথে মানিয়ে নিয়ে, নিজেদের দুঃখ কষ্টের সাথে লড়াই করেই আমরা সমাজে বাস করি। অনেকে এসব দ্বন্দ্ব সংঘাতের সাথে যুদ্ধে পেরে ওঠেন না, প্রতিদিনের ঝামেলা মোকাবেলা করতে করতে ভেঙ্গে পড়েন। একসময় সকল কষ্ট, বেদনা সহ্য করতে না পেরে মন বিদ্রোহ করে বসে, অবদমিত ব্যথা প্রকাশিত হয় শারীরিক লক্ষণের মাধ্যমে।

এদেশে নারীরা এমনিতেই সামাজিক ভাবে নানা সময় লাঞ্ছনা, অবহেলা বা শারীরিক অত্যাচারের স্বীকার হন যার ফলে প্রধানত মহিলাদেরকেই এতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

এখন দেখা যাক ম্যাস হিস্টিরিয়া কি জিনিস:

যখন একদল মানুষ একে অপরের দেখাদেখি হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হয় তখন তাকে ম্যাস হিস্টিরিয়া বলা হয়। আমাদের দেশের স্কুল গুলোতে কেউ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলে ক্লাসের বা সমগ্র স্কুলেই এই ধরনের সমস্যা ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তদের মাঝে যার হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হবার ইতিহাস আছে বা সম্ভাবনা আছে সেই সবার আগে আক্রান্ত হয় এবং তাকে দেখা দেখি বাকি সকলেও আক্রান্ত হতে শুরু করে।



এ সমস্যার লক্ষণগুলোর মাঝে আছে:



    মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব বা বমি করার চেস্টা করা
    বুকে ব্যাথা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসা বা শক্ত হয়ে যাওয়া বা ঝিম ঝিম করা
    খিঁচুনি দেয়া হঠাৎ করে কানে না শোনা বা দেখতে না পারা অথবা কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া
    ঢোক গিলে না পারা
    প্রস্রাব করতে না পারা
    অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি





খেয়াল করলে দেখা যাবে হিস্টিরিয়ায় আক্রান্তদের কারো প্রকৃত খিঁচুনি রোগীদের মতো কাপড়ে প্রস্রাব হয়ে যায় না, ঠোঁট বা জিহ্বা কেটে যায় না। এটা সাধারণত সকলের সামনে শুরু হয়, কেউ একাকী থাকাকালীন বা ঘুমানোর সময়ে হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হয় না।



জেনে নেই ম্যাস হিস্টিরিয়াতে কি চিকিৎসা দিতে হবে:



    আক্রান্তদেরকে আশ্বাস দেয়া তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা যে তারা কোন খারাপ রোগে আক্রান্ত হয় নি
    আক্রান্তদেরকে কথা বলতে দেয়া, তাদের সমস্যাগুলো মন দিয়ে শোনা
    রোগীকে হাটা চলা করতে দেয়া বা হাঁটানোর ব্যবস্থা করা
    অসুস্থদেরকে দ্রুত আলাদা করে ফেলা যেন বাকিরা তাদেরকে দেখে আক্রান্ত হতে না পারে
    তাদের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করা
    আক্রান্তদের সামনে আতংকিত না হওয়া, এমন কিছু না করা যা তাদেরকে অ্যারও অসুস্থ করে তুলবে
    পর্যাপ্ত আলোবাতাসের ব্যবস্থা করা





এই রোগে ওষুধের ভুমিকা খুবই সীমিত। প্রয়োজনবোধে বিষণ্ণতা বা আতংক কমানর ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে গ্রুপ ডিসকাশন বা কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা; সর্বোপরি পারিবারিক কাউসেলিংয়ের মাধ্যমে রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়া আনা।

ম্যাস হিস্টিরিয়া প্রতিরোধে আমাদের কি করণীয়:



    স্কুল কলেজ গুলোতে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা
    সংবাদপত্র, টেলিভিশন ইত্যাদি মিডিয়ার মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়া
    অভিভাবক, শিক্ষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা
    আক্রান্ত স্থানে দ্রুত মেডিকেল টীম পাঠিয়ে ঘটনার সত্য তুলে ধরা ও
    আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা পাঠ্যবইয়ে এ সংক্রান্ত শিক্ষামূলক লেখা অন্তর্ভুক্ত করা
    অতিরঞ্জিত করে এসব খবর প্রকাশ না করে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরা





পরিশেষে এটা মনে রাখতে হবে হিস্টিরিয়া তথা ম্যাস হিস্টিরিয়া কিন্তু কোন অভিনয় বা ভান নয়। এটা একধরনের মানসিক রোগ যার সমাধান আছে। সচেতনতা ও সমাজের সকলের অংশগ্রহণই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে।














পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যাঃ দৈত্যাকার ও দানবাকার মানব


পরিমল বর্মণের কথা মনে আছে? ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার বাংলাদেশী তরুন যে  তৎকালীন সময়ে বিশ্বের উচ্চতম ব্যক্তি ছিলেন যার উচ্চতাই হয়েছিলো তার মরণের  কারণ। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। অত্যধিক লম্বা হওয়া অথবা দানবাকৃতির  হওয়াও যে একটি শারীরিক সমস্যা তা বোধকরি আমরা অনেকেই জানি না। যদিও  সমাজে এটা বিরল তবু চলুন আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত মনে হওয়া এই সমস্যার অন্দরমহলের  ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।

জীবনের প্রথম দিকে মানুষ উচ্চতায় বৃদ্ধি পায় যা ১৮-২০ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে।  এরপরে উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়, মানুষ বাড়তে থাকে দেহের দুপাশে। শরীরের মাংশপেশীর  আয়তন বাড়ে, দেহে জমে মেদ। এই সবরকম বৃদ্ধিই নিয়ন্ত্রিত হয় আমাদের মস্তিস্কের  মাঝে অবস্থিত অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রন্থির মাধ্যমে যার নাম দেয়া হয়েছে 'পিটুইটারি গ্রন্থি'।

পিটুইটারি নিঃসৃত রসের প্রভাবেই আমরা আকারে বাড়ি, এই রস কম নিঃসৃত হলে  আমরা হই বামন আর পরিমাণের থেকে বেশি নিঃসৃত হলেই ঘটে সর্বনাশ!!



তরুণ বয়সে যখন আপনি আমি উচ্চতায় বাড়ছি তখন যদি পিটুইটারি গ্রন্থি অধিক  নিঃসরণ করে তবে আমাদের উচ্চতা ধেই ধেই করে বেড়ে যাবে।
'তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে,
সব গাছ ছাড়িয়ে,
উকি মারে আকাশে'র মতো আপনি আশেপাশের সকলের থেকে লম্বা হয়ে পড়বেন, লম্বা  হতেই থাকবেন, থামাতে পারবেন না। দৈত্যের মতো হয়ে পড়বেন। ঠিকমতো দাঁড়াতে  পারবেন না, ভারসাম্য থাকবে না, পায়ে লাগবে বিশেষ সাইজের জুতো, গায়ে লাগবে  বিশেষ সাইজের পরিধেয়। সাথে থাকবে নানা রকম শারীরিক সমস্যা যা আপনার আয়ুকে  করে দেবে সীমিত। এই অবস্থাকে বলে দৈত্যাকৃতি বা Gigantism.



যদি উচ্চতা বৃদ্ধি থেমে যাবার পরে পিটুইটারি পাগলামো শুরু করে? তখন তো আর  আমরা উচ্চতায় বাড়তে পারবো না, আমাদের অস্থিগুলো পূর্ণতা পেয়ে গিয়েছে ততদিনে,  আর বাড়বে না লম্বায়, তবে কি হবে তখন? আমরা বাড়বো পাশে, আমাদের গায়ের  মাংসপেশিগুলো বাড়বে, অস্থি বাড়বে আকারে, দৈর্ঘ্যে নয়। আমাদের হাত, পায়ের আঙ্গুল  বাড়বে আকারে, আঙ্গুল ফুলে কলা গাছের মতো অনেকটা, চোয়াল বেড়ে সামনে এগিয়ে  আসবে, চেহারা হয়ে পড়বে অনেকটা গরিলার ন্যায়। একে দানবাকৃতী বলতে পারি  আমরা। ইংলিশে বলে Acromegaly.

জানতে ইচ্ছে করেনা কেন এমন হয়? পিটুইটারি গ্রন্থিতে হতে পারে একধরনের টিউমার  যার নাম পিটুইটারি এডেনোমা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো ক্যান্সার নয়। এই টিউমারের  কারনেই পিটুইটারি অধিক পরিমাণে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত করে সকল সমস্যার সৃষ্টি  করে।

হাত-পায়ের আকার বাড়ে, ত্বক হয় অমসৃণ, নাক ও চোয়াল বেড়ে যায় আকারে। জিহ্বা  মোটা হয়ে পড়ে, গলার স্বর হয় গভীর ও ভরাট। বাড়তে পারে ঘামের পরিমাণ ও ঘুমের  মাঝে শ্বাসবদ্ধতা।
শরীরের মধ্যে হৃদয়, ফুসফুস, কলিজা, বৃক্ক ও প্লীহা বৃদ্ধি পায় আকারে। সাহসী  ব্যক্তিদেরকে বলা হয় তাদের কলিজা বড়, উদার ব্যক্তিকে আমরা বলি তার হৃদয় বড়।  এই রোগে বাস্তবিকই রোগীর কলিজা ও হৃদয় বেড়ে যায়। ফুলতে পারে পায়ের পাতা,  গোড়ালি, হতে পারে গিঁটে গিঁটে ব্যাথা।
অধিক উচ্চতা ও অধিক শারীরিক বৃদ্ধির কারনে হৃদয়ের ওপরে চাপ পড়ে, তাকে বেশি  কাজ করতে হয়  অধিক উঁচুতে রক্ত পাম্প করে পাঠাতে। তাই দ্রুতই রোগীর  উচ্চরক্তচাপ থেকে শুরু করে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয় হৃদয়ে এবং দুঃখের বিষয় হচ্ছে  রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণই হলো হৃদযন্ত্রের বৈকল্য।
হতে পারে ডায়াবেটিস, দৃষ্টির সীমানা হয়ে আসতে পারে সীমিত। সাথে থাকে মাথা ব্যথা।  রক্তে বাড়তে পারে কোলেস্টেরলের পরিমাণ।

আগেই বলেছি সমাজে বিরল তার পরেও আসুন জেনে নেই কারো হয়ে গেলে এই সমস্যা  থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে।

রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে পরে আসে চিকিৎসার  প্রশ্ন। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য টিউমারটিকে আকারে ছোট রাখা ও গ্রোথ হরমোনের মাত্রা  স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
রয়েছে বিভিন্ন মুখে খাবার ঔষধ, রয়েছে টিউমার অপসারনের সার্জারি। একেবারেই কাজ  না হলে রয়েছে রেডিয়েশন থেরাপি।

রোগটি বিরল তাতে সন্দেহ নেই, মাঝে মাঝে রাস্তা ঘাটে বামন দেখলেও দৈত্যাকার মানব  খুব কমই দেখা যায়। আমরা চাই না এমন সমস্যা কেউ পড়ুক, আমরা চাই একটি সুস্থ,  স্বাভাবিক জীবন যেখানে থাকবে না কোন অস্বাভাবিকতা, অসামঞ্জস্যতা। সকলে ভালো  থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুখে থাকুন।


ডেন্টাল ক্যারিজ- সহজভাবে সহজ কথা

দাঁত ব্যথার অন্যতম কারণ হল ক্যারিজ বা দন্তক্ষয়। অনেকের কাছে এই রোগটি দাঁতের পোকা নামে পরিচিত। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানে যার কোন ভিত্তি নেই। দাঁতের সব রোগের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি হয়।চারটা কারণে এই রোগ হতে পারে :

১. দাঁতে বা দাঁতের ফাঁকে খাবার জমতে পারে এমন জায়গা।

২. ক্যারিজ তৈরিকারী জীবাণু।

৩. রিফাইন্‌ড কার্বোহাইড্রেট বা চিনিজাতীয় খাবার

৪. বেশিদিন ধরে যদি উপরের তিনটা কারণ একইসঙ্গে চলতে থাকে।

আমাদের দাঁতে অনেক খাঁজ (Pits and Fissure) আছে, যেগুলোতে বেশি ক্যারিজ হয়। ক্যারিজ বেশি হয় দুই দাঁতের মাঝে। তবে সত্যি কথা হচ্ছে ডেন্টাল ক্যারিজ দাঁতের যে কোনো জায়গায় হতে পারে। ক্যারিজ বা দন্তক্ষয়ের শুরুতে তেমন কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে গর্ত আস্তে আস্তে বড় হলে দাঁতে শিরশির করা, কিছু খেলে গর্তে ঢুকে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।

একসময় দাঁতের গর্ত আরও বড় হয়। আর তা মজ্জার কাছাকাছি চলে যায়। ফলে মাঝেমধ্যে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে এই ব্যথাটা থেমে থেমে হয়। কান, মাথা ও চোখসহ ব্যথা করতে পারে। ডেন্টাল ক্যারিজের এই পর্যায় পর্যন্ত সাধারণ ফিলিং করেই ক্যারিজের পরিসমাপ্তি টানা যায়। এতে খরচও কম লাগে, সময়ও কম নষ্ট হয়। আর রোগীর কষ্টও কম হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী এই সময় ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে কিছুদিন নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে থাকেন। এরপরই শুরু হয় প্রচণ্ড ব্যথা। কোনো একদিন রাতে, যখন বাইরে গিয়ে ওষুধ কেনা প্রায় অসম্ভব তখনই এটা শুরু হয়। পরদিন সকালে ওষুধ খাওয়ার পর ব্যথা কমে। আর ঠিক বিকেলে আবার ব্যথা শুরু হয়। তখনই বেশিরভাগ রোগীর বোধোদয় হয়। তারা ডেন্টিস্টের কাছে যান। তবে অনেকেরই বোধোদয় হয় না। কেউ কেউ এই অবস্থায়ও অ্যান্টিবায়োটিক আর ব্যথার ওষুধ একসঙ্গে চালাতে থাকেন।

ইতিমধ্যে দাঁতের যতটুকু ক্ষতি হয়, সেখান থেকে দাঁতটি জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব না। তবে মৃতভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ এই সময় রুট ক্যানেল চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ উপশম করা যায়। যারা এই অবস্থাতেও ডাক্তারের কাছে যান না, তারা মাঝেমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক আর ব্যথানাশক ওষুধ খান। এতে তীব্র ব্যথার অনুভূতি একসময় কমে গেলেও ডেন্টাল ক্যারিজ কিন্তু থেমে থাকে না। কিছুদিনের মধ্যে জীবাণুর সংক্রামণে দাঁতের মজ্জা পুরোপুরি পচে যায়। পচা অংশগুলো দাঁতের গোড়া দিয়ে হাঁড়ের মধ্যে চলে যায়। সেখানে পুঁজ তৈরি করে। এই অবস্থায় যে ব্যথাটা হয় তা কোনো ওষুধেই কমে না।

দেখা গেছে রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই অবস্থাতেই ডেন্টিস্টের কাছে আসেন। এ ক্ষেত্রে অনেকের দাঁত রুট ক্যানেল চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। আর অনেকের দাঁত ফেলে দিতে হয়।

কেউ কেউ আছেন এই অবস্থাতেও ব্যথা সহ্য করতে থাকেন। ডেন্টিস্টের কাছে না আসার জন্য মনস্থির করেন। তাদের দাঁত আস্তে আস্তে মাড়ির সঙ্গে মিশে যায়। এ সময় মাঝেমধ্যে ব্যাথা হয়। তখন তারা আবার ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খান।

এই পর্যায় থেকে দুই রকম ব্যাপার ঘটতে পারে:

১. ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সেলুলাইটিস, লাডউইগ্‌স অ্যান্‌জাইনা ইত্যাদি। লাডউইগ্‌স অ্যান্‌জাইনা হলে পুঁজ জমে রোগীর গলা ফুলে যায়। চিকিৎসা না করালে রোগী নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে।

২. সিস্ট, টিউমার ও ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে।

সামান্য দাঁতের ব্যথা থেকে কত কিছু হতে পারে। তাই দাঁত ব্যথা হলে সামান্য দেরি না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অন্তত ৬ মাস পর পর দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করানো উচিত। তাহলে দাঁতে যদি সামান্য কোনো সমস্যাও থাকে, সেগুলো নিমিষেই দূর করা সম্ভব হয়। আর ভবিষ্যতে দাঁতের বড় রকমের সমস্যায় পড়তে হয় না।





বাচ্চাদের ডেন্টাল ক্যারিজ

ডেন্টাল ক্যারিজ (দাঁতের ক্ষয় রোগ) খুব সাধারণ একটি সমস্যা যা যে কোনো বয়সেই হতে পারে। ছোট বাচ্চাদের ডেন্টাল ক্যারিজ সাধারণত ২-৫ বছর বয়সে দেখা যায়। কারণ এই বয়সে বাচ্চারা চকলেট, মিষ্টি, চিপস ইত্যাদি খাবার বেশি খায় কিন্তু এগুলো খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার করে না। বাচ্চাদের মাঝে সবসময়ই দাঁত না মাজার একটি প্রবণতা দেখা যায়। যার ফলে তারা নিজেরাও ব্রাশ করেনা, বাবা-মাকেও করতে দিতে চায় না।

২-৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের দাঁতের ক্যারিজ হওয়ার আরও বড় একটা কারণ হচ্ছে এ বয়সে অনেক বাচ্চা ঘুমের মধ্যে ফিডার খায়। আবার অনেক বাবা মা আছেন যারা বাচ্চাকে ঘুমের মধ্যে ফিডার খাওয়াতে পছন্দ করেন কারণ জেগে থাকলে বাচ্চা খেতে চায় না। এই ঘুমের মধ্যে খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাচ্চাদের ডেন্টাল ক্যারিজ হওয়ার সম্ভাবনা ৯০শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

বাচ্চাদের ডেন্টাল ক্যারিজ অনেক বাবা মা গুরুত্ব দেন না, তারা মনে করেন এই দাঁত তো দুধ দাঁত; কিছুদিন পর পড়ে যাবে, এর পর আবার নতুন দাঁত উঠবে। কিন্ত এই দুধ দাঁতের যদি ঠিক মত যত্ন না নেওয়া হয়, সমস্যা হলে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তার যে স্থায়ী দাঁত উঠবে তার অনেক সমস্যা হতে পারে। যেমন, কারো দুধ দাঁত ক্যারিজ থাকায় সময়ের আগেই পড়ে গেলে বা ফেলে দেয়া হলে স্থায়ী দাঁত আঁকাবাঁকা বা উঁচু নিচু হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
রোগ তো রোগই তা যে বয়সেই হোক না কেন। যে কোন রোগের ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করা যায়, তত দ্রুত রোগ ভাল হয়। তাই বাচ্চাদের ডেন্টাল ক্যারিজ নিয়ে উদাসীন না থেকে অবশ্যই তাদের ক্যারিজের দ্রুত চিকিৎসা করা উচিৎ, যাতে ভবিষ্যতে তাদের দাঁতের সমস্যা কম হয়।




দুর্ঘটনা বা আঘাতে দাঁত পড়ে গেলে করণীয় কি?


যে কোন দুর্ঘটনায় আপনার দাঁত পড়ে গেলে এরকম চিন্তার কোন কারণ নেই যে "হায়! আমি একটা দাঁত হারালাম।" কেননা, সেই দাঁত খুব সহজেই আপনার মুখে পুন:স্থাপন করা যেতে পারে। আপনাকে শুধু কিছু কথা জেনে রাখতে হবে :-

১.দাঁত যেখানে পড়বে সেখান থেকে তুলে এনে ট্যাপকল বা পানির নিচে এনে দাঁতের উপরে থাকা আলগা ময়লা গুলো ধুয়ে ফেলতে হবে।

২.কিন্তু সাবধান। দাঁতের গোড়ার জায়গা স্পর্শ করা যাবে না। কারণ দাঁতের গোড়ায় কিছু বিশেষ ধরনের লিগামেন্ট থাকে যেগুলোকে পেরিওডন্টাল লিগামেন্ট বলে - এই লিগামেন্ট গুলো দাঁতকে তার কোটরে ধরে রাখতে সাহায্য করে, গোড়া এগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হলে দাঁতকে তার কোটওে পুনঃস্থাপিত করা সম্ভব নয়।

৩.এবার দাঁতকে দুধ অথবা স্যালাইন পানি অথবা ডাবের পানির মধ্যে করে অবশ্যই প্রথম ১ ঘন্টার মধ্যে নিকটস্থ ডেন্টিষ্ট এর শরণাপন্ন হতে হবে। এই সময়ের মধ্যে আনতে পারলে চিকিৎসা সফল হওয়ার নিশ্চয়তা অনেক গুন বেড়ে যায়।

৪.তবে প্রথম ১ ঘন্টার মধ্যে ডাক্তারের কাছে না পৌঁছাতে পারলেও চিকিৎসা আছে, ডাক্তারকে দাঁত পড়ে যাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।

৫.ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দাঁত পুনঃস্থাপনের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট করে নিতে হবে। তবে ১০ - ১২ বছরের বচ্চাদেও ক্ষেত্রে এই ট্রিটমেন্ট না করলেও চলে, কারণ তাদের দাঁতগুলো গোড়া থেকে প্রচুর পরিমানে রক্ত সরবরাহ পায়, বড়দের ক্ষেত্রে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।

উপরোক্ত নিয়মগুলো মনে রাখতে পারলে দুর্ঘটনায় আপনার পড়ে যাওয়া দাঁতটি আপনার মুখে পুনঃস্থাপিত হতে পাওে নির্বিঘ্নে; সেই দাঁত আপনার জন্য কাজ করে যাবে আরও বহুদিন।





শিশুর দাঁতের যত্ন


এক. কখন থেকে যত্ন নেওয়ার শুরু
দাঁত না ওঠার অর্থ এই নয় যে এগুলো ওখানে নেই। গর্ভকালীন দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সময়ে দাঁত গঠিত হতে শুরু করে। জন্মের সময়ে শিশুর মাড়িতে ২০ প্রাইমারি দন্ত থাকে তার অনেকগুলো চোয়ালে পরিপূর্ণভাবে গজিয়ে যায়। সুতরাং প্রথম দন্ত কৌমুদী প্রস্ফুটনের আগে শিশুর দাঁতের পরিচর্যা করা উত্তম।
শিশুকে খাওয়ানোর পরে পরিচ্ছন্ন জলে পাতলা কাপড় ভিজিয়ে দাঁতের মাড়ি পরিষ্কার করা যায়। এতে ব্যাকটেরিয়া ওখানে জমাট বাঁধতে পারে না। আর যখনই কয়েকটা দাঁত মুকুলিত হবে তখনই দিনশেষে নরম টুথব্রাশ কিংবা গজ পিস দিয়ে তা পরিষ্কার রাখা যায়।

দুই. ফ্লুরাইড এবং জল
শিশুর দাঁতের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় শুধু দৈনিক দাঁত ব্রাশ করাটাই যথেষ্ট। শিশুকে যে জলপান করানো হয় সে জলে যদি স্বাভাবিক মাত্রায় ফ্লুরাইড থাকে তবে তা শিশু দন্ত বিকাশে এবং দাঁতে ক্ষয়রোগ রোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

তিন. শিশুর দাঁত বনাম জুস পান
যেন ‘জুস-ই জীবন’ অনেক বাচ্চার মধ্যে এরূপ তাড়না দেখা যায়। অনেক মা-বাবা, অভিভাবক এ নিয়ে তেমন গা করেন না। ফ্রুট জুইসের সুগার দাঁতের এনামেল খেয়ে নেয়, বিশেষত যেসব শিশু সারা দিন বা ঘুমোতে যাওয়ার আগে বোতলে, কাপে নিরবধি জুস পান করে চলেছে। গবেষণার তথ্য—শিশুর দাঁতে কেরিজ তৈরি হয় তখন যখন বেশি সময় ধরে জুস দাঁতের চারপাশে প্রবাহিত হয়। দুধভর্তি ফিডার ধরিয়ে যেসব মা বাচ্চাকে ঘুমিয়ে দেন সে ক্ষেত্রে এমন ফলাফল ঘটে।
সে কারণে শিশু বয়সে জুস ড্রিংকস ও অন্যান্য সুগার পানীয় নিয়ন্ত্রণে রেখে খাওয়ানো উচিত। কখনো বোতল বা ফিডার মুখে দিয়ে শিশুকে ঘুম পাড়ানোর কৌশল অবলম্বন না করা।
তৃতীয়ত শিশুর সঠিক দাঁতের যত্নে প্রথম বছর পুরোলে দন্তবিশেষজ্ঞের পরামর্শ চেয়ে নেওয়া।






টাইফয়েড বা সান্নিপাতিক জ্বর


টাইফয়েড জ্বর এখন আমাদের জন্য আর তেমন ভয় জাগানিয়া কিছু নয় আগের মতো। উন্নত চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসম্মত পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে টাইফয়েডকে একসময় অনেকটাই বশ মানিয়ে আনা হয়েছিলো যদিও আবার সেটি ফিরে আসছে মারাত্নক রুপে। চলুন আজ জেনে নেই টাইফয়েড সম্পর্কে সাধারন কিছু কথা।



টাইফয়েড বা সান্নিপাতিক জ্বর  এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয় যার নাম 'সালমোনেলা টাইফি'। এটি একটি পানি বাহিত রোগ। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও খাদ্যনালীতে এই জীবাণু অবস্থান করে এবং প্রস্রাব ও মলের মাধ্যমে পরিবেশে উন্মুক্ত হয় যা পরবর্তীতে পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। টাইফয়েড জীবাণু সংক্রমিত পানি পান করার মাধ্যমে পুনরায় অন্য আরেকজন আক্রান্ত হন। পানি ছাড়াও জীবাণু দ্বারা দূষিত দুধ কিংবা দুগ্ধজাত সামগ্রী, নারিকেল, চিংড়ি, মাছ, ডিম, কাচা সবজি, সালাদ, লেটুস প্রভৃতি থেকেও জীবানুটি মানুষের মাঝে ছড়াতে পারে। মাছি মানুষের মলমুত্র খেয়ে জীবনধারণ করে। মানুষ যখন মাছিতে বসা খাবার খায় তখন সেটি মানুষে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির  হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়া, মল ত্যাগের পরে হাত না ধোয়া ইত্যাদি কারনেও এটা ছড়াতে পারে।



একবার শরীরে প্রবেশ করার পরে জীবাণু অন্ত্র থেকে রক্তে প্রবেশ করার মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।





যেকোনো বয়সেই টাইফয়েড হতে পারে তবে আমাদের দেশে সাধারণত শিশু থেকে তরুণদের মাঝেই এটা বেশি হতে দেখা যায়।



টাইফয়েড জীবাণু দেহে প্রবেশের ১০-১৪ দিন পরে রোগের উপসর্গ ও লক্ষণসমূহ প্রকাশ পেতে শুরু করে।





    প্রধানত থাকে জ্বর যা সাধারণত ১০৩ থেকে ১০৪ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়, জ্বর ক্রমেই বাড়তে থাকে, সারাক্ষণই জ্বর থাকে।
    জ্বরের সাথে মাথাব্যথা, গায়ের মাংশপেশিতে ব্যাথা থাকে, থাকে দুর্বলতা।
    প্রাপ্ত বয়স্কদের অনেক সময়ই কোষ্টকাঠিন্য দেখা দেয়। শিশুদের ডায়রিয়া এবং বমি হতে পারে।
    খাওয়ায় থাকে না রুচি, সব লাগে বিস্বাদ, সাথে পেটে ব্যাথা।
    লিভার ও প্লিহা আকারে বড় হয়ে যেতে পারে।
    সপ্তাহখানেক পরে পেট এবং পিঠে গোলাপি রঙের ফুসকুড়ি হতে পারে। এই ফুসকুড়িগুলোর একটি বৈশিষ্ঠ্য হল হাতের আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওরা অদৃশ্য হয়ে যায়।





দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীকে যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে তৃতীয় সপ্তাহের মাথায় রোগী মারাত্মক জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন।



যেসব জটিলতা হতে পারে তাদের মাঝে অন্ত্রের দেয়াল থেকে রক্তক্ষরণ এবং দুর্ভাগ্য বাড়লে অন্ত্রের দেয়ালে ছিদ্র হয়ে মারাত্নক রক্তক্ষরণ হতে পারে, যেক্ষেত্রে রোগী মারাত্নক জটিল শকে চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে।



অনেকে একবার আক্রান্ত হবার পড়ে সারা জীবনের জন্য টাইফয়েডের বাহক হয়ে পড়েন যারা জীবন্ত রোগবাহক হিসেবে আজীবন এই রোগ ছড়িয়ে দিতে থাকেন নিজের অজান্তে। এমন একজন ইতিহাস বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন ' টাইফয়েড মেরী' যাকে নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে।



এছাড়াও লিভারের ছিদ্র হওয়া, অগ্নাশয়ে বা মস্তিস্কে প্রদাহ, মায়াকার্ডাইটিস(হৃদ পেশীতে সংক্রমন), নেফ্রাইটিস(কিডনিতে সংক্রমন), হাড়ের ইনফেকশন, সেপটিসেমিয়া(রক্তে সংক্রমন) ইত্যাদি জটিলতা টাইফয়েড থেকে হতে পারে।





টাইফয়েড নির্ণয়ের জন্য রোগের উপসর্গ-লক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক টেস্ট রয়েছে





    রোগের প্রথম সপ্তাহে রক্তের কালচারের মাধ্যমে,
    দ্বিতীয় সপ্তাহে ভিডাল টেস্টের মাধ্যমে( যদিও এটা শতভাগ নির্ভরযপগ্য নয়)
    পরবর্তী সপ্তাহে যথাক্রমে মল ও প্রস্রাবের পরীক্ষার মাধ্যমে টাইফয়েড নির্ণয় করা যায়
    ক্ষেত্রবিশেষে অস্থিমজ্জা থেকেও পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা যায়







টাইফয়েডের চিকিৎসার ব্যাপারে বলতে হয় কার্যকরি এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারের পরে টাইফয়েড অনেক সহজেই বশ মানানো সম্ভব হয়েছে।



সাধারণত ১০-১৪ দিনের চিকিৎসাতেই মানুষ আরোগ্য লাভ করে যদিও একসময় এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারের পূর্বে টাইফয়েড ছিলো মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম।  তবে বর্তমানে ইচ্ছামত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অযথাই এন্টিবায়োটিকের ব্যাবহারের ফলে টাইফয়েডের জীবাণু নতুন ওষুধগুলোর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে যার ফলে সাধারন কোন এন্টিবায়োটিকে সহজে টাইফয়েড সারানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদেরকে বলা হচ্ছে MDR Typhoid বা একাধিক ড্রাগ প্রতিরোধী টাইফয়েড।



এন্টিবায়োটিকের সাথে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং প্রচুর পানি ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে কাজে লাগে।







টাইফয়েড প্রতিরোধের জন্য বাজারে এখন ভ্যাকসিন বের হয়েছে যার একটা প্রতি ৩ বছর পর পর মাংশপেশীতে নিতে হয় এবং একটি মুখে

খেতে হয় যদিও এদের কার্যকারিতা সবক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় না।





টাইফয়েড জ্বরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল বিষয় হলো সামস্টিক পরিচ্ছন্নতা এবং সচেতনতা। অর্থাৎ,



    নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান
    স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার
    খাবার তৈরি এবং খাবার গ্রহণের পূর্বে এবং পায়খানা ব্যবহারের পর সাবান/ছাই দিয়ে হাত ধোয়া
    কাঁচা বা অপরিষ্কার শাক-সবজি ও ফলমূল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা
    খাবার গরম করে খাওয়া
    ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা
    টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যের জন্য খাবার তৈরি থেকে বিরত থাকা
    আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যবহার্য দ্রব্যাদি আলাদা করে রাখা ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে টাইফয়েডের থেকে আমরা দূরে থাকতে পারবো।


পানি বাহিত রোগঃ আমাশয়

বন্ধুদের সাথে বাইরে খেয়েছেন, ফুচকা, সালাদ, সাথে পানিও খেয়েছেন। পরের দিন  অফিস বা ক্লাসে গিয়ে সুস্থির হয়ে বসতেই পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো, শুরু হল ক্রমাগত বাথরুমে যাওয়া-আসা। সাথে এলো জ্বর এবং মলের সাথে আম এবং রক্ত পড়া। খুব সাধারণ একটি দৃশ্য আমাদের দেশে এটি এবং এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি এমন বাংলাদেশী খুব কমই পাওয়া যাবে। উপরের যে সাধারণ সমস্যার কথা বলা হয়েছে তার নাম আমাশয় বা ইংরেজিতে Dysentery. এদেশের মানুষের কাছে যেটি খুব পরিচিত একটি রোগ।

আমাশয় মূলত দুই ধরণের, অ্যামিবিক এবং ব্যাসিলারি। অ্যামিবিক আমাশয়ের মূলে রয়েছে এককোষী অ্যামিবা এবং ব্যাসিলারি আমাশয়ের মূলে রয়েছে একটি ব্যাক্টেরিয়া যার নাম সিগেলা/ shigella. এই দুই ধরণের আমাশয়ই মূলত আমাদের দেহে প্রবেশ করে দূষিত পানি এবং খাবারের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির মলের সাথে বেরিয়ে আসা জীবাণু দ্বারা দূষিত পানি দিয়ে ধোয়া খাবার যেমন ফল, সালাদ খাওয়া, অবিশুদ্ধ পানি পান এগুলো আমাশয়ে আক্রান্ত হওয়ার বড় কারণ। আক্রান্ত ব্যক্তির সঠিকভাবে হাত পরিস্কার না করে থাকলে তার কাছ থেকেও ছড়াতে পারে আমাশয়। মাছির মাধ্যমেও জীবাণু খোলা খাবারে সংক্রমিত হতে পারে।

আমাদের দেশে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের পরে আমাশয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। আমাশয়ের উপসর্গের মাঝে রয়েছে মোচড় দিয়ে পেটে ব্যাথা, বার বার মল ত্যাগ করা, মলের সাথে আম অথবা রক্ত যাওয়া, সাথে জ্বর থাকা, অ্যামিবিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে মলে হাল্কা দুর্গন্ধ হতে পারে। ডায়রিয়ার সাথে আমাশয়ের একটা পার্থক্য হচ্ছে ডায়রিয়ায় মলে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে আর আমাশয়ে মলে পানির পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে।

মলের সাথে রক্ত গেলে তাকে বলা হয় রক্ত আমাশয়। আক্রান্ত ব্যক্তির অন্ত্রের দেয়াল যখন জীবাণু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন ক্ষত সৃষ্টি হয়ে  রোগী আম এবং রক্ত মিশ্রিত মল ত্যাগ করেন। সাধারনত জীবাণু দেহের ভেতরে প্রবেশ করার ১ থেকে ৩ দিনের মাঝেই রোগের উপসর্গ প্রকাশ পেতে শুরু করে। একসপ্তাহের মাঝেই এটি অধিকাংশ সময়ে নিরাময় হয়ে যায়।

আমাশয়ের হাত থেকে বাঁচার প্রধান উপায় আমাদের সকলেরই জানা, তার পরেও আবার মনে করিয়ে দিতে চাইঃ

১। প্রতিবার মল ত্যাগের পরে হাত সাবান দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করা
২। স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করা
৩। না ধুয়ে কোন ফল বা অন্যান্য খাবার না খাওয়া
৪। খাবার খোলা না রাখা
৫। বাসি, পচা কোন খাবার না খাওয়া
৬। আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাবার প্রস্তুত করতে না দেওয়া



আমাশয়ের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য দুইটিঃ বার বার পাতলা পায়খানার ফলে পানি শূন্যতার হাত থেকে রোগীকে রক্ষা করা এবং জীবাণু নাশে ঔষধের ব্যবহার করা।


পাতলা পায়খানার জন্য ওরস্যালাইন ব্যবহার করতে হবে, এটা আমরা সবাই জানি। ব্যাকটেরিয়া জনিত আমাশয়ে ৫-৭ দিনের এন্টিবায়োটিকেই কাজ হয়, বর্তমানে সিপ্রোফ্লকসাসিন বা এজিথ্রোমাইসিন খুব ভালো কাজ করে। অ্যামিবিক আমাশয়ে মেট্রনিডাজল ৫ দিনের কোর্সই যথেষ্ট।

আমাশয় এমন একটি অসুখ যা  থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ নিয়ম পালন করলেই চলে। তাই ব্যক্তিগত এবং সামাজিক পরিচ্ছন্নতার প্রতি সকলের নজর রাখা অতীব জরুরী এ ব্যাপারে


পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যাঃ দৈত্যাকার ও দানবাকার মানব


পরিমল বর্মণের কথা মনে আছে? ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার বাংলাদেশী তরুন যে  তৎকালীন সময়ে বিশ্বের উচ্চতম ব্যক্তি ছিলেন যার উচ্চতাই হয়েছিলো তার মরণের  কারণ। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। অত্যধিক লম্বা হওয়া অথবা দানবাকৃতির  হওয়াও যে একটি শারীরিক সমস্যা তা বোধকরি আমরা অনেকেই জানি না। যদিও  সমাজে এটা বিরল তবু চলুন আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত মনে হওয়া এই সমস্যার অন্দরমহলের  ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।

জীবনের প্রথম দিকে মানুষ উচ্চতায় বৃদ্ধি পায় যা ১৮-২০ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে।  এরপরে উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়, মানুষ বাড়তে থাকে দেহের দুপাশে। শরীরের মাংশপেশীর  আয়তন বাড়ে, দেহে জমে মেদ। এই সবরকম বৃদ্ধিই নিয়ন্ত্রিত হয় আমাদের মস্তিস্কের  মাঝে অবস্থিত অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রন্থির মাধ্যমে যার নাম দেয়া হয়েছে 'পিটুইটারি গ্রন্থি'।

পিটুইটারি নিঃসৃত রসের প্রভাবেই আমরা আকারে বাড়ি, এই রস কম নিঃসৃত হলে  আমরা হই বামন আর পরিমাণের থেকে বেশি নিঃসৃত হলেই ঘটে সর্বনাশ!!



তরুণ বয়সে যখন আপনি আমি উচ্চতায় বাড়ছি তখন যদি পিটুইটারি গ্রন্থি অধিক  নিঃসরণ করে তবে আমাদের উচ্চতা ধেই ধেই করে বেড়ে যাবে।
'তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে,
সব গাছ ছাড়িয়ে,
উকি মারে আকাশে'র মতো আপনি আশেপাশের সকলের থেকে লম্বা হয়ে পড়বেন, লম্বা  হতেই থাকবেন, থামাতে পারবেন না। দৈত্যের মতো হয়ে পড়বেন। ঠিকমতো দাঁড়াতে  পারবেন না, ভারসাম্য থাকবে না, পায়ে লাগবে বিশেষ সাইজের জুতো, গায়ে লাগবে  বিশেষ সাইজের পরিধেয়। সাথে থাকবে নানা রকম শারীরিক সমস্যা যা আপনার আয়ুকে  করে দেবে সীমিত। এই অবস্থাকে বলে দৈত্যাকৃতি বা Gigantism.



যদি উচ্চতা বৃদ্ধি থেমে যাবার পরে পিটুইটারি পাগলামো শুরু করে? তখন তো আর  আমরা উচ্চতায় বাড়তে পারবো না, আমাদের অস্থিগুলো পূর্ণতা পেয়ে গিয়েছে ততদিনে,  আর বাড়বে না লম্বায়, তবে কি হবে তখন? আমরা বাড়বো পাশে, আমাদের গায়ের  মাংসপেশিগুলো বাড়বে, অস্থি বাড়বে আকারে, দৈর্ঘ্যে নয়। আমাদের হাত, পায়ের আঙ্গুল  বাড়বে আকারে, আঙ্গুল ফুলে কলা গাছের মতো অনেকটা, চোয়াল বেড়ে সামনে এগিয়ে  আসবে, চেহারা হয়ে পড়বে অনেকটা গরিলার ন্যায়। একে দানবাকৃতী বলতে পারি  আমরা। ইংলিশে বলে Acromegaly.

জানতে ইচ্ছে করেনা কেন এমন হয়? পিটুইটারি গ্রন্থিতে হতে পারে একধরনের টিউমার  যার নাম পিটুইটারি এডেনোমা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো ক্যান্সার নয়। এই টিউমারের  কারনেই পিটুইটারি অধিক পরিমাণে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত করে সকল সমস্যার সৃষ্টি  করে।

হাত-পায়ের আকার বাড়ে, ত্বক হয় অমসৃণ, নাক ও চোয়াল বেড়ে যায় আকারে। জিহ্বা  মোটা হয়ে পড়ে, গলার স্বর হয় গভীর ও ভরাট। বাড়তে পারে ঘামের পরিমাণ ও ঘুমের  মাঝে শ্বাসবদ্ধতা।
শরীরের মধ্যে হৃদয়, ফুসফুস, কলিজা, বৃক্ক ও প্লীহা বৃদ্ধি পায় আকারে। সাহসী  ব্যক্তিদেরকে বলা হয় তাদের কলিজা বড়, উদার ব্যক্তিকে আমরা বলি তার হৃদয় বড়।  এই রোগে বাস্তবিকই রোগীর কলিজা ও হৃদয় বেড়ে যায়। ফুলতে পারে পায়ের পাতা,  গোড়ালি, হতে পারে গিঁটে গিঁটে ব্যাথা।
অধিক উচ্চতা ও অধিক শারীরিক বৃদ্ধির কারনে হৃদয়ের ওপরে চাপ পড়ে, তাকে বেশি  কাজ করতে হয়  অধিক উঁচুতে রক্ত পাম্প করে পাঠাতে। তাই দ্রুতই রোগীর  উচ্চরক্তচাপ থেকে শুরু করে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয় হৃদয়ে এবং দুঃখের বিষয় হচ্ছে  রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণই হলো হৃদযন্ত্রের বৈকল্য।
হতে পারে ডায়াবেটিস, দৃষ্টির সীমানা হয়ে আসতে পারে সীমিত। সাথে থাকে মাথা ব্যথা।  রক্তে বাড়তে পারে কোলেস্টেরলের পরিমাণ।

আগেই বলেছি সমাজে বিরল তার পরেও আসুন জেনে নেই কারো হয়ে গেলে এই সমস্যা  থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে।

রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে পরে আসে চিকিৎসার  প্রশ্ন। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য টিউমারটিকে আকারে ছোট রাখা ও গ্রোথ হরমোনের মাত্রা  স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
রয়েছে বিভিন্ন মুখে খাবার ঔষধ, রয়েছে টিউমার অপসারনের সার্জারি। একেবারেই কাজ  না হলে রয়েছে রেডিয়েশন থেরাপি।

রোগটি বিরল তাতে সন্দেহ নেই, মাঝে মাঝে রাস্তা ঘাটে বামন দেখলেও দৈত্যাকার মানব  খুব কমই দেখা যায়। আমরা চাই না এমন সমস্যা কেউ পড়ুক, আমরা চাই একটি সুস্থ,  স্বাভাবিক জীবন যেখানে থাকবে না কোন অস্বাভাবিকতা, অসামঞ্জস্যতা। সকলে ভালো  থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুখে থাকুন।


 চোখের সমস্যা নিয়ে

চোখের সমস্যা – কোনার একটি শিরা লাল


সমস্যা: আমার বয়স ২১ বছর। আমি একজন শিক্ষার্থী। আমার সমস্যা ডান চোখে। প্রায় ছয় মাস ধরে প্রায়ই আমার চোখের এক কোনার একটি শিরা লাল হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে পুরো চোখের কোনার জায়গাটি লাল হয়ে জ্বালা করে। এর জন্য বেশ কয়েকবার চক্ষু চিকিৎসককে দেখিয়েছি। কোনো সুফল পাইনি। তাঁর দেওয়া একটি ড্রপ দিচ্ছি এখনো। এ সমস্যাটি আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। পরামর্শ পেলে খুবই উপকৃত হব। উল্লেখ্য, আমি দুই চোখে মাইনাস ০.৭৫ ও ০.৫০।
রিমি
বগুড়া।

পরামর্শ: চোখ লাল হওয়ার জন্য আপনি যে ওষুধটি ব্যবহার করছেন, সেটি একনাগাড়ে বেশি দিন ব্যবহার করা ঠিক নয়।
এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। আপনি এখন অকুলোসান আই ড্রপ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটি দিনে চার বার করে তিন সপ্তাহ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তারপর অবস্থার পরিবর্তন না হলে অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন।

সন্তানের চশমা পরিবর্তনে মা-বাবার করণীয়


দীপা প্রতি পরীক্ষার আগে চোখব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গে আক্রান্ত হয়। ওর ব্যথার তীব্রতা এতটা বেড়ে যায় যে কিছুতেই পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে না। পড়া শুরু করায় তেমন কোনো অসুবিধা থাকে না কিন্তু সামান্যক্ষণ পরই তার ব্যথা শুরু হয়। মা-বাবা তাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চোখ পরীক্ষা করেন। বদলিয়ে দেন চশমার পাওয়ার। চশমা বদলের পর কয়েক দিন ভালো থাকে, তারপর আবার একই সমস্যা। মাথাব্যথা, চোখব্যথা। দীপা পড়াশোনায় ভালো। ক্লাসে প্রথম দশজনের ভেতর তার অবস্থান। তবে দিন দিন চোখের পাওয়ার বৃদ্ধি ও চোখের সমস্যায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন দীপার মা-বাবা।
ওপরে দীপাকে নিয়ে যে চিত্রটা তুলে ধরলাম, আমরা প্রতিদিন কমবেশি আমাদের সন্তানদের নিয়ে এ ধরনের সমস্যায় ভুগি। স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি সন্তানের চোখের সমস্যা নিয়ে। কেবল চোখ নয়, বড় ধরনের রোগের আশঙ্কা মাথায় আসে।
চিকিৎসক হিসেবে এ ধরনের রোগী আমরা পাই। এ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মা-বাবাদের আশ্বস্ত করছি যে আপনার সন্তানকে নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের গল্পের দীপাকে নিয়েই আলোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আতঙ্কিত মা-বাবা এক চিকিৎসক থেকে আরেক চিকিৎসকের কাছে ছোটেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে। কিন্তু তেমন কিছু পাওয়া যায় না। কেবল পরিবর্তন ঘটতে থাকে চোখের চশমার। দীপা তার এক উদাহরণ।
দীপার চোখে পাওয়ারের সমস্যা রয়েছে। তবে তা খুব বেশি মাত্রায় নয়। ওর কিছু অভ্যাস এ সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়। আবার দীপার মা-বাবার টেনশন থেকে বারবার চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়ার বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। দীপা পড়াশোনার ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সচেতন। বই চোখের খুব কাছে নিয়ে অধ্যয়নের অভ্যাস তার। পড়ার টেবিল নয়, বিছানায় শুয়েই সে পড়াশোনা করে। এভাবে পড়াশোনা করায় নিজের অজান্তে তার চোখের ওপর বেশি চাপ পড়ে।
আমরা যখন পড়াশোনা করি, তখন আমাদের চোখের বেশ কয়েকটি পেশি একত্রে কাজ করে। বিশেষ করে কাছের দৃষ্টিকর্মের জন্য পেশিগুলো অধিকমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাকে। দেখার সামগ্রী যথা বইপত্র যত কাছে নিয়ে পড়ার অভ্যাস করা হয়, তত বেশি চোখের পেশির ওপর চাপ পড়ে। এতে একপর্যায়ে পেশিগুলো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়। ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, মাথাব্যথার উপসর্গ দেখা দেয়। কখনো কখনো পেশির খিঁচুনি হয় এবং এ ক্ষেত্রেও উল্লিখিত উপসর্গের উৎপত্তি ঘটে। পেশিগুলো অতিমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাকাকালে চোখের অভ্যন্তরের লেন্সের আকৃতির ওপর প্রভাব পড়ে। এতে চোখের অন্তর্নিহিত পাওয়ারের পরিবর্তন ঘটে। চোখের পাওয়ার বিশেষত মাইনাস পাওয়ার এ সময় বেড়ে যায়।
রোগীর দূরের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। ইদানীং মা-বাবা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে অধিকমাত্রায় সচেতন। তা ছাড়া মা-বাবা ছেলেমেয়েদের স্কুলের লেখাপড়ার বাইরেও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে থাকেন। স্কুলের পর একাধিক কোচিং সেন্টারে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হন না, বাড়িতেও টিউটর রাখেন। ছেলেমেয়েদের এভাবে পড়াশোনার চাপ দেওয়ায় তাদের চোখ বিশ্রামের সুযোগ পায় না। এর ফলে চোখের পেশিগুলোও বিশ্রাম পায় না। পরীক্ষার্থীরা মা-বাবার কাছে দূরের ঝাপসা দৃষ্টির উপসর্গের কথা বলে। মা-বাবা সন্তানকে নিয়ে ছোটেন চোখের চিকিৎসকের কাছে। চোখের বিশ্রাম না থাকায় ‘অস্বাভাবিক’ চোখের অস্বাভাবিক পাওয়ার পরিবর্তন করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চোখের পূর্ণমাত্রার বিশ্রামের পর যে পাওয়ার থাকে, বিশ্রামহীন চোখের পাওয়ার তা থেকে ভিন্ন হয়। হয়তো যে চোখে কোনো পাওয়ার লাগারই কথা নয়, সেই চোখ বিশ্রামে না থাকায় চোখের ভেতরের পেশির সংকুচিত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পাওয়ার ঘাটতির শিকার হয়।
দীপার ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মা-বাবার কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন:
 ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ফাঁকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দিন। একটানা বেশিক্ষণ পড়াশোনা করা ঠিক নয়। ২০ মিনিট পড়াশোনার পর অন্তত পাঁচ মিনিট চোখের বিশ্রাম নেওয়া ভালো।
 সন্তানকে চোখের চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার আগে চোখের বিশ্রাম দিন। যেমন বিকেলে যদি চিকিৎসকের চেম্বারে নেওয়ার প্রোগ্রাম থাকে, সে ক্ষেত্রে দুপুরের আহারের পর বিশ্রামে থাকতে সাহায্য করুন।
 চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার ইত্যাদি থেকে বিরত রাখুন।
 কোচিং সেন্টারের শিডিউল ওই দিনের জন্য পরিবর্তন করে নিন। কোচিং সেন্টার থেকে সরাসরি চোখের চিকিৎসকের কাছে যাবেন না। কেননা এ ক্ষেত্রে সন্তানের চোখের পরিমিত বিশ্রাম হয় না।
 আপনার সন্তানকে পর্যাপ্ত আলোয় আরামদায়ক পরিবেশে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করে দিন। লেখাপড়া টেবিলে করা উচিত, বিছানায় শুয়ে নয়। বিশেষ করে যারা চশমা ব্যবহার করে, তাদের জন্য বিছানায় শুয়ে পড়াশোনা করা মোটেও উচিত নয়।
মোটকথা, সন্তানের চোখের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব মা-বাবার। সন্তানকে চোখের পরিচর্যায় যত্নশীল করে তোলায় মা-বাবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।

বাংলাদেশে প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির ইসিজি রেকর্ডার প্রতিস্থাপন
এই প্রথম বাংলাদেশে ক্ষুদ্রাকৃতির ইসিজি রেকর্ডার রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সৈয়দ মো. কায়সারের শরীরে পেনড্রাইভ আকৃতির ইসিজি রেকর্ডার চামড়ার নিচে মাত্র ১৫ মিনিটের স্বল্পকালীন আউট সার্জিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে মনিটরটি স্থাপন করেন স্কয়ার হাসপাতালের বিশিষ্ট হূদেরাগ বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ আল জামিল। এই ইসিজি রেকর্ডারটি তিন বছর পর্যন্ত রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ইসিজি রেকর্ড করতে থাকবে। যেসব রোগীর অনিয়মিত হূৎস্পন্দন বা ব্যাখ্যাতীত ঘন ঘন মূর্ছা যাওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই প্রতিস্থাপনযোগ্য ইসিজি রেকর্ডারটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই রেকর্ডারটির ইসিজি রেকর্ড দেখার জন্য বাইরে থেকে একটি বিশেষায়িত যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে। সেই যন্ত্রের সাহায্যে ইসিজি যেকোনো সময় দেখা এবং প্রিন্ট নেওয়া যাবে। যন্ত্রটির নাম REVEAL এবং বিখ্যাত আমেরিকান কোম্পানি VITATRON এবং MEDTRONIC যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশি হূদেরাগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই যন্ত্রটি বাংলাদেশে হূদেরাগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এর আগে এ ধরনের যন্ত্র লাগানোর জন্য রোগীদের উন্নত বিশ্বে পাড়ি জমাতে হতো। যন্ত্রটি লাগানো থাকা অবস্থায় এমআরআই করার জন্য কোনো সমস্যা হবে না বলে উদ্ভাবক কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান।

হারানো চোখের সৌন্দর্যে


মানুষের চোখে প্রতিফলিত হয় ব্যক্তিত্ব, দুঃখ-কষ্ট আরও কত কী। মানুষের সৌন্দর্যের একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে এই চোখ।
এই মূল্যবান চোখ যদি কোনো আঘাত, দুর্ঘটনা বা জটিল কোনো রোগের জন্য হারাতে হয় তাহলে সেই মানুষটির যে কষ্টের আর শেষ থাকে না। চোখ না থাকার কারণে হীনম্মন্যতায় ভুগে রোগী ছেড়ে দেয় লেখাপড়া, খেলাধুলা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সামাজিক কাজকর্ম।
সবার মাঝে নিজেকে খুব একা ও নিঃসঙ্গ ভাবতে থাকে। তাই অনেকে কালো চশমা পরে সবার মাঝ থেকে আড়াল করে রাখতে চায় নিজেকে। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের মধ্যে আশার আলো জ্বেলে দিয়েছে একটি কাসটম মেইড কৃত্রিম চোখ। এই কৃত্রিম চোখের দৃষ্টিশক্তি নেই, কিন্তু এই চোখ রোগীর হতাশা, কষ্ট আর নিঃসঙ্গতাকে মুছে দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দিতে পারে হারানো সৌন্দর্য ও একটি সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন।
তাই একটি সুন্দর ও ব্যক্তিত্বময় জীবনের কামনায় বাংলাদেশে এখন সর্বাধুনিক কাসটম মেইড কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন করা হয়।
যে কারণে কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন:
সময়মতো সঠিক মাপের কৃত্রিম চক্ষু ব্যবহার না করার ফলে চক্ষুকোটর চারপাশের মাংসপেশি দ্বারা সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে সঠিক মাপের কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপনের জন্য তা অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই চক্ষু হারানোর সঙ্গে সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি সঠিক মাপের ও রঙের আসল চোখের মতো দেখতে (অন্য কেউ বুঝতে পারবে না এমন) একটি কৃত্রিম চোখ প্রতিস্থাপন করা উচিত।
সর্বসাধারণের কথা চিন্তা করে রেডিমেড কৃত্রিম চক্ষু বা পাথরের চোখ তৈরি করা হয়। কিন্তু তা আলাদা আলাদা রোগীর চক্ষুকোটরের মাপমতো হয় না এবং কৃত্রিম চোখটি ছোট-বড় হয়ে যায়, যা প্রতিস্থাপন করলে কৃত্রিমই মনে হয়। কিন্তু একটি কাসটম মেইড কৃত্রিম চোখ রোগীর চক্ষুকোটরের মাপ নিয়ে তৈরি হয়, ফলে তা পাশের চোখের সমান। স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে সক্ষম এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।
প্রতিটি ব্যক্তির আইরিশ/চোখের মণির রং এবং সাইজ ভিন্ন, যা রেডিমেড কৃত্রিম চক্ষুতে হয় না। কিন্তু কাসটম মেইড কৃত্রিম চক্ষু ব্যক্তির আসল চোখের মণির রং ও সাইজ সম্পূর্ণভাবে মিলিয়ে তৈরি করা হয়।
কাসটম মেইড কৃত্রিম চক্ষু স্ক্লেরা বা সাদা অংশের রং পাশের চোখের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়, যা ব্যক্তিবিশেষে সাদা, নীলাভ সাদা, লালাভ সাদা, বাদামি বা হলুদাভ হয়ে থাকে। রেডিমেড কৃত্রিম চক্ষু সাধারণত সাদাই হয়।
কাসটম মেড কৃত্রিম চক্ষুতে ক্যাপেলারি বা রক্তজালিকা বিন্যাস পাশের চোখের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিস্থাপন করা হয়, যা রেডিমেড চক্ষুতে তেমন পাওয়া যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বাধুনিক কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন বিষয়ে যেসব চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে তা হলো:
১. কাসটম মেড অকিউলার প্রোসথেসিস কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন:
বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বাধুনিক মানের যে কৃত্রিম চক্ষু পাওয়া যায় তা শুধু নির্দিষ্ট রোগীর চক্ষুকোটরের মাপ নিয়ে আসল চোখের সমান, একই রঙের ও সাইজের আইরিশ বা চোখের মণি, রক্তজালিকা বিন্যাসসহ স্ক্লেরা বা চোখের সাদা অংশের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়। এটা স্বাভাবিক, নড়াচড়া করতে সক্ষম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। জার্মানি অ্যাক্রিলিক ফাইবার দ্বারা তৈরি বলে এটি হালকা ও উন্নতমানের।
২. অরবিটাল প্রোসথেসিস (কৃত্রিম চক্ষু, চোখের পাতা, চোখের পাপড়ি প্রতিস্থাপন):
দুর্ঘটনা বা ক্যানসারের জন্য চোখ, চোখের পাতা, চোখের পাপড়ি, আইভ্রু অপারেশন (এক্সেনটারেশন) করে ফেলে দিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে রোগীর ত্বকের রঙের সঙ্গে মিল রেখে (সিলিকন বেজড) চোখ, চোখের পাতা, পাপড়ি ও আইভ্রু প্রতিস্থাপন করা হয়।
৩. রেলিনেবল চিলড্রেন অকিউলার প্রোসথেসিস: শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চক্ষুকোটরও বড় হয়। তাই শিশুদের কৃত্রিম চক্ষু এমনভাবে তৈরি, যা ক্রমবর্ধমান চক্ষুকোটরের মাপমতো নতুন চক্ষু না বানিয়ে বৃদ্ধি করা যায় বছরান্তে।













ছদ্ম মায়োপিয়া


ক্রিস্টিনা তাঁর ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ছেলেটি লেখাপড়ায় ভালো। ক্লাসে প্রথম হয়। ছেলের নাম রেখেছেন চেতনা। চেতনা পরীক্ষার পড়া ছাড়াও অন্যান্য বই পড়ে। পত্রপত্রিকার প্রতিও রয়েছে তার যথেষ্ট টান।

পরীক্ষা আসার সময় হলে ছেলের মাথাব্যথা বাড়ে। দূরের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। ক্রিস্টিনা ছেলের জন্য টিউটর রেখেছেন। ছেলেকে কোচিং সেন্টারেও দিয়েছেন। পরীক্ষার ঠিক আগে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়। ডাক্তার পরিচিত, চোখের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। প্রতিবারই চেতনাকে গ্লাস বদল করতে হয়। চেতনা চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে চশমা নিয়েছিল। ওই সময় ছেলের লেন্সের পাওয়ার ছিল -০.৫০ ডিএস। সে এখন ক্লাস সেভেনে পড়ছে। ইতিমধ্যে চোখের চশমার পাওয়ার বেড়ে তা দাঁড়িয়ে -৭.

০ ডিএসে। চশমার পাওয়ারের এ ধরনের ক্রমাগত বাড়তিভাব দেখে ক্রিস্টিনা খুব টেনশনে রয়েছেন। স্বামীকে তাঁর দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেনও। স্বামী ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সময় নেই ছেলেকে নিয়ে চিকিত্সকের পরামর্শের জন্য চেম্বারে যাওয়ার। ক্রিস্টিনা সমস্যার কথা বললেই বলেন, ‘চিকিত্সকের কাছে যাও। চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করিয়ে নাও।’

চশমার পাওয়ার বৃদ্ধির পর কয়েক দিন ছেলে ভালো থাকে। দূরের দৃষ্টি বাড়ে। মনের প্রসন্নতায় পড়াশোনাটাও বেড়ে যায়। কিন্তু দিন কয়েকের ভেতর আবার সেই একই সমস্যা। দূরে কিছুই দেখতে পারছে না, মাথাব্যথা হচ্ছে।
কাছে পড়তে গিয়েও চোখ সামান্য সময়ের ভেতর ঝাপসা হয়ে আসে। চশমা বদলের ধারাবাহিকতায় এখন চেতনার চোখের চশমার কাচ বেশ পুরু হয়েছে। চশমার দিকে তাকালেই বোঝা যায়, চোখের পাওয়ার অনেক। ক্রিস্টিনা ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। ছেলের পাওয়ার ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তা কোথায় গিয়ে যে দাঁড়াবে কে জানে? ক্রিস্টিনা শুনেছেন চোখের পাওয়ার ক্রমাগত বেড়ে চোখের রেটিনা নাকি নষ্ট হয়ে যায়, চোখ নাকি অন্ধ হয়ে যায়। ওপরের চিত্রে একজন মায়ের দুশ্চিন্তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে স্কুলগামী কৃতী ছাত্রের ক্রমাগত দৃষ্টি-হ্রাসের চিত্র। এবার দেখা যাক, আসলেই কি চেতনার চোখ দিন দিনই কথিত মাত্রায় খারাপ হয়েছে?



চোখের মাইনাস পাওয়ার
দৃশ্যমান বস্তু থেকে অসংখ্য আলোকরশ্মি আমাদের চোখে আপতিত হয়। এ রশ্মি প্রতিসরিত হয়ে চোখের অভ্যন্তরে রেটিনায় প্রতিবিম্ব তৈরি করে। এই প্রতিবিম্ব দৃষ্টিস্নায়ুর সাহায্যে মস্তিষ্কে প্রেরিত হয়ে দৃশ্যমান বস্তু সম্পর্কে দৃষ্টির অনুভূতি তৈরি করে। এসব আলোকরশ্মি যখন রেটিনার সামনে প্রতিবিম্বিত হয় তখন তা স্বাভাবিক দৃষ্টির অনুভূতি তৈরি করে না। এ ক্ষেত্রে ‘মাইনাস’ লেন্স চোখের চশমায় লাগিয়ে আপতিত রশ্মিকে রেটিনায় ফেলা হলে তা সঠিক অনুভূতি তৈরি করে। মাইনাস লেন্সকে আমরা ‘মাইনাস পাওয়ার’ বলে থাকি। চোখের মাইনাস পাওয়ারের অবস্থানকে ‘মায়োপিয়া’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

ছদ্ম মায়োপিয়া
অনেক সময় স্বল্পমাত্রার চোখের পাওয়ারের অসুবিধা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে চোখ নিজস্ব প্রয়াস চালায়। চোখের অভ্যন্তরে এক ধরনের মাংসপেশি রয়েছে, যা এ ক্ষেত্রে চোখের অভ্যন্তরে লেন্সের আকৃতি পরিবর্তন করে পাওয়ারজনিত সমস্যার নিরসন করে থাকে। চোখের অভ্যন্তরে মাংসপেশির সংকোচন এ কাজটি করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় পেশির সংকোচন দীর্ঘ সময়ব্যাপী ক্রিয়াশীল থাকলে তা চোখ ব্যথাসহ মাথাব্যথার উপসর্গ তৈরি করে। কেবল তাই নয়, তা দেখার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করে। চোখ তখন দূরের জিনিস ঝাপসা দেখতে শুরু করে। এই যে চোখের অভ্যন্তরে পেশির সংকোচনের কারণে সমস্যাটির সৃষ্টি হলো, এটি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণিত স্বল্প পাওয়ারের সমস্যাকে অধিক পাওয়ারের সমস্যায় রূপান্তরিক করে। পেশির অস্বাভাবিক সংকোচন সারিয়ে তুললে এ সমস্যাটি আর থাকে না। এ ক্ষেত্রে চোখের চিকিৎসক যদি তা না করে কেবল পাওয়ারের ত্রুটি নিরসনের জন্য চশমার পাওয়ার বদল করেন তাহলে সমস্যার মূল নিসরন হয় না। সাময়িক উপশমের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নতুন সমস্যা তৈরি হয়। অর্থাত্ চোখের অভ্যন্তরে পেশির সংকোচন মাত্রাকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি এক ধরনের দুষ্টচক্র তৈরি করে। এ রকম ক্ষেত্রে মাইনাস পাওয়ারের অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। এই অবস্থানকে ‘ছদ্ম মায়োপিয়া’ বলা হয়। অনেক সময় এ অবস্থা শিশুদের চোখের একটানা অতিরিক্ত ব্যবহার থেকেও ঘটতে পারে। আমাদের গল্পের ক্রিস্টিনার ছেলে চেতনার ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। চেতনার পাওয়ারের ত্রুটি ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে কম। তার একটানা পড়ার অভ্যাস, চোখের বিশ্রাম না নিয়ে চিকিত্সকের কাছে গিয়ে পাওয়ার বদল তাকে ছদ্ম মায়োপিয়ার রোগীতে পরিণত করেছে।

এ ক্ষেত্রে যা করণীয়
 ছেলেমেয়েদের কাছের কাজ (যথা পড়াশোনা, কম্পিউটার, গেম ইত্যাদি) একটানা বেশি সময় করতে দেওয়া যাবে না।
 পড়াশোনার ফাঁকে চোখের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।
 কম আলোতে পড়াশোনা করা থেকে বিরত রাখতে হবে।
 চোখের চিকিত্সকের কাছে চোখ পরীক্ষার জন্য নেওয়ার আগে চোখের বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।
 বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরও উচিত, রোগীকে সময় দিয়ে উপসর্গ শোনা ও চোখ পরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া।
চোখে ঠিকমতো দেখতে না পাওয়া

বস্তু থেকে সমান্তরাল আলোক রশ্মি চোখের কর্ণিয়া বা কালো রাজার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বেঁকে যায় এবং চোখের লেন্সের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় দ্বিতীয় বার বেঁকে চোখের রেটিনায় বস্তুর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে বিধায় আমরা ওই বস্তুটি দেখতে পাই। আলোক রশ্মির এই পথ যদি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে যে কোন গঠনগত পরিবর্তন বা কোন রোগ যদি না থাকে সে ক্ষেত্রে চশমা দিয়ে সে দৃষ্টির উন্নয়ন সম্ভব। তখন সেটাকে রিফ্রাকটিভ ইয়ব বা পাওয়ার জনিত দৃষ্টি স্বল্পতা বলা হয়। এটি সাধারণত চার ধরনের হয় মায়োপিয়া (ক্ষীণদৃষ্টি), হাইপারোপিয়া (দূরদৃষ্টি), প্রেসবায়োপিয়া বা চালশে এবং অ্যাসটিগমেটিজম।

মায়োপিয়াঃ এ ধরনের রোগীরা কাছে মোটামুটি ভাল দেখতে পারলেও দূরে ঝাপসা দেখে, তাই এদের ঋীণদৃষ্টি বলা হয়। অবতল লেন্স বা মাইনাস পাওয়ারের চশমা পড়লে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। যাদের চোখে ছয় ডায়াপটারের বেশী মাইনাস পাওয়ারের লেন্স লাগে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের পাওয়ার ও বাড়তে থাকে তখন তাকে প্যাথলজিকাল মায়োপিয়া বলা হয়। সেক্ষেত্রে চোখের দেয়াল বা স্ক্লেরা পাতলা হয়ে যায় এবং রেটিনাতে ছিদ্র সৃষ্টি হয়ে পরবর্তীতে রেটিনা আলাদা হয়ে গিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। মায়োপিয়াতে চোখের আকার বড় হওয়া কারণে চোখের দেয়াল পাতলা হয়ে যায়। সেজন্য সামান্য আঘাতেই চোখে অনেক মারত্বক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং মায়োপিয়া রোগীদের সবসময় চোখের আঘাত থেকে সাবধান থাকতে হবে এবং নিয়মিতভাবে ডাক্তারের পরামর্শে চোখের পাওয়ার পরীক্ষা এবং রেটিনার পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল।

হাইপারোপিয়াঃ এ ধরনের রোগীরা দূরে এবং কাছের উভয় দিকেই ঝাপসা দেখে এবং অফিসিয়াল কাজ করার সময় রোগীর চোখের উপর চাপ পড়ার কারণে মাথা ব্যাথার অনুভূতি হয়। স্বাভাবিক চোখের চেয়ে একটু ছোট থাকে, যদিও ওটা বোঝা যায়না। উত্তল বা প্লাস লেন্সের চশমা ব্যবহার করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।

অ্যাসটিগ ম্যাটিসমঃ এটি এক ধরনের দৃষ্টি স্বল্পতা, যাতে রুগীর কর্ণিয়ার সে কোন একদিকে (লম্বদিকে, প্রস্থে অথবা কোণাকোনি) পাওয়ার পরিবর্তন হয় বলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। এর কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, একটি জিনিসকে দুইটি দেখা এবং মাথা ব্যাথা হতে পারে। সিলিন্ডার লেন্স ব্যবহারে এ সমস্যার সমাধান হয়।

প্রেসবায়োপিয়াঃ এতে বয়সজনিত চোখের গঠনগত পরিবর্তনের কারণে চোখের লেন্সের ইলাসটিসিটি বা স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়, ফলে লেন্সের প্রয়োজনে (বিশেষ করে কাছের জিনিস দেখার জন্য) আকার পরিবর্তন করার ক্ষমতা কমে যায় এবং কাছের জিনিস ঝাপসা দেখায়। চল্লিশ বছরের পর এ সমস্যা দেখা যায় বলে একে চালসে রোগ বলা হয়। শুধু কাছের জিনিস দেখার জন্য (বিশেষ করে পড়াশুনার জন্য) উত্তল বা প্লাস লেন্স ব্যবহার করলে এ সমস্যার সমাধান হয়। বয়স বড়ার সাথে সাথে চশমার পাওয়ার ও পরিবর্তন হয়।

চিকিৎসা

০ ডাক্তারের পরামর্শে রোগের ধরণ অনুযায়ী পাওয়ার চেক করে চশমা ব্যবহার করা যেতে পারে।

০ চশমা যারা পড়তে চায়না, তারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার বিধি একটু জটিল বিধায় অনেকের পক্ষে ব্যবহার করা হয়ে ওঠেনা।

০ বর্তমানে লেজসার সার্জারীর মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। এক্সাইমার লেজসার ব্যবহার করে চোখের পাওয়ার পরিবর্তন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। একে ল্যাসিক রিক্সাকটিভ সার্জারী বলা হয়। এর মাধ্যমে ১২ ডায়াপটার পর্যন্ত মায়োপিয়া, ৫ ডায়াপটার পর্যন্ত অ্যাসটিকমেটিসম এবং ৪ ডায়াপটার পর্যন্ত হাইপারোপিয়ার চিকিৎসা সম্ভব। সবছেয়ে বড় সুবিধা হল, ল্যাসিক করার পর সাধারণত চশমা অথবা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েনা।

মনে রাখতে হবে

০ বাচ্চাদের দৃষ্টি স্বল্পতার তড়িৎ চিকিৎসা প্রয়োজন, না হয় অলস চোখের কারণে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যেতে পারে।

০ কাছ থেকে সে সব শিশু টেলিভিশন দেখে অথবা টেলিভিশন দেখার সময় চোখ টেরা হয়ে যায় এবং চোখ থেকে পানি পড়ে, তাদের তাড়াতাড়ি চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল।

০ মাথা ব্যাথা চোখের পাওয়ার পরিবর্তনের লক্ষণ, সুতরাং মাথা ব্যাথা হলে একবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল।

০ ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রন না থাকলে চশমা ব্যবহার করে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়না, কারণ এতে ঘন ঘন চোখের পাওয়ার পরিবর্তন হয়।

০ যারা নতুন নতুন চশমা ব্যবহার শুরু করবেন তাদের চশমাতে অভ্যস্ত হতে ১০-১৫ দিন সময় লেগে যায়, এ সময়ে চশমা ব্যবহার অস্বস্থি লাগলেও এটি ব্যবহার বন্ধ করা ঠিক নয়।

০ যারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চান, তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার বিধি মেনে ব্যবহার করবেন।

০ সব রুগীরা সবসময় ল্যাসিক করা সম্ভব হয়না, ডাক্তারের পরামর্শে ল্যাসিক সেন্টারে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চোখ ল্যাসিক যোগ্য হলেই একমাত্র ল্যাসিক সার্জারী করা হয়।
বাতব্যথায় চোখের সমস্যা

বাতরোগ হল হাঁড় এবং মাংসপেশী সম্পর্কিত। এর সাথে আবার চোখের সম্পর্ক কোথায়? ভাবতেই অবাক লাগছে তাই না? শরীরের এমন অনেক রোগ আছে যাতে চোখের সমস্যাও একটা প্রধান ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

যেসব বাতরোগে চোখের সমস্যা হয়ঃ

রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস-এতে সাধারণত হাড় এবং পায়ের ছোট জয়েন্টে প্রদাহ হয়, তার সাথে চোখের শুষ্কতা, স্ক্লেরাইটিস (চোখের সাদা অংশের প্রদাহ), কেরাটাইটিস (চোখের কর্ণিয়ার প্রদাহ) ইত্যাদি হতে পারে।

জুভেনাইল আরথ্রাইটিস হাঁটু এবং পায়ের গোড়ালিসহ ছোট বড় বিভিন্ন জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টিকারী এই রোগ সাধারণত ১৬ বছরের কম ছেলে-মেয়েদের বেশি হয়। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখে ব্যথাযুক্ত প্রদাহ বা ইউভাইটিস হতে পারে।

এনকাইলোসিং স্পনডাইলাইটিস- মাজায় ব্যথা এবং প্রদাহ সৃষ্টিকারী এই রোগে শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে চোখের সমস্যা হতে পারে। এতে চোখে ইউভাইটিস এবং স্ক্লেরাইটিস হতে পারে।

রিটার সিনড্রম- এই রোগে হাঁটু, পায়ের গোড়ালি, পায়ের আঙ্গুল ইত্যাদি অংশ হঠাৎ করে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। সাথে সাথে চোখের কনজাংকটিভা, সাদা স্কেরা, কর্ণিয়া, ইউভিয়া, দৃষ্টি স্নায়ু এমনকি রেটিনাতেও প্রদাহ হতে পারে।

চোখের সমস্যা কিভাবে বুঝবেন?

শুষ্ক চোখ- চোখে জ্বালাপোড়া, কচকচ করা, ময়লা জমা, চোখের পানি কমে যাওয়া ইত্যাদি চোখের শুষ্কতার লক্ষণ।

কর্ণিয়া ঘা- বাতরোগের সাথে সাথে কোন কোন ক্ষেত্রে চোখের কালোরাজাতে ঘা হতে পারে। চোখে ব্যথা হওয়া, পানি পড়া, আলোতে চোখ খুলতে না পারা ইত্যাদি কর্ণিয়া ঘা-এর লক্ষণ।

স্কেরাইটিস- চোখের সাদা অংশ হঠাৎ করে লাল হওয়া, প্রচন্ড ব্যথা করা, চোখ নাড়াতে অসুবিধা হওয়া এই রোগের লক্ষণ। বাতের ব্যথার সাথে সাথে আক্রান্ত চোখেও ব্যথা শুরু হয়।

ইউভাইটিস- চোখের ভেতরে রক্তনালী পূর্ণ স্তরের প্রদাহকে ইউভাইটিস বলা হয়। বাতরোগের সাথে সবচেয়ে কমন চোখের রোগ এটি। দুই চোখে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া, চোখে লাল হওয়া, আলো সহ্য করতে না পারা ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। এই রোগের কারণে কর্ণিয়ার পেছনে পূঁজ জমে এবং চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

করণীয় প্রথমত ডাক্তারের পরামর্শে বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন রক্ত পরীক্ষা, জয়েন্ট এক্সরে করার মাধ্যমে বাতরোগের ধরন সনাক্ত করতে হবে। তারপর সেই রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে। ডাক্তার সাধারণত ব্যথার ওষুধ ছাড়াও বিভিন্ন ডিজিজ মডিফাইং ওষুধ, ইমুনোসাপ্রেসর ওষুধ ইত্যাদি সেবনের পরামর্শ দেন। নিয়মিত এসব ওষুধ সেবনে রুগী অনেক আরামবোধ করেন। ডাক্তারের পরামর্শে কিছু প্রয়োজনীয় ব্যায়াম করা যেতে পারে।

বাতরোগ বাড়ার সাথে সাথে চোখে সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। সময়মত চিকিৎসা শুরু করা না গেলে চোখের প্রদাহের কারণে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাধারণত একসাথে দুই চোখ, আবার একটির পর আরেকটি আক্রান্ত হতে পারে। বাতরোগের চিকিৎসার সাথে সাথে আক্রান্ত চোখের চিকিৎসা জরুরি।

এট্টোপিন আই ড্রপ কর্ণিয়ার ঘা এবং ইউভাইটিস দুইটি রোগের কার্যকরী। স্টেরইড ড্রপ-এর নিয়মতান্ত্রিক ব্যবহারে চোখের প্রদাহ অনেকাংশে কমে আসে। চোখের চাপ বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিগস্নুকোমা ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। চোখের প্রদাহের কারণে লেন্সে ছানি পড়তে পারে। এতে দৃষ্টি কমে যেতে পারে। আইড্রপ ব্যবহার করে চোখের প্রদাহ কমলে ছানি অপসারণ এবং কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি অনেকাংশে ফিরে পাওয়া সম্ভব। বাতরোগের চিকিৎসায় যারা অনেকদিন ধরে স্টেরইড সেবন করেন তাদের চোখে ছানি এবং গস্নুকোমা রোগ হতে পারে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত অনিয়ন্ত্রিত স্টেরইড সেবন করা উচিত নয়।

ছানি অপারেশনঃ কৃত্রিম লেন্সের দাম ও কার্যকারিতা


হালিমা খাতুন (ছদ্মনাম) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পঞ্চাশের ওপর বয়স। এ বয়সেই তাঁর চোখে ছানি পড়েছে। ফলে ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারেন না। তিনি জেনেছেন ছানি রোগের ভালো চিকিৎসা হচ্ছে আজকাল। আগের মতো আর অপারেশনের পর দুই দিন সটান শুইয়ে রাখা হয় না। এরপর মাস দেড়েক পর মোটা কাচের চশমা ব্যবহার করতেও হয় না। আগে হাজার পাওয়ারের ওপরে, ওই চশমা হারিয়ে গেলে নতুন চশমা না নেওয়া অবধি অচল থাকতে হতো। আজকাল আর এসব নেই। চোখে অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করা হয়। ফলে রোগী অস্ত্রোপচার সম্পন্নের দিন থেকেই দেখতে শুরু করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক দিনের মতো চোখ ঢেকে রাখা হয়, পরের দিন থেকেই দৃষ্টি লাভ! কৃত্রিম লেন্স সংযোজনের দরুন পুরোপুরি দৃষ্টিপ্রাপ্তি সম্ভব। অর্থাৎ তরুণ বয়সের দৃষ্টিশক্তির মতোই দৃষ্টিশক্তি পাওয়া যায়। হালিমা খাতুন এসব জেনেই এসেছেন ছানির অপারেশন করাতে।

হালিমা খাতুন যথারীতি হাসপাতালে ভর্তি হন। অপারেশনের আগের দিন তাঁর চোখের লেন্সের পাওয়ারের মাপ নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে তিনি জেনেছেন, চোখে যে লেন্স সংযোজন করা হয় তা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। লেন্সের প্রকারভেদে মূল্য ২০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। হালিমা বাড়ি থেকে যে টাকা নিয়ে এসেছেন, তাতে ১৫ হাজার টাকার লেন্স সংযোজন সম্ভব নয়। সাধারণভাবেই তাঁর ধারণা, ১৫ হাজার টাকার লেন্স নিশ্চয়ই ২০০ টাকার লেন্সের চেয়ে অনেক ভালো।

তাঁর মনে দ্বিধা জন্মায়। একবার ভাবেন এযাত্রায় অস্ত্রোপচার না করিয়ে বাড়ি গিয়ে ধারদেনা করে টাকা নিয়ে এসে ওই ১৫ হাজার টাকার লেন্সই চোখে লাগাবেন। আবার ভাবেন, বেতনের টাকার বাইরে তেমন তো তাঁর আয় নেই! ধার করা টাকা পরিশোধ করতে বেতনের টাকায় বেশ কমাস লাগবে। কাজেই প্রয়োজন কী? তিনি তাঁর চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। চিকিৎসক জানান, চোখের ভেতর ঠিকমতো পৌঁছতে পারলে ১৫ হাজার টাকার লেন্স যা করবে, ২০০ টাকার লেন্স তা-ই করবে।
ওপরের ঘটনাটি থেকে বোঝা যায় যে রোগীরা আধুনিক চিকিৎসালয়ে এসে এক ধরনের বিভ্রান্তির শিকার হন। লেন্সের মূল্যের তারতম্যে এ বিভ্রান্তি আসাটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ বিদেশি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জিনিসের প্রতি দুর্বল। যুক্তরাষ্ট্রের লেন্স নিশ্চয়ই ভারতের লেন্সের চেয়ে ভালো! কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের লেন্স লাগাবেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত অনেক সময় নিয়ে ফেলেন রোগীরা।

এ ক্ষেত্রে লেন্স সম্পর্কে রোগীদের মনে সৃষ্ট এ বিভ্রান্তি নিরসনে চিকিৎসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকেরই দায়িত্ব হলো রোগীকে বুঝিয়ে বলা যে লেন্সের মূল্যের তারতম্য লেন্সের কার্যকারিতায় তেমন কোনো ভূমিকা পালন করে না। ২০০ টাকার ভারতীয় লেন্সের সঙ্গে দুই হাজার ২০০ টাকার যুক্তরাষ্ট্রের লেন্সের কার্যকারিতায় কোনো তফাত নেই। লেন্স সংযোজনে কোনো অসুবিধা না হলে উভয় ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের দৃষ্টিশক্তি লাভ করা যায়। তবে লেন্স পছন্দের ক্ষেত্রে রোগীর পছন্দের স্বাধীনতা অবশ্যই থাকা দরকার।

এবার আবার হালিমা খাতুনের প্রসঙ্গে আসি। হালিমা খাতুন চিকিৎসকের মন্তব্য শুনে কিছুটা আশঙ্কামুক্ত হন। তিনি তাঁর নিয়ে আসা টাকায়ই অস্ত্রোপচারের যাবতীয় খরচ নিষ্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরও তাঁর মনে একরকম খুঁত থাকে-নিশ্চয়ই ১৫ হাজার টাকার লেন্সটা হয়তো ভালো। তাঁর পাশের শয্যার ব্যবসায়ী সন্তানের মাকে ওই লেন্স লাগানো হবে। আবার তাঁর অদূরে এক পোশাকশ্রমিকের মায়ের চোখে লাগানো হবে ২০০ টাকার লেন্স।

একই দিনে তাঁদের সবার চোখে লেন্স সংযোজন হয়। একই সার্জন তা করেন। পরের দিন অস্ত্রোপচারকৃত সব রোগীর চক্ষু পরীক্ষার কক্ষে নিয়ে আসা হয়। তালিকা দেখিয়ে রোগীদের দৃষ্টি মাপা হয়। হালিমা দেখলেন তাঁর দৃষ্টি, তাঁর পাশের ব্যবসায়ীর মায়ের দৃষ্টি ও পোশাকশ্রমিকের মায়ের দৃষ্টিতে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ ১৫ হাজার টাকা, দুই হাজার ২০০ টাকা, ২০০ টাকার লেন্সের কার্যকারিতা একই স্তরের।

এবার হালিমা খাতুনের মনে আর দ্বন্দ্ব নেই। তিনি ছুটির কাগজপত্র নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হন। সঙ্গে নিয়ে যান কৃত্রিম লেন্স সম্পর্কে এক রকম ধারণা। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর পরিচিত ছানি রোগীদের এ বার্তাটাই দেবেন যে লেন্সের কার্যকারিতায় দামের পার্থক্যের তেমন কোনো ভূমিকা নেই

শিশুর চোখের সমস্যা


আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। ভবিষ্যত এই প্রজন্মের সুস্থতার উপর দেশ ও দশের এগিয়ে যাওয়া অনেকাংশে নির্ভরশীল। শারীরিক ও মানষিক সুস্থতার পাশাপাশি চোখের সুস্থতাও সমান গুরুত্ব বহন করে।

গুরুত্বঃ দৃষ্টিহীন শিশুকে অন্যের উপর নির্ভর করে সারাজীবন কাটাতে হয়। এতে দেশ দুই জন মানুষের পূর্ণাঙ্গ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়াও পর নির্ভরশীলতার কারণে শিশু মানষিকভাবেও বির্পযস্ত হয়ে পড়ে।

দৃষ্টিস্বল্পতার কারণ: জন্মগত ছানি পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা কর্ণিয়ার ঘা চোখে আঘাত চোখের ক্যান্সার (রেটিনোব্লাস্টমা) চোখের প্রদাহ (ইউভাইটিস) শিশুর চোখের অন্যান্য সমস্যাগুলোর মধ্যে চোখের চুলকানী বা অ্যালার্জী এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া অন্যতম।

ছানিঃ জন্মের পর পর বা কিছুদিন পর এক বা উভয় চোখে সাদা আস্তর দেখা যাওয়া ছানিরোগের লক্ষণ। ডেলিভারীর সময় চোখে আঘাতের কারণে, গর্ভকালীন মায়ের রুবেলা জ্বর, বিভিন্ন ওষুধ সেবন এবং বংশগত কারণে শিশুর চোখের ছানি পড়তে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করে পরবর্তীতে সময়মত কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। অপারেশনের বিলম্বের কারণে চিরতরে শিশু দৃষ্টি হারাতে পারে।

পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা: ঘনঘন চোখ নড়াচড়া করা, চোখ বেঁকে যাওয়া, বস্তু অনুসরণ না করতে পারা, ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, কাছে গিয়ে টেলিভিশন দেখা, মাথাব্যাথা করা ইত্যাদি দৃষ্টিস্বল্পতা লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চশমা ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্ণিয়ার ঘা: অপুষ্টি জনিত কারণে ভিটামিন এর অভাবে দুই চোখে ঘা হতে পারে। এছাড়াও ডেলিভারীর সময়ে চোখে আঘাতের কারণে এবং জন্মের পরে যে কোন সময়ে জীবানু সংক্রমনের কারণে চোখে ঘা হতে পারে। চোখে ব্যথা, আলোতে চোখ খুলতে না পারা, চোখ লাল হওয়া, কালোমনিতে সাদা দাগ পড়া এ রোগের লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শে চোখের জীবানু পরীক্ষা করে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব।

চোখের ক্যান্সারঃ বিড়ালের চোখের মত চোখ জ্বল জ্বল করা, চোখ লাল হওয়া এই রোগের লক্ষণ, চোখে ব্যথা হওয়া, চোখ বেঁকে যাওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি চোখের ক্যান্সার বা রেটিনোব্লাসটোয়ার লক্ষণ। এই সব লক্ষণ দেখামাত্র দেরী না করে চক্ষু বিশেজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। চোখের ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়লে জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

চোখের এলার্জী :ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, চোখ কচলানো, চোখ লাল হওয়া, শুষ্ক মৌসুমে এই রোগ রোগ বেশী দেখা যায়। বছরে ২/৩ বার চোখে অযালার্জী হতে পারে। ধুলাবালি, ধুঁয়া, বিভিন্ন খাবার এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থে শরীরে এবং চোখে অযালার্জী হতে পারে।

চোখ দিয়ে পানি পড়া: জন্মগতভাবে চোখের পানি সরে যাবার নেত্রনালী বন্ধ থাকলে চোখের পানি উপচে পড়ে। এতে চিন্তিত হবার কিছু নাই। ১-২ বছরের মধ্যে বন্ধনালী আপনাতেই খুলে গেলে চোখের পানি পড়া অনেকাংশে কমে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চোখের কোণায় মালিশ করা এবং চোখে ড্রপ ব্যবহারে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। পরিশেষে বলতে হয়, শিশুরা অনেক কিছু বলে বোঝাতে পারেনা। ফলে তাদের সমস্যাগুলো অপ্রকাশ্যই থেকে যায়। এ সকল সমস্যা শেষ পর্যন্ত শিশুর অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং শিশুর দৃষ্টি অধিকার রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।





















চোখের সমস্যা – চোখ খুব চুলকায়


সমস্যা: আমার বয়স ২০ বছর। পাঁচ বছর হলো চোখের সমস্যায় ভুগছি। সমস্যা হলো, চোখ খুব চুলকায়। এই সমস্যা চোখের পাতা এবং চোখের নিচে। চোখের পাতা ফুলে গেছে এবং লাল হয়ে গেছে। চোখ ব্যথা করে এবং সব সময় জ্বর থাকে। বিশেষ করে কপালটা বেশি গরম থাকে।
চোখটা কোটরের মধ্যে বসে গেছে। ডাক্তার দেখিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি। বেটাসন-এন মেথাসন-এন এবং সোনেক্সা ব্যবহার করে কাজ হয়নি। দেখতে কোনো অসুবিধা নেই। উল্লেখ্য, ১৫-১৬টি দাঁত ডাক্তার দিয়ে তোলা হয়েছে।
ইমরান
কুষ্টিয়া

সমাধান: আপনার সমস্যাটা চোখের পাতার রোগ হতে পারে, যেমন ব্লেফারাইটিস। চোখের পাতায় পাপড়ির গোড়ায় খুশকিজাতীয় ছোট ছোট সাদা জিনিস জমে। এর জন্য চোখ খুবই চুলকায়। এর সঙ্গে মাথায়ও খুশকি থাকতে পারে। নখ দিয়ে চুলকানোর ফলে চোখের পাতার পাপড়ির গোড়ার চামড়া উঠে যায়, পাতা ফুলে যায়, লাল হয় এবং ব্যথাও হয়। পরবর্তী সময়ে পাপড়ির গোড়ায় ঘাও হতে পারে। তবে এর সঙ্গে জ্বরের ও দাঁত তোলার কোনো সম্পর্ক নেই।
কোনো সময়ই নখ দিয়ে চোখের পাতা চুলকানো যাবে না। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে খুব ভালো করে চোখের পাতার গোড়া পরিষ্কার করতে হবে।
এ ছাড়া অ্যালার্জিজনিত কারণেও চোখ চুলকাতে পারে। চোখ চুলকানোর জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট খেতে পারেন। অবশ্যই চক্ষুবিশেষজ্ঞ দেখিয়ে পরামর্শ মেনে চলা উচিত।


চোখ উঠলেই আঁতকে ওঠা নয়


চোখ ওঠা রোগকে চিকিৎসাশাস্ত্রে কনজাংটিভাইটিস বা পিংক আই বলে। রোগটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। কখনো কখনো রোগটি ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি কিংবা কেমিক্যালের কারণেও হতে পারে।

এটা এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির ধরা বস্তু ও পানির মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পাড়ে।

প্রধান উপসর্গের মধ্যে চোখ লাল হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং চোখের কোণে ময়লা জমা উল্লেখযোগ্য।

অ্যালার্জিজনিত কারণে চোখ উঠলে প্রধান চিকিৎসা হলো চোখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো নন-স্টেরয়েড অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ অথবা অ্যান্টি হিস্টামিন দেওয়া যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে চোখ উঠলে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়। আর যদি রোগটি তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় অ্যান্টিবায়োটিক চোখের ড্রপ অথবা মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। ভাইরাসজনিত কারণে চোখ ওঠার নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এ ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি এবং কৃত্রিম চোখের পানি দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

কেমিক্যালের কারণে চোখ ওঠার ক্ষেত্রে রিঙ্গার ল্যাকটেট অথবা স্যালাইন পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। কোন কারণে চোখ উঠেছে নিশ্চিত হতে হলে করতে হবে সোয়াব কালচার পরীক্ষা। প্রায় ৬৫ ভাগ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই চোখ ওঠা ভালো হয়ে যায়। এবং রোগটি স্থায়ী হতে পারে দুই থেকে পাঁচ দিন। তাই এই রোগ নিয়ে সত্যিই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।








চোখ উঠলেই আঁতকে ওঠা নয়


চোখ ওঠা রোগকে চিকিৎসাশাস্ত্রে কনজাংটিভাইটিস বা পিংক আই বলে। রোগটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। কখনো কখনো রোগটি ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি কিংবা কেমিক্যালের কারণেও হতে পারে।

এটা এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির ধরা বস্তু ও পানির মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পাড়ে।

প্রধান উপসর্গের মধ্যে চোখ লাল হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং চোখের কোণে ময়লা জমা উল্লেখযোগ্য।

অ্যালার্জিজনিত কারণে চোখ উঠলে প্রধান চিকিৎসা হলো চোখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো নন-স্টেরয়েড অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ অথবা অ্যান্টি হিস্টামিন দেওয়া যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে চোখ উঠলে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়। আর যদি রোগটি তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় অ্যান্টিবায়োটিক চোখের ড্রপ অথবা মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। ভাইরাসজনিত কারণে চোখ ওঠার নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এ ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি এবং কৃত্রিম চোখের পানি দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

কেমিক্যালের কারণে চোখ ওঠার ক্ষেত্রে রিঙ্গার ল্যাকটেট অথবা স্যালাইন পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। কোন কারণে চোখ উঠেছে নিশ্চিত হতে হলে করতে হবে সোয়াব কালচার পরীক্ষা। প্রায় ৬৫ ভাগ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই চোখ ওঠা ভালো হয়ে যায়। এবং রোগটি স্থায়ী হতে পারে দুই থেকে পাঁচ দিন। তাই এই রোগ নিয়ে সত্যিই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।



চোখের জ্বালাপোড়ায় করণীয়

কারণ কী?
 চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া
 চোখের অ্যালার্জি
 বাতরোগ
 চোখের পাপড়ির গোড়ায় প্রদাহ
 চোখের অপারেশন
 ঘুমের সময় চোখ বন্ধ না হওয়া
 চোখের কালো মণিতে ভাইরাস সংক্রামণ
 কালো ধোঁয়া, ধুলোবালি চোখে পড়লে
 চোখে রাসায়নিক পড়লে। যেমন—চুন, এসিড ইত্যাদি
 চোখে ওষুধের রিঅ্যাকশন হলে (স্টিভেন জনসন সিনড্রোম)
 চোখের ড্রপ ব্যবহারেও প্রাথমিক অবস্থায় চোখ জ্বলতে পারে।

করণীয়
 রাস্তাঘাটের কালো ধোঁয়া ও ধুলোবালি থেকে চোখ রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
 চোখের পানি কমে গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চোখে কৃত্রিম চোখের পানি ড্রপ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
 পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণ যেমন—বাতরোগ, শোগ্রেন সিনড্রোম ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করাতে হবে।
 সালফার-জাতীয় ওষুধে যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদের তা বর্জন করতে হবে।
 চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের অ্যালার্জি এবং কর্নিয়ায় ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা করাতে হবে।
 চোখ বেশিক্ষণ বন্ধ রাখলে অনেক ক্ষেত্রে চোখের জ্বালা কমে। সে জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।
 চোখে কেমিক্যাল পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চোখে বেশি করে পানি দিয়ে অনেক সময় ধরে ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
 চোখে ড্রপ দেওয়ার কারণে চোখ জ্বললে ভয় পাবেন না। আস্তে আস্তে কমে যাবে। মূল রোগের চিকিৎসা বন্ধ করবেন না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।












শিশুর চোখের সমস্যা

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। ভবিষ্যত এই প্রজন্মের সুস্থতার উপর দেশ ও দশের এগিয়ে যাওয়া অনেকাংশে নির্ভরশীল। শারীরিক ও মানষিক সুস্থতার পাশাপাশি চোখের সুস্থতাও সমান গুরুত্ব বহন করে।

গুরুত্বঃ দৃষ্টিহীন শিশুকে অন্যের উপর নির্ভর করে সারাজীবন কাটাতে হয়। এতে দেশ দুই জন মানুষের পূর্ণাঙ্গ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়াও পর নির্ভরশীলতার কারণে শিশু মানষিকভাবেও বির্পযস্ত হয়ে পড়ে।

দৃষ্টিস্বল্পতার কারণ: জন্মগত ছানি পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা কর্ণিয়ার ঘা চোখে আঘাত চোখের ক্যান্সার (রেটিনোব্লাস্টমা) চোখের প্রদাহ (ইউভাইটিস) শিশুর চোখের অন্যান্য সমস্যাগুলোর মধ্যে চোখের চুলকানী বা অ্যালার্জী এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া অন্যতম।

ছানিঃ জন্মের পর পর বা কিছুদিন পর এক বা উভয় চোখে সাদা আস্তর দেখা যাওয়া ছানিরোগের লক্ষণ। ডেলিভারীর সময় চোখে আঘাতের কারণে, গর্ভকালীন মায়ের রুবেলা জ্বর, বিভিন্ন ওষুধ সেবন এবং বংশগত কারণে শিশুর চোখের ছানি পড়তে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করে পরবর্তীতে সময়মত কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। অপারেশনের বিলম্বের কারণে চিরতরে শিশু দৃষ্টি হারাতে পারে।

পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা: ঘনঘন চোখ নড়াচড়া করা, চোখ বেঁকে যাওয়া, বস্তু অনুসরণ না করতে পারা, ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, কাছে গিয়ে টেলিভিশন দেখা, মাথাব্যাথা করা ইত্যাদি দৃষ্টিস্বল্পতা লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চশমা ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্ণিয়ার ঘা: অপুষ্টি জনিত কারণে ভিটামিন এর অভাবে দুই চোখে ঘা হতে পারে। এছাড়াও ডেলিভারীর সময়ে চোখে আঘাতের কারণে এবং জন্মের পরে যে কোন সময়ে জীবানু সংক্রমনের কারণে চোখে ঘা হতে পারে। চোখে ব্যথা, আলোতে চোখ খুলতে না পারা, চোখ লাল হওয়া, কালোমনিতে সাদা দাগ পড়া এ রোগের লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শে চোখের জীবানু পরীক্ষা করে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব।

চোখের ক্যান্সারঃ বিড়ালের চোখের মত চোখ জ্বল জ্বল করা, চোখ লাল হওয়া এই রোগের লক্ষণ, চোখে ব্যথা হওয়া, চোখ বেঁকে যাওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি চোখের ক্যান্সার বা রেটিনোব্লাসটোয়ার লক্ষণ। এই সব লক্ষণ দেখামাত্র দেরী না করে চক্ষু বিশেজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। চোখের ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়লে জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

চোখের এলার্জী :ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, চোখ কচলানো, চোখ লাল হওয়া, শুষ্ক মৌসুমে এই রোগ রোগ বেশী দেখা যায়। বছরে ২/৩ বার চোখে অযালার্জী হতে পারে। ধুলাবালি, ধুঁয়া, বিভিন্ন খাবার এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থে শরীরে এবং চোখে অযালার্জী হতে পারে।

চোখ দিয়ে পানি পড়া: জন্মগতভাবে চোখের পানি সরে যাবার নেত্রনালী বন্ধ থাকলে চোখের পানি উপচে পড়ে। এতে চিন্তিত হবার কিছু নাই। ১-২ বছরের মধ্যে বন্ধনালী আপনাতেই খুলে গেলে চোখের পানি পড়া অনেকাংশে কমে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চোখের কোণায় মালিশ করা এবং চোখে ড্রপ ব্যবহারে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। পরিশেষে বলতে হয়, শিশুরা অনেক কিছু বলে বোঝাতে পারেনা। ফলে তাদের সমস্যাগুলো অপ্রকাশ্যই থেকে যায়। এ সকল সমস্যা শেষ পর্যন্ত শিশুর অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং শিশুর দৃষ্টি অধিকার রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply