এসডিজি’র ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পৃথক পদক্ষেপ গ্রহণ
জাতিসংঘ ঘোষিত ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গঠনের লক্ষ্যে ১৭টি মূল লক্ষ্য ও চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পৃথক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে তাদের এই ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রতিবছরই জাতীয় অগ্রগতি প্রতিবেদনের সাথে আলাদাভাবে দাখিল করতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের ব্যাপারে একটি কৌশলপত্রের খসড়া পরিকল্পনা অনুমোদনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত করেছে ।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ১০০ কোটি দরিদ্র মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে এসডিজির এই ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতিসংঘের এই লক্ষ্য বাস্তাবায়ন করে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে একটি উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জন করা হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর এ সম্পর্কে বাসসকে জানান, এসডিজি বাস্তবায়নের ১৭টির মধ্যে ৬ নং লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় লীড মন্ত্রণালয় হিসেবে কাজ করবে। ইতোমধ্যে এই মন্ত্রণালয় ৫াট সংস্থার আওতায় ৬ নং লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে ৬টি সাব গ্রুপ গঠন করেছে। এ ৬টি সাব গ্রুপ এসডিজি বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে কর্মশালাও করেছে। এসডিজি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত কৌশলপত্র অনুমোদিত হওয়ার পর সকল মন্ত্রণালয় স্বউদ্যোগে কাজ করতে পারবে বলে তিনি জানান।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম বাসসকে জানান, এসডিজির ৭টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই মন্ত্রণালয় সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। এসডিজি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত কৌশলপত্র অনুমোদিত হওয়ার পর তা বাস্তবায়নের জন্য এই মন্ত্রণালয় কীভাবে কাজ করবে তা ঠিক করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের উপপ্রধান জাকির হোসেন বাসসকে বলেন, এসডিজির ৮ নং লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে লীড মন্ত্রণালয় হিসেবে এই মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এই মন্ত্রণালয় কর্মপন্থা নির্ধারনে ইতোমধ্যে একটি কর্মশালা করেছে। খুব শিগগিরই আরো একটি কর্মশালার মাধ্যমে আমাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে। তবে এসডিজির ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রা কর্মকৌশল চূড়ান্ত অনুমোদন হলেই মন্ত্রণালয়গুলো কাজ করতে পারবে বলে তিনি জানান।
এদিকে, সহস্্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি)’র ৮টি মূল লক্ষ্য গত ১৫ বছরে অর্জন না হওয়ায় এই ১০০ কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে করণীয় পদক্ষেপকে প্রাধান্য দিয়ে এসডিজি প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে এই ১০০ কোটি মানুষের দৈনিক আয় গড়ে ১ দশমিক ২৫ ডলার।
২০১৫ সালের আগস্টে জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের ৭০ টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে ১০০ টি দেশের সাথে মুখোমুখি বসে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ ওয়ার্ল্ড জরিপের মাধ্যমে এই ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করেছে বলে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ উপদেষ্টা আমিনা মোহাম্মেদ তার এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেন।
এতে তিনি আরো বলেন, এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে প্রতিনিধিদের তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, সুশাসন, শান্তি ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়গুলো যাতে বাদ না যায় তার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। এমডিজিতে মানবাধিকার বিষয়ে কোন উল্লেখ ছিল না এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টিও ছিল অস্পষ্ট। কিন্তু এসডিজিতে সকল বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এসডিজির মোট ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধামুক্তি, সুস্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, ব্যয়সাধ্য ও টেকসই জ্বালানি, সবার জন্য ভালো কর্মসংস্থান, উদ্ভাবন ও উন্নত অবকাঠামো, বৈষম্য হ্রাসকরণ, টেকসই শহর ও সম্প্রদায়, সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ, সমুদ্রের সুরক্ষা, ভূমির সুরক্ষা, শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য অংশীদারিত্ব।
এই ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।
আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর এসডিজি বাস্তবায়নে উচ্চ পর্যায়ের একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মশালায় এসডিজির এই ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের প্ল্যান অব একশান নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
No comments: