জাতীয় সংসদ নির্বাচনের
নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন---সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
জাতীয় সম্মেলনের পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করবে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায়ে জরিপ কার্যক্রম চালিয়ে বর্তমান এমপিদের জনপ্রিয়তা এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবস্থান যাচাই-বাছাইয়ের কাজ গুছিয়ে রেখেছেন। আগামী ২২-২৩ অক্টোবর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। এদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আগামী সংসদ
নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বিএনপির মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে বলেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীর যে কোনো সময় সংসদ ভেঙে দেওয়ার অধিকার রয়েছে। এতে রাষ্ট্রপতির অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই। আদালতের সমস্যাও নেই। তাই প্রধানমন্ত্রীর ওপরই নির্ভর করে, কবে সংসদ নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানিয়েছেন, জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. নূহ-উল-আলম লেনিন বলেছেন, বর্তমানে জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। সম্মেলনের পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হবে।
গত ২৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তিনি ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারির তিন মাস আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দিকে ইঙ্গিত করে বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রচারের পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য দলীয় এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও ভেতরে ভেতরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিরাও নড়েচড়ে বসেছেন। তারা ঈদুল আজহার ছুটিতে নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
তবে নেতারা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দলীয় এমপিদের পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় থাকলেও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোযোগ এখন জাতীয় সম্মেলনের দিকে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তারা এখন এক ধরনের উৎসবের আমেজে রয়েছেন। জাতীয় সম্মেলনের পরই তারা আগামী নির্বাচনের বিষয়ে মনোযোগী হবেন।
কয়েকজন শীর্ষ নেতার দৃষ্টিতে, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত বেশিরভাগ প্রার্থীর বিজয়ের মধ্য দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় অবস্থান বেশ সংহত হয়েছে। নতুন নেতাও তৈরি হয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলের সাংগঠনিক অবস্থান আরও মজবুত হবে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি।
তবে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদের চিত্র স্পষ্ট হওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তাও ভর করেছে। বেশিরভাগ জেলায় সম্মেলনের কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও অনেক জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও অনুমোদন পায়নি। উপজেলা পর্যায়েও এমন সংকট রয়েছে। স্থানীয় এমপিদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই প্রস্তাবিত কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে। আর ওই প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। এ ছাড়াও নানা কারণে দলীয় অনেক এমপির সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব বেড়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন জায়গায় কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। দ্রুত এর সমাধান করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই নির্দেশের পর দলের এমপিরা আরও সজাগ হয়েছেন। জনসম্পৃক্ততা আরও বাড়িয়েছেন। প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। তিনি বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বেশি ব্যস্ত না থেকে আরও জনমুখী হওয়ার জন্যই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্ধশতাধিক আসনে প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা
কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা জানিয়েছেন, বর্তমান এমপিদের মধ্যে অনেকেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের দৌড়ে ছিটকে পড়তে পারেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই গত নির্বাচনে প্রথম অংশ নিয়েছেন। তাদের অনেকেরই জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এমপিদের সজাগও করে দেওয়া হয়েছে।
তাদের মধ্যে চট্টগ্রামে রয়েছেন পাঁচজন। চারজন করে রয়েছেন সিরাজগঞ্জ ও নোয়াখালীতে। যশোর, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায় রয়েছেন তিনজন করে। দু'জন করে রয়েছেন নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, বরিশাল, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কক্সবাজারে।
এ ছাড়াও দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, মেহেরপুর, মাগুরা, খুলনা, ভোলা, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, জয়পুরহাট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর, ফেনী, রংপুর ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে রয়েছেন। এই এমপিদের কেউ কেউ অপকর্মের কারণে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের দূরত্বও তৈরি হয়েছে।
এমন এমপির সংখ্যা অর্ধশতাধিক। তাদের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত কয়েকজন নেতা। এসব এমপির নির্বাচনী এলাকায় বিকল্প প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে ১৭ স্বতন্ত্র এমপির মধ্যে অনেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন। এই স্বতন্ত্র এমপিরা দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে গত সংসদ নির্বাচনে লড়েছিলেন।
No comments: