খেলা নিয়ে আবেগপ্রবণ তর্ক বিতর্ক সারা বিশ্বেই প্রচলন রয়েছে। ফুটবল প্রেমীরা তার প্রিয় দল নিয়ে প্রায়ই এমন তর্ক বিতর্কে মেতে ওঠেন।
সর্বকালের সেরা আট দল কোনগু
লো সে নিয়েও উত্তপ্ত বিতর্ক অনেক হয়েছে। সেটি আরেকবার শুরু করা যাক।
সেরা দল মানেই শুধু বর্তমানের আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিল নয়। কোন সালের স্কোয়াড সর্বকালের সেরা বলে বিবেচিত হতে পারে সেনিয়ে কথা হবে এখানে। তবে সিদ্ধান্ত আপনার।
পশ্চিম জার্মানির স্কোয়াড ১৯৭৪
খেলার ফলেই দলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ পায়। নিজের দেশের মাটিতে ১৯৭৪ সালের কাপ জেতার আগে জার্মানরা ১৯৬৬ সালে একবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল।
এক্সট্রা টাইমে পর্যন্ত গড়ানো সেই খেলায় ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল পশ্চিম জার্মানি।
১৯৭৪ সালে নেদারল্যান্ডস এর বিপক্ষে খেলে ফাইনালে কাপ জিতেছিল পশ্চিম জার্মানির যে দলটি তাতে ছিল গার্ড মুলার, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গোল করা স্ট্রাইকারদের একজন।
ছিলেন পল ব্রেইটনার আর ফ্রানজ বেকেনবাওয়ার ওরফে কাইজার।
স্যাম নামে এক সুপার কম্পিউটার বিবিসির হয়ে এই দলটির একটি মূল্যায়ন করেছে।
তাতে দেখা যাচ্ছে বেকেনবাওয়ার ও তার দল ১৯৭৩ থেকে পরবর্তী দুই বছরে ৩০ খেলা খেলেছে। যার ৬৩ শতাংশ খেলাই তারা জিতেছে।
GETTY IMAGES
ফ্রান্স ১৯৯৮
ফ্রান্সের প্রথম এবং একমাত্র বিশ্বকাপ টাইটেল ছিল ১৯৯৮ সালে।
সেবার শেষ ১৬ তে প্যারাগুয়ের সাথে জিততে কসরত করতে হয়েছে তাদের।
গোল্ডেন গোল দিয়ে নিশ্চিত হয়েছিলো সেই জয়।
কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্দান্ত ইটালিয়ান স্কোয়াডের বিপক্ষ জিততে ফ্রান্সের পেনাল্টি কিকের দরকার হয়েছিলো।
সেমিফাইনালে অভিষেক হওয়া দল ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেও বেশ খাটতে হয়েছে তাদের।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত যিনেদান যিদানের দুর্দান্ত খেলায় ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে গুড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে কাপ জিতেছিল ফ্রান্স।
GETTY IMAGES
উরুগুয়ে ১৯৫০
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সম্ভবত সবচাইতে কম গুরুত্ব পাওয়া দল এটি।
কিন্তু উরুগুয়েকে উল্লেখ করতে হয় এজন্য যে এপর্যন্ত বিশ্বকাপ জেতা সবচাইতে ছোট দেশ এটি।
জনসংখ্যাও ছিল মোটে চল্লিশ লাখ।
এত ছোট দেশ কজনই আর মেধাবী খেলোয়াড়ের জন্ম দেবে বলুন।
প্রতিপক্ষের চেয়ে সেদিক থেকে অনেক পিছিয়ে থাকা দল ছিল উরুগুয়ে।
প্রাচীন ইতিহাস মনে হলেও উল্লেখ করতে হবে তাদের নিজের দেশের মাটিতে ১৯৩০ সালে কাপ জয়ের কথা।
দুবার অলিম্পিক জয়ীও হয়েছে উরুগুয়ে। তবে বিশ্বকাপে তাদের দ্বিতীয় জয় ছিল ব্রাজিলের মাটিতে।
রিওতে মারাকানা স্টেডিয়ামে দুই লাখের মতো উল্লসিত ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ভক্তদের সামনে তারা ২-১ গোলে কাপ জিতে নিয়েছিলো।
GETTY IMAGES
হাঙ্গেরি ১৯৫৪ সাল
হাঙ্গেরির দল সম্পর্কে একটা কথাই প্রচলিত হয়ে গেছে। আর সে হল "সেরা দল যারা কোনদিন বিশ্বকাপ জেতেনি।"
১৯৫০ থেকে ৫৪ সালের মধ্যে ফুটবল জগতে ঝড় তুলে দিয়েছিলো হাঙ্গেরি।
এই সময়ের মধ্যে তারা ৫০ খেলার ৪৩ টিতেই জিতেছিল। ইংল্যান্ডের মতো দলকে পিষে ফেলেছিল ৬-৩ অথবা ৭-১ গোলের ব্যবধানে।
১৯৫২ সালে অলিম্পিক জিতেছিল। ৫৪ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে বিপক্ষকে ৮-৩ গোলেও হারিয়েছে হাঙ্গেরি।
কিন্তু দুঃখজনক-ভাবে পশ্চিম জার্মানির কাছে ৩-২ গুলো হেরেছিল।
দলটি বেশ সহানুভূতি কেড়েছিল হাঙ্গেরিতে সাবেক ইউএসএসআর সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন শুরু হয়।
সেসময় দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় পুসকাস, সান্দোর, যোলতানের মতো খেলোয়াড়েরা দেশে ছেড়ে স্পেনে চলে যান। তারা সেসময় রেয়াল মাদ্রিদ বা বার্সেলোনার মতো দলে খেলেছেন।
GETTY IMAGES
১৯৫৮ থেকে ৬২ সালের ব্রাজিল
বিশ্বে মোটে দুটি দল রয়েছে যারা পরপর দুবার ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে।
সে হলো ব্রাজিল আর ইটালি। তবে ব্রাজিলের পর এই কৃতিত্ব আর কেউই অর্জন করতে পারেনি।
সুইডেনে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে পেলে ও গাহিনশার মতো খেলোয়াড়দের নিয়ে বিশ্বের দরবারে তেজের সাথে হাজির হয়েছিলো ব্রাজিল।
যাতে ছয়টির পাঁচটি খেলাই জিতেছিল তারা। গোল করেছিলো ১৬ টি। গোল খেয়েছিল মোটে চারটে।
সেবার ব্রাজিল একমাত্র ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শূন্য গোলে ড্র করেছিলো।
চার বছর পর চিলের মাঠে আবারো বিশ্বকাপ জিতে নেয় ব্রাজিল।
GETTY IMAGES১৯৭৪ সালের নেদারল্যান্ডস
১৯৭৪ সালে নেদারল্যান্ডস ফুটবলে নাকি রীতিমতো বিপ্লব করে বসেছিল।
ইওহান ক্রয়েফের দল বারবার যায়গা বদল করার দারুণ এক কায়দায় খেলা খেলে বিপক্ষের দলগুলোকে নাকি রীতিমতো চটিয়ে দিয়েছিলো।
গ্রুপ স্টেজে দারুণ কাজে লেগেছে এই কায়দা। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল দুই দলই সেবার হেরেছিল নেদারল্যান্ডসের কাছে।
তবে ফাইনালে প্রথম দুই মিনিটের মধ্যেই গোল দিয়েও পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে হেরেছিল নেদারল্যান্ডস।
ডাচ দল ২০১০ সালে আরো একবার ফাইনালে গেলেও স্পেনের কাছে হেরে যায় তারা।
GETTY IMAGESস্পেন ২০১০
বিশ্বকাপ জয়ীদের খাতায় স্পেন নাম লেখায় ২০১০ সালে।
সেবার প্রথম মাঠে নেমেই সুইজারল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হারে স্পেন।
কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে রোমাঞ্চকর খেলায় হারায় প্যারাগুয়েকে।
সেমিতে জার্মানিকে মাঠ থেকে বিদায় করে। সেই বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের সাথে ভয়াবহ ফাউলে ভরা খেলা উৎরে গিয়েছিলো স্পেন।
সে খেলায় ৪৮ টি ফাউল রেকর্ড করা হয়েছিলো। ১২ বার হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন ইংলিশ রেফরি হাওয়ার্ড ওয়েব।
GETTY IMAGES১৯৭০ সালের ব্রাজিল
অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞের কাছেই এই স্কোয়াডটিকে বলা হয় বিশ্বকাপ জেতা সবচাইতে মেধাবী দল।
১৯৬৬ সালে প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নেয় ব্রাজিল।
সেই বিপর্যয়ের পর পেলে ১৯৭০ সালের আগ মুহূর্তে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কিন্তু তার নেতৃত্বেই পরে বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল।
মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে শতভাগ ম্যাচ জেতার রেকর্ড গড়েছিল ব্রাজিল।
তারা ছিল এমন রেকর্ড করা বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম দল।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বে আর সেমিতে উরুগুয়ের বিপক্ষে একটু বেগ পেতে হলেও হারেনি একটি খেলাও।
ফাইনালে ইটালিকে গুড়িয়ে দেয়া সেই খেলাকে অনেকেই বলেন এপর্যন্ত খেলা সেরা ফাইনাল।

No comments: