খাদিজা দেওয়ান নিশি। এখনও কৈশোরকাল না কাটলেও সংগীত নিয়ে এগিয়েছে বহুদূর। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলের ‘এবং ক্লাসের বাইরে’ শিরোনামের এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাধ্যমে সংগীতজগতে আত্মপ্রকাশ করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিল সে। সেখান তার গান শুনে অনেকেই সংগীত করার পরামর্শ দেন। পরিবার থেকে বাবার কিছুটা অমত থাকলেও মায়ের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়ে যায়। এরপর থেকেই শুরু হয় সংগীতজগতে পথচলা। পরবর্তীতে মায়ের থেকে বাবার কাছ থেকেই বেশি সমর্থন পেয়েছে সে।
সেই গল্প বলতে গিয়ে নিশি বলে, অন্তরা সংগীত একাডেমির এক শিক্ষকের কথায় ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলাম আমি। অনুষ্ঠান শেষে ওই শিক্ষক আমার বাবাকে বলেন, আপনি নিশিকে গান শেখান কিংবা না শেখান আমি ওকে গান শেখাব। সেখান থেকেই আমার গান শেখার শুরু। ওই একাডেমিতেই এক বছর গান শিখি। এরপর বাসায় আমার চাচা আলাউদ্দিন দেওয়ানের কাছ থেকে তালিম নেই।
নিশির ধ্যান-জ্ঞান সবই বাউল গান নিয়ে। এই সময়ের তরুণদের মধ্যে যখন রক, ব্র্যান্ড সংগীতের প্রতি আগ্রহ দেখা যায় তখন তার আগ্রহের জায়গাটা কেন বাউল সংগীতে? হাস্যোজ্জ্বল মুখে এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে নিশি বলে, বাউল গান হচ্ছে মাটির গান। আমার কাছে বাউল গানটা খুব ভালো লাগে। এছাড়া বাবা-মা বাউল গান খুব পছন্দ করেন। পরিবারের সকলের আগ্রহ-পছন্দ এবং নিজের মধ্যে এই গানের প্রতি ভালোবাসার কারণেই বাউল করতে শুরু করি আমি।
এই বয়সেই পাঁচ-ছয় বছর হয়ে গেছে সংগীতজগতে তার পথচলা। স্টেজে দর্শকদের সামনে গান করা থেকে শুরু করে টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান; সবজায়গাতেই সফলভাবে দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বলতে গিয়ে নিশি বলে, এখনই সেভাবে প্রোগ্রাম করার ইচ্ছা না থাকলেও মাঝে মাঝেই প্রোগ্রাম করা হয়। কিছুদিন আগেই শিল্পকলাতে একটা প্রোগ্রাম ছিল। যখন আমি গান শুরু করলাম, দর্শকের চেয়ার থেকে সবই উঠে গেছে। স্টেজ থেকে আমি ব্যাক স্টেজে গেলাম; সবাই উঠে ব্যাকস্টেজে চলে আসলো। সবাই হাততালি দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন, আপু আপনি অসাধারণ গান করেন। সেখানে থাকা সংবাদকর্মীদের সবাই আব্বু-আম্মুর সঙ্গে কথার জন্য ব্যাকস্টেজে চলে গেছে। আমি তখন খুব একসাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম। সেটা আমার জন্য খুব বড় পাওনা ছিল। আজ যখন সময় টেলিভিশনের অনলাইনে সরাসরি গান করলাম তখনও দর্শকদের থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। এটা আমার জন্য খুব বড় পাওনা।
কপিরাইট আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া এবং ফেসবুক ও ইউটিউব সেলিব্রেটির ভিড়ে বর্তমানে সংগীতশিল্প একটা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর সেই সময়ে গান শুরু করেছে নিশি। বুঝতে পারছে পথটা খুব কঠিন হবে, তবে থেমে যেতে চায় না সে। তাইতো বলল, এখন সময়টা অনেক কঠিন জানি। তবে আমি থামতে চাই না। মনে-প্রাণে সংগীত ধারণ করা গেলে অবশ্যই সফলতা পাওয়া যায়। আমি গান করে যাব। সৃষ্টিকর্তা চাইলে এবং দর্শকরা গ্রহণ করলে আমি গান চালিয়ে যাব।
পুরাতনদের অনেকেরই অভিযোগ, নতুন প্রজন্মের যারা সংগীতে আসছেন তাদের বেশিরভাগেরই উদ্দেশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলিব্রেটি হওয়া। তবে নিশি শুধু চায় দর্শকদের অন্তরের সংগীত পিপাসা মেটাতে। নিশি বলে, এখন অনেকেই আছেন যারা বেসুরো গলায় গান করে ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে আপলোড করে। তাদের উদ্দেশ্য ফলোয়ার বাড়ানো এবং লাইক পাওয়া। গান নিয়ে ভাবনা কম। আমার মধ্যে এ ধরনের কোনো উদ্দেশ্য নেই এবং আমি এখনও তেমন কিছু করি, এ ধরনের কিছু করার ভাবনাও নেই। আমি চাই গান শিখে দর্শকদের সংগীত পিপাসা মেটাতে। আর সেজন্য চর্চা চালিয়ে যাচ্ছি আমি।
নিশি বলে, বাবা-মায়ের স্বপ্ন, ভবিষ্যতে সংগীতে আমি ভালো কিছু করব, বড় একজন শিল্পী হব। পড়াশুনার জন্য তেমনভাবে অনুশীলন করতে না পারলেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
No comments: