বল বয় থেকে ক্রিকেট বিশ্বের ব্যাটিং জাদুকর
বল বয় থেকে ক্রিকেট বিশ্বের ব্যাটিং জাদুকর। তার ব্যাটিং নান্দনিকতা উপভোগ করতে চাতক পাখির মতো চেয়ে অপেক্ষায় থাকতো ক্রিকেট পিয়াসিরা। তার ব্যাটিং যেন শিল্প। কোন রুপ কথার গল্প। ক্রিকেট গ্রামারের অনবদ্য সব শটের দেখা মিলেছে তার উইলোতে। বিড়ল রেকর্ড গড়ে গড়েছেন ১০০টি সেঞ্চুরি। হ্যাঁ, এখন ঠিকই ধরতে পেরেছেন। বলা হচ্ছে শচিন টেন্ডুলকারের কথা। আজ ২৪ এপ্রিল কিংবদন্তী এই ব্যাটসম্যান ৪৭তম জন্মদিন। যতো উপমা দিয়েই তাকে ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, সবই যেন কমতি পড়ে তার অর্জনের পাশে। এমনই এক লিজেন্ডের জন্মদিনে খেলার সময়ের পক্ষ থেকে থাকছে শুভ কামনা।
স্কুল ক্রিকেটে বন্ধু ভিনোদ কাম্বালির সাথে ৬৬৪ রানের বিড়ল রেকর্ড গড়েন। এরপরই সবার দৃষ্টি কাড়েন শচিন নামের দুরন্ত এক কিশোর। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে ১৬ বছরে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক হয় বিস্ময় ক্রিকেটার শচিন রমেশ টেন্ডুলকারের। ওয়াকার ইউনুসের এক বাউন্সে রক্তাত শচিনকে নিয়ে ঠাট্টা করেছিলেন মিয়াদাদ। আহত শচিন পাকিস্তানিদের স্লোজিংয়ের পরেও মাঠ ছাড়েননি। উল্টো ব্যাট হাতে ওয়াসিম, ওয়াকার ইমরান খাদের বিপক্ষে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেই দিয়েছিলেন জবাব। ক্রিকেট দুনিয়ার শচিন যে শাসন করবেন তার বার্তা মেলে এখান থেকেই।
ইংল্যান্ডের বৈরি কন্ডিশনি ১৩ ইনিংস পর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি দেখা পান শচিন। আর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা অবাক করার মতো। হ্যাঁ, ৭৫টি ইনিংসের পর ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাকান টেন্ডুলকার। আর সেই শচিনই রঙ্কিন পোষাকের ক্রিকেট দুনিয়ার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন। আর টেস্টে সুনিল গাভাস্কারের ৩৪ সেঞ্চুরির রেকর্ডও ভেঙ্গে করেছিলেন চুরমার। নান্দনিক ব্যাটিং শিল্পে টেস্ট কিংবা ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি হাঁকানো শচিনকে অনেকেই ভালবেসে ডাকতেন লিটল মাস্টার, নিউক্লিয়াস, ব্যাটিং জিনিয়াস কিংবা মাস্টার ব্লাস্টার। কিন্তু, ব্যাটিংয়ে রানের বানে রেকর্ডের বুকে জলোস্বাস হওয়ায়। একটা সময় সবাই শচিনকে বলতে থাকলো ক্রিকেট ঈশ্বর।
৯৯ বিশ্বকাপে জীবনের কঠিন সময়ে টেন্ডুলকার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন রাতে বাবা মারা যান। স্পাত কঠিন মনোবল রেখে পরের ম্যাচেই কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং সেঞ্চুরি শচিনের ব্যাটে। তার ব্যাটে এতো অর্জনের পরেও, বিশ্বকাপ না জেতার আক্ষেপ আরো দীর্ঘায়াত হয় ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে। ২০০৭ বিশ্বকাপ আর এই সময়টা শচিনের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময়। বাংলাদেশের কাছে হেরে বিদায় হট ফেবারিট টিম ইন্ডিয়ার।
গণমাধ্যম থেকে শুরু করে প্রিয় ভক্তরাও বলে উঠে শচিনের সময় শেষ। ক্রিকেট থেকে বিদায় নেয়ার এটাই তার আদর্শ সময়। মহানায়কের বিদায় এভাবে হবে। না। ক্রিকেট বিধাতাও তা মানতে পারেননি। শচিন সিদ্ধান্ত নিলেন খেলা চালিয়ে যাবেন। ২২ গর্জের ক্রিকেট ক্যানভাসে আবারও উইলো ছুটলো রানের বানে। খুনে মেজাজে। ২০০৯ সালে ভারতকে টেস্ট এক নম্বর দল করলেন। ২০১১ বিশ্বকাপ জন্মস্থুান মুম্বাইয়ের ওয়েঙ্কারে স্টেডিয়ামে শতজনমের পিপাসা মিটলো শচিনের। উচিয়ে ধরলেন স্বপ্নীল বিশ্বকাপ ট্রফি।
এর পরেও থামেননি। রেকর্ড বইয়ে নতুন গল্পের জন্ম দেন শচিন। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার ইতিহাস গড়েন। উইজডেনে একাধিকবার সেরা ক্রিকেটার হওয়া থেকে আইসিসি'র হল অফ ফ্রেমে নাম তোলার সম্মান। আর দেশের আরজুন অ্যাওয়ার্ড থেকে সর্বোচ্চ পুরস্কার ভারত রত্ন পেয়েছেন।
দুই যুগের সমৃদ্ধ ক্রিকেট উপন্যাসের বিদায় নিতে হয়েছে ১৬ নভেম্বর নিজ শহর মুম্বাইয়ে। কিন্তু, ক্রিকেট দুনিয়ায় শচিন রমেশ টেন্ডুলকার নামের যে গল্প রচনায় হয়েছে তা এক রুপকথা। কারণে নিয়ম মেনে যেমন সূর্য অস্তমিত হয় কিন্তু, একজন শচিন টেন্ডুলকার বিদায় নিলেও, সবার হৃদয়ে ঠিকই থেকে যায়।
Tag: games

No comments: