Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » শুভ জন্মদিন ॥ সম্প্রীতির পীযূষ দা




জীবনের নানা ধাপ পেরিয়ে তিনি আজ আলোকিত মানুষ। তাঁর অনেক গুণের মধ্যে অন্যতম একটি হলো- বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি প্রবল অনুরাগ। উদার, মানবিক, স্বচ্ছ ও সংস্কারমুক্ত মানুষটির আজ ৭০তম জন্মদিন। মননে, কর্মনিষ্ঠতা ও মানসিকতায় তিনি এখনো তারুণ্যদীপ্ত। ১৯৫০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। নাট্যকার, আবৃত্তিকার, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, সংগঠক, অনুসন্ধানী পাঠক, প্রতিশ্রুতিশীল লেখক- নানা অভিধায় তাঁকে অভিহিত করা যায়। আশির দশকের শুরুতে ‘সকাল সন্ধ্যা’ নামক টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা পান। একজন ভক্ত ও অনুরাগী হিসেবে তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় মূলত সেই থেকেই। পাশের বাড়ির সাদাকালো টিভির পর্দায় ‘শাহেদ’ চরিত্রটি আমার দৃষ্টি কাড়ে। এই চরিত্রে অভিনয় করেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। তারপর ছোটো পর্দার পীযূষদা পরোক্ষভাবে আমাদের চেতনার অংশ হয়ে যান। কর্মক্ষেত্রে এসে সেই পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় আমার। নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে শেখ রেহানা প্রকাশিত ও সম্পাদিত সাপ্তাহিক বিচিত্রা এবং পরে দৈনিক জনকণ্ঠে সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করতে গিয়ে লেখালেখির সূত্রে পীযূষদার সান্নিধ্য পাই। যে কোনো প্রয়োজনে দাদার পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণা আমাকে অনুপ্রাণিত করত। এখনো কোনো লেখা প্রকাশ হলে দাদা ফোন করে উৎসাহ দেন। বলা চলে- ঢাকায় আমার অন্যতম অভিভাবক পীযূষদা। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু গোপালগঞ্জের এসএম মডেল স্কুলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন তিনি। ১৯৮৫ সাল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে লেখালেখি শুরু তাঁর। এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রতিটি গণমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখছেন। নব্বইয়ের দশকে দৈনিক লালসবুজ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। মৌলিক সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, ছড়া এবং সম্পাদনাসহ ১৬টি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে তাঁর। পিয়ং ইয়ং ও উত্তর কোরিয়ায় বিশ্বছাত্র-যুব সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন তিনি। এই সম্মেলনে ১৭৫টি দেশের ২৫ লাখ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। নিউ ইয়র্কে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ফোবানা সম্মেলনে একাধিকবার অংশগ্রহণ, জার্মানির বার্লিনে আন্তর্জাতিক লোক উৎসবে যোগদান, কলকাতায় আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব এবং মিসরের কায়রোতে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। একসময় সংগঠনটির নির্বাহী সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ষাটের দশকের শেষের দিকে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হিসেবে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। সেই সূত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি সাহচর্যে আসেন। একজন নাট্যজন ও ক্রীড়ানুরাগী হিসেবে শেখ কামালের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন তিনি। ১৯৮৫ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ যুবঐক্যের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং যুবসংগ্রাম পরিষদের নেতা হিসেবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রাখেন। বাংলাদেশের সব যুব সংগঠন নিয়ে যুবসংগ্রাম পরিষদ গঠনে তাঁর অনন্য ভূমিকা ছিল। ২০০৬ সালে ইউরোপে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার মাঠ থেকে সরাসরি তথ্য নিয়ে প্রতিদিন জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় কলাম লিখতেন। ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত থেকে মঞ্চনাটকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। চলচ্চিত্র উন্নয়নেও রয়েছে তাঁর বিশেষ ভূমিকা। আপাদমস্তক মানবিক ও প্রগতিশীল এই সংস্কৃতিপ্রাণ মানুষটির চলচ্চিত্রে অভিনয়ের শুরু মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আগামী’ দিয়ে। এরপর তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্রে পাদরির ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০১১ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ও ‘গেরিলা’য় অভিনয় করেন। তাঁর অভিনয়-জীবনের এক বিশেষ অধ্যায় হলো ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নাটক। প্রবীণ সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে থেকে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নাটক নির্মাণ ও প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। নাটকটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের চিহ্নিত ও মুখোশ উন্মোচন করা হয়। নাটকটি লন্ডন ও নিউ ইয়র্কে একাধিকবার মঞ্চায়িত করা হয়। বিশিষ্ট কলামিস্ট রেজা সেলিমের ভাষায়, ‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বাংলাদেশে এমন মানুষের খুব প্রয়োজন, যারা দিনশেষে একই চিন্তায় সবার সঙ্গে একমত হতে পারেন। পীযূষদা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভুবনে ‘তিমির হননের নেত্রী’। আর সেই ভুবনের কারিগর যারা, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নবিভোর মানুষ- তাদের নিয়ে পথ চলেন পীযূষদা, মঞ্চে উচ্চারণ করেন সাহসী বাঙালির শব্দমালা, রাজপথে চলেন বীরের মতো, সংস্কৃতিকে মনে করেন সাধনা, যার কাছে ভালোবাসা স্নেহের পরিপূরক।’ তাঁর এই মন্তব্য যথার্থই। চলার পথে দেখেছি, পীযূষদা বিশ্বাস করেন, বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাও বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখছেন। শেখ হাসিনা সবাইকে নিয়ে চলার নীতিতে বিশ্বাসী। তিনি সাধারণের মধ্যে অসাধারণ। তিনি নেতৃত্বের গুণে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা এখন আর দেশের নেত্রী নন, বিশ্বনেত্রী। তিনি মনে করেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস রাখে না, যারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় ও লালন-পালন করে, তাদের কাছে বাংলাদেশ কোনোদিনও নিরাপদ নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক নিরাপদ বাংলাদেশ এবং সৃজনশীল বাংলাদেশ দেখতে হলে স্বাধীনতার সপক্ষের মিছিল আরও দীর্ঘ করতে হবে। এই মিছিল যত দীর্ঘ হবে, তত দ্রুতই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ। তাই বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় গড়ে তুলেছেন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ নামের একটি অনবদ্য অরাজনৈতিক সংগঠন। তাঁর এই দীর্ঘ সংগ্রামের পথে নানা বাধা এসেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির কোপানলে পড়েছেন বহুবার। নানা সময়ে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক ও ঢাকায় একাধিকবার তাঁর জীবননাশের চেষ্টাও করা হয়। তারপরও থেমে নেই তাঁর এই পথচলা। বঙ্গবন্ধুর সম্প্রীতি বাংলাদেশ তথা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ধারা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে পথের একজন সেনাপতির কাজ করছেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই বিশ্বাসের পথে আমার মতো একজন ক্ষুদ্র সৈনিকের পথচলা পীযূষদার হাত ধরে। তাঁর এই পথচলা আরও মসৃণ ও সুদৃঢ় হোক। শুভ জন্মদিন পীযূষদা। লেখক: সহকারী সম্পাদক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply