অবস্থান: ভবানন্দপুর মন্দির মেহেরপুর জেলার সদর উপজেলাধীন আমদহ ইউনিয়নের ভবানন্দপুর নামক গ্রামে অবস্থিত। মেহেরপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৯ কি.মি. দক্ষিণ দিকে অবস্থিত ভবানন্দপুর নামক গ্রাম। এ গ্রামের উপর দিয়ে চলে গেছে উত্তর-দক্ষিণ দিকগামী আমদহ-ভবানন্দপুর সড়ক। আমদহ-ভবানন্দপুর সড়কের সাথে পূর্ব দিকগামী মহাজনপুর ইউনিয়নের জাতারপুর সংযোগ সড়ক। এ সংযোগ সড়কের উত্তর-পূর্ব অংশে চাষের জমির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে ভগ্নপ্রায় এবং পরিত্যক্ত একটি প্রাচীন স্থাপত্য। এ স্থাপত্যটিই হল ভবানন্দপুর মন্দির। এ মন্দিরটি অনেকের কাছে আসরাফপুর মন্দির, আবার আনন্দপুর মন্দির নামেও পরিচিত। এ মন্দিরটি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে ভৈরব নদীর প্রবাহ রয়েছে।
মানচিত্র: ভবানন্দপুর মন্দিরের অবস্থান।
ঐতিহাসিক পটভূমি: ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে রাজা ভবানন্দ মজুমদার মেহেরপুরের বাগোয়ানে এক বিশাল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। এ রাজবংশটিই ‘নদীয়া রাজবংশ’ নামে পরিচিত। ভবানন্দ মজুমদার ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত বাগোয়ান-ভবানন্দপুরে তাঁর নামে ভবান্দপুর রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর তিনি কৃষ্ণনগর গোয়াড়ীতে রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর বাগোয়ান-ভবানন্দপুরের রাজবাড়িটিকে ভবান্দপুর কাছারি বলা হয়। এ কাছারিটির কাছাকাছি ভবানন্দ মজুমদার একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এ মন্দিরটি এখন ভবানন্দপুর মঠ নামেও সুপরিচিত। নির্মাণশৈলী দেখে অনেকে এটিকে বৌদ্ধ মঠ বলে থাকেন। রাজা ভবানন্দ মজুমদারের রাজবাড়িটি বহু বছর আগে কালের গর্ভে হাঁরিয়ে গেছে। কেবল একটি মন্দির কালের সাক্ষ্য বহন করে এখনও টিকে আছে।
স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য: প্রায় আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত এ মন্দিরের দৈর্ঘ্য ৩.৫৬ মিটার ও প্রস্থ ৩.১৮ মিটার। দক্ষিণমুখী এ মন্দিরটি নির্মাণে পাতলা ইট ও চুন-সুরকি ব্যবহার করা হয়। আস্তরহীন এবং ভগ্নপ্রায় এ মন্দিরের দেয়াল ৭০ সে.মি. চওড়া। সামনের দেয়ালে একটি মাত্র প্রবেশপথ রয়েছে। এ প্রবেশপথটি অর্ধবৃত্তাকার খিলানবিশিষ্ট। মন্দিরের অভ্যন্তরে উত্তর দেয়ালে একটি মূর্তি চেম্বার রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম দেয়ালে একটি করে কুলঙ্গি রয়েছে। আস্তর উঠে যাওয়ায় এটির দেয়ালের অলংকরণ তেমন বুঝা যায় না। দেখে প্রতীয়মান হয়, এ মন্দিরের ছাদটি চৌচালা বা মঠগম্বুজবিশিষ্ট (cloister domed)।
এ মন্দিরটির আশে পাশে সামান্য উঁচু চাষের জমি রয়েছে। চাষের এ জমিতে মৃৎপাত্রের ভাঙ্গা টুকরো ও ইটের ভাঙ্গা টুকরোর উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। এ মন্দির সংলগ্ন জমির মৃৎপাত্রের ভাঙ্গা টুকরো ও ইট ভাঙ্গা টুকরোগুলো নদীয়া রাজবংশের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক উপাদানের শেষ অস্তিত্ব হতে পারে
No comments: