দল নিয়ে কেমন হলো তামিমের পরীক্ষা
সিরিজ শুরুর আগে যেদিন উইন্ডিজের স্কোয়াড ঘোষণা করা হলো, সেদিনই যেন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়ে যায়! সিরিজের ফল কী হতে যাচ্ছে, সেটাও অনুমেয় হয়ে যায় ওই দিনই। তাই উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার মধ্যে কোনো চমক ছিল না, বাড়তি উচ্ছ্বাসও ছিল না অনেকের মধ্যে। দেখার অপেক্ষা ছিল, সিরিজে ব্যাটিং অর্ডার এলোমেলো করে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আর অধিনায়ক তামিম ইকবাল যে গবেষণা করেছিলেন তার ফল কী এলো? 'ব্র্যান্ড অব বাংলাদেশ ক্রিকেট' নামের জিনিসটাই বা কতটা আবিষ্কৃত হলো?
পাওয়ার প্লে আগের চেয়েও স্লো
টিম ম্যানেজমেন্টের একটি বার্তা বেশ প্রতিষ্ঠিত, সেটি এমন- একদিকে তামিম 'ধরে খেলবেন', অন্যদিকের ব্যাটসম্যান চালিয়ে খেলে সেটা পুষিয়ে দিয়ে পাওয়ার প্লের সর্বোচ্চ ব্যবহার করবেন। এই সিরিজে তামিমের সঙ্গে ওপেনার লিটনও যেন শ্নথ ব্যাটিংয়ের পাল্লা দিলেন। যে কারণে প্রথম ওয়ানডের পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৩৯, দ্বিতীয়টিতে ১ উইকেটে ৪২ এবং তৃতীয়টিতে ২ উইকেটে ৫৩ রান! আর প্রতিটি ম্যাচেই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ডট বল খেলার প্রবণতা ছিল চোখে পড়ার মতো। উইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পাওয়ার প্লের ৬০ বলে ৪৮ ডট। তামিম ২৬টি ও লিটন ২২টি বল ডট খেলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ৬০ বলে ৩৮ ডট খেলেছেন তিন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। তামিম ১৭টি, লিটন ১৫টি ও শান্ত ৬টি ডট বল খেলেন। চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গেও পাওয়ার প্লে সঠিক কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ৬০ বলের খেলায় ডট ছিল ৩৫টি। তামিম ৯টি, লিটন ৪টি, শান্ত ২০টি ও সাকিব ২টি ডট বল খেলেন। মূলত টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধরে খেলার প্রবণতা ভাঙার পরীক্ষা এই সিরিজে মোটেও দেখা যায়নি। অথচ নিউজিল্যান্ড সফরের আগে এই সিরিজটিই হতে পারত পাওয়ার প্লে পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে ভালো সুযোগ।
শান্তকে নিয়ে ব্যর্থ পরীক্ষা কি নিউজিল্যান্ডেও চলবে
সাকিবকে চার নম্বরে পাঠিয়ে যাকে তিন নম্বরে খেলানো হয়েছে, সেই শান্ত পুরো সিরিজে ব্যর্থ ছিলেন। তিন ম্যাচে তার স্কোর ১, ১৭ ও ২০ রান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। একদিনের ক্রিকেটে এ নিয়ে আটটি ম্যাচ খেলা হলো টপঅর্ডার এ ব্যাটসম্যানের। যেখানে তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর ২৯ রান। অথচ সিরিজ শুরুর আগে কোচ ডমিঙ্গো বলেছিলেন, তিন নম্বর ব্যাটসম্যানকে সেট করার জন্য উপমহাদেশ সবচেয়ে ভালো জায়গায়। সেই ভালো জায়গাতেই সেট হতে পারলেন না শান্ত। তাই প্রশ্ন থেকে যায় ব্যার্থ শান্তকে কি নিউজিল্যান্ড সফরেও তিন নম্বরে ফের সুযোগ দেবেন ডমিঙ্গো?
প্রস্তুতি সারলেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ
বর্তমান দলের চার সিনিয়র ক্রিকেটারের দু'জন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে ছিলেন দু'জন। মুশফিক প্রথম দুই ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন ১৯ ও ৯ রানে। শেষ ম্যাচে ৬৪ রান করেছেন ৫৫ বলে। মাহমুদুল্লাহ প্রথম ম্যাচে ৯ আর তৃতীয় ম্যাচে ৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। এই সিরিজে সবচেয়ে কম ডট বল খেলা ব্যাটসম্যান তিনি। মিডল অর্ডার এ দুই ব্যাটসম্যান নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য রসদ নিয়ে নিলেন উইন্ডিজের বিপক্ষে স্বাভাবিক ছন্দে খেলে।
মাশরাফি-উত্তর বোলিং ইউনিট
মাশরাফির অনুপস্থিতিতে পেস বোলিং ইউনিট কেমন করে, দেখার ছিল তা। মুস্তাফিজ, রুবেল, হাসান মাহমুদ, সাইফউদ্দিন ও তাসকিনরা নড়াইল এক্সপ্রেসের অনুপস্থিতি কোনোভাবেই বুঝতে দেননি। বিশেষ করে বোলিং ওপেন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়নি দলকে। বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ ও রুবেল দারুণ জুটি গড়েছেন প্রথম দুই ওয়ানডেতে। শেষ ম্যাচে মুস্তাফিজের সঙ্গে সাইফউদ্দিন ছিলেন কার্যকর। রুবেল উইকেট না পেলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে পেরেছেন। নবাগত হাসান মাহমুদ গতি ও লাইন-লেন্থ ধরে বল করেছেন। মুস্তাফিজের বোলিংয়ে বৈচিত্র্য বেড়েছে। বোলিংয়ের পরীক্ষাটা তাই অনেকাংশেই সফল ছিল।
পরীক্ষা হলো না শেখ মেহেদীর
সাকিবের সঙ্গে মেহেদী মিরাজ ছিলেন স্পিনে। যে কারণে শেখ মেহেদীকে পরখ করে নিতে পারলেন না কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। নিউজিল্যান্ড সফরের দলে থাকলে হয়তো পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন খুলনার এ স্পিন অলরাউন্ডার। ক্লিক করে গেলে ব্যাটিং অর্ডারের সাত নম্বরে একজন হয়ে উঠতে পারেন তিনি।
অধিনায়ক তামিম
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজটি ছিল অধিনায়ক তামিমের জন্য পরীক্ষার। ফলাফলের দিক থেকে চিন্তা করলে সেখানে দারুণ সফল তিনি। আসলে খর্বশক্তির এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তেমন কোনো পরীক্ষাই দিতে হয়নি তামিমকে। ক্রিকেটে তো অধিনায়ককে পরীক্ষা দিতে হয় ফিল্ডিংয়ে। বোলার পরিবর্তন, ফিল্ড সেটআপে মুনশিয়ানার পরিচয় দিতে হয়। এই দুটি কাজ কতটা ভালোভাবে করতে পারছেন অধিনায়ক, দেখা যাবে নিউজিল্যান্ড সফরে।
ডট বলের আধিক্য বেড়েছে
সিরিজ শুরুর আগে নিজেদের মধ্যে ১৪ ও ১৬ জানুয়ারি দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে টাইগাররা। প্রথম অনুশীলন ম্যাচে ডট বলের মহড়া দেন উভয় দলের ব্যাটসম্যান। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে একদিনের ক্রিকেট সিরিজেও যার প্রতিফলন দেখা গেছে। সাকিব ছিলেন স্বভাববিরুদ্ধ। প্রথম ম্যাচের ৪৩ বলের মোকাবিলায় ২৭টি, দ্বিতীয় ম্যাচে ১৬টি আর শেষ ম্যাচে ৪২টি ডট বল খেলেছেন বিশ্বসেরা এ ওয়ানডে অলরাউন্ডার। ওপেনার লিটন কুমারের জন্য সিরিজটি মোটেও ভালো যায়নি। প্রথম ম্যাচে ৩৮ বলে যে ১৪ রান করেছেন, তাতে ডট ছিল ৩০টি।
Tag: English News games
No comments: