হাইতি প্রধানমন্ত্রীর দেশত্যাগে বাধা
হাইতির প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল হেনরির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির আদালত। প্রেসিডেন্ট জোভনেল ময়েস হত্যার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগও গঠনের আবেদন করেন হাইতির প্রধান কৌঁসুলি।
মূল সন্দেহভাজন হিসেবে পরিচিতি দেশটির বিচার বিভাগের এক কর্মকর্তা এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পলাতক।
একটি ফোন রেকর্ডে শোনা যায়, হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে মূল সন্দেহভাজনের সঙ্গে দুবার ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে গত মঙ্গলবারের মধ্যে সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে কী ধরনের যোগাযোগ হয় তার ব্যখ্যা চান আদালত। তবে এ সংক্রান্ত তথ্য দিতে ব্যর্থ হন আরিয়েল হেনরি।
গত ৭ জুলাই রাজধানী পোর্ট প্রিন্সে নিজ বাসভবনে নিহত হন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোভনেল ময়েস। ওইদিন ভোর রাতে পরিকল্পনাকারী দলটি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলা চালায় এবং তাকে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার পর দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার অভিযানে নামে। ওই ঘটনায় ২৮ জনকে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে ২৬ জন কলম্বিয়ান, বাকি দুজন হাইতিয়ান আমেরিকান নাগরিক।
হাইতির পুলিশপ্রধান লিওন চার্লস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই হত্যাকাণ্ডের পর দেশটির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সের একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিল হত্যাকারীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনজন কলম্বিয়ান নিহত হন। এ সময় গ্রেপ্তার হন ১৫ কলম্বিয়ান। পালিয়ে গেছেন আরও আট কলম্বিয়ান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়া এ সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই আমেরিকানও।
হত্যার কারণ সম্পর্কে যা জানা যায়
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতিতে লাগাতার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবিক সংকট ইত্যাদি কারণে সহিংসপ্রবণ হয়ে ওঠে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্টেকে হত্যা করা হলো।
বিবিসি জানায়, কী উদ্দেশ্যে জোভনেল মোয়েজকে হত্যা করা হয়েছে; সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন সামনে এসেছে। ঘাতকরা কোনো বাধা ছাড়া কীভাবে একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হাউসে ঢুকতে পারল, তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া হাইতির বিরোধীদলীয় নেতারা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
বিরোধী দলের দাবি, জোভনেল মোয়েজের পূর্বসূরি মার্টেলি ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন। সে হিসেবে মোয়েজের পাঁচ বছরের মেয়াদকাল ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু মোয়েজের দাবি ছিল, তিনি যেহেতু ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা নিয়েছেন, সে হিসেবে তিনি আরও এক বছর বৈধ প্রেসিডেন্ট থাকবেন।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপি, সংবিধান সংশোধনে গণভোটের উদ্যোগ, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ নির্বাহী ক্ষমতার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার মতো অভিযোগ ছিল। পাশাপাশি ২০১৮ সালে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
২০১৯ সালের অক্টোবরে হাইতির পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন না দিয়ে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখেন মোয়েজ। এতে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।
চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি বিরোধীরা পদত্যাগের দাবি জানালে মোয়েজ তার সরকারকে উৎখাত এবং তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রের কথা জানান। তবে বিরোধীরা তার ওই দাবিকে নাকচ করে দেয়।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট হত্যার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত হাইতির কর্মকর্তারা জানান, প্রেসিডেন্ট হত্যার জন্য ভাড়াটে খুনিদের প্রচুর অর্থ দেওয়া হয়েছে। তাই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীকে ধরতে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
প্রসঙ্গত, হাইতিতে ১৯১৫ সালেও প্রেসিডেন্ট হত্যার ঘটনা ঘটেছিল।
No comments: