আসপিয়ার চাকরি না হলে অনশনে বসবেন কবি নির্মলেন্দু গুণ
ভূমিহীন হওয়ায় পুলিশে চাকরি হচ্ছে না বাবাহারা আসপিয়ার। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। সবকটি ধাপ পার হয়েও চাকরি না হওয়ার খবর পাওয়া যায় গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর)।
এদিকে আসপিয়ার চাকরি না হলে অনশনে বসার ঘোষণা দিয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। আসপিয়ার ঘটনায় ফেসবুকে একটি প্রতিবাদী পোস্টে মন্তব্য করে এ কথা জানান তিনি।
পরে ওই আইডি থেকে নির্মলেন্দু গুণের পুরো বক্তব্য পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘ভূমিহীন হলে পুলিশের চাকরি করা যাবে না- এ রকম একটা আইন আছে, সেটাই তো জানতাম না। মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়েও ভূমিহীন বলে বরিশালের আসপিয়া চাকরি পাবে না, এটা হতে পারে না। হতে দেওয়া যায় না। এ আইন বাতিল কিংবা সংশোধন করে তাকে চাকরি দেওয়া হোক। নইলে আমি অনশনে বসব।’
নির্মলেন্দু গুণের অনশনে বসার ঘোষণায় অনেকেই সমর্থন জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে তার সাথে অনশনে বসার আগ্রহও দেখিয়েছেন।
পুলিশে চাকরি হবে না এমন খবর পেয়ে আসপিয়া দ্রুত ছুটে যান ডিআইজি এসএম আকতারুজ্জামানের কার্যালয়ে। জানতে চান, সব ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেন তার চাকরি হবে না। ডিআইজি জানান, নিজেদের জমি না থাকলে চাকরি দেওয়ার আইন নেই। এরপর ভাঙা মন নিয়ে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পুলিশ লাইন্সের সামনে বসে থাকেন আসপিয়া।
জানা গেছে, সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেছেন আসপিয়া ইসলাম। ১৫ বছর ধরে উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের একজনের জমিতে আশ্রিত হিসেবে থাকছে তার পরিবার। আসপিয়ার বাবা সফিকুল ইসলাম মারা গেছেন। পরিবারে তারা তিন বোন, এক ভাই ও মা। তার ভাই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার আয় দিয়েই চলে সংসার।
আরও পড়ুন: আসপিয়াকে নিয়ে ডিআইজির আবেগঘন স্ট্যাটাস!
আসপিয়া জানান, বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবলের শূন্য পদে লোক নিতে সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অনলাইনে আবেদন করলে গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন।
২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও উত্তীর্ণ হন। এরপর ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আসপিয়া।
২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও উত্তীর্ণ আসপিয়া। সবশেষ ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উতরে যান আসপিয়া।
চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ‘ভূমিহীন’ উল্লেখ করা হয়। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপপরিদর্শক মো. আব্বাস। এর আগে ভূমিহীন হওয়ায় (স্থায়ী ঠিকানা না থাকায়) আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
আসপিয়া জানান, আমি যোগ্যতাবলে সাতটি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলাম। এর মধ্যে হিজলা থানার ওসি জানান, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। কিন্তু আমাদের কোনো জমি নেই। আমরা একজনের জমিতে বছরের পর বছর ধরে বাস করছি। জমি নেই বলে আমার চাকরি হবে না এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। বৃহস্পতিবারে দুপুরে ডিআইজি স্যারের কাছে গিয়ে তাকে অনেক অনুনয়-বিনয় করি। কিন্তু আইনে বাধা থাকায় কিছু করার নেই বলে জানান তিনি।
Tag: English News politics
No comments: