Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » মুক্তির মহানায়কের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ




রক্তাক্ত যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আরাধ্য স্বাধীনতা অর্জিত হলেও তা পূর্ণতা পেয়েছিল আজকের দিনে, যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন তার প্রিয় জন্মভূমিতে। যুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দিনটি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে এরপর থেকেই। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকার পরিবেশ ছিল থমথমে। শেখ মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা পণ্ড হয়ে গেছে- এ খবর দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়লে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় হাজারো মানুষ; অপেক্ষা শুধু নির্দেশের..যুদ্ধ শুরুর নির্দেশ। বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার ঘর থেকে বেরিয়ে জনতার উদ্দেশে বক্তব্যও দেন, কিন্তু তখনও শেষ নির্দেশনা প্রকাশ্যে আনার সময় আসেনি বলেই বিবেচনা করেছিলেন জাতির পিতা। সেদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টকে দেওয়া সংবিধানের খসড়ার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য সময় নির্ধারণের কথা ছিল। এজন্য ইয়াহিয়ার পক্ষ থেকে ফোন আসার কথা ছিল; কিন্তু সেই ফোন আর আসেনি। জেনারেল ইয়াহিয়া খান গোপনে সেদিন সন্ধ্যায় পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান, আর তার নির্দেশনা অনুযায়ী তখন পূর্ব পাকিস্তানে তৎপর হয় তার বাহিনী। ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর পেয়েই ৩২ নম্বরে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। রাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি অংশ ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি আর্মি ঢাকা রেডিওর দখল নিয়ে নেয়, তবে গোপন তিনটি ট্রান্সমিটার আগে থেকে প্রস্তুত রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেগুলোতে টেলিফোনে নিজের ঘোষণা রেকর্ড করান তিনি। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা করেন। যার মধ্য দিয়েই ওই কালরাতে জাতি পেয়ে যায় তার দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বাধীনতার ঘোষণাটা ছিল এমন- ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’ পাকিস্তানী বাহিনীর তাণ্ডবের মধ্যেই রাত ১টার দিকে পাকিস্তানের সেনারা ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান নিয়ে ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১ এপ্রিল তাকে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয় রাওয়ালপিন্ডিতে। তারপর নেওয়া হয় মিয়ানওয়ালির কারাগারে। থাকতে দেওয়া হয় ফাঁসির আসামিদের জন্য নির্ধারিত সেলে। মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে এবং পাঞ্জাবের উত্তরে লায়ালপুর ও শাহিওয়ালের দুটি কারাগারে কাটাতে হয় বঙ্গবন্ধুকে। পাকিস্তান সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ১২টি অভিযোগ এনে ‘বিচার’ শুরু করে। ১২টি অভিযোগের ছয়টির দণ্ড ছিল মৃত্যু এবং অভিযোগগুলোর একটি ছিল ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা’। এই বিচার শেষ হয় চার ডিসেম্বর। সে সময় ‘ইয়াহিয়া তার সেনা কর্তাদের রাওয়ালপিন্ডি ডেকে পাঠিয়ে গুলি করে শেখ মুজিবকে হত্যার জন্য দ্রুত প্রস্তুতির নির্দেশ দিলেন। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তাকে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হলো। নয় মাসের লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ভারতীয় বাহিনী যোগ দেয় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে। ৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুকে মিয়ানওয়ালি কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের একদিন আগে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য ইয়াহিয়ার যে পরিকল্পনা ছিল তা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরদিন ভোররাত চারটায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা আগে জেলের সুপার বঙ্গবন্ধুর সেলের দরজা খুলে ঢোকেন। বঙ্গবন্ধু জানতে চান, ‘আমাকে কি ফাঁসির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?’ তিনি আগেই দেখেছিলেন তার সেলের বাইরে কবর খোঁড়া হয়েছে। জেল সুপার জানান, তাকে ফাঁসির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। তবু সন্দেহ যায় না বঙ্গবন্ধুর। তার ভাষ্যে, ‘আমি তাকে বললাম, যদি ফাঁসিই দেওয়া হয়, তাহলে আমাকে প্রার্থনার জন্য কয়েক মিনিট সময় দিন।’ সুপার বললেন, ‘না না, একদম সময় নেই। আপনাকে এখনই আমার সঙ্গে আসতে হবে, জলদি।’ বঙ্গবন্ধুকে কয়েক মাইল দূরে এক অজ্ঞাত স্থানে কয়েক দিনের জন্য সরিয়ে নেন জেল সুপার। সেখানে নয়দিনের মতো কাটান তিনি। জেলের কর্মকর্তারা জেল সুপারকে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। এরপর এক পুলিশ অফিসার সেই সুপারকে জানান, বঙ্গবন্ধুকে লুকিয়ে রাখার আর প্রয়োজন নেই, জুলফিকার আলি ভুট্টো ১৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করেছেন, তিনি মুজিবের সঙ্গে কথা বলতে চান। গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে আসার পর রাওয়ালপিন্ডিতে নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে। সেখানে রাষ্ট্রপতির ভবনে তাকে গৃহবন্দি করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে আসেন ভুট্টো। এদিকে বাংলাদেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে চাপ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৬৭টি দেশের সরকার প্রধানকে চিঠি দেন। বিশ্ব জনমতের চাপে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ভোরে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। মুক্তির পর তিনি লন্ডন যান। সেখান থেকে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে ১০ জানুয়ারি দিল্লি পৌঁছান। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ ভারতের মন্ত্রিসভার সদস্যরা সংবর্ধনা দেন বঙ্গবন্ধুকে। এরপর যুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর, সেদিনই দুপুরে স্বাধীন বাংলায় পা রাখেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানাতে সেদিন লাখ লাখ মানুষ সেদিন জড়ো হয়েছিল ঢাকা বিমানবন্দরে, সেখান থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানায় বহু মানুষ। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে বাঙালি সেদিন জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ বাতাস। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে খোলা ট্রাকে করে বঙ্গবন্ধু পৌঁছান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে। সেখানে প্রায় ২০ মিনিটের আবেগঘন বক্তৃতায় তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দিদশায় তিনি ফাঁসিকাষ্ঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন, বাঙালিকে কেউ ‘দাবায়ে রাখতে’ পারবে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি, বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।” এরপর থেকেই ইতিহাসের পাতায় দিনটি অমর হয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে। প্রতি বছরের মত এবারেও ৫০ তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশের মানুষ।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply