পূর্ব-ইউক্রেন থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে বিদ্রোহীরা
পূর্ব-ইউক্রেনের অধিবাসীদের রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এতে সেখানকার সংঘাত নতুন রূপ নিয়েছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিয়েভ সরকারের লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
পশ্চিমারা এর আগে বলে আসছিল, প্রতিবেশী দেশটিতে সর্বাত্মক আগ্রাসন চালাতে অজুহাত খুঁজছে মস্কো। সেক্ষেত্রে পূর্ব-ইউক্রেনের সংঘাত রাশিয়ার জন্য মোক্ষম সুযোগ এনে দিতে পারে।
স্বঘোষিত ডোনেটসক গণপ্রজাতন্ত্রের প্রধান ডেনিস পুশিলিন শুক্রবার সামাজিকমাধ্যমে এই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা পূর্ব-ইউক্রেন ছেড়ে চলে যাবেন, তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে রাজি হয়েছে রাশিয়া। যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে দাবি করেছে ক্রেমলিন।
নারী-শিশু ও বয়স্কদের সবার আগে সরিয়ে নেওয়া হবে। আরেকটি স্বঘোষিত অঞ্চল লুহানসকও একই ঘোষণা দিয়েছে। পূর্ব-ইউক্রেনের বিদ্রোহী অঞ্চলগুলোতে লাখ লাখ বেসামরিক লোক বাস করেন। তাদের অধিকাংশই রুশভাষী। ইতিমধ্যে তারা রাশিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
শুক্রবার গত কয়েক বছরের মধ্যে পূর্ব-ইউক্রেনের সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বেশি গোলাবিনিময় ঘটেছে। এতে কিয়েভ সরকার ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পরস্পরকে দায়ী করছে। পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই গোলাবিনিময় রুশ আগ্রাসনের অজুহাত হতে পারে।
চলতি সপ্তাহে সীমান্ত থেকে সেনাপ্রত্যাহারের দাবি করেছিল রাশিয়া। কিন্তু ওয়াশিংটনের মতে, রাশিয়া বরং সীমান্তে সেনা আরও বাড়াচ্ছে। জানুয়ারির শেষ দিকে যেখানে এক লাখ সেনা ছিল, এখন তা বেড়ে এক লাখ ৬৯ হাজার থেকে এক লাখ ৯০ হাজার হয়েছে।
ভিয়েনাভিত্তিক অরগানাইজেশন অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপের এক বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল কারপেন্টার বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ইউরোপে সবচেয়ে বড় সেনা মোতায়েন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকিন বলেন, গেল দুদিন সীমান্তে যা ঘটছে, তাকে মিথ্যা উসকানি হিসেবে সাজাতে পারে রাশিয়া। সেনাপ্রত্যাহারের বদলে সেখানে অতিরিক্ত শক্তি বাড়ানো হয়েছে। ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতে সামরিক বাহিনীর অগ্রগামী ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে ইউক্রেন যুদ্ধ!
সংঘাত সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতা থাকা একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি গোলাগুলি হয়েছে পূর্ব-ইউরোপে। শুক্রবার সকালে ৬০০ বিস্ফোরণ রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও শতাধিক বিস্ফোরণ ঘটেছে। কোনো কোনো বিস্ফোরণ ১৫২ এমএম ও ১২২ এমএম কামান ও বড় মর্টারের বলে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, তারা সর্বত্র গুলি করছে। ২০১৪-১৫ সালের পরে আর এমন গোলাগুলি দেখা যায়নি। অন্যান্য কর্মকর্তারাও বলেন, অস্ত্রবিরতির মধ্যেও সেখানে প্রাণঘাতী লড়াই হয়েছে।
ডোনেটসক থেকে বেসামরিক লোকজন সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর শহরের কেন্দ্রে হুঁশিয়ারি সাইরেন বেজে ওঠতে শোনা গেছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে লোকজন বাসযোগে বেরিয়ে যাওয়া শুরু করেছেন।
তবে এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। পরিস্থিতি সম্ভাব্য বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করে পূর্ব-ইউক্রেনের গোলাগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের দাবি করেছে রাশিয়া।
বিদ্রোহীদের এই ঘোষণার পর রুশ মুদ্রা রুবলের ওপর আরও চাপ বাড়ছে।
কূটনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতির ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছেন উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা। ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালালে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। যদিও ২০১৪ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই রয়েছে মস্কো।
রাশিয়া যা-ই করুক না কেন, পশ্চিমা দেশগুলোর তার মধ্যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার অজুহাত খুঁজছে বলে দাবি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
No comments: