বর্ণাঢ্য যে জীবন
একুশের গানের জন্ম গল্প বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিশেষণ এবং অহংকারের নাম আবদুল গাফফার চৌধুরী। যতদিন রয়েছে এ দেশ, ততদিন অমলিন রয়ে যাবে উজ্জ্বল এই নক্ষত্রের নাম। অসম্ভব গুণী এই ব্যক্তিত্বর অনবদ্য সৃষ্টি ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি। এই একটি সৃষ্টির কারণে বাঙালি চাইলেও কখনো ভুলতে পারবে না তাকে। তবে এর বাইরেও রয়েছে তার বহু সৃষ্টি, বহু অবদান। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলার’ প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন গাফ্ফার চৌধুরী। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মডারেটরের ভূমিকাও পালন করেছেন তিনি। স্বাধীনতার পর ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জনপদের প্রধান সম্পাদক ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তবে এর অনেক আগেই শুরু হয়েছে তার কর্মজীবন। ১৯৫০ সালে 'দৈনিক ইনসাফ' পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ তখন "দৈনিক ইনসাফ" পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে 'দৈনিক সংবাদ' প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। জুনিয়র ট্রান্সলেটর হিসেবে মাসিক বেতন পেতেন ১শ' টাকা। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের 'মাসিক সওগাত' পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন গাফফার চৌধুরী। এসময় তিনি 'মাসিক নকীব'ও সম্পাদনা করেন। একই বছর তিনি আবদুল কাদির সম্পাদিত 'দিলরুবা' পত্রিকারও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। ১৯৫৬ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ওই বছরই তিনি প্যারামাউন্ট প্রেসের সাহিত্য পত্রিকা 'মেঘনা'র সম্পাদক হন। ১৯৫৮ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক পত্রিকা 'চাবুকে’র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। কিন্তু কিছুদিন পর সামরিক শাসন চালু হলে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি মওলানা আকরম খাঁ'র 'দৈনিক আজাদ'-এ সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। এ সময়ে তিনি মাসিক 'মোহাম্মদীর'ও স্বল্পকালীন সম্পাদক হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি দৈনিক 'জেহাদ'-এ বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি সাপ্তাহিক 'সোনার বাংলা'র সম্পাদক হন। পরের বছর ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামেন এবং অণুপম মুদ্রণ' নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। দু'বছর পরই আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে 'দৈনিক আওয়াজ' বের করেন। সেটা বছর দুয়েক চলেছিল। ১৯৬৭ সালে আবার তিনি 'দৈনিক আজাদ'-এ ফিরে যান সহকারী সম্পাদক হিসেবে। ১৯৬৯ সালে পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে সহিংস বিবাদ শুরু হলে তিনি আবার যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে'। ১৯৬৯ সালের পয়লা জানুয়ারি ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়া মারা গেলে তিনি আগস্ট মাসে হামিদুল হক চৌধুরীর অবজারভার গ্রুপের দৈনিক 'পূর্বদেশ'-এ যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র 'সাপ্তাহিক 'জয়বাংলা'র কাজের পাশাপাশি 'দৈনিক আনন্দবাজার' ও 'যুগান্তর' পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর 'দৈনিক জনপদ' বের করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী গুরুতর রোগে আক্রান্ত হলে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হলে স্ত্রীর চিকিৎসার স্বার্থে ১৯৭৪ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস শুরু করেন তিনি। তবে সেখানে থেকেও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে তার কলম সোচ্চার ছিল বরাবর। লন্ডনে থেকেই ঢাকার পত্রিকাগুলোতে তিনি যেমন রাজনৈতিক ধারাভাষ্য আর সমকালীন বিষয় নিয়ে একের পর এক নিবন্ধ লিখে গেছেন, তেমনি লিখেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, স্মৃতিকথা ও প্রবন্ধ। অত্যন্ত সাদামাটা জীবযাপন করতেন গাফ্ফার চৌধুরি। ঘরে লুঙ্গি-শার্ট আর বাইরে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবিতেই ছিলেন বেশ। যাকে বলে একেবারেই বাঙালী কায়দায় তার চলাফেরা। আচার ব্যবহারে ছিলেন বরাবরই বিনয়ী। অসাধারণ তার স্মৃতি, সেই স্মৃতির সুতো দিয়েই তিনি তৈরি করেন ইতিহাসের অনবদ্য নকশী কাঁথা। তার লেখার শৈলী এতোটাই নিপুণ, তার সমর্থক কিংবা ভিন্নমত পোষণকারী যে কেউ-ই পড়ে ফেলেন এক নিঃশ্বাসে। রাজনৈতিক কলাম লেখাতে তার বিকল্প নেই বললেই চলে। লন্ডনে না থেকে বাংলাদেশে থাকলে বরং পেশাগত দিকে আরো বেশি বিকশিত হতেন এই নক্ষত্র। তবে স্ত্রীর চিকিৎসার কারণে স্থায়ী আবাস গড়েছিলেন বিদেশ বিভুঁই লন্ডনে। তার মত ব্যাক্তিত্ব সেখানে এক স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন, গ্রোসারি স্টোরে কাজ করেছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ করেনেনি কখনই। ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মাস দুই আগে লন্ডনের নর্থ উইক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই গেলো ১৫ এপ্রিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার মেয়ে বিনীতা চৌধুরী। শেষ বয়সে লন্ডনের এজওয়ারে কন্যা বিনীতার সেবাতেই ছিলেন তিনি। কন্যা চলে যাওয়ার ঠিক এক মাসের মাথায় চলে গেলেন গাফ্ফার চৌধুরী।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: