Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » কীভাবে শ্রীলঙ্কা এই সংকটে পড়ল




কয়েক মাস ধরে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক পতন প্রত্যক্ষ করছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, যা দেশটির সরকারকে গভীর সংকটে ফেলেছে। প্রশ্ন হতে পারে, ভারত মহাসাগরীয় প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দ্বীপদেশটি কীভাবে এই সংকটে পড়ল। এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার আগে শ্রীলঙ্কার চলমান ঘটনাগুলোতে একবার নজর দেয়া যাক। মূলত অর্থনৈতিক সংকটই দেশটিকে মারাত্মক সহিংসতায় নিপতিত করেছে। সবশেষ গত সোমবার (৯ মে) সকাল থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় ক্ষমতাসীন সরকারের এক সংসদ সদস্যসহ অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। দেশটির প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করেছেন। আর তার ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে এখনো দেশের এই অস্থির পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশটিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। সরকারবিরোধীদের ক্ষোভ মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের অপ্রতুলতা ও নজিরবিহীন লোডশেডিং তথা বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে। এই বিষয়গুলো জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাপকভাবে আঘাত করেছে। সেই ক্ষোভ থেকেই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগ দাবি করে আসছেন তারা। কিন্তু সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা গোতাবায়া পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন। শুধু তাই নয়, বিক্ষোভ দমনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেন। কিছুদিন আগেও শ্রীলঙ্কা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত অর্থনীতির দেশ। মাথাপিছু জিডিপি ছিল ৪ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। শ্রীলঙ্কার ৯৫ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। শিক্ষাব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। ভারতের কেরালার পর দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থাও দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা। কিন্তু শ্রীলঙ্কা এখন ৭৪ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে সংকটজনক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি। কীভাবে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো? শ্রীলঙ্কায় কয়েকদিন ধরে নজিরবিহীন যে জনরোষ বিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে, তা মূলত রাজাপক্ষে ভাইদের ঘিরেই। দেশকে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই দুজনকেই দুষছেন বিক্ষোভকারীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজাপক্ষে সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা শ্রীলঙ্কার আর্থিক খাতকে ব্যাপকভাবে দুর্বল করে ফেলেছে। জাতীয় আয়ের চেয়ে জাতীয় ব্যয় বেড়েছে। এর ফলে রফতানিযোগ্য পণ্য ও সেবার উৎপাদন তলানিতে ঠেকেছে। এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে রাজাপক্ষে সরকারের বড় মাত্রায় কর হ্রাসের পদক্ষেপের কারণে। ২০১৯ সালে ক্ষমতা নেয়ার পরপরই বিতর্কিত এই পদক্ষেপ নেয় সরকার। ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়াও ২ শতাংশ নেশন ডেভেলপমেন্ট ট্যাক্স এবং পে অ্যাজ ইউ আর্ন সিস্টেম বাতিল করা হয়। ফলস্বরূপ, সরকারের রাজস্ব ২৫ শতাংশ কমে যায়। এটি শ্রীলঙ্কাকে আরও বিদেশি ঋণ নিতে বাধ্য করে। শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ এ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই আঘাত হানে করোনা মহামারি। মহামারি মোকাবিলা করতে দেশটির রাজস্ব আয়ের প্রধান ভিত্তি পর্যটন শিল্প রাতারাতি উবে যায়। এ ছাড়া প্রবাসী শ্রমিকরা বিদেশ থেকে কাড়ি কাড়ি যে অর্থ পাঠাত, তা-ও এ সময়ে অনেকটাই কমে যায়। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার বড় উৎস রেমিট্যান্স। করোনার আগে শ্রীলঙ্কা পর্যটন এবং রেমিট্যান্স থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। মহামারির জেরে যেমন পর্যটন খাতের ক্ষতি হয়েছে, তেমনি রেমিট্যান্সের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখতে সরকার বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে মাত্র দুই বছরে রিজার্ভের ৭০ শতাংশের বেশি ফুরিয়ে যায়। বিদেশি ঋণের বিপরীতে শ্রীলঙ্কাকে যেখানে আগামী বছরের মধ্যে ৭.৩ বিলিয়ন সুদ পরিশোধ করতে হবে, সেখানে বর্তমানে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ বিলিয়ন থেকে ২ বিলিয়নের মধ্যে নেমে আসে। কিন্তু জনগণ এ পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। রাজাপক্ষে পরিবারের দায় কতটুকু? শ্রীলঙ্কার চলমান এ সংকটের জন্য দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজাপক্ষে পরিবারকেই দায়ী করছে দেশটির জনগণ। আর এ জন্যই বিক্ষোভের শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন রাজাপক্ষে ভাইদের অপসারণ দাবি করে আসছে সাধারণ জনগণ। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, দেশের স্বার্থের বিপরীতে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধির দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছেন রাজাপক্ষেরা। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগেও রাজাপক্ষে ভ্রাতৃদ্বয় মাহিন্দা ও গোতাবায়াকে ‘বীর’ উপাধি দেয়া হয়েছিল। এখন থেকে ১৩ বছর আগে ২০০৯ সালে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগুরু সিংহলিজদের তামিল বিদ্রোহীবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাজাপক্ষেরা। ওই অভিযানের মধ্য দিয়ে প্রায় ৩০ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। ওই অভিযানের পর গোতাবায়া (৭২) ‘টার্মিনেটর’ বলে পরিচিতি পান। সেই সময় তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান ও তামিলবিরোধী অভিযানের প্রধান কৌশলপ্রণেতা ছিলেন। তামিলবিরোধী অভিযানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠলেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন মাহিন্দা ও গোতাবায়া। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণে একটি প্রত্যন্ত এলাকার একটি প্রভাবশালী জমিদার পরিবার থেকে উঠে আসা রাজাপক্ষেরা বহু বছর ধরে স্থানীয় রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করত। ২০০৫ সালের জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে নেয় পরিবারটি। মাহিন্দা সেবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৫ সালে সাবেক এক সহযোগীর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত টানা ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে রাজধানী কলম্বোয় নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলার পর গোতাবায়ার হাত ধরে ফের ক্ষমতায় আসে রাজাপক্ষে পরিবার। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সময় গোতাবায়া উত্তরাধিকার সূত্রে একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি পেয়েছিলেন। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দ্রুতই কাজে নেমে পড়েন তিনি। তার সরকার কর ছাড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে নগদ অর্থ ছাড়তে শুরু করে। এতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়, কমে যায় কর আদায়। ফলে বাজেট ঘাটতি আরও বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজাপক্ষে পরিবারের এই অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার ফলে বছরের পর বছর ধরে থাকা দীর্ঘস্থায়ী বাজেট ঘাটতি ও জাতীয় আয়ের চেয়ে জাতীয় ব্যয় বৃদ্ধি বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করেছে সরকার? অর্থনীতি ক্রমেই খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যেতে থাকলেও রাজাপক্ষে সরকার বৈদেশিক ঋণের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করে বসে থাকে। মাসের পর মাস ধরে বিরোধী নেতারা ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানালেও পর্যটন শিল্প ঘুরে দাঁড়ানো ও রেমিট্যান্সপ্রবাহ স্বাভাবিক হওয়ার আশায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকে সরকার। শেষে উদ্ভূত পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সরকার ভারত ও চীনের মতো দেশগুলোর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। ভারত চলতি বছর সাকুল্যে সাড়ে ৩ বিলিয়ন আর্থিক সহায়তা দেয়। বলা বাহুল্য, প্রয়োজনের তুলনায় এসব সহায়তা ছিল নিতান্তই অপ্রতুল। নিরুপায় হয়ে গতমাসে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দেশটির সরকার। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply