Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » রাতচরা পাখির




পাখি সন্ধানের খাতিরে অনেক সময় ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়। এমন একটি পোস্টে গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামরে শফি উদ্দীন লিখেছিলেন ‘আমার বাড়িতে দু’টি পাখি আছে যারা দিনে ঘুমায় আর রাতে খেতে বের হয়’। রাত বারটার দিকে তার মন্তব্যটি আমার নজরে পড়তেই তার মোবাইলে কল দিলাম। হয়তো তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তাই কল রিসিভ হলো না। এতো রাতে মানুষ যে ঘুমিয়ে যেতে পারে তা পাখির নেশায় ভুলেই গিয়েছিলাম। অনুমান করছি রাতচরা পাখি হতে পারে। হতাশ হলেও কল্পনায় ভেসে আসছিল বিলুপ্ত প্রায় রাতচরা পাখির নানা দৃশ্য। প্রশ্ন আসছিল পাখি দু’টি তার বাড়িতে কেন ? এমন নানা চিন্তার মধ্য দিয়ে পরদিন সকালে স্নেহের সহকর্মী রমিককে সঙ্গে নিয়ে গেলাম শফি ভাইয়ের বাড়িতে। আকর্ষণীয় কোন পাখি পাবো এমন চিন্তা থেকে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল আমার মনে। আমাকে দেখে শফি ভাই একগাল হেসে সাদরে নিয়ে গেলেন বাড়ির পাশে ছোট্ট একটা বাঁশঝাড়ের নিচে। সেখানে দেখা মিললো একজোড়া পাখির। প্রথম দেখাতেই নিশ্চিত হলাম পাখি দুটি ‘রাতচরা’। দীর্ঘ সময় নিয়ে তাদের নানা অবস্থানের ভিডিও ধারণ ক

রি। মাটি থেকে আনুমানিক ৪০ ফুট উপরে বাঁশের উপরে ঘুমিয়ে থাকার দৃশ্য সত্যিই অসাধারণ। জনমানব চলাচলের খুবই কাছে এভাবে ঘুমাতে দেখে মনে লাগলো প্রশান্তির ছোয়া। নানা অত্যাচারে পাখি যখন বিপন্ন তখন এই জায়গাটাকে নিরাপদ মনে করে কি আরামেই না ঘুমাচ্ছে এই পাখি দম্পত্তি। বুঝতে বাকি রইল না যে এখানে পাখির নিরাপত্তা দেওয়া হয়। শফি উদ্দীন ভাই জানালেন, গেল দুই মাস ধরে পাখি দু’টি এই বাঁশঝাড়ে আছে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাদের দেখতে পাই। আশেপাশের লোকজন যাতে তাদের বিরক্ত না করে সেজন্য সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে। পাড়ার ছেলেপুলেরা পাখি দর্শন করলেও কেউ বিরক্ত করে না। ফলে মানুষের খুব কাছাকাছি বসে ঘুমাতেও তারা ভয় পায় না। রাতচরা দর্শনের এক পর্যায়ে একটি পাখি হালকা চোখ খুলে ক্যামেরার দিকে তাকালো। ঘুমের নেশায় আছন্ন তাই আবার চোখ বন্ধ করে দিল। ভাবলাম আমাদের ক্যামেরা নিরাপদ মনে করেই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। রাতচরা পাখির বর্ণনা: প্রশস্ত লেজের নিশাচর পাখি হচ্ছে রাতচরা। গাছের ডালে কিংবা মাঠিতে শুকনো পাতার উপরে বুক লাগিয়ে ঘুমায়। ধুুসর বর্ণের এ পাখি শুকনো কাঠের রংয়ের সাথে মিশে যায়। মাটিতে কিংবা গাছের ডালে তাই সহজেই ঘুমাতে পারে। দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে গাছের শুকনো পাতা কিংবা মরা ডাল। তাই সহজেই তারা নিজেদের লুকাতে পারে। এ পাখির চিবুক থেকে চোখের পাশ পর্যন্ত রয়েছে খাড়া লোম। আর বুক থেকে পেট পর্যন্ত আড়াআড়ি ডোরা দাগ যা আকর্ষণীয়। মাংসল বাদামি ঠোঁট আর বাদামি চোখ পায়ের পাতা বেগুনি বাদামি। বুকের অংশ সাদা। ঘাড়ের রং মরচে এবং সাদা ফোটা। ডানার পালক পীতাভ এবং পালকের চারটি সাদা ছোপ রয়েছে। লেজের নিচে সাদা পালকের প্রান্ত। পুরুষ ও নারী পাখির গড়ন এবং রং প্রায় অভিন্ন। মূলত এদেরকে বলা হয় ল্যাঞ্জা রাতচরা পাখি। আকর্ষণীয় গড়ন ও রংয়ের কারণে এ পাখি মানুষের মন কাড়ে। বৈজ্ঞানিক নাম: রাতচরা ইংরেজী নাম (Large-tailed Nightjar) লার্জ-টেইলড নাইটজার। বৈজ্ঞানিক নাম (Camprimulgus macrurus) টঙ্কপাখি ও ধুকধুকিয়া পাখি নামেও কোন কোন এলাকার এর পরিচিতি রয়েছে। প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নেমে এলেই শুরু হয় এদের কর্মতৎপরতা। আর সারা দিন কাটে ঘুমিয়ে। এজন্য এদেরকে বলা হয় রাতচরা পাখি। আবাসস্থল: বসতবাড়ির আশে পাশের ঝোপঝাড়, বাঁশবাগান ও গোছগাছালিতে বসে সন্ধ্যার পর থেকেই এরা ডাকতে শুরু করে। চৌঙ্ক – চৌঙ্ক – চৌঙ্ক করে অনেকক্ষণ ধরে ডাকতে থাকে কয়েকটি পাখি। যা কাঠুরিয়ার কাঠ কাটার শব্দের মতই অনেকটা। রাত যতো বাড়তে থাকে ততই ডাকতে থাকে। এক সাথে কয়েকটি পাখি কিংবা জোড়া ধরে অবস্থান করে। এই ডাকের ফাঁকে ফাঁকে পোকামাড়ক ধরে খায় তারা। রাতের আধার কেটে গেলে ডাক বন্ধ করে তারা ঘুমাতে থাকে। যতক্ষণ দিনের আলো থাকে ততক্ষণ তারা ঘুমায়। রাতচরা পাখির খাবার; নিশাচর কীটপতঙ্গ হচ্ছে রাতচরা পাখির প্রধান খাবার। ঝোপঝাড় ও ক্ষেতের উপরে উড়ে গিয়ে খাদ্য গ্রহণ করে। খাদ্যের মধ্যে- মথ, ঝিঝি পোকা, ফড়িং ও গুবরে পোকা অন্যতম। রাতে ফসলের ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসলের বড়ই উপকার করে থাকের রাতচরা পাখিরা। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় তাদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রজনন মৌসূম: মেহেরপুর জেলাসহ দেশে এক সময় রাতচরা পাখি অনেক দেখা গেলেও এখন বিলুপ্তির পথে। উপযোগী প্রজনন ব্যবস্থা না থাকা ও ঝোড়জঙ্গল উজাড় হওয়ায় রাতচরা পাখির জীবন হুমকির মুখে। মূলত মার্চ মাসে মা রাতচরা পাখি ডিম পাড়ে। ঝোপঝাড়ের পাশে মাটিতে শুকনো পাতা জড়ো করে ডিম দেয়। দু’টি ডিম দেয় সাধারণত। ডিম ফুঁটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। পাখি পরিচিতির উদ্দেশ্য হচ্ছে- সবাই যদি পাখির উপকারিতা জানতে পারে তাহলে সংরক্ষণে উদ্যোগ নেবে। সকলের সহযোগিতায় বিলুপ্ত প্রায় পাখি রক্ষা পাবে এ প্রত্যাশা।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply