Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » ৩৫ বছর ধরে স্মৃতিসৌধ পরিষ্কার করছেন সুভাষ




৩৫ বছর ধরে স্মৃতিসৌধ পরিষ্কার করছেন সুভাষ যেতে পারেননি মুক্তিযুদ্ধে। ভাষা অন্দোলনের সময়ও যোগ দিতে পারেননি। শুধু গল্পে শুনেছিলেন দেশ স্বাধীন ও ভাষা অন্দোলনে কত মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন, কত বুদ্ধিজীবীকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। আর এরই প্রতিকৃতি দেখেছেন মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে। ৩০ লাখ শহীদেরর স্মৃতি স্মরণে নমুনা পাথর বসানো রয়েছে থরেথরে। পাশাপশি এক লাখ শহীদ বুদ্ধিজীবীর মাথার খুলির আদলে বসানো হয়েছে পাথর। এগুলো দেখেই মায়া ও দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান রেখে স্মৃতিসৌধ পরিষ্কার করার জন্য হাতে তুলে নেন ঝাড়ু। দর্শনার্থীদের ফেলে যাওয়া আবর্জনা পরিষ্কার করে শহীদদের স্মৃতি সম্বলিত এই স্থানটি ৩৫ বছর পরিচ্ছন্ন রেখেছেন তিনি। নিবেদিত এই মানুষটি হলেন মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়া গ্রামের মৃত অনিল মল্লিকের ছেলে সুভাষ মল্লিক। জানা গেছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্মৃতিসৌধের পুরো এলাকা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কা করের রাখেন। অবৈতনিকভাবে স্মৃতিসৌধ ঝাড়ু দেওয়ায় অনেক সময় বিদ্রুপ করত এলাকাবাসী। তাতে তিনি কর্ণপাত করেননি। বয়স বেড়েছে তবুও ঝাড়ু হাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে ব্যস্ত থাকেন। শুধু ঝাড়ু দেওয়া নয়, দর্শনার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ, প্রথম রাজধানী ও স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারের নানা বিষয়ে গাইড দিয়ে থাকেন। নতুন প্রজন্মের দর্শনার্থীরা সুভাষ মল্লিকের মুখে শোনেন মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ও স্মৃতি কমপ্লেক্সের নানা কথা। সুভাষ মল্লিক জানান, শহীদ ও বুদ্ধিজীবীদের সম্মান দেখিয়ে তিনি এই স্মৃতিসৌধ পরিষ্কার করার দায়িত্ব নেন। দিন মজুরি করে যা আয় হতো তার একটা অংশ দিয়ে ঝাড়ু কিনতেন। এর বিনিময়ে কোনো দিন কারও কাছে হাত পাতেননি তিনি। এমনকি সরকারের কাছেও কোনো দাবি করেননি। পর্যটকদের স্মৃতিসৌধের নুড়ি পাথর, দেয়ালের ইতিকথা ও সিঁড়ির ইতিহাস তুলে ধরেন। এতে খুশি হয়ে অনেকেই তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতেন। এই দিয়ে কোনো মতে সংসার চালানোর পাশাপাশি ঝাড়ু কিনতেন। বয়সের ভারে কর্মক্ষমতায় ভাটা পড়লে সুভাষ উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানায়। তিনি মাসিক কিছু অনুদানের ব্যবস্থা করেন। সুভাষ বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৪ বছরের কিশোর ছিলাম। তখন আমি অনেক চেষ্টা করেও যুদ্ধে যেতে পারিনি। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে অনেক ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৮৭ সাল থেকে এই স্মৃতিসৌধ ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে রাখি। ২৪ বছর নিজের টাকায় ঝাড়ু কিনে স্মৃতিসৌধ পরিষ্কার করতাম। পরে গণপূর্ত অফিস মেহেরপুর থেকে মাসিক ২ হাজার টাকা সম্মানি দেওয়া শুরু করে। তা দিয়ে ঝাড়ু কেনা হতো না।

পরে ১৭ এপ্রিলের মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রীরা এসে আমার কাজে খুশি হয়ে মাসিক ১৭ হাজার টাকা প্রদানের সুযোগ করে দেন। এর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে এক লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। যারা এক সময় আমাকে ঝাড়ুদার বলে বিদ্রুপ করতেন তারাই এখন আমাকে অনেক ভালোবাসেন। এখন আমি অনেক ভালো আছি। তবে নিজের কোনো জমি না থাকায় সরকারিভাবে একটা ঘরের দাবি করেন সুভাষ। সুভাষ মল্লিকের স্ত্রী আন্না মল্লিক বলেন, আমি আমার স্বামীর কাজে কোনো দিন বাধা দেইনি। অনেকেই অনেক টাকা রোজগার করতেন। তাদের দেখে লোভ করিনি। নিজের টাকায় ঝাড়ু কিনে স্মৃতিসৌধ পরিষ্কার করতে আমিও তাকে সহযোগিতা করেছি। স্বামী অসুস্থ হলে আমি স্মৃতিসৌধ পরিষ্কার করতাম। এটা আমাদের একরকম নেশায় পরিণত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়। ২৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রস্থ সিরামিকের ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে লাল মঞ্চ। ২৩ বছরের স্বাধীনতার আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ২৩টি দেয়াল রয়েছে। প্রথমটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পরবর্তীতে প্রতিটি দেয়াল ক্রমান্ময়ে দৈর্ঘ্য এক ফুট ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি করে বাড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে ৯ মাসের যুদ্ধের কথা। শেষ দেয়ালের উচ্চতা ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট। প্রতিটি দেয়ালে ছোট ছোট ছিদ্র রয়েছে। যা দিয়ে বোঝানো হয়েছে শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের চিহ্ন। মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা কলেজশিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় প্রতি বছরই মুজিবনগরে আসি। শিক্ষা সফরে এসেছি বেশ কয়েকবার। সুভাষ আমাদের শিক্ষা সফরের বাস গেটে থামানোর সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন। তিনি মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের নানা ইতিহাস জানাতে থাকেন শিক্ষার্থীদের। অনেক অজানা তথ্য তার কাছ থেকে জানতে পারি। একজন মানুষ নিঃস্বার্থভাবে জীবনের দীর্ঘ সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে আকড়ে ধরে আছেন। এটি একটি দৃষ্টান্ত। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আইয়ুব হোসেন বলেন, মুজিবনগর আম্রকাননে স্থাপিত স্মৃতিসৌধে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পরিচর্যা ও দেখাশোনা করেন সুভাষ মল্লিক। অনেকেই বিষয়টি অনেকভাবে দেখেন। তবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি এটিকে দেশপ্রেম ও মুক্তিযোদ্ধাপ্রেমী মানুষ বলব। সুভাষ মল্লিক মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে বুকে লালন করেই আজও রয়েছে স্মৃতিসৌধের পরিচর্যাকারী হিসেবে। সরকারিভাবে তার জন্য কিছু করা উচিত। মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন সরকার বলেন, সুভাষ মল্লিক দীর্ঘ দিন মজিবনগর স্মৃতিসৌধ ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করছেন। আমরা তার বিষয়ে কিছু করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। সংসার ছেড়ে তিনি জীবনের প্রায় সব সময়ই এমন মহৎকাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তার অনেক বয়স হয়েছে। তিনি কয়েকবার স্ট্রোক করে অসুস্থ ছিলেন। তবুও তিনি তার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ইতোমধ্যে তাকে সরকারি এককালীন বরাদ্দ থেকে মাসিক ১৭ হাজার টাকা দেওয়া শুরু করেছি। আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply