‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানের শিল্পী কে এই শিবলু?
যেখানেই যাই, সবার মুখে মুখে গাইতে শুনি ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি। মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ২৯ জুলাই মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘হাওয়া’ ছবির এ গান যেন হয়ে উঠেছে গণ মানুষের!
সকলের প্লে-লিস্টে পছন্দের গান এখন এটি। এ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন এরফান মৃধা শিবলু। কিন্তু তিনি কে? যার কণ্ঠের গানটি এখন সবার মুখে মুখে?
Reneta June
শিবলু পেশাদার গায়ক নন। তবে ছোটবেলা থেকে গাইতে পছন্দ করেন। বন্ধুদের আড্ডা কিংবা ঘরোয়া পরিসরে গান করেন।
বিজ্ঞাপন
‘সাদা সাদা কালা কালা’ মূল শিল্পী হাশিম মাহমুদ। লেখা ও সুর তারই। ৯০ দশকের শেষের দিকে শাহবাগ, টিএসসি, ছবির হাটে জড়ো হওয়া আড্ডাপ্রিয় মানুষদের কাছে প্রিয় গান ছিল ‘সাদা সাদা কালা কালা’। পরিচালক সুমন তৎকালীন ঢাবির চারুকলা অনুষদে পড়তেন। হয়তো তখন ঠিক করেন এ গানের যথাযথ মুল্যায়ন একদিন করবেন! তাই করেছেন। প্রকৃত শিল্পী হাশিম মাহমুদ বার্ধ্যক্যজনিত কারণে অসুস্থ থাকায় চেষ্টা করেও তাকে দিয়ে গাওয়াতে পারেননি। পরে এরফান মৃধা শিবলুকে দিয়ে গাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন পরিচালক সুমন। প্রকাশের ১২ দিনের মাথায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এ গান।
গানটির সাফল্যে প্রশংসায় ভাসছেন এরফান মৃধা শিবলু। চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে আলাপে সাফল্যের নেপথ্যে থাকা গানটির কারিগর হাশিম মাহমুদকে বারবার স্মরণ করছিলেন তিনি।
বলছিলেন, মানুষ গানটি এতো পছন্দ করায় সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানাই। সুমন ভাইয়ের প্রথম ছবিতে আমার প্লেব্যাক, এটা অনেক বড় পাওয়া। হাশিম ভাইয়ের এই গান আগে অনেকেই গাওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে কেউ চেষ্টা করেনি। হাশিম ভাইকে দিয়ে গানটি করানোর চেষ্টা করা হয়, কিন্তু উনি অসুস্থ থাকায় সম্ভব হয়নি। তবে আমি আমার মতো করে গাওয়ার চেষ্টা করেছি।
গানটিতে কণ্ঠ দেয়ার আগে মূল শিল্পী হাশিম মাহমুদকে দিয়ে গাওয়াতে না পারায় কিছুটা খারাপ লাগা কাজ করছিল বলে জানান শিবলু। তিনি যেমনটা বললেন, গানটি যে মানুষ পছন্দ করবে সেই ধারণা আগে থেকে ছিল। শুধু ‘সাদা সাদা কালা কালা’ নয়, হাশিম মাহমুদ ভাইয়ের অনেক গান আছে যা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। তার সেইসব গান যদি সংগীত সংশ্লিষ্টরা তাকে দিয়ে করানোর উদ্যোগ নেন তাহলে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাবো। তবে আমি মনে করি ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের এ গানটির মধ্য দিয়ে হাশিম মাহমুদ ভাই দেশবাসীর মাধ্যমে আরও বেশি পরিচিতি পেলেন।
নিজের কথাও শোনালেন এরফান মৃধা শিবলু। জানালেন, তিনি ঢাকার মানুষ। শৈশব, যৌবন সবকিছু কেটেছে ঢাকায়। তবে বর্তমানে যেহেতু গায়ক হিসেবে শিবলুর পরিচিতি বেড়েছে, তাই গান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি শুরুতে বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি মা ও মামা গুণগুণ করে গাইতেন। তখনই গানে ভালা লাগা শুরু। পড়ে নজরুল শিক্ষালয় ও ছায়ানটে কিছুদিন প্রাতিষ্ঠানিক গানের তালিম নিয়েছিলাম। ঘরোয়া আড্ডা ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে গান করেছি। এছাড়া আমার অফিশিয়ালি ‘হাওয়া’র আগে কোনো অডিও গান বা মিউজিক ভিডিও করা হয়নি। ‘হাওয়া’ দিয়ে আমার মূল প্ল্যাটফর্ম বা প্লেব্যাক-এ প্রথম গান করা হলো। পরিচালকের সিদ্ধান্তে আমি শুধু গানটায় আছি, ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রে সামনে না থাকলেও এর পিছনে কাজ করছি।
নিয়মিত বিজ্ঞাপন সেক্টরে কাজ করেন এরফান মৃধা শিবলু। পাশাপাশি ‘সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার’ (ক্যাট) নামে একটি পেশাদার মঞ্চ নাটকের দলে ১২ বছর ধরে কাজ করছেন। দুই বছর ছিলেন সিসিমপুরে। শিবলু জানালেন, সিসিমপুরের পর অনিমেষ আইচের কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন। তার সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন। সেখান থেকে মেজবাউর রহমান সুমনের সঙ্গে পরিচয় ২০১২ সালে। এরমধ্যে গেরিলা, অচেনা হৃদয়, না মানুষ এই তিনটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। আগামীতে তার আরও দুটি নতুন গানের কাজ চলছে বলে কথা প্রসঙ্গে জানান শিবলু।
এরফান মৃধা শিবলু বলেন, আমি নাটক, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র সব মাধ্যমে কাজ করি। পাশাপাশি গানের চর্চাও আছে। সবকিছুর উপরে গান নিয়ে আমি বরাবরই ইমোশনাল। ৪০টি মতো বিজ্ঞাপন করেছি। নাটক করেছি ২৫টির মতো। কাজল আরেফিন অমির জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ (সিজন ৩)-এ প্রথম দিকের এপিসোডে কাজ করি। পলাশ (জিয়াউল হক পলাশ)-এর সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক থাকায় সে ব্যাচেলর পয়েন্টে ডাকে। অমি ভাইয়ের ফ্যান ছিলাম, নিজেও এ নাটক নিয়মিত দেখতাম; মারজুক ভাই, চাষী ভাইকেও ভালো লাগতো, তাই সুযোগ পাওয়ায় এই নাটকে যুক্ত হই।
No comments: