রাশিয়ান সোনা নিয়ে কী হচ্ছে?
রাশিয়া থেকে সোনা রফতানি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং গ্রুপ অব সেভেনসহ (জি-৭) বিশ্বের নেতৃস্থানীয় কিছু অর্থনীতির দেশ। পরিকল্পনাটি চলতি সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রস্তাবটি গত মাসে বাভারিয়াতে অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে প্রথম উত্থাপিত হয়। তবে রাশিয়ান সোনা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ভোটাভুটির আগেই এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং জাপান।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের (এলবিএমএ) এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পরিশোধিত রাশিয়ান সোনা চিহ্নিত এবং তারিখযুক্ত। তাই সহজভাবেই তা সনাক্ত করা যায়। ২৪ জুন থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো সমস্ত নতুন রাশিয়ান সোনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে এই তারিখের আগে উৎপাদিত এবং দেশের বাইরে থাকা রাশিয়ান সোনার ক্ষেত্রে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।’
কিছু দেশ কি ইতোমধ্যে রুশ সোনা নিষিদ্ধ করেনি?
লন্ডনের বাজারে রাশিয়ান সোনার ওপর অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গেল মার্চে এলবিএমএ রাশিয়ান সোনা পরিশোধককে তার স্বীকৃত তালিকা থেকে সরিয়ে দিলে বেশিরভাগ বিক্রেতা এটির ব্যবসা বন্ধ করে দেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্রিটেন যখন এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করে, তখন বরিস জনসনের সরকার দাবি করেছিল যে ক্রেমলিনের সঙ্গে মিলিত হয়ে অনেক রাশিয়ান অলিগার্কদের কাছে সোনার রফতানি মূল্যবান হয়ে উঠেছে। কারণ তারা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলোকে বাইপাস করার চেষ্টা করছিল।
আরও পড়ুন: স্বর্ণের দাম ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন
বাজার বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, নিষেধাজ্ঞার প্রভাবগুলো অর্থনীতির চেয়ে রাজনৈতিক বেশি হতে পারে। কারণ রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ইতোমধ্যেই সোনার জন্য তাদের ইউরোপীয় এবং মার্কিন বাজারগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
সোনা কেন টার্গেট?
কার্যকরীভাবে একটি নিষেধাজ্ঞার মানে হলো এটি রাশিয়ান খনি কোম্পানি এবং ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি রুশ ধনীদের নগদ টাকার বিনিময়ে সোনা পাওয়া কঠিন করে তুলবে।
এসব পদক্ষেপের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো রাশিয়ার প্রধান আয়ের উৎস সীমিত করে যুদ্ধের ময়দানে তাদের দুর্বল করা।
রুশ অর্থনীতিতে সোনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বর্ণ উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া। মূল্যবান এই ধাতু রফতানি করে ২০২১ সলে দেশটি ১৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বলে অনুমান করা হয়। সোনার খনির তালিকায় শীর্ষে থাকা অন্য দুটি দেশ চীন ও অস্ট্রেলিয়া।
রুশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গত বছর রাশিয়া ৩১৪ টন সোনা উৎপাদন করেছিল, যা বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত সোনার প্রায় ১০ শতাংশ।
রাশিয়ান সোনা উৎপাদকরা প্রধানত তাদের এ পণ্য দেশীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করে, যা পরে মস্কো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরবরাহ কিংবা রফতানি করা হয়। রাশিয়ার বৃহত্তম সোনা উৎপাদক কোম্পানি পলিস। এরপরই রয়েছে পলিমেটাল।
আরও পড়ুন: মুদ্রাস্ফীতি রুখতে স্বর্ণমুদ্রা চালু করছে জিম্বাবুয়ে
গত এক দশকে রাশিয়ার সিংহভাগ সোনা পাঠানো হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বুলিয়ন ট্রেডিং সেন্টার যুক্তরাজ্যে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান ডাটাবেস কমট্রেড-এর তথ্য অনুসারে, ব্রিটেন গত বছর ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন মূল্যের রাশিয়ান সোনা আমদানি করেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক ও কাজাখস্তানের মতো দেশগুলোতেও সোনা রফতানি করেছে রাশিয়া। ফলে সোনার ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটি সাময়িক কিছু সমস্যার মুখে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে আর্থিক পরিষেবা সংস্থা সিটি ইনডেক্সের বাজার বিশ্লেষক ফাওয়াদ রাজাকজাদার মতে, ‘এটি রাশিয়ান অর্থনীতির জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলোর মধ্যে অন্যতম।’
নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমা বাজারে সরবরাহের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে?
জি-৭ এর নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব সোনার বাজারে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে না ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি)।
সংস্থাটি বলছে, রাশিয়া সোনার একটি বড় উৎপাদক দেশ হলেও দেশটির নতুন সোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা বাজারে লক্ষ্যণীয় কোনো প্রভাব ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়।
কিন্তু সরবরাহে সামান্য ঘাটতির কারণে কি সোনার দাম বেড়ে যেতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বাজার বিশ্লেষক ফাওয়াদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সোনার দাম আসলে অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ রাশিয়ান সোনার ওপর নিষেধাজ্ঞার কোনো প্রভাব বাজারে নেই। নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সীমিত হতে পারে, কারণ এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যে রাশিয়ান সোনার ব্যবহার সীমাবদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।’
আল-জাজিরা অবলম্বনে
Tag: English News lid news others world
No comments: