Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » ইস্তাম্বুলকে কেন দ্বীপে পরিণত করতে চান এরদোয়ান?




পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শহরগুলোর একটি হলো তুরস্কের ইস্তাম্বুল। এই শহরের এক পাশে ইউরোপ, অন্যদিকে এশিয়া। আর মাঝখানে বয়ে গেছে বসফরাস প্রণালি। ইস্তাম্বুলের সৌন্দর্যের মূল উৎসই হলো এই বসফরাস প্রণালী। ছবি: সংগৃহীত তবে ২০১১ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান এর বিকল্প জলপথ তৈরির ঘোষণা দেন। শুরু করেন 'ইস্তাম্বুল ক্যানাল প্রজেক্ট'। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ব্যয়বহুল প্রজেক্টের কারণ কী? কেন এরদোয়ানের মতো চৌকস রাজনীতিবিদ গোছানো ইস্তাম্বুলকে দ্বীপ শহরে রূপান্তিরত করার প্ল্যান করেছেন? এতে কারা সুবিধা ভোগ করবেন আর কাদের ক্ষতি হতে পারে? ইস্তাম্বুল ক্যানাল প্রজেক্টের উদ্দেশ্য কী? ইউরোপের প্রবেশদ্বার, আন্তঃমহাদেশীয় শহর, ইউরোপের বৃহত্তম শহর, রোমান, বাইজেন্টাইন এবং অটোম্যান সাম্রাজ্যের রাজধানী। কী নেই ইস্তাম্বুলে! তাই এই ইস্তাম্বুল ক্যানাল প্রজেক্ট নিয়ে বিশ্ববাসীর জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। ইস্তাম্বুল ক্যানাল প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল শহর ইস্তাম্বুলের ইউরোপীয় অংশকে দ্বিখণ্ডিত করে একটি খাল খনন করা এবং এর মধ্য দিয়ে কৃষ্ণসাগর ও মার্মারা সাগরকে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করা। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বৈশ্বিক ভূরাজনীতি ও ভূ–অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসবে। অনেকের ধারণা, এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রত্যক্ষভাবে এই অঞ্চলের এবং পরোক্ষভাবে সমগ্র বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে দেবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এই অতি উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। আর এটি যদি কোনোভাবে বাস্তবায়িত হয়েও যায়, তাহলে এটি থেকে প্রাপ্ত লাভের পরিমাণের চেয়ে এর ফলে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে অনেক বেশি। খাল খননের অর্থায়ন 'ইস্তাম্বুল ক্যানাল প্রজেক্ট' নিঃসন্দেহে এটি বেশ ব্যয়বহুল একটি প্রজেক্ট। এরদোয়ান সরকার এর ঘোষণা দিয়েছে ঠিকই, তবে তারাই এটিকে উদ্ভট প্রকল্প হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। পুরো প্রকল্প বাস্তাবায়নে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে এটির কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ইস্তাম্বুল ক্যানাল প্রজেক্টে কারা লাভবান হবেন? তুরস্ক সরকারের দাবি, বসফরাস প্রণালি সুয়েজ খাল থেকেও অনেক ব্যস্ত জলপথ। খালটি নির্মিত হলে তুর্কি জলসীমা দিয়ে নৌযান চলাচলের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে, এই অঞ্চলে নৌ পরিবহন আরো নিরাপদ হবে, চলাচলকারী নৌযানগুলো ইস্তাম্বুলের ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলো থেকে দূরে সরে যাবে, মার্মারা সাগর থেকে কৃষ্ণসাগরে প্রবেশের ক্ষেত্রে নৌযানগুলোর সময় সাশ্রয় হবে এবং তুর্কি সরকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুল্ক আদায় করতে পারবে। সর্বোপরি ইস্তাম্বুলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নাকি এর পেছনে তুরস্কের অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে? ইস্তাম্বুলের ভৌগলিক অবস্থানের গুরুত্ব এ বিষয়ে গভীরে যাওয়ার আগে তুরস্কের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেয়া জরুরি। ইস্তাম্বুলের এশীয় ও ইউরোপীয় অংশদ্বয়কে আলাদা করেছে বসফরাস প্রণালী। এই প্রণালীর মাধ্যমে কৃষ্ণসাগর ও মার্মারা সাগর পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। এদিকে, দার্দানেলিস প্রণালী মার্মারা সাগরের সঙ্গে ভূমধ্যসাগর ও এজিয়ান সাগরকে যুক্ত করেছে। অর্থাৎ, বসফরাস ও দার্দানেলিস প্রণালীদ্বয়ের মাধ্যমে কৃষ্ণসাগর ভূমধ্যসাগর ও এজিয়ান সাগরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যদি তুরস্ক বাদে কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী অন্য রাষ্ট্র যেমন, রাশিয়া, ইউক্রেন, রুমানিয়া, জর্জিয়া ও বুলগেরিয়ার মত দেশগুলো যদি তাদের জাহাজ ভূমধ্যসাগরে পৌঁছাতে চায়, সেক্ষেত্রে তাদেরকে বসফরাস ও দার্দানেলিস প্রণালী দুটি অতিক্রম করতে হবে। অন্যদিকে, কৃষ্ণসাগরের তীরে অবস্থিত নয়, এমন কোনো রাষ্ট্র যদি কৃষ্ণসাগরে তাদের জাহাজ পাঠাতে চায়, সেক্ষেত্রে তাদেরকেও দার্দানেলিস ও বসফরাস প্রণালী দুটি অতিক্রম করতে হবে। বর্তমানে এই দুটি প্রণালীই তুরস্কের নিয়ন্ত্রণাধীন। প্রশ্ন হচ্ছে এই নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কীভাবে তুরস্কের হাতে গেল? উত্তর হলো মন্ট্রেক্স কনভেশন। মন্ট্রেক্স চুক্তি বসফরাস প্রণালী সামরিক এবং বাণিজ্যিক দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথ। তাই এই প্রণালীকে, কীভাবে ব্যবহার করতে পারবে, তার জন্য রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যাকে মন্ট্রেক্স চুক্তি বলা হয়। এই কনভেনশনের মাধ্যমে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলো উভয়েরই কিছু সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা হয়েছে। যেমন, এই চুক্তির কারণে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর নৌবহর কৃষ্ণসাগরে প্রবেশ করতে পারছে না। তাই চাইলেই যুক্তরাষ্ট্র কৃষ্ণসাগরে গিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের পূর্ণ নৌশক্তি ব্যবহার করতে পারে না। অন্যদিকে, একই কারণে মস্কোর নৌবহরও ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করতে পারে না। তুরস্ক আসলে কী চায়? বর্তমানে মস্কোর সঙ্গে আঙ্কারার বিস্তৃত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কার্যত তুরস্ক ও রাশিয়া পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। এক্ষেত্রে তুরস্ক পশ্চিমা বিশ্বের নিকটবর্তী এবং এজন্য তুর্কীয়ে নেতৃবৃন্দের একটি অংশ চান, কৃষ্ণসাগরে যুক্তরাষ্ট্র নৌ আধিপত্য বিস্তার করুক। তাই তারা এমন একটি বিকল্প জলপথ তৈরি করতে চান যেখানে নৌযান চলাচলের ক্ষেত্রে মন্ট্রেক্স কনভেনশন চুক্তি প্রযোজ্য হবে না। ন্যাটো ডিফেন্স কলেজ ফাউন্ডেশনের বক্তব্য অনুসারে এটি স্পষ্ট যে, তুর্কীরা ওই খালটি নির্মাণের পেছনে অর্থনৈতিক যুক্তি দেখালেও তাদের মূল উদ্দেশ্য ভূরাজনৈতিক। তারা ভূকৌশলগতভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথের ওপর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব বজায় রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ভূরাজনৈতিক সুযোগ–সুবিধা আদায় করে নিতে ইচ্ছুক। সমালোচকরা বলছেন, ইস্তাম্বুল খাল খননের মাধ্যমে পশ্চিমা কিংবা রাশিয়া কোনো পক্ষেরই তল্পিবাহক না হয়ে তুরস্ক নিজের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভূ-রাজনৈতিক খেলায় একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। আর এই লক্ষ্যেই এরদোয়ান সরকার ইস্তাম্বুল খাল তৈরি করতে চায়, যা মন্ট্রেক্স চুক্তির শর্তেও জালে আবদ্ধ থাকবে না। ভূরাজনীতিতে তুরস্ক এরদোয়ান বলেছেন, "তুরস্ক যদি একটি বৈশ্বিক খেলোয়াড় হতে চায়, সেক্ষেত্রে ইস্তাম্বুল খাল কেবল একটি স্বপ্ন নয়, এটি একটি প্রয়োজন।" বর্তমানে বিশ্বের যে পরিস্থিতি, তাতে তুরস্ক অলরেডি জিও পলিটিক্সের একটি ফ্রেম দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। কিভাবে? আরও পড়ুন: জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত জার্মানি? প্রথমত, রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলতে চায় তুরস্ক। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর তুরস্ক বলেছে, রাশিয়ার আক্রমণ অগ্রহণযোগ্য। এদিকে, মন্ট্রেক্স চুক্তি অনুযায়ী বসফরাস প্রণালি দিয়ে রুশ যুদ্ধ জাহাজ কৃষ্ণ সাগরে যেতে বাধা দিচ্ছে না এরদোয়ান সরকার। আবার রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞারও বিরোধিতা করেছে তুরস্ক। এসবকিছুর মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি সহযোগিতার চুক্ত বহাল রয়েছে। যদিও সিরিয়া এবং লিবিয়ায় রাশিয়ার নীতির বিরোধীতা করে তুরস্ক। আরও পড়ুন: সিরিয়ায় তুরস্ককে ‘সংযম’ দেখানোর আহ্বান রাশিয়ার সম্ভাব্য সংকট ইস্তাম্বুল খাল খনন পরিকল্পনা নিয়ে তুরস্কের পরিবেশবাদীরা শুরু থেকেই বেশ সন্দিহান ছিলেন, এর বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। সমালোচকদের মতে, এই প্রকল্প শেষ হওয়ার পর প্রথম যে বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলবে তা হলো, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বেঁচে থাকার অধিকার। এছাড়া ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংকটের সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাই সময়ই বলে দেবে এই ব্যয়বহুল ক্যানাল প্রজেক্ট ইতিবাচক হবে নাকি বৈশ্বিক সঙ্কটকে আরও উসকে দেবে।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply