ব্রিটেনের রাজনৈতিক সংকট লেবার পার্টি কি ক্ষমতায় ফিরবে? বরিস জনসন সরে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির (টোরি) হাল ধরেছিলেন লিজ ট্রাস, হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার হাত ধরেই বরিসের সময়কার অস্থিতিশীল অবস্থা কাটিয়ে উঠবে ব্রিটেন, এমনটাই আশা ছিল সংশ্লিষ্টদের। তবে তেমন কিছুই ঘটেনি, উল্টো ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মাথায় পদত্যাগ করেছেন ট্রাস। নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ঋষি সুনাক। তবে রাজন
ৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের রাজনীতিও এখন গভীর সংকটে। আর এসব সংকটই নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে বিরোধী লেবার পার্টিকে। ২০১০ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভদের জয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হন ডেভিড ক্যামেরন। সেই থেকেই টোরিদের অপসারণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে লেবার পার্টি। বিশ্লেষকরা বলছেন, কনজারভেটিভ পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দেশ পরিচালনায় দলটির একের পর এক ব্যর্থতার পরিচয়, জনসমর্থন কমে যাওয়াসহ নানা কারণে এক দশকেরও বেশি সময় পর পরবর্তী অর্থাৎ ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় ফেরার ‘ভালো সুযোগ’ রয়েছে লেবার পার্টির সামনে। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়্যাল হলওয়ের রাজনীতির অধ্যাপক নিকোলাস অ্যালেন সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, লিজ ট্রাসের প্রস্থান এবং কনজারভেটিভদের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে শুধু জয় নয়, বড় ধরনের জয় পাওয়ার প্রতিটি সুযোগ রয়েছে লেবারদের সামনে। দলটিকে এখন অবশ্যই টোরিদের পরাজিত করে ক্ষমতায় ফিরে আসার সক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে। নিকোলাসের মতে, কনজারভেটিভরা তাদের খ্যাতি এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করে ফেলেছে-জরিপের এমন তথ্য যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে লেবার পার্টির সামনে পরবর্তী অন্তত দুটি সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি হলে, দলটি একটি টেকসই পরিকল্পনা নেয়ার পাশাপাশি ব্রিটেনের অর্থনীতি ও সমাজকে তাদের পছন্দ অনুযায়ী পরিবর্তন করার সুযোগ পাবে। তবে এক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই নিজেদের আত্মতুষ্টি এড়াতে হবে। ‘আমরা প্রস্তুত’ ক্ষমতায় ফেরার মধ্য দিয়ে লেবার পার্টি ব্রিটেনকে চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে টেনে তুলতে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন দলটির নেতা কেয়ার স্টার্মার। সম্প্রতি এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, টোরিদের ব্যর্থতার ১২ বছর পর ব্রিটিশ জনগণ এখন বিশৃঙ্খলার এই ঘূর্ণায়মান পরিস্থিতির চেয়ে অনেক ভালো কিছু প্রত্যাশা করে। দায়িত্ব নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে র্স্টার্মার বলেন, ‘আমরা সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুত’। আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে লাগামহীন বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম এছাড়া গেল সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে লেবার পার্টির সম্মেলনের সময়, ব্রিটেনের উন্নতির জন্য দলীয় এজেন্ডার রূপরেখা দেন স্টার্মার। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞের দাবি, স্টার্মার যে রূপরেখা ঘোষণা করেছেন তার বেশিরভাগই সুসংহত পরিকল্পনার পরিবর্তে কেবলই প্রতিশ্রুতি ছিল। ‘হাত বাঁধা’ রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক লিন বেনির মতে, লেবার পার্টিকে তাদের নীতিগত অগ্রাধিকার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানাতে হবে এবং লেবার সরকার প্রকৃতপক্ষে পুনর্বন্টনমূলক হবে কিনা, সে বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। তারা কীভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, সে সম্পর্কে জনগণকে আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে তাদের।’ লিন বলেন, ‘ব্রিটিশ অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থার কারণে স্টার্মারের হাত কিছুটা বাঁধা। যার অর্থ, তিনি খুব বেশি প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন না আমি মনে করি, লেবারদের সম্পর্কে দেশের ভোটারদের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে। ক্ষমতা নিয়ে লেবার পার্টি আসলে কী করবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’ এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো বার্তা বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন কিংবা দলকে চাঙা করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেনি লেবার। তবে প্রাথমিকভাবে টোরিদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং বর্তমান টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে তারা উপকৃত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বরিস জনসনের অশান্ত শাসনামল এবং ট্রাস ও তার ব্যর্থ ‘মিনি-বাজেট’ যুক্তরাজ্যজুড়ে অস্থিতিশীল এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যার ফলে কনজারভেটিভ সরকার নিয়ে জনসাধারণ মূলত ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এ কারণেই অনেকে এখন বিকল্প ভাবছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরিস জনসন এবং লিজ ট্রাসের ব্যর্থতা এবং দেশকে আঁকড়ে ধরে থাকা গভীর কাঠামোগত সমস্যা, বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি, বিদ্যুতের দাম ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি কনজারভেটিভদের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। এসব সমস্যা থেকেই লেবারদের উত্থান হতে পারে। ২০০১ সালে টনি ব্লেয়ার লেবারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পর এই প্রথম কনজারভেটিভদের তুলনায় জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে লেবার পার্টি। অন্তত সাম্প্রতিক কিছু জরিপের ফল তা-ই বলছে। নতুন নির্বাচন জনপ্রিয়তার সুযোগ কাজে লাগাতে এরই মধ্যে আগাম সাধারণ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে লেবার পার্টি। তবে আপাতত সেই সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ ফিক্সড-টার্ম পার্লামেন্ট অ্যাক্টের অধীনে, আগাম নির্বাচনের জন্য এই ধারণায় সমর্থন থাকতে হবে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের, যা বর্তমানে নেই। ২০১৯ সালে বরিস জনসনের ভূমিধস বিজয়ের পর থেকে হাউস অব কমন্সে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে টোরিদের। এছাড়া লিজ ট্রাসের পর ঋষি সুনাক ক্ষমতায় আসায়, রাজনীতির মোড় আরও ঘুরেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সামগ্রিকভাবে লেবারদের জন্য সুনাক হবেন বড় হুমকি। কারণ তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি এবং স্পষ্টতই বরিস কিংবা ট্রাসের তুলনায় তিনি আরও দক্ষ। তবে আগের দুই প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতা ব্রিটিশ অর্থনীতি ও রাজনীতিতে যে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে, তা কাটিয়ে উঠে পরবর্তী নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে আনা বেশ কঠিনই হবে নতুন কনজারভেটিভ নেতার জন্য। অপেক্ষার খেলা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, বর্তমানে কিছুটা আরামদায়ক অবস্থানেই রয়েছে লেবার পার্টি। ব্রিটিশ অর্থনীতি এবং জাতীয় বাজেট যখন ভুগছে, তখন একরকম অপেক্ষার খেলা খেলছে দলটি। লেবারদের পক্ষে যা কথা বলছে তা হলো, আগের নির্বাচনের তুলনায় দলটি অন্ততপক্ষে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যথেষ্ট যোগ্য বলেই বিবেচিত হচ্ছে অনেকের কাছে। জেরেমি করবিনের পর ২০২০ সালে দলীয় নেতা হিসেবে স্টার্মার নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আরও মধ্যপন্থী, কম বিভাজনকারী দল এবং নেতৃত্বের দিকে পরিবর্তিত হয়েছে লেবার। আরও পড়ুন: ঋষি সুনাকের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক লিন বেনি বলেন, দলটি ২০১৯ সালে একটি অপমানজনক পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিল, যা কর্বিন সমর্থকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল। যদিও তাদের বেশিরভাগই দলে রয়ে গেছেন। সেই তুলনায় স্টার্মার স্পষ্টতই আদর্শগতভাবে আরও মধ্যপন্থী এবং কৌশলগতভাবে আরও সতর্ক। যদিও বর্তমান লেবার পার্টি ঠিক কেমন দল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। কারণ নীতির বিচারে দলটিকে যাচাই করার মতো নতুন কিছু নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। টনি ব্লেয়ারের মূল অগ্রাধিকার ছিল ‘অর্থনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা’। আর নতুন লেবার পার্টির উদ্দেশ্য আরও স্পষ্ট। আগামী নির্বাচনে জয়ের সব সম্ভাবনা থাকলেও, ক্ষমতায় যেতে হলে রাজনৈতিক কৌশলে লেবার পার্টিকে আরও উন্নতি করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর লেবাররা সত্যিই ক্ষমতায় ফিরতে পারবে কিনা, কোনো ‘অঘটন’ না ঘটলে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সাল পর্যন্তই।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: