Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ রাজপরিবারকে কি মাটিতে টেনে নামালেন হ্যারি?




আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ রাজপরিবারকে কি মাটিতে টেনে নামালেন হ্যারি? বিশ শতকের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্যগুলোর একটি। দুটি অল্পবয়সী ছেলে, দুজন

ই রাজপুত্র, তাদের অকালপ্রয়াত মায়ের কফিনের পেছনে পেছনে হাঁটছে। এ দৃশ্য পুরো বিশ্ব দুঃখ ভারাক্রান্ত মন ও নানা শঙ্কা নিয়ে অবলোকন করেছে। রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়ানাকে যখন সমাধিতে শুইয়ে দেয়া হলো, তখন কচি মুখের দুই শিশুমন কী ভাবছিল; কতটা ব্যথা তারা পেয়েছিল, তা হয়তো অনেককেই ভাবিয়েছিল। কেউ কেউ হয়তো এ ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল, মা-মরা ছেলে দুটি কীভাবে বাঁচবে! কেমন হবে তাদের ভবিষ্যৎ! রাজপরিবারকে কি মাটিতে টেনে নামালেন হ্যারি? এরপর দিন, মাস ও বছর করে একে একে ২৫ বছর পার হয়ে গেছে। সেই দিনের দুই অনাথ শিশু প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি আজ পরিণত যুবক। কিন্তু মা ছাড়া কীভাবে বড় হয়েছেন, শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন-এই বড় হয়ে উঠার প্রক্রিয়ায় যেসব অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে, সেসব কথাই গত কয়েক বছর ধরে বলে আসছিলেন প্রিন্স হ্যারি। সবশেষ নিজের স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’-এ আরও সবিস্তারে তুলে ধরেছেন তিনি। এর মধ্যে তার নিজের একান্ত ব্যক্তিগত অনেক কথা যেমন উঠে এসেছে, একইভাবে যে পরিবারে তিনি বড় হয়েছেন সেই ব্রিটিশ রাজপরিবারের অন্দর মহলের অজানা অনেক কথাই সামনে আনার সাহস দেখিয়েছেন হ্যারি। বলা চলে, রীতিমতো বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজপরিবারের মুখোশ উন্মোচন করেছেন তিনি। প্রায় দুই যুগ ধরে নিজ পরিবারের সদস্যদের যেসব অন্যায়-অবিচার তাকে সহ্য করতে হয়েছে, তা জনসমক্ষে ফাঁস করে দিয়েছেন। এরই মধ্যে তা রাজপরিবারকে সংকটে ফেলেছে। স্বাধীনচেতা হ্যারি ব্রিটেনের রাজপরিবারের হাজার রকমের নিয়মকানুন। অবশ্যই সেই নিয়মের তোয়াক্কা কোনোদিনই খুব একটা করেননি স্বাধীনচেতা প্রিন্স হ্যারি। অভিযোগ রয়েছে, রাজপরিবারের কঠোর নিয়মকানুনের ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন মা প্রিন্সেস ডায়ানাও। একপর্যায়ে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কথিত আছে, সেই কারণেই অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে তাকে। ছোট ছেলে বরাবরই মায়ের দেখানো পথেই হেঁটেছেন। আরও পড়ুন: মেগান ইস্যুতে রাজপরিবার নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য হ্যারির ‘লাগামহীন’ জীবনযাপনের নিরন্তর অভিযোগ থেকে স্ত্রী মেগানকে নিয়ে রাজবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া। হ্যারিকে নিয়ে চর্চার শেষ নেই। কেউ বলেন, তিনি ব্রিটেনের রাজপরিবারের অচলায়তন ভেঙে দেয়া বজ্রনির্ঘোষ। সমালোচকদের কাছে তিনি পাগল-বেয়াদপ, যিনি মানেন না কোনো নিয়ম। রাজপরিবার তো বটেই, পুরো যুক্তরাজ্যের সম্মানই নাকি ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছেন তিনি। তবে সুখ্যাতি হোক বা কুখ্যাতি, হ্যারি মানেই শিরোনাম। হ্যারির আমূল পরিবর্তন অনেকেই ভেবেছিলেন, হ্যারির স্বাধীনচেতা মনোভাব ও জীবনও রাজপরিবারের বিধিনিষেধের ভারে বদলে যাবে। হ্যারি বদলেছেন; কিন্তু সেই বদল ব্রিটিশ রাজপরিবারের পছন্দ মতো নয়। রাজপরিবারের প্রথাগত ছাঁচে নয়। বরং অনেকটা মা ডায়ানার মতো। স্বাধীনচেতা মানুষ হিসেবে দেখা গেল তাকে। যিনি রাজপরিবারের আর পাঁচজন সদস্যের মতো নিজেকে উচ্চ আসনে গুটিয়ে রাখেন না। বরং সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশেন। নিজের অনুভূতির কথা প্রকাশ করতে ভয় পান না। কিন্তু যে রাজপরিবার এত নিয়মনীতির পাশে আবদ্ধ, সেখানে হ্যারি এমন ব্যতিক্রমী হলেন কীভাবে? যারা হ্যারিকে কাছ থেকে দেখেছেন, তারা বলেন, এই পরিবর্তনের পেছনে মূলত দুটো বিষয় রয়েছে। এক. হ্যারির ব্রিটিশ সেনায় যোগদান ও দুই. আরও পরে মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কলের সঙ্গে প্রণয়। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অ্যাপাচি হেলিকপ্টারের চালক হিসেবে আফগানিস্তানে যান হ্যারি। টানা ১০ বছর সেনাবাহিনীতেই কাটান। ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা জন্মসূত্রেই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সাম্মানিক পদ পান। কিন্তু হ্যারি কোনো সাম্মানিক পদ নয়, আক্ষরিক অর্থেই সেনায় যোগ দেন। সেনায় চাকরি করতে গেলে যে অনুশাসন ও দায়িত্ববোধ প্রয়োজন তার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যায় হ্যারির ওপর। এরপর অভিনেত্রী মেগান মার্কলের সঙ্গে ২০১৬ সালের গ্রীষ্মে পরিচয় হয় হ্যারির। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭-এর নভেম্বরে মেগানকে বিয়ের প্রস্তাব দেন হ্যারি। কিন্তু মেগানের সঙ্গে হ্যারির সম্পর্ক নিয়ে প্রথম থেকেই প্রবল বিতর্ক শুরু হয়। ব্রিটিশ গণমাধ্যমের প্রবল আক্রমণের শিকার হতে থাকেন হ্যারি ও মেগান। শোনা যায়, রাজপরিবারের অনেকেই মেগানকে মেনে নিতে পারেননি। তবে এসব বিতর্কে মেগানের পাশেই দাঁড়াতে দেখা যায় হ্যারিকে। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে মে মাসে বিবাববন্ধনে আবদ্ধ হন দুজন। বিয়ের পর রাজপরিবারের সঙ্গেই বসবাস শুরু করেন তারা। কিন্তু শান্তিতে থাকতে পারেননি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে রাজপ্রাসাদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন এ দম্পতি। দুই সন্তান নিয়ে বর্তমানে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন। রাজপরিবারের হাড়ির খবর ফাঁস রাজপরিবার ছাড়ার পরের বছর (২০২১) মার্চ মাসে মার্কিন টিভি উপস্থাপক অপরাহ উইনফ্রেকে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন প্রিন্স হ্যারি। সেই সাক্ষাৎকারেই প্রথম রাজপরিবারের হাড়ির খবর ফাঁস করেন হ্যারি। রাজপ্রাসাদ ত্যাগের কারণের পাশাপাশি রাজপরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে নানা বিস্ফোরক তথ্য দেন তিনি। হ্যারি জানান, গণমাধ্যমের মাধ্যমে অপমান-অপদস্ত হওয়া থেকে বাঁচতেই রাজপ্রাসাদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। এরপর সম্প্রতি (ডিসেম্বর, ২০২২) প্রকাশিত হয় নেটফ্লিক্সের প্রামাণ্যচিত্র ‘হ্যারি অ্যান্ড মেগান’। ২০২০ সালে রাজপরিবার ছাড়ার পরই তাদের নিয়ে নানা তথ্য প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। যার পুরো সত্য সাধারণ মানুষ জানে না। তাই ডকুমেন্টারির মাধ্যমে সেসব তথ্য নেটফ্লিক্সের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তুলে ধরেন তারা। ‘হ্যারি অ্যান্ড মেগান’-এ রাজপরিবারের বিরুদ্ধে তিনটি মারাত্মক অভিযোগ করেন হ্যারি। তিনি বলেন, অন্যদের যেভাবে পরিবার আগলে রাখা হয় মেগানের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। তাতে কোনো লাভ হয়নি। এর পেছনে বর্ণবৈষম্যের মতো কারণ থাকতে পারে। জনপ্রিয় ওই ডকুমেন্টারিতে বাবা রাজা তৃতীয় চার্লসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন হ্যারি। আরও পড়ুন: রাজপরিবারের ‘গোমর ফাঁস’ করে পুরস্কার পেলেন হ্যারি-মেগান তিনি বলেন, ছোট থেকেই ঠিকমতো বাবার সঙ্গ পাননি তিনি। বাড়িতে তার যতটা সময় কেটেছে, তার চেয়ে বেশি সময় কেটেছে বতসোয়ানায়। ফলে আফ্রিকার প্রতি তার একটা ভালোবাসা তৈরি হয়। রাজপরিবারের অন্যান্য পুরুষ সদস্যদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙুল তোলেন ছোট রাজপুত্র। তার ভাষ্য, তারা অনেক সময়ই নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে শুধু পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে বিয়ে করেন। তারা এমন কাউকে স্ত্রী হিসেবে বেছে নেন, যাদের সঙ্গে কোনো মনের মিলই নেই। তার আক্রমণের লক্ষ্য বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়ামই ছিল বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ ও আমেরিকান বেশ কিছু গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হ্যারি। এসব সাক্ষাৎকারে বেশিরভাগ সময় নিজের জীবন সংগ্রামের পাশাপাশি রাজপরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে এসেছে। অবশেষে ‘স্পেয়ার’ বোমা হ্যারি তার নিজের কথাগুলো আরও বিশদভাবে বলতে চেয়েছেন। সেই চাওয়া থেকেই স্মৃতিকথা লিখতে শুরু করেন তিনি। ‘স্পেয়ার’ নামে সেই স্মৃতিকথা গত মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বাজারে এসেছে। পৌঁছে গেছে পাঠকের হাতে হাতে। রাজপরিবারের এসব অজানা তথ্য সামনে আসায় বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার পাঠকের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে। বইটি বাজারে আসার কয়েক দিন আগে থেকেই নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছিল। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বইতে রাজপ্রাসাদের ভেতরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য থাকলেও রাজপরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ৪১০ পৃষ্ঠার এই স্মৃতিকথায় হ্যারি তার রাজপরিবার ছাড়ার কারণ ও রাজপরিবারের নানা গোপন কথা সামনে এনেছেন। বলা চলে, ‘স্পেয়ার’-এ রীতিমতো রাজপরিবার নিয়ে বোমা ফাঁটিয়েছেন। নিজের জীবন সংগ্রামের পাশাপাশি রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। এর মধ্যে তার বাবা প্রিন্স চার্লস, সৎমা ক্যামিলা ও বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়াম সম্পর্কে চমকে দেয়ার মতো তথ্য সামনে এনেছেন; যা রাজ পরিবারের জন্য স্পষ্টতই বিব্রতকর। হ্যারি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ব্যক্তিগত দূরত্ব ও টানাপোড়েনের ঘটনা তুলে ধরেছেন। লিখেছেন, কী পরিস্থিতিতে তিনি ও তার স্ত্রী বাধ্য হয়েছেন রাজপরিবার ছেড়ে আসতে। বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়ামসের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও রাজপরিবারের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টির বিভিন্ন ঘটনাও উঠে এসেছে বইটিতে। ‘স্পেয়ার’ প্রকাশের পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘এখন যে কেউ বলতে পারে, ব্রিটেনের রাজপরিবারের ভেতরেই যদি এমন সব ঘটনা ঘটে, তাহলে অন্য পরিবারগুলোর কী অবস্থা? স্পেয়ারে রাজপরিবারের যেসব গোমর ফাঁস করেছেন হ্যারি মেগানকে বিয়ের ব্যাপারে যে পরিবারের অন্য সদস্যদের আপত্তি ছিল, সে কথা উঠে এসেছে হ্যারির স্মৃতিকথায়। হ্যারি বলেছেন, ভাই উইলিয়াম মেগানকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছিলেন। এমনকি মেগানের সম্পর্কে কটূক্তিও করেন। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের বিবাদ এমনই চরমে ওঠে যে উইলিয়াম হ্যারির জামার কলার ধরে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে হ্যারি লিখেছেন, নিজেদের মধ্যকার খারাপ সম্পর্ক ও সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে টানাপোড়েন নিয়ে আলোচনা করার জন্য লন্ডনের কেনসিংটন প্রাসাদের (হ্যারি ও মেগানের তৎকালীন বাসভবন) নটিংহাম কটেজে যান ভাই উইলিয়াম। কথার এক পর্যায়ে উইলিয়াম মেগানকে ‘অনমনীয়’ ‘অভদ্র’ ও ‘অনুভূতিহীন’ বলে আখ্যায়িত করেন। হ্যারি দাবি করেন, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর বড় ভাইকে পানি পান করতে দেন ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। এমন সময় উইলিয়াম তাকে আক্রমণ করে বসেন। স্পেয়ার-এ হ্যারির ভাষ্য, ‘তিনি পানির গ্লাস নামিয়ে রাখলেন, আমাকে গালি দিলেন, তারপর আমার দিকে তেড়ে এলেন। সবকিছু খুব দ্রুত ঘটল। খুবই দ্রুত। তিনি আমার কলার ধরে, আমার নেকলেস ছিঁড়ে, আমাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেন। আমি মেঝেতে রাখা কুকুরের খাবারের বাটির ওপর পড়ে গেলাম। বাটিটি পিঠের নিচে পড়ে ভেঙে গেল ও টুকরোগুলো আমার পিঠে গেঁথে গেল। আমি কিছুক্ষণের জন্য হতবিহ্বল হয়ে সেখানে শুয়ে থাকলাম। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে তাকে বেরিয়ে যেতে বললাম।’ অনুরোধ উপেক্ষা করে ক্যামিলাকে বিয়ে করেন প্রিন্স চার্লস মা ডায়ানার মৃত্যুর পর বাবা চার্লস বিয়ে করেন বর্তমান কুইন কনসোর্ট ক্যামিলাকে। হ্যারি ও উইলিয়াম বাবার দ্বিতীয় বিয়েতে তীব্র আপত্তি জানান। কিন্তু চার্লস তাদের সে কথা শোনেননি। স্পেয়ারে হ্যারির ভাষ্য, আইনত পরিবারের অংশ হওয়ার আগে সৎমা ক্যামিলার সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেন তারা। হ্যারি বলেছেন, ক্যামিলাকে বিয়ে না করার অনুরোধ করার কারণ, তাদের ভয় ছিল, বিয়ে হলে ক্যামিলা একজন ‘দুষ্টু সৎমা’ হবেন। ‘স্পেয়ার’-এ হ্যারি বলেন, ‘আমার মনে আছে, চা পানের ঠিক আগে ভাবছিলাম, যদি তিনি আমার সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। যদি তিনি গল্পের বইয়ের সমস্ত দুষ্টু সৎমায়েদের মতো হন। কিন্তু তিনি তা ছিলেন না। উইলির মতো, আমিও এর জন্য সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা অনুভব করি।’ হ্যারি বলেছেন, বড় ভাই উইলিয়াম অনেক আগে থেকেই তাদের বাবার বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করে আসছিলেন। মায়ের মৃত্যুর দুঃসহ স্মৃতি হ্যারি তার স্মৃতিকথায় স্বাভাবিকভাবেই তার মা ডায়ানার মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনেছেন। মায়ের মৃত্যুর সময় হ্যারির বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। শিশু বয়সে মা হারানোর কষ্ট মেনে নিতে পারেননি তিনি। হ্যারি জানিয়েছেন, মাকে হারানোর আঘাত তিনি বহুদিন বয়ে বেড়িয়েছেন। মায়ের মৃত্যুতে শিশুমনে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল, তা আরও কঠিন হয়ে ওঠে বাবা চার্লসের ব্যবহারে। হ্যারির বক্তব্য, মায়ের মৃত্যুর পর চার্লস হ্যারিকে একবারের জন্যও আলিঙ্গন করেননি। মায়ের মৃত্যু নিয়ে নিজেকে শান্ত করতে প্যারিসের সেই গাড়ি দুর্ঘটনার স্থলে যান হ্যারি। কিন্তু তাতে আরও বেড়ে যায় তার অন্তরের অশান্তি। বইতে এমনটাই বলেছেন হ্যারি। ‘স্পেয়ার’ প্রকাশের দুদিন আগে গত রোববার (৮ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম আইটিভিতে এক সাক্ষাৎকারেও মা প্রিন্সেস ডায়ানার বিয়োগান্তক মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন হ্যারি। তিনি বলেন, মায়ের মৃত্যুর কারণ তার কাছে পরিষ্কার নয়। ‘অনেকগুলো বিষয়েরই কোনো ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে। তার মৃত্যু এখনও আমার কাছে ধোঁয়াশাপূর্ণ।’এমনটি বলেই হ্যারি দ্রুত যোগ করেন, এতদিন পরে সেই দুর্ঘটনার তদন্তকার্য আবার শুরু করারও কোনো যৌক্তিকতা দেখেন না তিনি। ডায়ানার জন্ম কোনো রাজপরিবারে নয়। তার জন্ম ব্রিটেনের এক অভিজাত পরিবারে, ১৯৬১ সালের ১ জুলাই। বিয়ের আগে তার নাম ছিল ডায়ানা স্পেন্সার। স্পেন্সার পরিবারের সঙ্গে রাজপরিবারের বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। ডায়ানার দাদি ছিলেন রানি এলিজাবেথের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। ডায়ানার শৈশব কেটেছে রানির অপর দুই ছেলে প্রিন্স অ্যান্ড্রু আর প্রিন্স এডওয়ার্ডের সঙ্গে খেলাধুলা করে। হয়তো সে সময় থেকেই তাকে রাজপরিবারের বধূ করার পরিকল্পনা ছিল রানির। ১৯৮১ সালে ডায়ানাকে পরিবারের বধূ হিসেবে বরণ করে নেয়া হয়। প্রিন্স চার্লস ও ডায়ানার বিয়ের অনুষ্ঠানটি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত বিবাহ অনুষ্ঠান। বিবাহের মাধ্যমে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস পদে ভূষিত হন এই দম্পতি। এই দম্পতির প্রথম সন্তান প্রিন্স উইলিয়াম জন্ম নেন ১৯৮২ সালের ২১ জুন। দুই বছর পর জন্ম নেন প্রিন্স হ্যারি, ১৯৮৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। দুই সন্তানের মমতাময়ী মায়ের ভূমিকা নিয়ে নেন তরুণী ডায়ানা। চেষ্টা করেন সুখী একটি পরিবার গড়ে তুলতে। কিন্তু এই রাজকীয় বিয়ে ভেঙে যায় ১৫ বছরের মাথায়, ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে একটি সুড়ঙ্গ পথের ভেতরে গাড়ি দুর্ঘটনায় আরও দুজনের সঙ্গে নিহত হন ৩৬ বছর বয়সী ডায়ানা। তার মৃত্যুতেও হতভম্ব হয়ে যায় বিশ্ববাসী। সাংবাদিকদের এড়াতে একটি সুড়ঙ্গে ঢুকে যায় গাড়িটি। ডায়ানার সঙ্গে ছিলেন তার তৎকালীন প্রেমিক মিসরীয় ব্যবসায়ী দোদি আল-ফায়াদ। দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ডায়ানা। গাড়ির চালক ও দোদি ঘটনাস্থলেই মারা যান, তাদের দেহরক্ষী গুরুতর আহত হন। ময়নাতদন্তে গাড়ির চালকের পেটে অস্বাভাবিক মাত্রার অ্যালকোহলের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। তা সত্ত্বেও ডায়ানার মৃত্যুকে দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নেননি অনেকেই। এ সম্পর্কে তৈরি হয়েছে নানা অনুমান ও কন্সপিরেসি থিওরি। অনেকেরই ধারণা মার্সিডিজ গাড়িটির চালক হেনরি পল ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার লোক। এমনকি রাজপরিবারের সাবেক বধূ খ্রিস্টান নয়, এমন কাউকে বিয়ে করবেন এই সম্ভাবনা মেনে নিতে পারেনি ব্রিটিশ রাজপরিবার। তাই নিজেদের আভিজাত্য বাঁচাতেই ডায়ানাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়।এমনকি অনেকে এমনও মনে করেন প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে এই ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিলেন ডায়ানার আপন বোন লেডি সারাহও। তার মৃত্যুর পর কেটে গেছে প্রায় দুই দশক, কিন্তু এই রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। বাবার প্রশ্নে চার্লসের রসিকতা স্মৃতিকথায় হ্যারি বলেছেন, বাবা চার্লস একবার তার বাবা ‘আসলে কে’, তা নিয়ে রসিকতা করেছিলেন। বাবা ‘গল্প বলা পছন্দ করতেন’ জানিয়ে হ্যারি লিখেছেন, মেজর জেমস হিউইটের সঙ্গে তার মা ডায়ানার সম্পর্ক নিয়ে রসিকতা করেছিলেন প্রিন্স চার্লস। তার বাবা রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘আমি সত্যিই প্রিন্স অব ওয়েলস কিনা কে জানে? আমি তোমার আসল বাবা কিনা কে জানে? হয়তো তোমার আসল বাবা ব্রডমুর, ডিয়ার বয়!’ হ্যারি বলেন, বাবার এ রসিকতাকে নিছক কৌতুক হিসেবে নিতে পারেননি তিনি। কারণ ওই সময়ই গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ‘আমার প্রকৃত বাবা হয়তো আমার মায়ের সাবেক প্রেমিকদের একজন- মেজর জেমস হিউইট’। প্রিন্সেস ডায়ানা বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মেজর হিউইটের সঙ্গে তার পাঁচ বছরের সম্পর্ক ছিল বলে স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেছিলেন, সম্পর্কটি শুরু হয়েছিল ১৯৮৬ সালে, উইলিয়ামের জন্মের দুই বছর পর। হ্যারি লিখেছেন, ‘এই গুজবের একটি কারণ ছিল মেজর হিউইটের চুলের রঙ। কিন্তু আরেকটি কারণ ছিল ‘স্যাডিজম’ (পাশবিকতা)। ট্যাবলয়েড পাঠকরা এই ধারণা থেকে আমোদ পেয়েছিল যে প্রিন্স চার্লসের ছোট ছেলে তার ঔরসজাত নয়। এটা কেউ মনেও রাখেনি যে আমার জন্মের অনেক পরে পর্যন্ত আমার মা মেজর হিউইটের সঙ্গে দেখা করেননি। গল্পটি এতোই মুখরোচক ছিল যে তা বাদ দেয়া খুব মুশকিল ছিল। হ্যারি আরও বলেন, বাবা যদি মেজর হিউইট সম্পর্কে কিছু ভেবেও থাকতেন, তার উচিত ছিল সেটা নিজের ভেতরে গোপন রাখা। বিয়ের অনুষ্ঠান করার জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব মেগানের বিয়ের তারিখ ও স্থান নিয়ে রাজপরিবারে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। হ্যারির লেখা অনুযায়ী, যখন তিনি বড় ভাই উইলিয়ামের সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে বা সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে বিয়ের অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন, তখন উইলিয়াম এক অদ্ভূত কারণ উল্লেখ করেন। উইলিয়াম বলেন, এই দুই স্থানে বিয়ের অনুষ্ঠান করা যাবে না। কারণ জায়গা দুটোতে তাদের বাবা-মা প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানা এবং উইলিয়াম ও ক্যাথরিনের বিয়ে হয়েছে। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে বা সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালের পরিবর্তে উইলিয়াম দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের হাইগ্রোভ হাউসে চার্লসের বাড়ির নিকটস্থ একটি গ্রামের একটি চ্যাপেলে বিয়ের আয়োজন করার প্রস্তাব করেন। তবে শেষ পর্যন্ত হ্যারি ও মেগানের বিয়ে হয় উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে। নাৎসি পোশাক পরতে উৎসাহিত করেছিলেন ভাই ও ভাবি স্মৃতিকথায় ২০০৫ সালের একটি পার্টিতে নাৎসি পোশাক পরার বিতর্কিত ঘটনাও তুলে এনেছেন হ্যারি। তিনি বলেছেন, প্রিন্স উইলিয়াম ও তার স্ত্রী ক্যাথরিনই তাকে উৎসাহিত করেছিলেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের সান পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ছবি প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায়, পার্টিতে জার্মান সামরিক জ্যাকেটের ওপর একটি স্বস্তিকা আর্মব্যান্ড পরে আছেন হ্যারি। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে এর দায় স্বীকার করেন হ্যারি। এমনকি ক্লারেন্স হাউস প্রেস অফিসের মাধ্যমে একটি ক্ষমাপ্রার্থনা করে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখিত যদি আমি কারও কাছে কোনো অপরাধ বা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে থাকি। এটি পোশাকের একটি দুর্বল পছন্দ ছিল এবং আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ তবে আত্মজীবনীতে হ্যারির নতুন দাবি যে, তার ভাই ও ভাবির প্ররোচনায় তিনি নাৎসি চিহ্নযুক্ত পোশাক পরেন, যা তার আগের বিবৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দাদির মৃত্যুর খবর জানায়নি কেউ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু ও বাবার রাজা হওয়ার খবর পাওয়ার মুহূর্তও স্মরণ করেছেন হ্যারি। বালমোরাল প্রাসাদের একটি কক্ষে রানীর মৃতদেহ দেখার মুহূর্তও সবিস্তারে লিখেছেন তিনি। স্মৃতিকথায় হ্যারি জানিয়েছেন, তিনি তার নিজের পরিবারের কাছ থেকে নয়, বিবিসির ওয়েবসাইট থেকেই প্রথম রানির মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলেন। হ্যারি বলেছেন, বাবা চার্লস ফোন করে শুধু একবার জানিয়েছিলেন যে তার দাদির স্বাস্থ্য ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এরপর তিনি বাবা চার্লসের কাছ থেকে আরেকটি ফোন কল পেয়েছিলেন। তখন বলা হয়েছিল, তাকে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু তার স্ত্রী মেগানকে নয়। স্মৃতিকথায় হ্যারি দাবি করেছেন, বাবার ফোন পাওয়ার পরপরই তিনি ভাই উইলিয়ামকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে তিনি ও তার ভাবি কেইট বালমোরাল প্রাসাদে যাচ্ছেন কিনা, গেলে কখন ও কীভাবে যাবেন? তবে উইলিয়ামের কাছ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া মাদকাসক্ত হওয়ার কথা বলেছেন। এমনকি আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালনের সময় ২৫ তালেবান সদস্যকে হত্যার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া ব্রিটিশ গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যে কারণে স্মৃতিকথার নাম ‘স্পেয়ার’ স্মৃতিকথার নাম ‘স্পেয়ার’ রাখার কারণ স্মৃতিকথাতেই জানিয়েছেন হ্যারি। তিনি বলেছেন, তার বয়স যখন ২০, তখন তিনি জানতে পারেন, তার জন্মের পর বাবা প্রিন্স চার্লস মা প্রিন্সেস ডায়ানাকে বলেছিলেন, তুমি আমাকে একজন উত্তরাধিকারী (প্রিন্স উইলিয়াম) দিয়েছ। আরেকজন অতিরিক্ত বা বাড়তি (স্পেয়ার) উত্তরাধিকারী দিয়েছ। রাজপরিবারের বড় সন্তান সিংহাসনে বসেন। আর তারপর যেসব সন্তান জন্ম নেন তাদের স্পেয়ার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যদি বড় সন্তানের অনাকাঙিক্ষত কিছু ঘটে, তখন সেই বাড়তি উত্তরাধিকারী রাজ্যভার গ্রহণ করেন। আর জন্মের সময় তাকে ‘স্পেয়ার’ হিসেবে উল্লেখ করায় নিজের বইয়ের নাম ‘স্পেয়ার’ দিয়েছেন প্রিন্স হ্যারি।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply