Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » বিশ্বে মার্কিন আধিপত্য কি শেষ হয়ে আসছে!




২০২২ সাল শেষ হয়েছে। বছরটি বৈশ্বিক ভূরাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর ছিল, নানা কারণেই যা থেকে যাবে ইতিহাসের পাতায়। তবে বছরটি ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক একমেরু বিশ্ব ব্যবস্থার পতনের বছর হিসেবে। ১৯৯১ সালে স্নায়ুযুদ্ধ শেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য শুরু হয়। তবে সম্প্রতি ভূরাজনৈতিক নানা সমীকরণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক শক্তির উত্থান ঘটেছে, শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ক্ষয়ে যাওয়া। নতুন উদীয়মান শক্তিগুলোকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একাধিক বলয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের এক নজিরবিহীন আধিপত্য তৈরি হয়। একই সঙ্গে দেশটি বিশ্বে নিজ মতাদর্শিক হেজেমনি প্রতিষ্ঠারও প্রয়াস পায়। সে সময়টাতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা সামরিক কোনো দিক থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। বিশ্বব্যবস্থা কেমন হবে তা নির্ধারণ করার একক অধিকার যুক্তরাষ্ট্র নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিল। আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ: রুশ রাজনীতি ও পুতিনের ভবিষ্যৎ একক পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে এই সময়ের মধ্যে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়নি। বরং এ সময়ে দেশটি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের দাবিকৃত ‘নতুন বিশ্বব্যবস্থা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশে দেশে ক্ষমতার পরিবর্তনে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের এমন উদ্যোগের বলি হয়েছে ইরাক, সাবেক যুগোস্লাভিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান এবং সিরিয়া। তবে এটি কেবলই বিরাট এক ঝাঁক থেকে দু’একটি দেশের নাম। এমনও অনেক দেশ রয়েছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে সরকার, শাসনক্ষমতা বদলে দিয়েছে। এর বাইরেও যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন বৈশ্বিক সংগঠনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে ওয়াশিংটনের ইচ্ছার বাইরে কাজ করা বিভিন্ন দেশকে শায়েস্তা করতে চেয়েছে, করেছে। যেমন জাতিসংঘকে ব্যবহার করে ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করেছে। স্নায়ুযুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র-নিজ মতাদর্শের ওপর আস্থা রেখে হোক আর প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ফ্রান্সিস ফুকোয়ামার তত্ত্ব ‘এন্ড অব দ্য হিস্টোরিতে’ বিশ্বাস করে হোক; প্রাথমিকভাব রাশিয়া এবং চীনকে প্রতিপক্ষ বলে মনে করেনি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন আগ পর্যন্তও মনে করত চীন এবং রাশিয়া পূর্ব-নির্ধারিতভাবেই পশ্চিমাকরণ বা উদারীকরণের পথে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমনটা মনে করার সঙ্গত কারণও ছিল। দেশটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, মুক্তবাণিজ্য এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এই বিশ্বায়ন অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব মূল্যবোধের আলোকে নকশা করা। তবে ২০২২ সালে এসে যুক্তরাষ্ট্রের এসব অপরিণত আশা উধাও হয়ে গেছে। কেবল তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিগত ১২ মাসে নতুন ভূরাজনৈতিক যুগ আরও দৃঢ়ভাবে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত ভূরাজনীতিকে প্রতিস্থাপিত করার পথে এগিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ একটি ‘বাঁক বদলকারী ও সিদ্ধান্তমূলক’ ঘটনা হিসেবে হাজির হয়েছে। এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যে বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তা ভেঙে ফেলতে চূড়ান্ত আঘাতটি হেনেছে। আরও পড়ুন: জ্বালানি তেল নয়, আগামী বাণিজ্য যুদ্ধ হবে ধাতুর বাজার ঘিরে যুগ পরিবর্তনের এই খেলায় মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। এক সময় দেশটি বিশ্বায়নের পক্ষে ওকালতি করলেও এখন নিজেই তা আর সহ্য করতে পারছে না। কারণ, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কাছে তারা যা প্রত্যাশা করেছিল, তা এখন আর পাচ্ছে না। এর সুফল অন্যান্য দেশও বেশ খানিকটা নিজেদের মতো করে ঘরে তুলেছে। ফলে বিশ্বায়নের অবক্ষয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতারও অবক্ষয় শুরু হয়েছে। এবং একই সময়ে চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোরও উত্থান ঘটেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র আমলে রাখেনি বা রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। আর প্রয়োজন মনে না করায় এই নতুন উত্থিত শক্তিগুলোর মোকাবিলায় নিজের ক্ষয় হতে থাকা সক্ষমতাও উদ্ধার করেনি। ফলে এই দুটি দেশকে এখন প্রত্যক্ষভাবে মোকাবিলার বাইরে এখন আর কোনো পথ নেই যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। মজার ব্যাপার হলো, এসব দেশ (চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য উদীয়মান দেশ) যুক্তরাষ্ট্র স্থাপিত বিশ্ব ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধকে নিজেদের বলে মনে করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের মতাদর্শিক এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্ত্র বিশ্বায়নও এখন আর আগের মতো কার্যকরী না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সামনে নিজেকে আবারও আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সহজ কোনো পথ খোলা নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ক্ষমতা-প্রভাব ফিরে পেতে আবারও পুরোনো লড়াই শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত উসকে দিতে শুরু করেছে। এই মনোভাব এখন বাইডেন প্রশাসনের একমাত্র পররাষ্ট্রনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উদাহরণ হলো ইউক্রেন এবং তাইওয়ান সংকট। যুক্তরাষ্ট্র এই নীতির কারণেই যেকোনো মূল্যে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণের (এ কারণেই ইউক্রেন সংকটের শুরু হতে পেরেছে) বিষয়ে অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি ‘অকাস (AUKUS)’ জোট গঠন এবং তাইওয়ান প্রণালিতে সংকট উসকে দিয়ে চীনকে আটকে রাখার কৌশল নিয়েছে ওয়াশিংটন। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বিশ্ব ব্যবস্থা বদলে দিয়েছে। আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যেও কি আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চীনের? গণমাধ্যম নির্মিত ডিসকোর্সের বদৌলতে পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ জনগণই মনে করেন, বৈশ্বিক সংকটের জন্য পুতিনই দায়ী। বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯১ সালের পর যে বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল তা নিজেই ভেঙে দিয়েছে। কারণ, এই বিশ্ব ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সক্ষমতা খরচ হয়ে যাচ্ছে, যা দেশটিকে ভঙ্গুর করে তুলছে। ঠিক এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে আংশিকভাবে সরিয়ে নিয়েছে। আর একারণেই ক্ষমতা এবং মতাদর্শিত শূন্যতার কারণে বৈশ্বিক সংকটগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠার প্রয়াস পেয়েছে। ভূরাজনৈতিক সংঘাত সৃষ্টির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র নিজের সামরিক শক্তি পুনর্গঠিত করার দিকেও মনোযোগ দিয়েছে। মিত্র দেশগুলোকে প্রতিপক্ষ দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করছে; এমনকি এতে মিত্র দেশগুলোর আর্থিক ক্ষতি হওয়ার পরও। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে রাশিয়ার গ্যাসের বাজার বন্ধ করতে, যাতে ইউরোপীয়রা মার্কিন গ্যাস কিনতে বাধ্য হয়। একইভাবে দেশটি বিশ্বের সেমিকন্ডাক্টর বাজারে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সেমিকন্ডাক্টর বাজার থেকে চীনকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে চেয়েছে। এটি করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে ইউরোপ থেকে এবং চীনকে এশিয়া থেকে একঘরে করে ফেলতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের এসব উদ্যোগের ফলাফল হয়েছে মারাত্মক। যুক্তরাষ্ট্র যতই চেয়েছে নিজের মতাদর্শিক প্রাধন্য বা হেজেমনি প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিপক্ষ দেশগুলো ততই উদ্বিগ্ন হয়েছে। তারা নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও প্রাধান্য টিকিয়ে রাখতে এবং অন্যের হাতে নিয়ন্ত্রিত হওয়া থেকে বাঁচতে নিজেদের জাতীয় সক্ষমতা ও কৌশলত অবস্থান শক্তিশালী করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই অস্ত্র প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা বেড়েছে। আরও পড়ুন: চীনকে মোকাবিলায় নতুন পথে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা বিশ্বকে টেক্কা দিতে পাল্টা অর্থনৈতিক, সামরিক জোট গঠন করা বেড়েছে। যেমন ব্রিকস, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন এবং অন্যান্য জোট গঠিত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বহু চেষ্টা করেছে বহুমেরুক বিশ্ব ব্যবস্থাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করে দিতে। তবে তারা যে সেটা পারেনি, তা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বিশ্ব এখন আবার নতুন করে জোটবদ্ধ হচ্ছে। বিশেষ করে ১৯১৪ সালের আগে অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে বিশ্ব যেমন ছিল সেই অবস্থানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যেখানে এমনটা সম্ভব হচ্ছে না, সেই অঞ্চল নিদেনপক্ষে ১৯৪৫ সালের আগের বিশ্ব ব্যবস্থা অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নতুন এই বিশ্বব্যবস্থায় দুই পরাশক্তিকেন্দ্রিক দুটি জোট নয় বরং একাধিক দেশ নিজ নিজ প্রভাব বলয় বিস্তার করার চেষ্টা করবে। যুক্তরাষ্ট্র নিজের প্রাধান্য বজায় রাখতে গিয়ে যখন চীন এবং রাশিয়াকে মোকাবিলা করছে, তখন এর বাইরেও আরও আরও দেশ যেমন ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার উত্থান ঘটছে দ্রুত গতিতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সবমিলিয়ে ২০২২ সাল বিশ্বব্যবস্থা পরিবর্তনের একটি নির্ধারক মূহূর্ত হিসেবে থেকে যাবে। কারণ ধীরে হলেও ১৯৯১ সাল পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থা শেষ হয়েছে। তবে নতুন বিশ্ব ক্রমবর্ধমানহারে ভূরাজনৈতিক সংঘাতের এক অনিশ্চিত ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, যা বিশ্বকে আরও বেশি অস্থির করে তুলবে। যেকোনো দৃষ্টিকোন থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী দুনিয়ার চেয়ে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার এই দুনিয়া অনেক বেশি বিভক্ত। তবে এই দ্বন্দ্ব-সংঘাত-বিভাজন কোনোভাবেই যেমন নতুন স্নায়ুযুদ্ধ নয়, তেমনি নয় নতুন কোনো ‘গ্রেট গেম’। রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি থেকে অনূদিত






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply