Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» »Unlabelled » মিয়ানমার ইস্যুতে পশ্চিমের এ কেমন দ্বিচারিতা?




ফিলিস্তিন থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত পশ্চিমা দ্বিচারিতা ইতোমধ্যে প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব। এবার তাদের ভণ্ডামি-মুনাফেকির চরম দৃষ্টান্ত দেখা গেল মিয়ানমারে। একদিকে তারা নাগরিকদের ওপর সামরিক জান্তার সহিংসতা ও অবৈধ শাসনের কারণে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। আরেকদিকে সেই জান্তা সরকারের সঙ্গেই ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদেরকে আরও শক্তিশালী করছে। একদিকে মানবাধিকারের বুলি আওড়াচ্ছে, অন্যদিকে ঠিক একই সময়ে জান্তাকে অস্ত্র তৈরির সব উপকরণ সরবরাহ করছে। মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন শহরে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভকারীরা। ফাইল ছবি মিয়ানমার সংকট নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার ও নীতি নির্ধারকদের এ ভণ্ডামির কিছু চিত্র সামনে এনেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির কুখ্যাত ও ঘাতক সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর গত দুই বছর ধরেই জান্তা সরকারের সঙ্গে নানা সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রেখেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়েকটি তেল ও গ্যাস কোম্পানি। যার সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মালিকানাধীন। তেল ও গ্যাস উৎপাদনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে নানাভাবে সহায়তা করছে এসব কোম্পানি। এর থেকে তারা নিজেরা যেমন কোটি ডলার কামিয়েছে। একইভাবে তা সেনাশাসিত সরকারকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছে। সেনা সরকারের ফাঁস হয়ে যাওয়া ‘ট্যাক্স রেকর্ড’ বা করের নথিপত্র থেকে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) ‘রিভিলড: হাউ ওয়ার্ল্ড’স বিগেস্ট ফোসিল ফুয়েল ফার্মস প্রোফিটেড ইন মিয়ানমার আফটার ক্যু’ শিরোণামে বিশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দ্য গার্ডিয়ান। মিয়ানমারে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন একটা নির্বাচিত সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির কুখ্যাত সেনাবাহিনী, তাতমাদো। কিন্তু দেশটির গণতন্ত্রপন্থি জনগণ এই অবৈধ ক্ষমতা দখল মেনে নেয়নি। এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নামে। দুই বছর পরও মিয়ানমারে তুমুল বিক্ষোভ চলছে। তবে জনগণের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনেও কঠোর অবস্থান নিয়েছে জান্তা সরকার। তারা পাখির মতো গুলি করে মারছে নিজ দেশের মানুষকেই। রাতের আধারে চালাচ্ছে খুন-গুম। মিয়ানমারে জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ারের তথ্য মতে, মিয়ানমারজুড়ে রীতিমতো যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটাচ্ছে জান্তা। জান্তার দমন–পীড়নে শিশু ও নারীসহ এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯৪০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার বিক্ষোভকারীকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জান্তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক আদালত। সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে চলমান এই দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষিতে ‘মানবাধিকা ‘ প্রশ্নে জান্তা সরকারের ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের দুই বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) মিয়ানমারের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া- এ চার পশ্চিমা দেশ। মূলত দেশটির নির্বাচন কমিশন, খনি কোম্পানি, জ্বালানি কর্মকর্তা ও আরও প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে যেসব তথ্য সামনে আসছে তাতে তাদের এই নিষেধাজ্ঞাকে লোক দেখানো বলেই প্রতীয়মাণ হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন মতে, সম্প্রতি মিয়ানমার জান্তা সরকারের কর সম্পর্কিত ও অন্যান্য বিষয়ের বেশ কিছু নথিপত্র ফাঁস হয়ে যায়। সেসব নথিতেই উঠে এসেছে পশ্চিমাদের দ্বীচারিতার দৃষ্টান্ত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জান্তা সরকারের ফাঁস হওয়া ওই নথিপত্রে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের বেশ কয়েকটি তেল ও গ্যাস কোম্পানি জান্তা সরকারকে মিয়ানমারের তেল ও গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে জ্বালানি উত্তোলনে নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। এর বিনিময়ে বিশাল একটা মুনাফা তুলে নিচ্ছে তারা। এর থেকে অর্থনৈতিক শক্তিশালী হচ্ছে সামরিক নীতিনির্ধারকরাও। ফাঁস হওয়া নথিগুলো সম্প্রতি অলাভজনক সংগঠন ‘ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অফ সিক্রেটস’র হাতে আসে এবং মিয়ানমারের মানবাধিকার সংস্থা ‘জাস্টিস ফর মিয়ানমার’ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সংস্থা ‘ফাইন্যান্স আনকভার্ড’ ও দ্য গার্ডিয়ান সেগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছে। জান্তার অস্ত্র তৈরি হচ্ছে পশ্চিমা উপকরণে ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা তথা যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার অন্তত ১৩টি দেশের কোম্পানি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মিয়ানমারকে অস্ত্র তৈরির উপকরণ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। এসব উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিয়ানমারের জান্তা–সরকার নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রায়ত্ত অস্ত্র কারখানায় দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। গত মাসের মাঝামাঝি মিয়ানমারবিষয়ক বিশ্লেষকদের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম স্পেশাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমারের (এসএসি–এম) এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিষয়টি সামনে আনে দ্য গার্ডিয়ান। অভিযোগ রয়েছে, পশ্চিমাদের সরবরাহ করা উপকরণ ও প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা এসব অস্ত্র মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটিতে চলমান সেনা–সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে ব্যবহার করছে। অস্ত্র তৈরির উপকরণ সরবরাহের তথ্য ও বিভিন্ন সময় ফাঁস হওয়া তথ্য বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে এসএসি–এম। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত ডিরেক্টরেট অব ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজে (ডিডিআই) অস্ত্র তৈরির উপকরণ, প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ সরবরাহ করছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, ইসরাইল, ইউক্রেন, জার্মানি, জাপান, তাইওয়ান, ও দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি রয়েছে। এমনকি রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও সিঙ্গাপুরের কোম্পানি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমারকে বন্দুকের ব্যারেল তৈরির জন্য কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক মেশিন সরবরাহ করছে অস্ট্রিয়ার কোম্পানি জিএফএম স্টেয়ার। ফরাসি কোম্পানি দাসল্ট সিস্টেমস ও জার্মানির সিমেন্স ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রিজ অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সফটওয়্যার সরবরাহ করছে। এসব কোম্পানি সরাসরি, নয়তো তৃতীয় পক্ষের কোম্পানির মাধ্যমে ওই উপকরণ ও প্রযুক্তি দিচ্ছে মিয়ানমারকে। এ বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সাবেক প্রতিনিধি এবং এসএসি–এম–এর প্রতিষ্ঠাতা ইয়াংঘি লি বলেন, ডিডিআই সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে তৈরি করা অস্ত্র মিয়ানমার সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যায় ব্যবহার করে থাকে। অথচ পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন কোম্পানি ডিডিআই ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এখনো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা উচিত। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক জেরার্ড ম্যাককার্থি বলেন, ‘বিক্ষোভ দমনে ব্যবহৃত অস্ত্র তৈরির পেছনে এমন কিছু দেশের সম্পৃক্ততা রয়েছে, যারা জান্তার কঠোর দমনপীড়ন এবং সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা প্রতিহত করার বিষয়ে নিজেদের নিরপেক্ষ দাবি করে, এটা দুঃখজনক।’ জেরার্ড ম্যাককার্থি আরও বলেন, ‘এটা পশ্চিমাদের ভণ্ডামি। তারা একদিকে গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলছে, অন্যদিকে মিয়ানমারের জান্তার জন্য অস্ত্র তৈরিতে উপকরণ ও প্রযুক্তি সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। মিয়ানমার ইস্যুতে যেসব দেশ নিরপেক্ষতার নীতি নিয়েছে, তাদের অনেকেই দেশটির স্বৈরশাসকের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করেনি।’






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply