চ্যাটজিপিটি: গল্প তো সবে শুরু! চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করলে মিলছে নতুন নতুনসব উত্তর। সবজান্তা চ্যাটজিপিটি অনেকাংশে এখন বিনোদন ও নানামাত্রিক কাজের খোরাক হলেও প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এ কেবল গল্পের ভূমিকা। পুরো বই এখনও বাকি। প্রযুক্তির অভাবনীয় উদ্ভাবন চ্যাটজিপিটি। ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি নিজের লেখা এক ব্লগ পোস্টে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস চ্যাটজিপিটি নিয়ে নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সামনের কয়েক দশকে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) দুনিয়া কাঁপিয়ে বেড়াবে এমনটাই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি। বিল গেটসের ব্লগ নিয়ে বার্তা সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাইক্রোপ্রসেসর, ব্যক্তিগত কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের আবিষ্কার টেক দুনিয়ার প্রাথমিক পর্যায়। বিল গেটসের দাবি, প্রাথমিক পর্যায় থেকে এআই-র আবিষ্কার টেক দুনিয়াকে নিয়ে যাবে উন্নত পর্যায়ে। নতুন এ উদ্ভাবনের মাধ্যমে টেক দুনিয়ার উঁচু সিঁড়িতে পা রেখেছে বিশ্ব। বিল গেটস তার ব্লগে বলেন, এআই দুনিয়া বদলে দেবে। মানুষের কাজের ধরন, শেখার পদ্ধতি, ভ্রমণের কলাকৌশল, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে এইআই-র মাধ্যমে। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে একই কথা। সামান্থা মারফি কেলির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুরুতেই বাজিমাত করেছে এআই। আগে অফিশিয়াল কাজ যেখানে মাইক্রোসফট-৩৬৫ ছাড়া চিন্তাই করা যেত না, রিপোর্ট লিখতে হতো ওয়ার্ড ফাইলে, প্রেজেন্টেশনের জন্য ছিল পাওয়ার পয়েন্ট, ডেটা ও হিসাবের জন্য এক্সেলের কোনো বিকল্প ছিল না, আর সবকিছুর পেছনে একজন মানুষের প্রয়োজন হতো অপারেটর হিসেবে; সেখানে মুহূর্তের মধ্যে এআই একাই করে দিচ্ছে কয়েক ডজন মানুষের কাজ। একসময় লেখা ও আঁকার জন্য স্লেট ও তালপাতা ব্যবহার করা হতো। এর পর এলো কাগজ-কলম। কাগজ-কলমের এক বিশাল বিবর্তনের পর মানুষের হাতে এলো টাইপরাইটার। সেখান থেকে কিবোর্ড। কিবোর্ড থেকে টাচপ্যাড; আর এখন মানুষ আবিষ্কার করেছে এমন প্রযুক্তি, যেখানে কাজ করতে মানুষেরই প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ, যন্ত্র সামলাতে যন্ত্রকেই ব্যবহার করছে মানুষ। আরও পড়ুন: চ্যাটজিপিটি: শঙ্কা নাকি সম্ভাবনা? প্রথম শিল্পবিপ্লবের সময় যখন যন্ত্রের আবির্ভাব হলো, তখন মানুষের জায়গা করে নিল মেশিন। অনেকেই তখন পুরো ব্যাপারটিকে নেতিবাচক বললেও শিল্পবিপ্লবের আশীর্বাদ ও বাস্তবতা অস্বীকার করার কোনো পথ নেই। এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সে সময় অনেক শ্রমিক চাকরি হারিয়ে একরকম পথে বসেছিলেন। তবে কালক্রমে তারাও নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছেন নতুন পৃথিবীর সঙ্গে। সেই শিল্পবিপ্লবের পৃথিবী এখন পুরোনো গল্প। চলছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, যাকে বলা যায় ডিজিটালাইজেশনের শতাব্দী। এই ডিজিটাল শতাব্দীর সবচেয়ে রোমাঞ্চকর আবিষ্কার এআই, আর এআই-র সামান্য একটি ঝলক চ্যাটজিপিটি। বাজারে নতুন কিছু এলে সেখানে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। অনেক প্রযুক্তিবিদ বলছিলেন, চ্যাটজিপিটি আসায় হারিয়ে যাবে গুগল। আবার চ্যাটজিপিটিতে মাইক্রোসফটের বিনিয়োগকে গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের সঙ্গে বিল গেটসের টেক্কা দেয়া কি না–এ নিয়েও হয়েছে অনেক আলোচনা। দমে যায়নি গুগল; নিজেদের টিকিয়ে রাখতে ও বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে নিজেদের এএই বার্ড নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রুফরিডিং ও ব্রেনস্ট্রমিংয়ের মতো কাজগুলো হচ্ছে গুগলের বার্ডের মাধ্যমে। অন্যদিকে অফিসের স্লাককে আরও চৌকশ করে তুলছে চ্যাটজিপিটি। বিশ্বের মাল্টিন্যাশনাল টেক কোম্পানির আচরণ ও বিবর্তনের দিকে তাকালে বোঝা যায়, বিশ্ববাজারে এক বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। বিশেষ করে ডেটা এন্ট্রি ও প্রেজেন্টেশনের কাজ কিংবা যারা প্রুফরিডিংয়ের মতো পেশায় আছেন তাদের জায়গা দখল করে নেবে এআই–এ কথা হলফ করে বলা যায়। আরও সহজ করে বলতে গেলে, একেবারে সূক্ষ্ম বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের বাইরে নথিভুক্ত কাজে একসময় আর মানুষের প্রয়োজন পড়বে না; এআই মানুষকে হটিয়ে মানুষেরই সেবা দেয়ার এক বিশাল মাধ্যমে পরিণত হবে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চ্যাটজিপিটি নিয়ে এক মজার খবর ছড়িয়ে পড়ে। কেউ একজন চ্যাটজিপিটি-কে দিয়ে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করান, যেখানে চ্যাটজিপিটি ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৩০ নম্বর পায়। অর্থাৎ, অনেক মানুষ না পারলেও চ্যাটজিপিটি বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করে। এমন একটি কাজ বিলগেটস করিয়েছিলেন চ্যাটজিপির মূল কোম্পানি ওপেনএআই-কে দিয়ে। গত বছর চ্যাটজিপিটি কীভাবে কাজ করে তা জানার জন্য বিল গেটস ওপেনএআই-কে বলেন, চ্যাটজিপিটি দিয়ে জীববিজ্ঞান পরীক্ষা দেয়াতে। 'এ' লেভেলের এ পরীক্ষায় চ্যাটজিপিটি ৫০-এ ৪৯ পায়। এখানে থেমে না গিয়ে বিল গেটস চ্যাটজিপিটি দিয়ে অসুস্থ ব্যক্তির সন্তানের কাছে বাবার চিঠি পর্যন্ত লেখান। চ্যাটজিপিটি যেভাবে চিঠি লিখেছিল তাতে বিল গেটস মুগ্ধ হয়ে জানান, ‘চ্যাটজিপিটি যেভাবে লিখেছে, অনেক মানুষই এত সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারে না। আমরা এমন এক প্রযুক্তি প্রত্যক্ষ করছি, যা এখন পর্যন্ত বাকিসব প্রযুক্তি থেকে উন্নত ও নিখুঁত।’ বর্তমানে ওপেনএআই, মাইক্রোসফট ও গুগল আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও, শিগগিরই এ প্রতিযোগিতায় যোগ হবে আইবিএম, আমাজন, বাইদু ও টেনসেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানের নাম। এসব প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এআই নিয়ে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করেছে বলে সিএনএন নিজেদের এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে। মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা বলেন, ‘ভবিষ্যতের উৎপাদন খাতে এআই এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। আমাদের চাকরি, বিনোদন ও দৈনন্দিন প্রায় সব ধরনের কাজে এআই হবে এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।’ কেবল চাকরি ক্ষেত্রে নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে শুরু করে দুনিয়ার যাবতীয় কাজে এআই হবে নিত্যনৈমিত্তিক সঙ্গী। যারা ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া স্পাইক জোনের ‘হার’ সিনেমা দেখেছেন, সেখানে প্রযুক্তি কীভাবে মানুষের নিঃসঙ্গতা দূর করে, মানুষ ও প্রযুক্তির মধ্যে কীভাবে বন্ধন গড়ে ওঠে–সে বিষয়টি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। তখনকার সময়ে সিনেমাটি নিছক সায়েন্স ফিকশন হলেও মাত্র এক দশকের মাথায় এআই-র কল্যাণে ফিকশন পরিণত হয়েছে বাস্তবে। এখন নিঃসঙ্গ মানুষকে সান্ত্বনা দেয়া থেকে শুরু করে, সঙ্গ দেয়ার মাধ্যমও হয়ে উঠেছে এআই। সবজান্তা থেকে সব কাজের কাজি–এআই যে দুনিয়ার বুকে এক নতুন শতাব্দীর সূচনা করল–এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এতসবের মাঝেও রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। অনেক প্রশ্নের তাত্ত্বিক জবাব দিতে না পারা, মানুষের আবেগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে না চলা ও মানুষ যা বলে তা-ই গ্রহণ করা বর্তমানের এআই-র বড় একটি চ্যালেঞ্জ। আরও পড়ুন: নতুন ভার্সন: এবার নিজেকেই ছাড়িয়ে গেল চ্যাটজিপিটি এ ব্যাপারে আইবেলের সিইও অরজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, ‘মানুষ সত্যি বলছে নাকি মিথ্যা বলছে–এআই এখনও সেটি যাচাই করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে যার তার কাছ থেকে কনটেন্ট নিয়ে মনগড়া কথা দিয়ে ফ্যাক্ট সাজিয়ে এআই অনেক সময় ভুল তথ্য দিচ্ছে। তবে এসব সমস্যা সাময়িক। এআই-র ভাষাগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজকে উন্নত করা গেলে টেক দুনিয়ায় জন্ম নেয়া নতুন এক প্রযুক্তি হয়ে উঠবে অদম্য।’ পৃথিবীতে নতুন এক শিশুর জন্ম যেমন, টেক দুনিয়ায় এআই-র উদ্ভাবনও অনেকটা তেমনই। শৈশবে পা না রাখতেই জন্মলগ্নে এআই নিয়ে এত হইচই। তবে যেভাবে বাজারে বেড়েছে প্রতিযোগিতা, একের পর এক এআই আসছে, তাতে এ কথা হলফ করে বলা যায়, ইতিবাচক হোক কিংবা নেতিবাচক, কমেডি হোক কিংবা ট্রাজেডি–এআই-র গল্প সবে শুরু, বলতে গেলে পুরোটাই বাকি।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
মেহেরপুর জেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
মেহেরপুর সদর উপজেলা
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: