সৌদি-ইরান চুক্তিতে উদ্বিগ্ন ইসরাইল
সৌদি আরব ও ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে ঐকমত্যের পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রশমনের আশা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এর ফলে ইয়েমেনে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির সুযোগসহ শান্তির সুবাতাস বইতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: বিবিসি
রিয়াদ-তেহরানের চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ স্বাগত জানালেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসরাইল। খবর বিবিসির।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছে এ অঞ্চলের অন্যতম দুই প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে। এরমধ্যে সৌদির তেল পাঠানোর পথে ইরানের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন ও তেলের ট্যাংকারে হুতি বিদ্রোহীদের হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে ইরানের বিরুদ্ধে। ফলে রিয়াদ-তেহরান উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে। এসব ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রও ইরানকে দায়ী করে যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দেয়।
সবশেষ ২০১৬ সালে শিয়া সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিবাদে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে বিক্ষোভকারীদের হামলায় চির ধরে দুই দেশের সম্পর্কে।
এরপর বেশ কয়েক বছর ধরে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা বৃথা গেলেও চীনের মধ্যস্থতায় অবশেষে আলোর মুখ দেখে সৌদি আরব-ইরান কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক। শুক্রবার (১০ মার্চ) চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের বৈরি সম্পর্কের পালে লাগে নতুন হাওয়া। আগামী দুই মাসের মধ্যে উভয় দেশেই নিজেদের দূতাবাস পুনরায় চালু, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করাসহ ২০০১ সালে স্বাক্ষরিত নিরাপত্তা চুক্তি সচলে রাজি হয়েছে।
এতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক কৌশল পাল্টে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আঞ্চলিক নানা বিষয় নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব, ইরান ও ইসরাইলের বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ দীর্ঘদিনের। তবে রিয়াদ-তেহরান ও তেল আবিবের সঙ্গে বেশ সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে চীন।
আরও পড়ুন: ইরান-সৌদি যেভাবে বৈরিতা পেরিয়ে মৈত্রীর পথে
বিশ্বের অন্যতম তেল রফতানিকারক ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবে অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে ব্যাপক আগ্রহী চীন। এরইমধ্যে রিয়াদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদারও বেইজিং। রিয়াদের কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি জ্বালানি কেনে বেইজিং।
নিজেদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন ছাড়াও তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানা এবং ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি স্থায়ীত্বের সুযোগ, এমনকি সিরিয়া-ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সুবাতাস বইতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে রিয়াদ-তেহরানের চুক্তিতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ ইসরাইল। শত্রুপক্ষ ইরানের প্রভাব রুখতে আরব দেশগুলোর সঙ্গে নিজেদের সহযোগিতামূলক সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা করছে ইসরাইল। রিয়াদ-তেহরান সমঝোতাকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন বিরোধীরা।
যদিও সৌদি-ইরান সম্পর্কের নতুন সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন মধ্যস্থতা করায় মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন সংঘাতে রেফারির ভূমিকা পালন করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয় কতটা টিকে থাকবে, এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া শঙ্কা রয়েছে ২০১৫ সালে করা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তেহরানের পারমাণবিক চুক্তি নবায়ন নিয়েও।
আরও পড়ুন: সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে একমত ইরান ও সৌদি
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক লি শাওজিয়ান বলেন, দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান সৌদিকে যেভাবে একসূত্রে গেঁথেছে চীন, তাতে বেইজিংয়ের পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করতেই হয়। তবে বিষয়টি ওয়াশিংটনের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।
তিনি বলেন, যতটা না রিয়াদ-তেহরানের চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ করবে, তার চেয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলে চীনের শক্তিশালী কূটনৈতিক উপস্থিতিই বরং ওয়াশিংটনকে অস্বস্তিতে ফেলবে।
No comments: