Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » এবারের রমজানে নাকাল বিশ্বমুসলিম




যখন ইফতারি ও সেহরির খাবারের দাম যোগাতে হিমশিম খেতে হয়, তখন এবারের রমজান মাস মুসলিম বিশ্বের রোজাদারদের জন্য যে খুব একটা সুখকর নয়- একথা বললে অত্যুক্তি হবে না। গত ২০ মার্চ পাকিস্তানের লাহোরে বিনামূল্যে আটা পেতে আইডি কার্ড দেখাচ্ছেন নারীরা। দেশের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে রমজান মাসে দরিদ্র পরিবারগুলোকে বিনামূল্যে আটা সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ছবি: এপি গত ২০ মার্চ পাকিস্তানের লাহোরে বিনামূল্যে আটা পেতে আইডি কার্ড দেখাচ্ছেন নারীরা। দেশের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে রমজান মাসে দরিদ্র পরিবারগুলোকে বিনামূল্যে আটা সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ছবি: এপি করোনার করাঘাত ও পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ববাজারে সৃষ্টি হয়েছে বড় রকমের সরবরাহ সংকট, দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতির উচ্চহার। উচ্চ আয়ের দেশগুলো বেশি দামে খাবার কিনতে পারলেও, দরিদ্র দেশগুলোকে ভুগতে হচ্ছে। খাবারের দাম মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোর মুসলমানরা বড় রকমের ভোগান্তিতে পড়েছেন। রমজান উপলক্ষে এসব দেশের বাজারদর বেড়ে গেছে বহুগুণ। একদিকে আমদানি সংকট, অন্যদিকে ডলারের উচ্চমান; এর মধ্যে আবার খাদ্য শৃঙ্খলে ভয়াবহ ঘাটতি। এতো গেল বৈশ্বিক সীমাবদ্ধতা। দেশের ভেতরকার সিন্ডিকেট ও নানামুখী দুর্যোগে মুসলিম দেশগুলো বড় রকমের সমস্যার মুখে পড়েছে এবারের রমজানে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ৭৯টি দেশের ৩৪৯ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এদের মধ্যে ১৪০ মিলিয়ন মানুষের জরুরি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করে সংস্থাটি। ২০২২ সালের এই পরিসংখ্যান ২০২৩ সালে এসে খুব একটা ইতিবাচক মোড় নেবে বলে মনে করেন না প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা। তালিকাভুক্ত ৭৯টি দেশের মধ্যে বেশিরভাগ দেশই আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং এর সিংহভাগ জনগোষ্ঠী মুসলিম। সম্প্রতি আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ডব্লিউএফপির অর্থনীতিবিদ ফ্রেডরিক গ্রেব বলেন, বিশ্বের নিম্নআয়ের মানুষের ৫০ শতাংশ আয় খরচ হচ্ছে শুধু খাবারের দাম মেটাতে। যে হারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে তা ভবিষ্যতের জন্য আরও বেশি শঙ্কাজনক। এবারের রমজানে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় আছেন সিরিয়ার মুসলিম জনগোষ্ঠী। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও খরাকবলিত দেশটির ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ১২ বছরের যুদ্ধে দেশটি একরকমের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অন্যদিকে সম্প্রতি সিরিয়া-তুরস্কের সীমান্তে হয়ে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে তুরস্ক। ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি ৫৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ভোগাচ্ছে এরদোয়ানের দেশকে। একইভাবে বাড়ছে মিসরের মূল্যস্ফীতির হার। গতমাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩২ শতাংশ। যদিও জানুয়ারি থেকে দেশটির সরকার ৩০ শতাংশ ছাড়ে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি করছে। আটা, মাংস কিংবা পাস্তার মতো খাদ্যপণ্যের দাম সরকারিভাবে কম হলেও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে সবচেয়ে বেশি পিষ্ট হচ্ছেন লেবাননের মুসলিমরা। জানুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ১২৩ শতাংশ যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ। আমেরিকান নেয়ার ইস্ট রিফ্যুজি এইডের (এএনইআরএ) হিসাব থেকে দেখা যায়, দেশটির ৮০ শতাংশ মানুষের ইফতারির পণ্য কেনার মতো সামর্থ্য নেই। বড় রকমের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক খাদের মধ্যে পড়া লেবাননের দেশীয় মুদ্রা লেবানিজ পাউন্ডের ডলারের বিপরীতে অবমূল্যায়ন হয়েছে ৯৮ শতাংশ। একদম সাদামাটা ইফতারিতে ২০২০ সালে লেবাননের মাথাপিছু খরচ যেখানে ছিল ৪ হাজার ২৫০ লেবানিজ পাউন্ড, এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার লেবানিজ পাউন্ড। এএনইআরএ'র প্রেসিডেন্ট সিন ক্যারোল আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আগের রমজানে লেবাননের মতো দেশগুলোতে পরিবারপ্রতি আমাদের দেয়া খাদ্য সহায়তার খরচ পড়ত মাসিক ৫০ ডলার। এবার সে খরচ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। আমরা তাও ডলারে হিসাব করছি, যাদের হাতে লিরা কিংবা লেবানিজ পাউন্ড আছে, তাদের অবস্থা আরও খারাপ।' আরও পড়ুন: রমজান উপলক্ষে ৭ দেশে খাদ্য সহায়তা দিলেন সৌদি বাদশাহ লেবানন ছাড়াও সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে গতমাসের মূল্যস্ফীতির হার ছিল প্রায় ৬২ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খাদ্যপ্যণ্যের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে সবখানে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি বাসস্থান ও যোগাযোগের মতো মৌলিক চাহিদা মেটতেও হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠী। মধ্যপ্রাচ্যের মতোই নাকাল দশা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের। দেশটির ২০০ মিলিয়ন মানুষ উচ্চমূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পর্যদুস্ত। ক'দিন আগেই পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে বিগত ৫০ বছরের রেকর্ড। একদিকে গত বছরের বন্যার সমূহক্ষতি, অন্যদিকে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় তলানিতে ঠেকা রিজার্ভ নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে দক্ষিণ এশিয়ার এই মুসলিম দেশটি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পাকিস্তানের বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক'দিন আগেও ৬০০ রুপিতে কেনা আটার বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ রুপিতে। দেশটির প্রধান খাদ্য আটার দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্তমানে বাজারে প্রতিটি পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় দ্বিগুণ দামে। পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ সাজিদ আমিন দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বড় রকমের দেনা, রিজার্ভের বেহাল দশা ও খাদ্য ঘাটতির এ দুর্যোগময় সময়ে সাধারণ মানুষের চাহিদার দিকে নজর দিতে পারছে না সরকার। এক রকমের হাহাকারের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের মুসলমানরা রমজান মাস অতিবাহিত করছেন। বিশ্বের বৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ হলেও, নিজেদের হাতে টাকা রাখতে ও বৈশ্বিক টানাপোড়েনের মধ্যে টিকে থাকতে দেশটির জনগোষ্ঠী এবারের রমজানে খরচ কমানোর কথা চিন্তা করছেন। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ইন্দোনেশিয়ার ৭০ শতাংশ ভোক্তা আগের রমজানের তুলনায় এবারের রমজানে কম পণ্য ক্রয় করেছেন। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। তবে জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ থাকলেও, তা ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। রমজানে মূলত খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, বিশেষ করে মাংস, ছোলা, আটা ও চিনির মতো নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষেরা। একদিকে আমদানি ব্যয়বৃদ্ধি, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ সিন্ডিকেটের কূটচালে গত রমজানের তুলনায় চলতি রমজানে বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে মিসরের মতো কেনিয়াতেও বইছে মূল্যস্ফীতির গরম হাওয়া। ১৭ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের দেশটিতে নিত্যপণ্যের খরচ মেটানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেনিয়ান ন্যাশনাল এডভাইজরি কাউন্সিলের প্রধান এন গাও আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনবেলা খাবারের দাম মেটাতে কেনিয়ার মানুষ এক রকমের অক্ষম। খাদ্যের দাম কমানোর দাবিতে মানুষ নাইরোবির রাস্তায় নেমে পর্যন্ত বিক্ষোভ করছে। বিগত খরায় দেশটির ৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ পর্যাপ্ত খাবার ও পানির সংকটে ভুগছে। অবস্থা এমন হয়েছে, গত বছর যারা যাকাত দিয়েছেন, এদের অনেকেরই এ বছর যাকাত দেয়ার সামর্থ্য নেই। এন গাও জানিয়েছেন, আফ্রিকার ৪০ শতাংশ গম আসে রাশিয়া থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে গম সরবরাহ কমে গেছে। একদিকে দেশের মাটিতে শস্য হচ্ছে না, অন্যদিকে বাইরে থেকে খাদ্যপণ্য আমদানিও দিনকে দিন হয়ে উঠেছে ব্যয়সাধ্য। এতে করে রমজানের সময় কেনিয়ার মুসলমানরা খাদ্য সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে কমেছে খাদ্যশস্যের দাম: বিশ্বব্যাংক এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাসায় ইফতার করার সামর্থ্য না থাকায় তারা জড়ো হচ্ছেন দেশটির বড় বড় মসজিদগুলোতে। হাজার হাজার মানুষ মসজিদে ইফতার করছেন। কেপটাউন মুসলিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা শায়েখ মোগামাত সাফওয়ান সাসম্যান দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমরা গণ ইফতারির আয়োজন করেছি। মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। দিনকে দিন পরিস্থিতি কঠিন হচ্ছে। সামান্য খাবার জোটাতে মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়াতে হচ্ছে।' ইউরোপের দেশগুলোতে সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলমানরাও কষ্টের মধ্যদিয়ে পার করছেন রমজান মাস। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় টিকে থাকতেই হিমশিম খাচ্ছেন এসব অঞ্চলের মুসলমানরা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল যাকাত ফাউন্ডেশনের দেয়া এক তথ্যে জানা যায়, আগে যেখানে এসব দেশে যাকাত দেয়ার জন্য মানুষ খুঁজতে হতো, এখন সেখানে প্রতি ৪০ মিনিটে একটি করে যাকাতের অনুরোধ আসে। গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ভেঙেছে বিগত ৪০ বছরের রেকর্ড। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যানের তথ্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নন-অ্যালকোহোলিক পানীয় ও হালাল খাবারের দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে এক বছরে দেশটিতে বিদ্যুৎব্যয় বেড়েছে ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ। খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটেনের ১৯ শতাংশ মুসলিম এখন খাবারের জন্য দাতব্য সংস্থা ও সরকারি সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছেন। পবিত্র মাস রমজান সংযমের শিক্ষা ও ঈদের আমেজ নিয়ে এলেও, এবারের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে মুসলমানরা কোনোরকম খেয়ে-পড়ে বেচে থাকার সংগ্রামের মধ্যে আছেন। তবুও প্রতিটি দেশের মুসলমানদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন আশা, রমজানের মাহাত্ম্য পুনরায় বিশ্বশান্তি ফিরিয়ে আনবে, প্রশমিত হবে সংকট, স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বিশ্ব।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply