Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » হিন্দু সন্তানদের মুসলিম মাকে নিয়ে যে আলোড়ন চলছে --বিবিসি




জাফর খান প্রথম ‘ইনু সোয়ানথাম শ্রীধারণ’ সিনেমাটি দেখে অনেক কষ্টে অশ্রু সংবরণ করেছিলেন। তবে সিনেমার পর্দার সামনে তাঁর পাশে বসা ভাই শ্রীধারণ অঝোরে কাঁদছিলেন। দুজনের বয়সই এখন ৪৯। তাঁরা রক্তের ভাই নন। তাঁদের একজন মুসলিম, আরেকজন হিন্দু। তবে জাফর খানকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, শ্রীধারণ তাঁর আসলে কী। তিনি জবাবে বললেন, ‘তিনি আমার ভাই। না, তার চেয়ে বেশি কিছু। তিনি সারাক্ষণ আমার সঙ্গে থাকেন। আমি জানি না, তিনি কে...তিনি আমার সাথি।’ জাফর খান ও শ্রীধারণকে যে নারী একসঙ্গে লালন–পালন করেছেন তিনি জাফর খানের মা থেনাদান সুবাইদা। ২০১৯ সালে তিনি মারা গেছেন। ভারতে যখন ধর্মীয় মেরুকরণ আর সাম্প্রদায়িক অনৈক্যের ঘটনা নিত্যদিন ঘটে চলছে, তখন সুবাইদার গল্প ধর্ম–মতের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার জয়গান গাইছে। ১৯৮৬ সালে শ্রীধারণের মা চাক্কি চতুর্থ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। তখন সুবাইদা শ্রীধারণ এবং তাঁর দুই বোন রামানি ও লীলাকে তাঁর ঘরে নিয়ে আসেন। সুবাইদার গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন তাঁদের মা চাক্কি। ওই সময় সন্তান দত্তক নেওয়ার অত কঠোর আইন ছিল না। ফলে সুবাইদা আইনত তিনজনকে দত্তক নেননি। মায়ের মৃত্যুর পর শ্রীধারণ ও তাঁর দুই বোনকে লালন–পালনের মতো কোনো আত্মীয়স্বজনও ছিল না। তখন তাঁদের বাবা সুবাইদাকে বলে দিলেন, তিনি চাইলে তাঁর তিন সন্তানকে নিয়ে যেতে পারেন। কারণ, তাঁদের লালন–পালন করার মতো সংগতি বা সক্ষমতা তাঁর নেই। সুবাইদার নিজের ঘরে তখন দুই ছেলে—জাফর খান আর শানাওয়াস। চার বছর পর তাঁর আরেকটি কন্যাসন্তান হয়, যার নাম রাখেন জসিনা। সুবাইদা ছয়জনকে একসঙ্গে লালন–পালন করেন। ২০১৯ সালে সুবাইদার মৃত্যুর পর তাঁদের এই গল্প প্রথম চারদিকে জানাজানি হয়। তখন শ্রীধারণ ওমানে কাজ করতেন। ফেসবুকে ‘উম্মা’–কে (মালয়ালম ভাষায় মুসলিমরা মাকে এভাবে ডাকে) নিয়ে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন শ্রীধারণ। তিনি ‘তাঁর মা যেন জান্নাতবাসী হন’ সে জন্য বন্ধুদের কাছে দোয়া চান। শ্রীধারণের এই স্ট্যাটাস তখন অসংখ্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁরা আশ্চর্য হন, একজন হিন্দু ব্যক্তি কেন তাঁর মাকে ‘উম্মা’ ডাকছেন। অনেকে ফেসবুকে তাঁর কাছে জানতে চান, ‘তুমি কে? তুমি হিন্দু নাকি মুসলিম।’ শ্রীধারণ বলছিলেন, ‘আমাকে নিয়ে মানুষের এমন কৌতূহল হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, আমার নাম তো শ্রীধারণ।’ শ্রীধারণ বলছিলেন, ‘সবার অন্তহীন প্রশ্ন। মাঝেমধ্যে অনেকের প্রশ্ন জঘন্য লাগছিল। তবে ধৈর্য ধরে উম্মাকে হারানোর শোকের মধ্যেও আমি সবার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’ শ্রীধারণ বলেন, ‘সুবাইদা আমাদের লালন–পালন করলেও তিনি বা তাঁর স্বামী আবদুল আজিজ হাজি কখনো ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে বলেননি। তাঁর জন্য এসব কথা শোনা বেশ যন্ত্রণাদায়ক। কারণ, তাঁরা আমাদের সব সময় শিখিয়েছেন ধর্ম–বর্ণ কোনো বিষয় না। তাঁরা বলতেন, সবাইকে সৎ এবং মহৎ হতে হবে। এটাই হচ্ছে মানবতা। এটাই মানুষের বিশ্বাসকে বদলে দেবে।’ এটাই ছিল সুবাইদার দর্শন। এই দর্শন নিয়ে তিনি বেঁচেছিলেন এবং তাঁর সন্তানদের বড় করেছেন। লীলার বয়স এখন ৫১। তিনি বলছিলেন, তিনি যখনই চাইতেন তাঁর মা তাঁকে মন্দিরে নিয়ে যেতেন। তখন পরিবহনব্যবস্থা এখনকার মতো এতো ভালো ছিল না। ফলে কোনো উৎসব থাকলে সবাই দল বেঁধে যেতেন। শ্রীধারণ বলেন, ‘আমার উম্মা সব সময় বলতেন, হিন্দু, মুসলিম বা খ্রিষ্টান—তুমি যেকোনো ধর্ম পালন করো, সেটি কোনো বিষয় নয়। প্রতিটি ধর্ম আমাদের একই জিনিস শিক্ষা দেয়, সেটা হচ্ছে প্রত্যেককে ভালোবাসা এবং সম্মান করা।’ শ্রীধারণের ভাই–বোনদেরও শৈশবের অনেক স্মৃতি, অনেক গল্প জমা আছে। দুই বছর বয়সী শ্রীধারণকে যখন তাঁর মা ঘরে নিয়ে এলেন, সেই স্মৃতি এখনো শানাওয়াসের মনে অমলিন। শানাওয়াস বলেন, ‘সেদিন মায়ের পেছনে ছিল লীলা ও রামানি। আমার মা বলেছিলেন, তাঁদের দেখাশোনা করার কেউ নেই, তাঁরা আমাদের সঙ্গে থাকবে। তখন থেকে আমরা একটি পরিবার।’ দুজনের বয়সই এখন ৪৯। তাঁরা রক্তের ভাই নন। তাঁদের একজন মুসলিম, আরেকজন হিন্দু। তবে জাফর খানকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, শ্রীধারণ তাঁর আসলে কী। তিনি জবাবে বললেন, ‘তিনি আমার ভাই। না, তার চেয়ে বেশি কিছু। তিনি সারাক্ষণ আমার সঙ্গে থাকেন। আমি জানি না, তিনি কে...তিনি আমার সাথি।’ বাল্যকালে তাঁদের একসঙ্গে ঘুমানোর অনেক গল্প এখনো মনে আছে শানাওয়াসের। বলেন, তাঁরা মেঝেতে সবাই পাশাপাশি ঘুমাতেন। চার বছর পর তাঁদের বোন জসিনার জন্মের পর সবাই খুব খুশি হয়েছিল। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীধারণ ও জাফর খানের বন্ধন আরও গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। তাঁরা দুজন সবকিছু একসঙ্গে করতেন, দেখে মনে হতো যেন যমজ তাঁরা। শানাওয়াস ও জাফর খান বলেন, শৈশবে তাঁদের মধ্যে খুব কমই মারামারি হয়েছে। তাঁরা বুঝতেন, শ্রীধারণকে তাঁদের মা বিশেষ আদরযত্ন করেন। তবু কখনো তাঁদের মনে ক্ষোভ

সিনেমার পরিচালক সিদ্দিক পারাভুরছবি: টুইটার জাফর খান হেসে বলেন, ‘শ্রী আমার মতো ছিল না, সে বেশ সৎ ছিল। এ কারণে উম্মা তাকে হয়তো বেশি ভালোবাসতেন।’ ভাই–বোনেরা বলেন, বাবা–মা থেকে তাঁরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে শানাওয়াস বলেন, তাঁর মা জাতি–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষকে সহায়তা করতেন। যে কেউ এসে তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। সন্তানের লেখাপড়া, বিয়ে বা চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইতে পারতেন। তিনি কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না। সবাইকে সাহায্য করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। এমনকি তিনি তাঁর পূর্বপুরুষের জমিজমা বিক্রি করেও মানুষকে সহায়তা করেছেন। পরিচালক সিদ্দিক পারাভুর বলছিলেন, এই গল্পে মানবতাবাদী অনেক কিছু রয়েছে, যা এই সমাজের জানা দরকার। এই সিনেমার মাধ্যমে তিনি মানবসম্পর্কের এই সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। বাস্তব জীবনের এই গল্পকে রুপালি পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন সিদ্দিক পারাভুর। তাঁর পরিচালিত সিনেমার নাম ‘ইনু সোয়ানথাম শ্রীধারণ’। সুবাইদাকে নিয়ে শ্রীধারণের ফেসবুক স্ট্যাটাস অন্য অনেকের মতো সিদ্দিককেও অনুপ্রাণিত করেছিল। সিদ্দিক বলছিলেন, এ গল্পে মানবতাবাদী অনেক কিছু রয়েছে, যা এই সমাজের জানা দরকার। এই সিনেমার মাধ্যমে তিনি মানবসম্পর্কের এই সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। কেরালায় গত ৯ জানুয়ারি এই সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী ছিল। সিনেমাটির বাণিজ্যিক মুক্তির জন্য এখন তহবিল সংগ্রহের কাজ করছেন সিদ্দিক। সুবাইদার সব সন্তান এখন ভারতের বিভিন্ন শহরে বসবাস করছেন। মাকে শ্রদ্ধা জানানোর এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় দেখছেন না তাঁরা। লীলা বলছিলেন, ‘উম্মাকে নিয়ে আমার অনেক সুখস্মৃতি আছে। যখন ভাবি, তিনি আমাদের মধ্যে নেই, তখন খুব কষ্ট হয়। তবে আমি খুশি যে তাঁর স্মরণে, তাঁর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে একটি সিনেমা বানানো হয়েছে।’ শানাওয়াস বলেন, ‘কেবল উম্মার মৃত্যুর পর আমরা বুঝতে শুরু করেছি, মানুষ আমাদের মধ্যে পার্থক্য দেখতে পায়। অথচ আমরা এখনো আগেরই মতোই আছি।’






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply